নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন কিন্তু একটাই

জীবন কিন্তু একটাই

হাতপা

কিছু বলার নাই

হাতপা › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃএই রুটের বাসে

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৭



বাসটা থার্ড স্টপে এসে থামলে মুরাদ নড়েচড়ে বসল।



বেশ জনাকীর্ণ জায়গা এটা।এখানে অনেক লোকেই নেমে যাবে,তার বিপরীতে অনেকেই চড়ে বসবে।ওর পাশের লোকটির বডি ল্যাংগুয়েজ দেখে মনে হচ্ছে লোকটি নেমে পড়বে।উঠে যেতে যেতেও আবার বসে পড়ছে।কিন্তু নামছে না।



‘নামবেন,আপনি?’-মুরাদ বলেই বসল।

‘হ্যাঁ,আরেকটু পরেই’

‘এখানেই নেমে যান না,পরে ওরা থামাবে না’-মুরাদ মনে মনে বিরক্ত।



এই রুটে মুরাদ সকালে আবার একবার বিকেলে চড়ে।অফিস যাওয়া-আসা করার জন্য। সকালের যাত্রা টা ভাল হয়,কারণ বাসটার মোটামুটি খালি থাকা অবস্থায় ও উঠে।সামনের দিকের একটি সীটেই ও বসে।কিন্তু আসবার সময় সম্পূর্ণ উলটো চিত্র।ঠেলা-ধাক্কাধাক্কির আশ্রয় নিতে হয়।সীট ও পাওয়া যায় না প্রায়ই।



মুরাদ অপেক্ষা করছে,এই জায়গা থেকেই মেয়েটা ওঠে।



‘এই,এই কন্ডাকটার’-হাত নেড়ে নেড়ে ডাকছে মুরাদ।কেউ শুনছে না।ভাড়া তোলায় ব্যস্ত।মুরাদ এবার উঠেই হেল্পার-এর গায়ে গুতো দিল।



‘বাস থামিয়ে যাত্রী উঠাও’-স্টপ বাই স্টপের মাঝামাঝি এই বাস যাত্রী তুলতে চায় না।কিন্তু মেয়েটা এখান থেকে উঠে।



হেল্পার একটু বিরক্তই হল।



মেয়েটি উঠেছে ,ওকে দেখতে পেরে মন টা ভরে গেল।প্রতিদিন সকালে এই মুখ দেখতে দেখতে অফিস যেতে মুরাদের খুব ভাল লাগে। অবিবাহিত মুরাদ।বয়স বিয়ের উপযুক্ত হয়েছে,যোগ্যতাও আছে,টুকটাক কথাবার্তাও চলছে বাড়িতে এই নিয়ে। দুই-একটা মেয়ে দেখাও হয়েছে। এইরকম একটি মেয়ে পেলে মুরাদ দেরি করত না,কিন্তু,কিভাবে কী!এ তো ক্ষণিকের দেখা,না মুরাদ চেনে মেয়েটিকে,না চেনার কোন সুযোগ আছে।



মেয়েটি লেডিস সীটে জায়গা পেয়েছে। এমন হতে পারে না?লেডীস সিট পরিপূর্ণ

।মুরাদের পাশের জায়গাটা খালি।আর ওখানেই এসে বসল মেয়েটি।...



মনের ইচ্ছা আর বিধাতার নির্দেশ পেলে কি না হয়!



মেয়েটা এখানকার একটি কলেজেই পড়ে সম্ভবত, এদিকে মেয়েদের একটা কলেজ আছে।



মেয়েদের সীটে কোন জায়গা নেই।একটা মোটা বই হাতে নিয়ে এদিক-ওদিকে তাকাতে তাকাতে মেয়েটা এসে বসল।



বাস চলছে।



মুরাদ মুখ শক্ত করে আছে।বুকের শ্বাস-প্রশ্বাস এর গতি বেড়ে গেছে।হাতের নখগুলো ও লুকিয়ে ফেলল,কাটা হয়নি।ইস,আজকে পারফিউম-ও দেয়া হয়নি তাড়াহুড়োয়।কে জানত,আজকেই দেবী পাশে এসে বসবে।নিজের উপর খুব রাগ হল মুরাদের।ডানচোখের দৃষ্টিতে মুরাদ দেখতে পাচ্ছে – মেয়েটি মোবাইল নিয়ে পড়েছে।ঘাটাঘাটি করছে।মুরাদ বুকের উপর হাত দুখানা নিয়ে ভাজ করে বসে থাকল।এভাবে বসলে ওকে স্বাস্থ্যবান দেখায় কিছুটা,এমনিতে মুরাদ একটু রোগা।



‘এই আমাকে নামিয়ে দাও’

নেমে গেল মেয়েটি।



বাস কিছুক্ষণ অপেক্ষা করছে।লোক উঠবে।জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে ,মেয়েটি শান্ত পদক্ষেপে চলে যাচ্ছে।এদিক ওদিক কোনদিকে যেন খেয়াল নেই।এধরণের মেয়েগুলো বউ হিসেবে মন্দ হয় না।চারপাশে তাকায় না,নিজের মনেই আছে।বাস চলা শুরু করল আবার।



‘আপনি কি এই রুটেই আসা-যাওয়া করেন?’

‘আচ্ছা,আপনার পড়াশোনা কোনখানে?কোথায় পড়ছেন?’

‘আচ্ছা,আপনি কোথায় থাকেন?’

‘আচ্ছা,আপনাকে প্রায় দেখি এই বাসে আসা-যাওয়া করতে’

নাহ, কোন ডায়ালগই মনঃপূত হয় না মুরাদের।সবই গায়েপড়া টাইপের।



‘এই,দাঁড়াও।লোক উঠাও!’

‘আপনি এমন করেন ক্যা প্রত্যেকদিন!’-হেল্পার অতিষ্ঠ চোখে তাকায়।



মুরাদ একটু লজ্জা পায়।এদিক সেদিক তাকায়। তারপর,স্বাভাবিক হয়ে বসে।



নাহ,মেয়েটি উঠেনি।দুজন বয়স্কা মহিলা আর তাদের সাথে ছোট একটি বাচ্চা।



মেয়েটির হয়ত অসুখ।মুরাদ ভাবে - কিংবা আজকে কলেজ কামাই দিবে।আরো কত কি হতে পারে।নাম কি হতে পারে ওর?নাদিয়া?নিপা?নিপুণ?কেন জানি ন দিয়ে নামের প্রতি দুর্বলতা ওর।



মেয়েটিকে নিয়ে এমনি নানান জল্পনা-কল্পনায় দিনগুলো চলে যাচ্ছিল।বোরিং অফিসের কাজ-কর্মও চলছিল বেশ।কিন্তু,মেয়েটির সাথে আলাপ হচ্ছিল না।



একদিন তাও হল।আশ্চর্য্য!সেদিন পারফিউম-ও দিয়েছিল মুরাদ।আর পরা পোশাক টিও ছিল নতুন,ইস্ত্রী করা। সমস্ত সংকোচ লজ্জা ঝেড়ে ফেলে মুরাদ বলেছিল-'আপনাকে প্রায়ই দেখি...'



মেয়েটিও বেশ স্বাভাবিক ভাবেই আলাপ করল।চেনাজানা না থাকলেও মুখটি যাওয়া আসার পথের পরিচিত।



আলাপ সেইদিনই প্রথম।শেষও সেইদিনে।মনে মনে মেয়েটিকে নিজের হবু স্ত্রীর আসনে বসিয়ে ফেলেছিল মুরাদ।মেয়েটি বিবাহিত,এবং তার একটি বাচ্চাও আছে এই বয়সে,এটা শুনে মুরাদ দমে গিয়েছিল।এই রুটের বাসটিতে হেল্পার আর মুরাদের ডাকে বিরক্ত হয় নি।

(সমাপ্ত)

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৪

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ভাল লাগল| শেষ প্যারাটা দুইবার এসেছে| এডিট করে নিন

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৭

হাতপা বলেছেন: ধন্যবাদ ,এডিট করলাম :)

২| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:২২

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আহ হা... এমনে জল ঢেলে দিলেন!!!! :P =p~ =p~ =p~

৩| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:৩২

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: /:) আফসোস !

৪| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৩

ইলুসন বলেছেন: চমৎকার লাগল এটা।

তবে আজকে আপনার টানা তিনটা গল্প পড়লাম সবগুলোতেই বিয়ের পরেও তৃতীয় কেউ আছে। যেমনঃ বিয়ের আগের পরিচয় ছিল, হঠাত দেখা। রাতে বউয়ের সাথে শুয়ে অন্য মেয়ের কথা ভাবা। এখানে একজন বিবাহিত নারীর প্রেমে কাতর বাসযাত্রী!

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪১

হাতপা বলেছেন: আরে তাইত!!!
আচ্ছা,সময় পেলে চোখেররোগ,কাজীসাহেবেরশেষদিন,একজনশামীমসাহেব,ঠকা ইত্যাদি ব্লগে পড়ে আসতে পারেন।আশা করি তাতে এই বোরিংনেস কাটবে :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.