নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন কিন্তু একটাই

জীবন কিন্তু একটাই

হাতপা

কিছু বলার নাই

হাতপা › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃআত্মজা(৪)

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:১৬



খাবার টেবিলে বসে আবার উঠে গেল ইতি।তরকারী পছন্দ হয়নি।মাছ জিনিস টা ইতি একেবারেই পছন্দ করে না।শুধু ইলিশ আর চিংড়ি হলে সে খায়।

মাছ রাঁধা হলে,সেদিন সে মায়ের পিছু পিছু ঘুরে,আমি কি দিয়ে খাবো মা?

মা মাঝে মাঝে রাগ করে-‘আমার কি দশ হাত?এক হাতে মাছ আরেক হাতে মাংস রাঁধব?মাছ খাবে না কেন?অভ্যাস করতে হবে সবকিছু খাওয়া’

ইতিকে উঠে যেতে দেখে কামাল আফসোস করল-‘মেয়েটা মাছ খায় না,অন্যকিছু করলেও পারতে।একটা ডিমটিম ভেজে দাও’

‘তুমি আর প্রশ্রয় দিও না’-বলে মনোয়ারা ডিম ভাজতে চলে গেল।

ইতি রুম থেকে শুনছিল সব।সে যে খাবার টেবিলে মাছ দেখে উঠে গিয়েছিল,ঠিক তা নয়।ভালো লাগছিল না।মনটা ভীষণ রকমের খারাপ হয়ে আছে আজকে সকাল থেকে।তার রেশ এখনো কাটেনি। আজকে ছিল ওদের কলেজের ফার্স্ট ইয়ারের শেষক্লাস,সবাই শাড়ি-পাঞ্জাবি পরে যাবার কথা।মাকে সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই বলেছে মায়ের একটা ভালো শাড়ি পরবে।

সাথে সাথে মা হইচই শুরু করে দিলেন।

ইতি প্রথমে মা কে বুঝতে চেষ্টা করল,কোন কারণে কি মায়ের মন খারাপ।
মার পিছুপিছু রান্নাঘরে গেল। দেখল মা চুপিচুপি কাঁদতে কাঁদতে রান্না করছে।ইতি প্রথমে অবাক হয়ে গেল,সে কি এমন কথা বলেছে যে ...একটু পরেই মনে পড়ে গেল।ইস,আমি কি গাধা।নিজেই লজ্জা পেয়ে সে সরে এসে নিজের ঘরে বসে রইল।

বড় আপুর চেহারা হাল্কা হাল্কা মনে আছে ইতির। ওরা দুইবোন সেদিন খুব মজা করছিল,আপু ওকে হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছিল এদিক সেদিক।নানুবাড়িতে খুব মজা করেছিল সারাদিন।মাছ ধরেছিল,একটা ছোট তেলাপিয়া ধরেছিল দুজনে। কথা ছিল দুজনে ঐটা ভাজি করে খাবে।কিন্তু,আপুকে খুজে পাওয়া যাচ্ছিল না সন্ধ্যার পরে।বড় পুকুর থেকে হইচই করে যখন মৃতদেহ উঠিয়ে আনছিল সবাই...

এরপর,আর ভাবতে পারে না। খুব শকড হয়ে ছিল সেই ছোটবেলায়।বাবাকে অনেক দিন দেখেছে বিছানায় পড়ে থাকতে। বাবার শরীর খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। সারাদিন বাসায় থাকত।কোথাও যেত না।আগের মত হইচই করত না কারো সাথে।

বছরখানেক পরে ঐ বাসা ছেড়ে দিয়ে এইখানে চলে এসেছিল ওরা।আসার আগে বাবা কেঁদেছিলেন।এইটুকু মনে আছে।

ইস,আমি কি বোকা,ভুলে গেলাম কি করে,সেদিন-ই তো মনে ছিল।ভুলে যাওয়া একদমই উচিত হয় নি ভাবতে ভাবতে ইতি প্রতিদিনের মত পোশাক পরেই কলেজে গিয়েছিল।

এইদিনটিতে সবাই কাঁদে।মার কান্না চোখে পড়ে।কিন্তু,বাবার চেহারার দিকে তাকানো যায় না। বাবাকে দেখলেই বোঝা যায় বাবা ভিতরে ভিতরে কি কষ্ট পান।

ইতি বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো।
বাবার কাছে গিয়ে বসল।
-কিরে ইতি?ভাত খেয়েছিস?
মাথা নাড়ল ইতি-‘না,শুধু ডিম ভাজি খেয়েছি’
-ভাত খেতে ইচ্ছে করছে না?
-না।বাবা!
-হুম?
-তোমার মন খুব খারাপ,তাই না?
-তোর খারাপ না?
-আমার তো এমনিই খারাপ,তোমাদেরকে দেখে সেটা আরো বেড়ে যাচ্ছে
-তোর মা কি করে?
-বারান্দায় দাঁড়িয়ে কাঁদছে।

কামাল উঠে দাঁড়ালো। ইতির দিকে তাকালো।দুই বোনের চেহারায় মিল ছিল না ছোট বেলাতে।কিন্তু,বড় হতে হতে ইতি কে দেখলে ইরার কথা আরো বেশি মনে পড়ে।বড় হলেও ইতির চেহারায় বাচ্চা বাচ্চা ভাব রয়ে গেছে।

রুম থেকে বের হয়ে কামাল বারান্দায় চলে গেল ,মনোয়ারা অন্ধকারে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।কামাল একটা হাত রাখল মনোয়ারার কাঁধে।মনোয়ারর শরীর কেঁপে উঠল কান্নার দমকে।

#####

মাথায় ছাতা ধরে হেঁটে হেঁটে রাস্তার মাথায় আসল ইতি।ছাতাটা রোদ থেকে বাঁচবার জন্য নেয়া।এতদিন পর্যন্ত নিজের চেহারার ব্যাপারে মোটেই সচেতন ছিল না।বিশেষ করে,মেইকআপ,সাজগোজের ব্যাপারে।অন্য মেয়েরা যেখানে আয়নার সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় ব্যয় করে ফেলে,ইতি সেখানে কালেভদ্রে আয়নার সামনে বসে।বড়জোর পাঁচ দশ মিনিট লাগে,ব্যাপারটা ছেলেদের মতই অনেকটা। কোনরকমে চুল টা আঁচড়াও,ড্রেস আপ কর,রেডি।

তবে,এখন একটু একটু করে এদিকে মনোযোগ দিচ্ছে ইতি।এই পরিবর্তন ঠিক কী কারণে সে নিজেও জানে না।

যেমন আজকে সে বেশ সময় নিয়েই তৈরি হয়েছে।ওড়না টা ম্যাচ হচ্ছে কি না এই নিয়েও মাথা ঘামিয়েছে বেশ কিছুক্ষণ।

রাস্তার মাথা থেকে বাসে উঠবে।বাসের জন্য দাঁড়ালো।

'এখানে দাঁড়িয়ে?'

কন্ঠটা শুনে চমকে উঠল ইতি।এত মানুষের আনাগোনার মাঝখানে খেয়াল করেনি।

‘হ্যাঁ,বাসে উঠব’
‘এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে জীবনেও উঠতে পারবেন না’
‘কে বলেছে?প্রতিদিন কলেজে যাই না?এভাবেই তো যাই’
‘সময়ের দাম কম আপনার কাছে।অবশ্য এত সময় দিয়েই বা কি করবেন?’
‘আপনি কি করছেন?’
‘আমিও উঠব বাসে।এই দাঁড়াও ,দাঁড়াও’-বলে ইতিকে আগে যেতে বলল।

এদিক দিয়ে বাস ভর্তি হয়ে যায়।কখনোই আরাম করে যাওয়া হয় না।অন্যদিন আরো দেরি হয়ে যায় বাসে উঠতে।বাস আসে,ইতি শুধু ভাবে উঠবে কি উঠবে না।ভাবতে ভাবতে হুশ করে টান দিয়ে চলে যায় বাস।

লেডিস সীটে জায়গা ছিল না।ইতি অসহায় চোখে ছেলেটির দিকে তাকালো।
‘এই যে,আপনি উঠুন।সরে এদিকে আসুন’

ইতি জায়গা পেয়ে আরাম করে বসে পড়ল।মহিলাদের সীটে বসে থাকা লোকটি বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে আছে ছাদ ধরে।

ছেলেটি কোথায় গেল?
ভীড়ের মধ্যে আড়াল হয়ে গেছে।মুখ টা বাকিয়ে একটু দেখার চেষ্টা করল ইতি।
(চলবে)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:২৭

বাড্ডা ঢাকা বলেছেন: দারুন হচ্ছে প্রতিটি পর্ব । ভালো লেগেছে গল্প।

২| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:১৬

আমি সৈকত বলছি বলেছেন: গল্পে ভালো লাগা ++++++

লেগে আছি পেছনে।

শেষ দেখে ছাড়বো ইনশা আল্লাহ:)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.