![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবনানন্দ দাশ'কে যত পড়েছি তত তাঁকে নিঃশব্দ বেদনার কবি মনে হয়েছে।
কেমন গাঢ় বিষাদমাখা কবিতাগুলো বেশ ভাবিত করে, মর্মমূলে ছুঁয়ে যায় আমাদের।
বন্ধুরা, 'আট-বছর আগের একদিন' কবিতাটি মনে আছে------
বিপন্ন বিস্ময়ের কবিতা, অচেনা বিষাদের কবিতা।
কবিতার লোকটি যে কারণে আত্মহন্তারক হয়েছিল, তেমন কোন বেদনা কি জীবনানন্দের ছিল?
মনে হয় ছিল, তাই বলেই হয়ত ঝাপ দিয়েছিলেন ট্রামের নীচে।
স্ত্রী-সন্তান-সম্মান-স্বচ্ছলতা থাকা স্বত্তেও মানুষ কেন জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে আত্মহন্তারক হতে বাধ্য হয়-------------
----------------- সেই সর্বনাশা বিপন্ন বিস্ময় নিয়ে কথা হবে।
'শোনা গেলো লাশকাটা ঘরে
নিয়ে গেছে তারে;
কাল রাতে-------- ফাল্গুনের রাতের আঁধারে
যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ
মরিবার হলো তার সাধ।'
কবি জীবনানন্দ দাশ রচিত 'আট-বছর আগের একদিন' কবিতাটি 'মহাপৃথিবী' কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।
একজন স্বচ্ছল মানুষের নাটকীয়ভাবে স্বেচ্ছামৃত্যু বরণ করার কাহিনীকে কবি কবিতায় একটি মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে রূপায়িত করেছেন।
এই কবিতার মাধ্যমে জীবনানন্দ দাশ ইঙ্গিতে কিছু বলতে চেয়েছেন এক অভিনব আঙ্গিকে।
এখানে যুক্তি দেখানো হয়েছে ; আত্মহত্যার কারণও দেখানো হয়েছে তবে সে কারণ খুব স্পষ্টভাবে অভিব্যক্ত হয়নি।
তাই যেকোন ব্যাখ্যাকারী স্ব স্ব ধারণা অনুযায়ী এর গূঢ়ার্থকে উন্মোচন করার প্রয়াস পাবেন।
মৃত্যুকে দলিত করে জীবনের গম্ভীর জয় কবি প্রচার করেছেন আট বছর আগের একদিন কবিতায়।
যেকোন এক পুরুষ ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে----- আর এই খবরটি শুনে কবি অনুভব করলেন------- মৃত্যুকে নয়, তার চারদিকে চাঁদ ডুবে যাওয়া অন্ধকারে জীবনের দুর্দান্ত নীল মত্ততাকে-------
'তবুও তো পেঁচা জাগে ;
গলিত স্থবির ব্যাং আরো দুই মুহুর্তের ভিক্ষা মাগে;
আরেকটি প্রভাতের ইশারায়---- অনুমেয় উষ্ণ অনুরাগে।'
বাঁচার ইচ্ছার, বাঁচার চেষ্টার আরো অনেক উদাহরণ মনে পড়লো।
হয়ত গাছের ডাল প্রতিবাদ করেছিল, ভীড় করে বাঁধা দিয়েছিল জোনাকীরা, থুরথুরে পেঁচা ইঁদুর ধরার প্রস্তাব এনে জীবনের তুমুল গাঢ় সমাচার জানিয়েছিল------------
কিন্তু হায়! চেতনার সংকল্পে প্রকৃতি বাধা দিতে পারলোনা।
এরপর অনিবার্য প্রশ্ন: কেন মরলো লোকটা? কোন দুঃখে? কিসের ব্যর্থতায়?
না, কোন দুঃখই ছিলোনা----- স্ত্রী ছিল, সন্তান ছিল, প্রেম ছিল; দারিদ্র্যের গ্লানিও ছিলনা। কিন্তু------
'জানি----- তবু জানি
নারীর হৃদয় - প্রেম- শিশু- গৃহ নয় সবখানি;
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে;
ক্লান্ত করে--- ক্লান্ত করে;
লাশকাটা ঘরে সেই ক্লান্তি নাই;
তাই------------।'
আলোচনা এখানে শেষ হতে পারত যদি এই নিরাময়-অযোগ্য জীবনক্লান্তিতে কবিতার শেষ হত।
কিন্তু মনোযোগ নিবদ্ধ করলে অন্য একটি সুর আমাদের আকৃষ্ট করবে--------
কবি ফিরিয়ে আনলেন জরাজীর্ণ পেঁচাটাকে যে আত্মহত্যায় বাধা দিতে না পারলেও জীবিতের কানে অবিরাম জপে যাচ্ছে প্রাণসত্তার আদিম আনন্দ।
আর এই প্রগাঢ় পিতামহীর দৃষ্টান্তেই কবি উদ্বুদ্ধ হলেন-------
'আমরা দুজন মিলে শূন্য করে চলে যাবো জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার'-------
মৃত্যু পার হয়ে বেজে উঠলো জীবনের জয়ধ্বনি, আর সেই সঙ্গে নির্বোধ ও পাশবিক জীবনের প্রতি বিদ্রুপ।
এক আত্মহন্তারককে ঘিরে কবিতাটিতে বিচ্ছুরিত হয়েছে কিছু প্রতিক্রিয়া।
কিন্তু এর মধ্যে জীবনানন্দ প্রবেশ করিয়েছেন অসামান্য অন্তরাখ্যান,
সঞ্চার করেছেন গভীরতম অর্থাভাস।
কোন এক কারণ দ্বারা, কোন এক বিপন্ন-বিস্ময় দ্বারা নায়ক ছিল অভিভূত যা তাকে অন্তিমে নিয়ে গেছে স্বেচ্ছামরণের দিকে।
কবিতাটির দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায়
মূল চরিত্রে আত্মহন্তারক আছেন, একজন কথক বা কবি;
আছে পেঁচা, ব্যাং, মছা, মাছি, ফড়িং, জোনাকি ইত্যাদি সপ্রাণ প্রাকৃতিক কিন্তু অনৈর্সগিক পরিপার্শ্ব।
বস্তুত কথক যিনি তিনি আছেন নেপথ্যে মূল ঘটনা থেকে দূরে হয়ত আট বছরের এপারে।
মৃত আত্মহন্তারককে ঘিরে আছে কিছু সজীব প্রাণী------- তার চারপাশের বিশ্ব আশ্চর্য জীবন্ত হয়ে উঠেছে
কিন্তু কোন জীবিত মানুষ নেই, কোন মানুষ নয়।
নেপথ্যনিবাসী কথকরূপী জীবিত মানুষটি যেন মৃত্যুর কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে সঞ্চয় করছে বেঁচে থাকার যন্ত্রণাদায়ী রসদ, আবশ্যিক অভিজ্ঞান।
কেন ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল লোকটির?
অথবা দীর্ঘকাল বিনিদ্রায় কেটেছে বলেই কি নিঃস্তব্ধতা তাকে পরামর্শ দিয়েছিল--------
বেঁচে থাকার গাঢ় নির্বিরাম ব্যথাভার তাকে বয়ে যেতে হবেনা আর।
উটের গ্রীবার মত কোন এক নিঃস্তব্ধতা লোকটিকে প্ররোচিত করেছিল আত্মহত্যা করতে------
কবিতায় থুরথুরে অন্ধ পেঁচাটি মহাসময়ের প্রতীক, আত্মহন্তারকের মৃত্যুর পরেও সে রোজ অশ্বথের ডালে এসে বসে, গায় প্রবাহমান জীবনের জয়গান।
মানুষহীন জীবজগতকে কবি যত সজীবভাবে অংকন করুন না কেন মানুষকে তিনি আলাদা এক মহিমায় সমুত্তীর্ণ করেছেন।
প্যাঁচা ব্যাং মশার জীবনঘনিষ্ঠতা বর্ণনার পরেও-----------
'যে জীবন ফড়িঙের দোয়েলের মানুষের সাথে তার হয়নাকো দেখা এই জেনে।'
এ অংশটি তাৎপর্যপূর্ণ, এখানেই তিনি মানুষকে পাখি পতঙ্গ থেকে পৃথক করে দিলেন;
মানুষ পাখি পতঙ্গের মনোহীন জীবন পাবেনা।
মানুষের যে জীবন সেতো আলাদা, কেননা মানুষের আছে মন: বিপন্ন-বিস্ময়!
তাই প্রেম প্রীতি কীর্তি স্বচ্ছলতার সমস্ত প্রাপ্তির পরেও কেউ কেউ রজনী যাপন করে বিনিদ্রায়, প্ররোচিত হয় আত্মহত্যা করতে।
[এই কবিতাটি আমার বিবেচনায় একটি অনন্য কবিতা,
কবিতার নির্মাণকৌশল ভিন্ন আঙ্গিকের, বিষয়বস্তুও ব্যতিক্রম।
অনেকদিন ধরে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে আমাকে-------- উটের গ্রীবার মত নিঃস্তব্ধতা, বিপন্ন-বিস্ময়!
তাই কবিতাটি নিয়ে লেখার প্রয়াস পেয়েছি।
বাহার হাবিব
২৮ শে জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৩
বাহার হাবিব বলেছেন: your comment makes me inspire. cordial thanks to you..........
২| ২৮ শে জুন, ২০১৮ রাত ৮:৫২
কাওসার চৌধুরী বলেছেন: ব্লগিংয়ের খুঁটিনাটি জানতে এই লেখাটি পড়তে পারেন।। শুভ কামনা রইলো।
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৫:২৫
কাওসার চৌধুরী বলেছেন: বাহ!! বেশ পরিণত একটি লেখা দিয়ে সামুতে ব্লগিং শুরু করলেন। শুভ কামনা রইলো।