নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন কিন্তু একটাই

জীবন কিন্তু একটাই

হাতপা

কিছু বলার নাই

হাতপা › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ"ভীতি... অতঃপর"

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:২৮


শীতের বিকেলগুলো এমনই।আছে,আছে। তারপর, ঝুপ করে নেমে আসে সন্ধ্যা।সেই সাথে ভয়টা বাড়তে থাকে তাহমিনার।

সারাদিন সেই ভয়টা ওর মাথার কোন এক কোণে ঘাপটি মেরে বসে থাকে।

তারপর,তাহমিনা যখন সেটিকে দূর করবার জন্য চেষ্টা করতে থাকে,অন্যবিষয় নিয়ে ভাবতে শুরু করে,সেই ভয় যেন সেটা টের পেয়ে আরো হিংস্র হয়ে ওঠে।শীতের বিকেলের পর,সন্ধ্যা নামার মতই ভয়টা নেমে আসে তার সমস্ত অস্তিত্বে ছড়িয়ে যায়,ছড়িয়ে যায় এই বিশ বাই পনের ফিটের ঘরটাতে,ঘরের জানালায়,বিছানায়,দেওয়ালের রঙ খসে যাওয়া প্লাস্টারে।

তখনি তাহমিনা ছুটে যায়।দরজার ছিটকিনি আরেকবার পরখ করে দেখে ঠিকমত লাগানো আছে কিনা। তারপর, দরজার শীতল কাঠে কান পাতে। ওর ঠোঁটদুটো তখন সামান্য ফাঁক হয়ে থাকে।অস্পষ্ট কথাগুলো।ওর মনে হয় কথাগুলো এই দিকে আসছে।তারপর,ও নিজেকে স্বাভাবিক করতে টেবিলের উপরে রাখা বোতল থেকে পানি গ্লাসে না ঢেলেই খেয়ে নেয়।
ভয়ের রেশটা কেটে যায়,যখন নাসির ফিরে।

ইদানীং নাসির ফিরবার পরেও পুরোপুরি কাটে না। কারণ,নাসির তো পরদিন সাতসকালেই ওকে রেখে চলে যাবে অফিসে।পরের সারাদিন,সারা বিকেল,সন্ধ্যা আবার সেই চেপেরাখা ভয়কে সঙ্গী কে করে কাটানো।

প্রতিদিনের মতই নাসির ফিরল নয়টার দিকে।

বাসাটা একতলা।জানালা দিয়ে নাসির দুটো টোকা দিলে তাহমিনা তাকায়,বুঝে যে নাসির এসেছে। তারপর দরজা খুলতে যায়।যেই ঘরটিতে ওরা থাকে,সেইঘরের দরজা লাগানোই থাকে।বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া খুলে না তাহমিনা।নাসির আসলে সেই দরজা খুলে তারপর,মেইন দরজাটা খুলতে যায়।

হাতের প্যাকেট টা তাহমিনাকে দিল নাসির।
‘কী এটা?’-বলে তাহমিনা নিজেই খুলে দেখল-‘এতবড় তোয়ালে তো আমার লাগত না!আরো ছোট আনলেই পারতে’
নাসির ওর শার্টের বোতাম খুলতে লাগল।খোলা শার্টের ফাঁক দিয়ে ওর বুকের লোম বেরিয়ে পড়েছে।তাহমিনা সেদিকে তাকিয়ে আছে।নাসির ওকে কাছে টানল,লতিয়ে পড়ল তাহমিনা।নিকোটিনের গন্ধ মেশানো নোনা ঠোঁটের স্বাদ পেল তাহমিনা।নাসিরের তৃষ্ণা মেটবার পর তাহমিনা উঠে দাঁড়ালো।

অপরাধীর মত মুখ করে বলল- ‘জানো!আজকে না এখনো রান্না করিনি’
নাসির ফ্রেশ হতে বাথরুমের দিকে যাচ্ছিল।
ফিরে তাকালো-‘কেন?’
‘আমার ভয় লাগে।দরজা খুলি নি’
এবার,নাসির একটু চোখ গরম করে তাকালো ওর দিকে।

ওর এই চাহনি দেখে শক্ত হয়ে তাহমিনা।কিছুক্ষণ আগেই যে মানুষটির ছোঁয়া ওকে স্বর্গীয় অনুভূতি দিয়েছিল,সেই মানুষটির এই আচরণ দেখে ভিতরে ভিতরে কান্না এসে গেল ওর। দেয়ালের সাথে লাগানো ছোট টেবিলটায় এককোণ ধরে দাঁড়িয়ে রইল ও।

বিছানায় শুয়ে,হেলান দিয়ে বসে আজকের পত্রিকা টা দেখছিল।পত্রিকা সপ্তাহে দুইদিন রাখে,মঙ্গলবারের টা আর শুক্রবারেরটা।তাহমিনার আইডিয়া। মঙ্গলবারের পত্রিকার সাথে রান্নার কি পাতা যেন থাকে,সেখান থেকে রান্নার রেসিপি দেখে তাহমিনা।আর শুক্রবার ছুটির দিন হিসেবে। জানলাটা খুলে দিয়ে আধখাওয়া সিগারেট ফেলে দিল বাইরে নাসির।এখন এর বেশি টানলে খিদা মরে যাবে।

খাওয়ার পর আয়েশ করল নাসির।
তাহমিনা একসাথে খায়নি আজকে,নাসিরও কিছু বলেনি।
টেবিলটায় বসে এখন মাথা গুঁজে খাচ্ছে।এখান থেকে ওর অল্পখোলা পিঠটাই চোখে পড়ছে।ধীরেসুস্থে একটু পর পর দেয়ালের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে খাচ্ছে।নাসির ভাবল ডাকবে,আবার,ডাকলো না।খেয়ে উঠুক।

নাসির একেবারে শুয়ে পড়ল।তাহমিনা কাজটাজ সেরে শুতে আসল পরে।
দম ধরে আছে তাহমিনা।ঠোঁট লাল।ফুলে আছে।চোখও ভারি।নিশ্চয়ই কেঁদে এসেছে।উফ,মেয়েমানুষ কেন এত কাঁদে। তাহমিনার অভিমান ভাঙানো কঠিন কাজ নয়,ওর অভিমান সহজে আসে,সহজে যায়। কিন্তু,নাসির বোঝেনা কি এমন কারণ হল চোখের পানি ফেলা লাগছে।
শোয়ার কিছুক্ষণ পর নাসির তাহমিনার পিঠে হাত রাখল।ওর অভিমানের মাত্রা বোঝার চেষ্টা।হাত যদি সরিয়ে দেয়,বুঝতে হবে অভিমানে ভাটা পড়ছে।আর যদি নির্বিকার থাকে,বুঝতে হবে – চূড়ান্ত পর্যায়।হাত ও সরালো না,নির্বিকার ও রইল না। তিরতির করে কাঁপল।

‘একি,এখনো কাঁদছ?’-নাসির এবার মুখ খুলল।
তারপর নাসির বাধ্য হয়ে তাহমিনার মানভঞ্জন করল। এইঘটনার পর নাসির ভেবেছিল হালকা দুয়েকটা কথা বলবে,কিন্তু,তাহমিনার বাসা বদলানোর আবদার শুনে নাসির বিরক্ত হল,তারপর,কথা থামিয়ে একপ্রকার তাহমিনাকে ইগনোর করেই ঘুমানোর জন্য পাশ ফিরে শুলো।
কেমন হয়ে যাচ্ছে নাসির দিন কে দিন। আগের মত তাহমিনার কোন কথা সে মনোযোগ দিয়ে শুনে না,যুক্তি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করেনা। তাহমিনার মনে যে ভয়ের সৃষ্টি হয়েছে সেটা প্রথম প্রথম পরোক্ষভাবে বুঝানোর চেষ্টা করেছে,বোঝেনি নাসির।এসব কথা সরাসরি বলতে কি ভালো লাগে! ওরা যে বাসায় সাবলেট থাকে,মানে এইবাসায় মালিক বুড়ো বুড়ি। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে।বাসায় থাকে বুড়োবুড়ি দুজন।আর,তাদের এক ত্রিশ বছরের ছেলে।

তাদের একটা ব্যান্ড দল আছে মনে হয়।প্রায় দেখা যায়,যুবক বয়সী তিন চারজন ছেলে আসে,আড্ডা দেয়।গীটার বাজায়। এইসেই করে।
সারাদিন তো আর নিজেদের রুমে থাকা হয় না। রান্না বান্নার ব্যাপার আছে।রান্নাঘর অনেক ভিতরে,ওদের রুমের পাশ দিয়ে যেতে হয়। ছেলেগুলো তাকিয়ে থাকে,এটা টের পায়।কখনো কিছু বলেনি,কিন্তু তাহমিনা টের পায় ওদের দৃষ্টি।ভয়ের সূচনা সেখানেই। বুড়ো অসুস্থ।বিছানায়ই থাকে,আর বুড়ি সেও কালেভদ্রে দেখা দেয়।তাহমিনার মনে হয় এই বুঝি ওদের ছেলেটি অথবা তার বন্ধুদের কেউ এসে হয়ত বন্ধ দরজা নক করল,কিংবা হয়ত সে রান্না করছে,তখন...হয়ত কিছুই করল না,তবু,তাহমিনা মেয়ে।একবিন্দু এদিকসেদিক হলে ভুগতে হবে তাহমিনাকে,যে নাসিরের কাছে এত অভিযোগ,অনুযোগ করেও নিজের সিচুয়েশান বোঝাতে পারছে না,সেই নাসিরই তখন অন্যচোখে দেখা শুরু করবে না সেটা কিভাবে জানবে তাহমিনা?

এই বাসায় এসেছে দুইমাস।নাসিরের এক বন্ধুর মাধ্যেমে খোঁজ পাওয়া।নামমাত্র ভাড়ায় এরচেয়ে ভালো বাসা পাওয়া যাবেনা,এই হল নাসিরের যুক্তি।আর,নাসিরের ধারণা তাহমিনার এই ভয়,আতঙ্ক অমূলক।নাসিরের মতে আজেবাজে বই পড়ে আর টিভি দেখে এমন ধারণা জন্মেছে তাহমিনা।তাহমিনা আর কি বলতে পারে?বহুবার চেষ্টা করেও নাসির কে বোঝাতে পারেনি,পারবে বলেও মনে হয় না।

রাতের অন্ধকারে একজোড়া চোখ তাই শুধু ভাবে আর ভাবে,পরের দিনটা কেমন যাবে তার? নিজের ভয় কে নিজেই শাসন করে,দমন করে কাটাতে হবে।
(চলবে)

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৯

আমি সৈকত বলছি বলেছেন: বেশ লেগেছে গল্পটা।
হুম্মম্ম চলতে থাকুক সাথেই আছি।

গল্পে ভালো লাগা ++++++

আর হ্যাঁ আগের গল্প আত্মজা কি শেষ করে দিলেন????

শেষ পর্ব তো প্রকাশ হলো না।

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১১

হাতপা বলেছেন: না,ঐটা অসমাপ্ত,ঐটা নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবছি।বৃহৎ পরিকল্পনা আছে,এটা শেষ করছি আপাতত :)

২| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৫

আমি সৈকত বলছি বলেছেন: ওক্কে ধন্যবাদ।

আসলে আমিও চাচ্ছিলাম ঐ গল্পটা আরো এগিয়ে যাক।

খুব ভালো লেগেছিল আত্মজা গল্পটা।

অপেক্ষায় থাকলাম :)

৩| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:২৬

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ভাল লাগল| ঘরোয়া পরিবেলটা বেশ জমিয়েছেন| এবার ২য় পার্টটায় যাই

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:১১

হাতপা বলেছেন: ধন্যবাদ :)

৪| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:২৬

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: পরিবেশ হবে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.