![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেফটেন্যান্ট জেনারেল ট্রাকের চাকার নিচে ফেটে যাওয়া দিপালী সাহার হৃদপিন্ডকে যারা ভ্যালেন্টাইন-বেলুন বানিয়ে বেচে দ্যায়, অথবা যাদের শুধুমাত্র শরৎবাবুই কাঁদাতে পারেন, একমাত্র গোপাল ভাঁড়ই হাসাতে পারে- সেই নিথর স্বাভাবিকতায় মৃত মানুষদের ব্যবচ্ছেদ ঘটে এক নীল ক্লিনিকে।
নারায়ণগঞ্জের শায়েস্তা খান সড়কের বাড়ি থেকে গত ৬ মার্চের বিকেলবেলা বেরিয়েছিল সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ তানভীর। শ্যামলা ছিপছিপে গড়ন তার, আর মায়ায় ভরা ডাগর দুটি চোখ। দুই দিন পর লাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ও। চোখের মণিটা বাইরে বেরিয়ে আসা। তানভীরের মা রওনক রেহানার মনে কত প্রশ্ন, ‘খুনিরা আমার ছেলের চোখটা তুলে ফেলতে চেয়েছিল কেন? ওর চোখটা আমি কত যে ভালোবাসি। খুনিদের কী ক্ষতি করেছিল ওই চোখটা? ও-ই বা কী করেছিল?’
নারায়ণগঞ্জ জেলার সাংস্কৃতিক সংগঠক ও নাগরিক আন্দোলনের নেতা রফিউর রাব্বি ও রওনক রেহানা হূদয়ের সবটুকু ভালোবাসা নিংড়ে তিল তিল করে বড় করে তুলছিলেন তানভীরকে। গতকাল রোববার রওনক রেহানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার আলো চলে গেছে। ত্বকি শব্দের অর্থ আলো। আমি আর আমার ছোট ছেলেটা প্রায়ই গান করতাম, ‘ত্বকি আমার ত্বকি, ওগো ত্বকি ভুবন ভরা’। ত্বকি কিছু বলত না। ভারি চাপা ছেলে ও। মিটমিট করে হাসত। ও নেই। আমার জন্য শুধু কিছু স্মৃতিচিহ্ন ফেলে গেছে।’
গতকাল রফিউর রাব্বির বাড়িতে গিয়ে মনে হয়েছে, এই বাড়ির ছেলেটি আছে। হয়তো কোথাও বেরিয়েছে, কলেজে বা পাঠাগারে গেছে। ফিরবে এক্ষুণি। মাথার কাছে লিও তলস্তয়ের ছোটগল্পের সংকলন। টেবিলের ওপর জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কথা, আ গ্যালাক্সি অব ম্যাথমেটিকস, প্রোফেসর শঙ্কু, পদার্থবিদ্যা আর রসায়নের মোটা মোটা বই, অভিধান। বিছানার পাশেই হারমোনিয়াম আর গানের খাতা। বইয়ের তাকে অসংখ্য বই, শোকেসে আবৃত্তি, হাতের লেখা প্রতিযোগিতার স্বীকৃতি হিসেবে পাওয়া সনদপত্রের ছড়াছড়ি, মাথার কাছে ও-লেভেলে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হওয়ায় ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার থেকে পাওয়া সংবর্ধনার ছবি।
তানভীরের নিখোঁজ হওয়া, খাল থেকে মৃতদেহ উদ্ধার, র্যাব-পুলিশ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের মানুষের আনাগোনা—এসবে হতচকিত তানভীরের ছোট ভাই পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র রকিব মুহাম্মদ। সে এখনো বুঝে উঠতে পারছে না, আর কখনো আসবে না বড় ভাই তানভীর। রাতের বেলা সারা দিনের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আর কখনো সে কাউকে বলার সুযোগ পাবে না, তোলা হবে না নতুন কোনো ছবি। রকিবের মনে প্রশ্ন, সন্দেহ-সংশয়। ‘ভাইয়া হারিয়ে গিয়েছে। আমি বাইরে বেরোতে ভয় পাই না। কিন্তু আমাকে কি ধরে নিয়ে যাবে কেউ? মনে হয় না।’
রফিউর রাব্বি, রওনক রেহানা আর তাঁদের ছেলে রকিব বই-খাতা, হারমোনিয়াম, আঁকা ছবি আর আটপৌরে পোশাকে খুঁজে ফিরছেন স্পর্শের বাইরে চলে যাওয়া তানভীরকে। আর স্তম্ভিত-আতঙ্কিত নারায়ণগঞ্জবাসী, তানভীরের শিক্ষক আর সহপাঠীরা খুঁজছে একটা প্রশ্নের উত্তর, ‘কেন তানভীর?’
Click This Link
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ২:৪৫
সাদা রং- বলেছেন: কত মেধাবি একটা ছেলে হারিয়ে গেল, খুব খারাপ লাগছে।