![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেফটেন্যান্ট জেনারেল ট্রাকের চাকার নিচে ফেটে যাওয়া দিপালী সাহার হৃদপিন্ডকে যারা ভ্যালেন্টাইন-বেলুন বানিয়ে বেচে দ্যায়, অথবা যাদের শুধুমাত্র শরৎবাবুই কাঁদাতে পারেন, একমাত্র গোপাল ভাঁড়ই হাসাতে পারে- সেই নিথর স্বাভাবিকতায় মৃত মানুষদের ব্যবচ্ছেদ ঘটে এক নীল ক্লিনিকে।
বিশ্বের বৃহত্তম গনহত্যাগুলোর তালিকার বাংলার রক্তের দাগ নেই, থাকলেও অল্প উইকি নিরপেক্ষতার
নামে শহীদের লিমিট বেধে দেয় ৩ থেকে ৩০ লাখের মধ্যে, পাকিস্তান সরকার তো বলে শহীদের সংখ্যা
ছাব্বিশ হাজারেরও কম(হামিদুর রহমান কমিশন), উইকি সেটা কোট করে,
কিন্তু ইউনিসেফ যে শহীদের সংখ্যা ৪০ লাখেরও বেশী দাবী করে তাতে তাদের ভ্রূক্ষেপ নেই,
উইকির Genocides in history আর্টিকেলে তো বিহারী হত্যার দায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযুক্ত পর্যন্ত
করা হয়েছে, বিবিসি Mark Dummett এর আর্টিকেলে শহীদের সংখ্যা বানায় ৩ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ
এর কারণ কি জানেন ?
এর কারণ, সম্ভবত আমরাই, আমরাই পৃথিবীর একমাত্র দুর্ভাগা জাতি, যারা স্বাধীনতায় আত্মত্যাগকারিদের
সংখ্যা কমাতে চাই। নিরপেক্ষতার নামে শহীদের সংখ্যায় আপার লিমিট লোয়ার লিমিট বসাতে চাই, আর
এর প্রধান কারণ একটাই, স্বাধীনতার পরেও একটা শ্রেণীকে বাঁচিয়ে রাখা যারা
''আগে কি সুন্দর দিন কাতাইতাম'' টাইপের গান গেয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত রাখেছিল,
৪২ বছর ধরে প্রজন্মকে দমিয়ে রাখার কৌশলে তারা ছিল সচেষ্ট। যারা স্বাধীন দেশে "পাকিস্তান পুনুরুদ্ধারকরণ কমিটি"
চালিয়েছিল, যার অস্তিত্ব ১০-১৫ বছর আগেও ছিল ! !
যারা বারবার গণহত্যাকে লুকিয়ে রেখেছিল ,
২৫ মার্চ মধ্যরাতে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে হিটলারের গেস্টাপো বাহিনীর কায়দায় রাতের অন্ধকারে
পাকি জল্লাদ বাহিনী এক দানবীয় নিষ্ঠুরতায় ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত বাঙালীর ওপর।
চলল বর্বরোচিত নিধনযজ্ঞ আর ধ্বংসের উন্মত্ততা। হকচকিত বাঙালী কিছু বুঝে ওঠার আগেই
ঢলে পড়ল মৃত্যুর কোলে।
void(1);
শহরের রাজপথ, অলিগলি, ফুটপাথ, খেলার মাঠ, ক্যাম্পাস সর্বত্রই মৃত্যু তার রেখে গেছে ভয়ংকর স্বাক্ষর।
মানুষের কান্না ভারি হয়ে এলো শহরের আকাশ। সে কান্না ছাপিয়ে তখন আকাশে কেবলই মুহুর্মুহু আগুনের
লেলিহান শিখা। মধ্যরাতে ঢাকা হয়ে উঠল লাশের শহর।
একাত্তরের অগ্নিঝরা এদিনে বাঙালী জাতি তথা বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছিল ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস বর্বরতা।
একাত্তরের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে গণহত্যার নীলনকশা ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পাকিস্তানী দানবরা মেতে উঠেছিল
নির্বিচারে স্বাধীনতাকামী বাঙালী নিধনযজ্ঞে। ঢাকাসহ দেশের অনেক স্থানেই মাত্র এক রাতেই হানাদাররা নির্মমভাবে
হত্যা করেছিল অর্ধ লক্ষাধিক ঘুমন্ত বাঙালীকে।
বিশ্বসভ্যতার ইতিহাসে নিষ্ঠুর, নির্মম ও বর্বরোচিত গণহত্যা চালিয়েছিল পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা।
একাত্তরের এ দিনে চির আকাঙ্ক্ষিত ও প্রিয় স্বাধীনতার জন্য উন্মাতাল লাখো বাঙালীর রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল বাংলার সোঁদামাটি।
ঘুমন্ত শিশু, বধূ, বৃদ্ধার রক্তে কলঙ্কিত হয়েছিল মানব ইতিহাস।
সেই নিষ্ঠুরতা ও নির্মমতা চেঙ্গিস খান-হালাকু খানদের নৃশংস নির্মমতাকেও হার মানায়।
একটু পরে স্বাধীনতা দিবস, এদিন আমি একটা কবিতাই পড়ি, নিরপেক্ষ হতে পারিনা
পারিনা আধুনিক হতে, আমার হৃদয় জুড়ে শুধু স্বাধীনতা তুমি . . .
স্বাধীনতা তুমি – শামসুর রাহমান
স্বাধীনতা তুমি
রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান।
স্বাধীনতা তুমি
কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো
মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা-
স্বাধীনতা তুমি
শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা
স্বাধীনতা তুমি
পতাকা-শোভিত শ্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল।
স্বাধীনতা তুমি
ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি।
স্বাধীনতা তুমি
রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার।
স্বাধীনতা তুমি
মজুর যুবার রোদে ঝলসিত দক্ষ বাহুর গ্রন্থিল পেশী।
স্বাধীনতা তুমি
অন্ধকারের খাঁ খাঁ সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক।
স্বাধীনতা তুমি
বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর
শানিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ।
স্বাধীনতা তুমি
চা-খানায় আর মাঠে-ময়দানে ঝোড়ো সংলাপ।
স্বাধীনতা তুমি
কালবোশেখীর দিগন্তজোড়া মত্ত ঝাপটা।
স্বাধীনতা তুমি
শ্রাবণে অকূল মেঘনার বুক
স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন।
স্বাধীনতা তুমি
উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির কাঁপন।
স্বাধীনতা তুমি
বোনের হাতের নম্র পাতায় মেহেদীর রঙ।
স্বাধীনতা তুমি বন্ধুর হাতে তারার মতন জ্বলজ্বলে এক রাঙা পোস্টার।
স্বাধীনতা তুমি
গৃহিণীর ঘন খোলা কালো চুল,
হাওয়ায় হাওয়ায় বুনো উদ্দাম।
স্বাধীনতা তুমি
খোকার গায়ের রঙিন কোর্তা,
খুকীর অমন তুলতুলে গালে
রৌদ্রের খেলা।
স্বাধীনতা তুমি
বাগানের ঘর, কোকিলের গান,
বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা,
যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা।
©somewhere in net ltd.