নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন ঘনিষ্ট বিষয় নিয়ে লেখালেখি করি। চেতন ভগতের মতো বাংলাদেশেও পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখি। সেই পরিবর্তন শুরু হবে আমার নিজ জেলা কুমিল্লা থেকে, পরে ছড়িয়ে পড়বে সারা বাংলাদেশে-এই আমার বিশ্বাস।

বিপ্লব৯৮৪২

কিছুই বলার নাই।

বিপ্লব৯৮৪২ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বহুগুনে গুণান্বিত কবি গুণের সাথে এক সন্ধ্যায়

০৮ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:০০

একদিন ইন্ডিপেন্ডেন্ট চ্যানেলে দেখেছিলাম কবি নির্মলেন্দু গুণ, সমাজকল্যান সচিব রণজিৎ বাবু এবং আরো সেইরকম কোন এক বিখ্যাত ননক্রিকেট প্লেয়ার- তিনজনে মিলে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের বিশেষঅজ্ঞ মতামত দিচ্ছেন। তাদের মতামত ছিল সেইরকম দেখা এবং শুনার মত। পুরো রসেভরা অনুষ্ঠান দেখে আমার মনে হয়েছিল ব্যাটসম্যানদের দৌড়ে রান করা বা বাউন্ডারির বাইরে বল পাঠালে চার-ছয় হয়, এছাড়া ক্রিকেটের আর কোন কিছু কি কবি বোঝে?



কবি আসলে ক্রিকেট বোঝে কি বোঝেনা তা জানার সুযোগ একদিন সন্ধ্যায় পেয়ে যাই শাহবাগ পাব্লিক লাইব্রেরির সামনে। সেখানে কবি আরো দুই শুভাকাংখীর দেখা পান। তাদের সাথেও যথারীতি ক্রিকেট নিয়ে আড্ডায় মেতে উঠেন। আর আমি দাড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকি কখন কবিকে একা পাব।



অবশেষে পেলাম।

আলোচনা শুরু হবে এমনই সময় অচেনা একজন হঠাত করে কবিকে এসে বললেন,” দেশের শ্রেষ্ঠ মানুষ হল কবিরা ”।

তার কথাটা আমার পছন্দ হল না। আমি বললাম, কি বলেন আপনি।

ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খলজি বাংলা জয়ের পর নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস করে দিয়েছিল। সকল কবি সাহিত্যিক শিক্ষকদের হাত পা বেঁধে আগুনে নিক্ষেপ করেছিল। লাইব্রেরির বই ছয় মাস ধরে আগুনে পুড়িয়েছিল। তাছাড়া কোন এক রাস্ট্রবিজ্ঞানী বলেছিলেন, আদর্শ রাস্ট্রে কবিদের কোন স্থান নেই- তারা খালি ঝামেলা পাকায়।

কবির কথাটা মনে হয় পছন্দ হল।



তিনি আমাদের শুনালেন ’৭১এ তার জীবনমরনের সন্ধিক্ষনের কথা।

তিনি তখন থাকতেন আজিমপুর মেসে। বন্ধুবান্ধবদের কাছে শুনেছেন তার জীবন আশংকার কথা, তাদের পরামর্শ - মেস ছেড়ে যেন তিনি নিরাপদ স্থানে চলে যান। স্থানীয় বিহারীরা তাকে খুঁজছে।



বুদ্ধিতে কবি ছিলেন এককাঠি সরেস। তিনি ক্লীন শেভ করে চুল ছোট করে অন্যরকম হয়ে গেলেন। একদিন এক বিহারী তার মেসে এসে তাকে জিজ্ঞেস করলেন,”হিন্দু মাওলানা কোধার হ্যায়”?

তিনি বুঝতে পেলেন তার বন্ধুদের কথা সঠিক । চলে গেলেন নদীর ওপারে কামরাঙ্গীচরে।

সেদিন সেখানে গনহত্যা, অগ্নিসংযোগ হয়েছিল। লোকজন দৌড়ের উপর।

চারদিকে মিলিটারি । তিনি এক বাড়িতে ঢুকলেন।

দেখলেন রান্নাঘরে চুলার উপর পাতিল,আগুন জ্বলছে, কিন্তু কেউ নেই। বোঝা যাচ্ছে কিছুক্ষন আগে মিলিটারি আসছে ভয়ে সবাই জান নিয়ে পালিয়েছে।

শ্রান্তক্লান্ত কবি ভাবলেন, তার মৃত্যু যদি হয় যেন হিন্দু মতেই হয়। মিলিটারিরা যেহেতু ঘরবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় তাই তিনি স্তুপ করে সাজানো কাঠের লাকড়ির ভেতর লুকিয়ে রইলেন। ঘুম এসে গেল। ঘুম থেকে জেগে দেখলেন বাড়ীর সবাই ফিরে এসেছে- যে যার মত কাজ করছে। তিনি বেরিয়ে আসতেই এক গৃহবধু ভুত মনে চিৎকার শুরু করে দিলেন।





এমন সময় এক উদীয়মান কবি তার লেখা একটা কবিতা কবির হাতে দিলেন। কবি তাকে ফিরিয়ে দিয়ে পড়ে শুনাতে অনুরোধ করলেন।

তিনি পড়তে যাবেন এমন সময় সাংস্কৃতিক অংগনের এক বিখ্যাত আবৃতিকার মাঝখানে ঢুকে পড়লেন।

কবিকে জানালেন তিনি মধুপুর জংগলের ভেতর একটি বাংলো তৈরি করেছেন। কবি যদি চায় কিছুদিন গিয়ে থাকতে পারে। সেই বাংলোতে বিদ্যুৎ আছে, আরাম আয়েশেই থাকতে পারবে। বুঝতে পারলাম দেশের বনভুমি ধ্বংসের মুল হোতা সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্বরাই।





কথা প্রসঙ্গে জানালেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তার কোন স্থায়ী আশ্রয় ছিল না, একেক বন্ধুর সাথে একেকদিন থাকতেন। তার প্রচুর বান্ধবী ছিল, তার আফসোস নিয়ম ছিল না বলে কোন বান্ধবীর সাথে হলে গিয়ে থাকতে পারেননি। কবির এই ইচ্ছা অপুর্নই থেকে যাবে- এখনো তেমন কোন নিয়ম চালু হয়নি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ছিল তার ক্লাসমেট। কথাটা তিনি নিজের ক্ষমতা আর বাহাদুরি দেখানোর জন্য বলেছেন কিনা জানি না।



উনাকে আমার একটা কারনেই পছন্দ। চক্রান্তকারীদের হাতে জুলিয়াস সিজারের মৃত্যুর পর একজন কবিকে দেখা গেল প্রতিবাদ করতে।

বাংলাদেশে সেইরকম একজন কবি হলেন নির্মলেন্দু গুণ যিনি প্রতিকুল পরিস্থিতিতেও ’৭৫ সালে রাস্ট্রনায়কের হত্যার প্রতিবাদী ছিলেন। রাস্ট্রবিজ্ঞানী আসলে মিছে বলেননি, কবিরা আসলেই ঝামেলা পাকায়।





আসুন এই বর্ষায় কবির বৃষ্টির কবিতা পড়ে সেই সন্ধ্যার গল্প এখানেই শেষ করি।

আকাশ জুড়ে মেঘের খেলা

বাতাস জুড়ে বিষ্টি,

গাছের পাতা কাঁপছে আহা

দেখতে কী যে মিষ্টি!



কলাপাতায় বিষ্টি বাজে

ঝুমুর নাচে নর্তকী,

বিষ্টি ছাড়া গাছের পাতা

এমন করে নড়তো কি?



চিলেকোঠায় ভেজা শালিখ

আপন মনে সাজ করে,

চঞ্চু দিয়ে গায়ের ভেজা

পালকগুলি ভাঁজ করে।



হাঁসেরা সব সদলবলে

উদাস করা দিষ্টিতে

উঠানটাকে পুকুর ভেবে

সাঁতার কাটে বিষ্টিতে।



আকাশ এতো কাঁদছে কেন

কেউ কি তাকে গাল দিলো?

ছিঁচকাঁদুনে মেঘের সাথে

গাছগুলি কি তাল দিলো?



সকাল গেল, দুপুর গেল-

বিকেল হ’য়ে এলো কী?

আচ্ছা মাগো তুমিই বলো

মেঘেরা আজ পেলো কী?



মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:০৪

মামুন রশিদ বলেছেন: প্রিয় কবির সংগে আপনাকে দেখে ভালো লেগেছে বিপ্লব ভাই ।

০৮ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:৫৩

বিপ্লব৯৮৪২ বলেছেন: উনার লেখার সাথে আমার প্রথম পরিচয় পদ্যে নয়, গদ্যে। “আমার কন্ঠস্বর” নিয়মিত কলামে।

২| ০৯ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১:২২

অলওয়েজ এ্যান্টি গর্ভণমেন্ট বলেছেন: +++

৩| ০৯ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ১০:৩২

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: বাহ চমৎকার।

৪| ০৯ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:২৩

ডি মুন বলেছেন: বাহ, দারুণ লাগলো। গুণ কবিকেও সালাম।

ভালো থাকুন নিরন্তর :)

১৫ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:১০

বিপ্লব৯৮৪২ বলেছেন:
আমাদের আশেপাশের পরিবেশটাও কাব্যময় হওয়া উচিৎ। চারুকলার বকুলতলার মতো আরো যদি কিছু জায়গা থাকত !

৫| ১৫ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:১৬

শায়মা বলেছেন: আমারও প্রিয় কবি!:)

১৫ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:০৫

বিপ্লব৯৮৪২ বলেছেন: আপনি কবিকন্যা হলে ভালো হতো ।

৬| ১৫ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:১৮

লেখোয়াড় বলেছেন:
বেশ তো!!

চমৎকার।

৭| ২১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:৩০

নির্জীব অধম বলেছেন: অতীতের চেয়ে বর্তমানকে যিনি আরও সুন্দর করে সাজিয়েছেন...আমার কাছে তিনিই সবচেয়ে বেশি সম্মানিত... ...আর, অতীতের সুন্দর পুঁজি করে যিনি বর্তমানে সুযোগ প্রত্যাশী থাকেন... ...সে আর যাই হোক... ...মহৎ ব্যাক্তিত্তের অধিকারী নয়। যেটা আমি বলতে চেয়েছি... ...

Click This Link

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.