![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১ম অংশ
২য় অংশ
ভীষণ ব্যস্ততার মাঝেও নাসির বারোটার দিকে একটু হলেও ফোন দেয় তাহমিনাকে।তাহমিনা খুব অভিমান করে ব্যত্যয় ঘটলে।
আজকে তেমন ব্যস্ততা নেই।
ডেস্ক থেকে উঠেই অফিসরুমের বাইরে এসে ফোন দিল নাসির।রিং হচ্ছে।রিং হবার সাথে সাথেই ধরে ফেলে,আজকে একটু দেরী হচ্ছে।
ধরল না।ঘুমাচ্ছে সম্ভবত।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আরেকবার ফোন দিল নাসির।
এবারো তাহমিনা ধরল না।ঘুম কি এতই গাঢ়?হঠাৎ করে নাসিরের মনে অন্য চিন্তা খেলে গেল।
এইবার টানা কল দেয়া শুরু করল।তৃতীয়বার,চতুর্থবার রিং হবার একটু পরেই ওপাশ থেকে ধরল ,নাসিরের মনে সেই চিন্তাটা তখন আরেকটু গাঢ়ভাবে গ্রাস করেছিল,যার কারণে কথা বলতে সময় নিল একটু-
তার আগেই তাহমিনা-‘হ্যালো’
নাসির একটু চুপ।বেশ গম্ভীর করে বলল-‘হ্যালো।কি করছিলে?’
‘তোমার ফোনটা টের পাইনি।স্যরি’
আগেও দুয়েক বার এমন টা দেরি হয়েছিল। কিন্তু আজকের কথা ভিন্ন।আজকে নাসির একটি অন্য চিন্তায় মগ্ন।কী কারণে দেরি হয়েছে তা জানা দরকার।
একটু তীক্ষ্ম স্বরে বলল-‘সেটা না! আমি জানতে চেয়েছি তুমি কি করছিলে?’
‘আমি?আমি তো রুমের বাইরে ছিলাম।’-তারপর একটু থামল-‘রান্নাঘরে,চা বানাচ্ছিলাম’
‘আর কী করছিলে?’-সাথে সাথেই বলল নাসির।
‘মানে?’
‘মানে কিছু না’-নাসিরের কন্ঠে সামান্য বিরক্তি।
‘তুমি খেয়ে নিও ঠিকঠাক। মাছ আছে তো ,সাবধানে ধীরেসুস্থে খেও’
নাসির তার ভিতরের ফুসে ওঠা চিন্তার গতি কে নিবারণ করার বৃথা চেষ্টা চালালো কোনরকম দুয়েকটা কথা বলে ডেস্কে ফিরে এল।মাথায় হাত দিয়ে বসে রইল কিছুক্ষণ।কিছু কিছু ভাবনা মেলাবার চেষ্টা করল সে,তাহমিনা কি অনেকটাই পালটে গিয়েছে না? আগে ও যে ভয় পেত,তার কথা ইদানীং সে বলে না।ও কি...?না ,না,এগুলো কি ভাবছে?অন্যায় ভাবনা।
নিজের মাথা ঝাড়া দিয়ে কাজে ব্যস্ত হবার চেষ্টা করল নাসির।
রাতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাসায় ফেরার চেষ্টা করল নাসির।তবুও সেই জ্যাম ঠেলে আসতে আসতে সাড়ে আট টা বেজে গেল।
ঘরে ঢুকে কাপড় ছাড়ল নাসির।
তাহমিনা ওর হাতমুখ মোছবার তোয়ালেটা এনে দিলে ওকে লক্ষ্য করল নাসির।
-‘কোথাও গিয়েছিলে নাকি?’-প্রশ্ন করল তাহমিনাকে
তাহমিনা বিস্মিত হয়ে বলল-‘আমি আবার কোথায় যাবো?’
‘না,চোখে কাজলের দাগ,ঠোঁটেও দেখছি...’-একটু ব্যঙ্গের সুরে নাসির।
‘ওহ! কেন?আমাকে সাজলে ভালো লাগেনা?’-তাহমিনা যেন একটু কাছে এগিয়ে আসল।
নাসির কিছুক্ষণ চুপ।ভালোকরে তাকালো তাহমিনার দিকে।কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না।ওর মাথার ভিতর তোলপাড় হচ্ছে,সামনে দাঁড়ানো তাহমিনা সে কথা টের পাচ্ছে না মোটেই। মিথ্যে আলিংগনে তাহমিনাকে চেপে ধরল তাহমিনাকে নাসির।
দুজন দুজনের মাঝে ডুবে থাকলেও আগের মত সুখ টা যেন উড়ে বেড়াচ্ছে না এই ছোট ঘরটিতে।
‘সামনের শুক্রবার চল,আমরা একটু ঘুরে আসি’
‘কোথায়?’-নাসিরের প্লেটে আরেকটু ভাত বেড়ে দিতে দিতে বলল তাহমিনা।
‘বলছিলে না তুমি?আমিও ভাবলাম। একটা ভালো বাসা খুঁজব’
তাহমিনা ভাত খাওয়া থামালো।নাসিরের দিকে চেয়ে হাসল।তারপর,বেশ শান্তকন্ঠে বলল-‘তুমি কি ভেবেছে?আমি এখনো ঐ ভয় নিয়েই আছি?এখন সব কেটে গেছে।আরে,এর চেয়ে ভালোবাসা আর কি?ভাড়া কত কম।আমিই আগে বুঝতাম না,বুঝলে?’ –বলে আরেকবার হাসল।
নাসির কিছু বলল না।
‘দরকার নেই বাসা খুঁজতে যাওয়ার।এরচেয়ে চল বেড়িয়ে আসি’
নাসির মুখে ভাত নিয়ে চুপচাপ সব শুনে গেল।
সেদিন রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে ঘুমোতে যাবে নাসির।তাহমিনা টেবিলে বসে কী যেন পড়ছে।
‘ঘুমোবেনা তুমি?’
তাহমিনা বই হাতে নিয়ে তাকালো।–‘জানো,ঐ ভাইয়া না,মানে আমাদের বাড়িওলার ছেলেটা অনেক বইয়ের খোঁজ জানে’
তারপর হাতের বইটা দেখিয়ে বলল-‘আজকে এটা যোগাড় করে দিয়েছে।আমিতো জানতামই না এই বইটা কত সুন্দর,শেষ করে ঘুমোবো’
তারপরে যা ঘটল,পাঠক অনুমান করে নিতে পারেন।নাসির এর চেপে রাখা চিন্তা ক্রোধে রূপ নিল।প্রচন্ড রেগে গিয়ে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল নাসির। গায়ে হাত তুলেনি নাসির,কিন্তু চড় উঠিয়েছিল।সেটা পরে সামলে নিয়েছিল।
####
এরপরের শুক্রবারেই ওরা মানে নাসির আর তাহমিনা উঠে এল নাসিরের অফিসের কাছাকাছি একটা বাসায়।ভাড়া বেশি।এছাড়া দুইমাসের এডভান্স করে উঠতে হয়েছে বলে অনেক টাকা বেরিয়ে গেছে নাসিরের।সেটা নিয়ে কোন আক্ষেপ নেই ওর।
এখানে পুরোটা ওদের নিজেদের ঘর।একটা বেড।একটা ড্রইং কাম ডাইনিং।আরেকটা বিশাল বারান্দা আছে।
যেখানে নতুন কেনা দুটি চেয়ার পাতা হয়েছে।
মুখোমুখি বসে আছে দুজন।শনিবার বিকেল।একটা দিন ছুটি নিয়েছে নাসির।
তাহমিনা আজকে সেজেছে বেশ।নাসিরের জন্যই,সেটা নিয়ে আর সন্দেহ নেই নাসিরের।
‘সুন্দর লাগছে তোমাকে’
তাহমিনা খুশি হল।তারপর,নাসিরের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল-‘একটা কথা বলব,রাগ করবে না’
‘বল,কি কথা?’
‘আমার ভয় কাটেনি।আমি মিথ্যে বলেছিলাম তোমাকে।ঐ দিন তোমাকে ইচ্ছে করে মিথ্যে বলেছি।বইটা আমারই ছিল,তুমি তো বই টই পড় না,বুঝতে পারোনি। বাড়িওলার ছেলের সাথে আমার কোন কথা হয়নি।একদিনই হয়েছিল-যেদিন তুমি আমি বেড়িয়ে আসছিলাম।সেদিনও আমি ইচ্ছে করেই তোমাকে শুনিয়েছি।ঐদিন ফোন ধরতে কেন দেরী হয়েছে তার কোন কারণ নেই... তোমার সাথে আমি মিথ্যে আচরণ করেছি কয়টা দিন।’
নাসির একমনে শুনে গেল।
তারপর তাহমিনা কিছুক্ষণ সময় নিল-‘আসলে,কী বলব, আমার যে ভয় ছিল সেটা আমিই টের পেতাম,তোমাকে বোঝাতে পারিনি।আমি তোমার দোষ দিচ্ছি না ।কিন্তু,তুমিই একটু ভেবে দেখ,যে চিন্তা করে তুমি তাড়াহুড়ো করে বাসাটা বদলালে,সেদিক দিয়ে চিন্তা করলে আমার ভয়টাকে কি খুব অমূলক ছিল?...তুমি আমার দিকটা..’
‘প্লিজ,আর বোল না’-অনেকক্ষণ পরে নাসির কথা বলল-‘আর বোল না’
লজ্জিত নাসির উঠে দাঁড়াল।
তাহমিনাও উঠে আসল- ‘আমি যে মিথ্যেগুলো বলেছি,যে আচরণ করেছি। আমার খুব খারাপ লেগেছে জানো?’
নাসির দুই আংগুল ঠোঁটে চেপে ওর কথা থামিয়ে দিল ,তারপর তাহমিনাকে জড়িয়ে নিল বুকে। বিগত কয়েকটি দিনের সমস্তস্মৃতি ওরা একেঅন্যের সংস্পর্শে ভুলে যেতে চাইছে।
(সমাপ্ত)
১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:২৬
হাতপা বলেছেন: ধন্যবাদ।আপাতত না।বড়সড় বিরতি নিব।
আত্মজা হয়ত উপন্যাস হতে পারে,এমনো হতে পারে,শুরু থেকে একটু বিরাট পটভূমি আকারে লিখতে পারি।ঘটনা,চরিত্র অপরিবর্তিত রেখে,দেখা যাক।
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৫৪
আমি সৈকত বলছি বলেছেন: দারুন সমাপ্তি।

খুব ভালো লাগলো।
এবার আশা করি আত্মজা তে মনোনিনেশ করবেন???