![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছ মাসের বাচ্চাকে অতি সাবধানে কোলে নিয়ে সিএনজি তে উঠল মাহমুদ।
গত সপ্তাহে ডাক্তারের কাছে আসবার কথা থাকলেও মাহমুদ সময় করতে পারেনি।এজন্য তামান্নার ভর্ৎসনা শুনতে হয়েছে গোটা সপ্তাহ জুড়েই।বাচ্চার প্রতি নাকি মাহমুদের কোন দরদই নেই।হায়রে মেয়েমানুষ কি জানে,জন্ম দিয়েছে বলেই কী সব দরদ মেয়েদেরই নাকি।নিছক ই আবেগের বশে বলে ফেলা,চোখের সামনে ছ মাসের বাচ্চার শরীর নিয়ে উৎকন্ঠা অস্বাভাবিক কিছু নয়।মাহমুদ তাই প্রতি উত্তরে কিছু বলেনি।
বউ বাচ্চাকে বসিয়ে রেখে পায়চারি করতে লাগল মাহমুদ।
হাতের ঘড়ি টা উলটে দেখল- এর মধ্যেই ছয়টা বেজে গেছে!বাসা থেকে বের হয়েছিল পাঁচটারও আগে।
রিসেপশান কর্ণারের সামনে গিয়ে ডেস্কে হেলান দিল।
উপজাতীয় সুন্দরী মেয়েটি সামনের কম্পিউটার স্ক্রীনে তাকিয়ে কি যেন করছে।মাহমুদের দিকে এক ঝলক তাকালো।
‘বলছি,ম্যাডাম কি এসেছেন?’
‘না,উনি ঠিক সাড়ে ছয়টার সময় আসেন।আজকে একটু লেট হতে পারে।বেশি না’
‘ও’-মাহমুদ মেয়েটিকে একটু ভাল ভাবে লক্ষ্য করল।
‘আপনাদের সিরিয়াল কত?সিরিয়াল কি নেয়া হয়েছে?’-ফ্যাশফেশে যান্ত্রিক গলায় মেয়েটি বলে উঠল।গলাটা মোটেই ভালো লাগল না মাহমুদের।
সিরিয়াল নিয়ে আবারো এদিক সেদিক পায়চারি করল।তারপর,হাঁটতে হাঁটতে এসে উঁকি দিল ওয়েটিং রুমে।
তামান্নার কোলে বাচ্চা নিদ্রামগ্ন।তামান্না পাশের একটি মহিলার সাথে আলাপ করছে।
ওর কাছাকাছি যেতে টের পেল আলাপের বিষয়বস্তু টিভিতে চলায়মান সিরিয়াল।বাহ,এখানেও!
‘সিরিয়াল নিয়েছ?’
হ্যাঁ সূচক জবাব দিয়ে আবারো বেরিয়ে গেল মাহমুদ।বারান্দায় চলে আসল।বারান্দাটা ভালই ,খোলামেলা,এইখানেই কাটিয়ে দেয়া যাবে অনেকক্ষণ।পকেটে হাত ঢুকিয়েই মনে হল-এখানে স্মোকিং করা টা কি উচিত হবে?হাত বের করে ফেলল।অফিস থেকে বের হয়ে আর করা হয়নি।সময় দেখল-অপেক্ষার সময়গুলো এত ধীরে যায় কেন কে জানে?
সিগারেট আধখানা খেয়ে নিভিয়ে ছুড়ে ফেলে দিল।তারপর,আবার ওয়েটিং রুমের দিকে অগ্রসর হল মাহমুদ।
ঢুকতে গিয়েই থমকে দাঁড়াল।আগের জায়গায় ফিরে গেল সে।
সিগারেটের প্যাকেট থেকে তৎক্ষণাৎ আরেকটি সিগারেট বের করে দেশলাই ঠুকে ধরাল।
সিগারেটের প্রতি মনোযোগ নেই।মনোযোগ সমস্ত তার এখন ঐ ওয়েটিং রুমে।
মোবাইল বাজছে।তামান্না!
নিজের পোশাক টা অজান্তেই টান টান করে বারান্দা ছেড়ে রূমে ঢুকে তামান্নার কাছে গেল মাহমুদ-‘কি?’
‘আমাদের সিরিয়াল কত?’
‘দেরী আছে।মাত্র তো ডাক্তার আসল।আটটার পর হয়ে যাবে’-বলে পুরো রুম টাতে নজর বোলাল মাহমুদ।ইরা ঠিক ওদের সামনের সারিতেই বসে।ওর পাশের জন খুব সম্ভবত ওর স্বামি।যার কোলে একটি বাচ্চা রয়েছে।
রুমটায় ফাঁকা ভাব নেই আর।অল্পকিছু সীটমাত্র খালি আছে।
‘বস না তুমি’-মাহমুদ কে উঠতে দেখে তামান্না বলল।
‘না,এই রুমটাতে কেমন বদ্ধ লাগছে’-বলে পুনরায় বারান্দার উদ্দেশ্যে হাঁটা দিল মাহমুদ।ওর জায়গাটা দখল হয়ে গেছে।
‘দেশলাই হবে ব্রাদার?’
পকেট হাতড়ে দেশলাই বের করে লোকটিকে দিল মাহমুদ।রেলিং এ ভর করে রাতের ব্যস্ত শহর দেখতে লাগল।
‘থ্যাঙ্কস,এই নিন’-বলে লোকটি দেশলাই এগিয়ে দিল।মাহমুদ আনমনেই হাতটা বাড়ালো।নিজেও ধরালো আরেকটা।ওর সমস্ত ভাবনা এখন দখল হয়ে আছে। স্মোকিংপার্টনারের সাথে টুকটাক কথা বলছে যদিও।মন ওর সেই ওয়েটিংরুমের ওই সারিতেই।
পুরনো দিনগুলো স্মৃতির ভেলায় ভর করে একপাক ঘুরে আসল মাহমুদ।ঘড়িতে সময় দেখল।
‘খবর টবর কী?ভাল সব?’
‘হ্যাঁ,চলে যাচ্ছে।উনি কে?’
‘পতি’- ইরা হাসল নাকি বুঝতে পারল না।পতি শব্দ টা এমন তাচ্ছিল্যস্বরে কেন বলল মাহমুদ বুঝতে পারেনি।ইরা ওকে খেয়াল করেছে জানত,কিন্তু এভাবে উঠে এসে বারান্দায় চলে আসবে ভাবেনি মাহমুদ।কত না ভাবাই তো জীবনে ঘটে যায়।ইরার সাথে দুই বছরের সম্পর্ক যে একটা সময় সমাপ্তি ঘটবে এটা কি ভেবেছিল দুজন?ভাবেনি।
‘কত বয়স?’-ইরা বলল।
‘ছ মাস।তোমার?’
‘দেড় বছর’
দুজনেই নিশ্চুপ। ইরা বিয়ে হয়ে আরো সুন্দর হয়েছে।গালে মাংস লেগেছে।মোটাও হয়েছে সামান্য।ফর্সা ছিল না ইরা।অথচ চেহারা ছিল কাটাকাটা।অনেকেই ওর কথা ভাবত।একমাত্র মাহমুদ পেরেছিল ওর কাছাকাছি যেতে।ভার্সিটি পাশ করার আগেই বিয়ে হয়ে যায় ইরার।এর আগ ওরা দুজন নিজেদের অনেক কাছাকাছি চলে গিয়েছিল। দুই বছর কম সময় নয়।
‘চাকরী করছ?’
হ্যাঁসূচক মাথা নাড়ল ইরা-‘তুমি শুকিয়ে গেছ’
‘হ্যাঁ।তুমি উল্টো’-বলে শব্দ করে হাসল মাহমুদ।
অন্ধকারে ইরার চোখদুটো স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে।অনেক দিন আগেই এইদুই জোড়া চোখ এমন একটি ক্ষণে নিজেদের মাঝের অস্তিত্বকে আদান-প্রদানের অকৃত্রিম প্রক্রিয়ায় মেতেছিল।সেই কথা ওদের দুজনের মাঝে আজকে এই মুহুর্তেও দোলা দিয়ে যাচ্ছে।
‘তোমার বউটি দেখতে সুন্দর’
‘তোমার চেয়ে নয়’-কথাটি বলতে গিয়েও বলল না মাহমুদ।কি হবে বলে?
‘চলো যাওয়া যাক’-মাহমুদ বলল।
‘একসাথে যাওয়াটা উচিত হবে না মোটেই।তুমিই গিয়ে বস,আমি আসছি পরে।ভালো থেকো’
‘আচ্ছা,তুমিও ভালো থেকো’-বলে মাহমুদ একটুক্ষণ দাঁড়ালো।তারপর,ওয়েটিংরুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো।
‘তোমার হাজবেন্ড আসছেন মনে হয়’
মাহমুদের লম্বা পরিচিত অবয়বটা দূর থেকে দৃশ্যমান হওয়ায় তামান্না ব্যস্ত ভঙ্গিতে কোলের বাচ্চাকে আদর করতে লাগল।
এতক্ষণ ওয়েটীংরুমের বাইরে বারান্দায় দৃশ্যের মত এখানেও একটি পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। তার-ও ইতি ঘটল।
২| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৯
আহলান বলেছেন: বিয়ের পরে মাংস লাগে ...সুন্দর হয় .... আহাহহা ...কি সুন্দর কথা ...
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৩
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: হা হা! দুইটা পুনর্মিলনী!