নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

টুকরো কথা

হিসলা সিবা

লেফটেন্যান্ট জেনারেল ট্রাকের চাকার নিচে ফেটে যাওয়া দিপালী সাহার হৃদপিন্ডকে যারা ভ্যালেন্টাইন-বেলুন বানিয়ে বেচে দ্যায়, অথবা যাদের শুধুমাত্র শরৎবাবুই কাঁদাতে পারেন, একমাত্র গোপাল ভাঁড়ই হাসাতে পারে- সেই নিথর স্বাভাবিকতায় মৃত মানুষদের ব্যবচ্ছেদ ঘটে এক নীল ক্লিনিকে।

হিসলা সিবা › বিস্তারিত পোস্টঃ

পহেলা বৈশাখের ইতিবৃত্ত এবং ইলিশ আমদানির অপসংস্কৃতি

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:৪১

১২০০ টাকা দিয়ে ১কেজি ইলিশ কেনা কতটুকু যৌক্তিক? কয়জন কিনতে পারবে এই দামে?

অনেকের ১০ দিনের ঘাম ঝরা মজুরী দিয়ে ও ১টা ইলিশ কিনতে পারবে না। ইলিশ মাছ এমন না যে চাষ করতে হয়।

জেলেরা ধরে, ১২০০ টাকার মধ্যে জেলে কি ১২০ টাকা পায়? কখন কি ভেবেছেন ? বাকী টাকা কার পকেটে যায় ?

১লা বৈশাখ বলে কি ইলিশ খেতেই হবে?



আসুন একটু জানি পহেলা বৈশাখের ইতিবৃত্ত,

উইকি বলছে,"পহেলা বৈশাখ (বাংলা পঞ্জিকার প্রথম মাস বৈশাখের ১ তারিখ) বাংলা সনের প্রথম দিন, তথা বাংলা নববর্ষ।

দিনটি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নববর্ষ হিসেবে বিশেষ উৎসবের সাথে পালিত হয়। ত্রিপুরায় বসবাসরত বাঙালিরাও

এই উৎসবে অংশ নেয়। সে হিসেবে এটি বাঙালিদের একটি সর্বজনীন উৎসব। বিশ্বের সকল প্রান্তের সকল বাঙালি এ দিনে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়,

ভুলে যাবার চেষ্টা করে অতীত বছরের সকল দুঃখ-গ্লানি। সবার কামনা থাকে যেন নতুন বছরটি সমৃদ্ধ ও সুখময় হয়। বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা

একে নতুনভাবে ব্যবসা শুরু করার উপলক্ষ্য হিসেবে বরণ করে নেয়। গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে ১৪ই এপ্রিল অথবা ১৫ই এপ্রিল পহেলা বৈশাখ

পালিত হয়। আধুনিক বা প্রাচীন যে কোন পঞ্জিকাতেই এই বিষয়ে মিল রয়েছে। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৪ই এপ্রিল এই উৎসব পালিত হয়।

বাংলা একাডেমী কর্তৃক নির্ধারিত আধুনিক পঞ্জিকা অনুসারে এই দিন নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এদিন বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সকল সরকারি

ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে।



বাংলা দিনপঞ্জীর সঙ্গে হিজরী ও খ্রিস্টীয় সনের মৌলিক পার্থক্য হলো হিজরী সন চাঁদের হিসাবে এবং খ্রিস্টীয় সন ঘড়ির হিসাবে চলে।

এ কারণে হিজরী সনে নতুন তারিখ শুরু হয় সন্ধ্যায় নতুন চাঁদের আগমনে। ইংরেজি দিন শুর হয় মধ্যরাতে। আর বাংলা সনের দিন শুরু হয় ভোরে,

সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে। কাজেই সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শুর হয় বাঙালির পহেলা বৈশাখের উৎসব।"



লক্ষ্য করুণ, আকবরের সময়কাল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদ্‌যাপন শুরু হয়। তখন প্রত্যেককে চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সকল খাজনা,

মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে হত। এর পর দিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে ভূমির মালিকরা নিজ নিজ অঞ্চলের অধিবাসীদেরকে মিষ্টান্ন দ্বারা আপ্যায়ন করতেন।

এ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হত। এই উৎসবটি একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয় যার রুপ পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে এই পর্যায়ে এসেছে।

তখনকার সময় এই দিনের প্রধান ঘটনা ছিল একটি হালখাতা তৈরি করা। হালখাতা বলতে একটি নতুন হিসাব বই বোঝানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে হালখাতা হল

বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানপাঠের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া। গ্রাম, শহর বা বাণিজ্যিক এলাকা, সকল স্থানেই পুরনো বছরের

হিসাব বই বন্ধ করে নতুন হিসাব বই খোলা হয়। হালখাতার দিনে দোকনদাররা তাদের ক্রেতাদের মিষ্টান্ন আপ্যায়ন করে থাকে।

এই প্রথাটি এখনও অনেকাংশে প্রচলিত আছে, বিশেষত স্বর্ণের দোকানে।



দেশজুড়ে নানা আয়োজন চলছে বাংলা নববর্ষ উদযাপনে। সাম্প্রতিককালে পান্তা-ইলিশ পহেলা বৈশাখের উত্সবের প্রধান অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে।

এ নিয়ে এখন শহুরে নব্য ধনিক ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের মাতামাতির শেষ নেই। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আজ শহরের অলিগলি, রাজপথ,

পার্ক থেকে শুরু করে অভিজাত হোটেলে বিক্রি হচ্ছে পান্তা-ইলিশ। অভিজাত হোটেলগুলোতে এদিন পান্তা-ইলিশ খাওয়া এখন একশ্রেণীর মানুষের

বিলাসিতায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু আবহমানকাল থেকেই পহেলা বৈশাখের সঙ্গে এই পান্তা-ইলিশের কোনো সম্পর্ক নেই। এটা শহুরে নব্য বাঙালিদের আবিষ্কার।

এর মাধ্যমে আমাদের সংস্কৃতিকে সম্মান জানানোর পরিবর্তে ব্যঙ্গ করা হচ্ছে এবং এর মাধ্যমে আমাদের সংস্কৃতি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন



সম্প্রতি প্রয়াত প্রখ্যাত সাংবাদিক, সাহিত্যিক এবং ছড়াকার ফয়েজ আহ্মদ পহেলা বৈশাখের উত্সব আয়োজন সম্পর্কে একাধিক প্রবন্ধ, নিবন্ধ এবং সাক্ষাত্কারে উল্লেখ করেছেন যে,

পহেলা বৈশাখের সঙ্গে পান্তা-ইলিশের কোনো সম্পর্ক নেই। এটা কোনো গরিব মানুষের খাবার নয়। গ্রামের মানুষ ইলিশ মাছ কিনে পান্তাভাত তৈরি করে খায়—এটা আমি গ্রামে কখনও দেখিনি, শুনিনি।

শহরের যেসব ধনী লোক বর্তমান সময়ে পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ খায়, তারা কৃষকের জীবনযাত্রা দেখেনি এবং গ্রামের সংস্কৃতি বিষয়ে তাদের সঠিক কোনো ধারণা নেই।

তারা এখন পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে পান্তা-ইলিশ খাচ্ছে এবং একশ্রেণীর মানুষ এটা বিক্রি করে লাখ লাখ টাকার ব্যবসা করছে।



প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক, সমাজ রূপান্তর অধ্যয়ন কেন্দ্রের সভাপতি, ত্রৈমাসিক নতুন দিগন্ত সম্পাদক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পান্তাভাত গরিব মানুষের খাবার।

রাতে খাওয়ার পর অবশিষ্ট ভাত রাখার কোনো উপায় ছিল না; তাই পানি দিয়ে রাখা হতো এবং সকালে আলুভর্তা, পোড়া শুকনো মরিচ ইত্যাদি দিয়ে খাওয়া হতো।

আমিও ছোটবেলায় খেয়েছি। কিন্তু এখন পান্তা-ইলিশ ধনী লোকের বিলাসিতায় পরিণত হয়েছে এবং এটা দুর্মূল্যও বটে—যা সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে।

এর মাধ্যমে আমাদের সংস্কৃতিকে সম্মান দেখানোর পরিবর্তে ব্যঙ্গ করা হচ্ছে। পান্তাভাত একদিন নয়, সারা বছরই খাওয়া যেতে পারে।



বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, মোগল সম্রাট আকবরের সময়ে বাংলা সন শুরু হওয়ার পর থেকে

পহেলা বৈশাখে জমিদাররা খাজনা সংগ্রহ করতেন। যারা খাজনা দিতে আসতেন, জমিদাররা তাদের মিষ্টি, পান ইত্যাদি দিয়ে আপ্যায়ন করতেন। তিনি বলেন,

সম্প্রতি পহেলা বৈশাখের উত্সবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার রীতি। এই পান্তা-ইলিশ খাওয়ার প্রচলন আগে ছিল না।



জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেন, আজকাল আমরা পহেলা বৈশাখের দিন ভাতের আয়োজন করি। পান্তাভাত নিয়ে বাড়াবাড়ি কম হচ্ছে না।

কবে কোন ফাইভস্টার হোটেল বলে ফেলবে, আমাদের কাছে পাওয়া যাবে স্ট্রবেরি ফ্লেভারড —আমি সে অপেক্ষায় আছি। এভাবে আমাদের সংস্কৃতি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।



প্রত্যেকটা উৎসবেরই একটা নগরকেন্দ্রিক সংস্করন থাকে। কিছু কর্পোরেট রূপ থাকে। এটাকে এড়িয়ে যেতে চাওয়াও খুব একটা ভালো নয়।

যার সামর্থ আছে সে খাবে , যার ইচ্ছা সে খাবে। কেউ কাউকেতো জোর করছে না।তবে একটা উৎসবে সব শ্রেণীপেশার অংশগ্রহণ থাকা

উৎসবকে আরও আনন্দময় করে তোলে, মঙ্গল শোভাযাত্রায় অনেক মানুষ হয়ত যাবে কিন্তু সবার কপালে পান্তা- ইলিশ জুটবে না।



বাঙালীর উৎসবপ্রিয়তা বেঁচে থাক, বেঁচে থাক বাঙ্গালীরা, আর দ্রুত ফাঁসি হোক রাজাকারদের, নিষিদ্ধ হোক জামাত-শিবির

জয় বাংলা



void(1);

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:৫৩

অপরিচিত অতিথি বলেছেন: darun post

২| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১:১২

সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি বলেছেন: সুন্দর পোস্ট +

৩| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১:২৫

ছণ্ণছাড়া যূবক বলেছেন: ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য

৪| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১:৪৫

মেংগো পিপোল বলেছেন:

৫| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ১০:৫৮

আমিনুর রহমান বলেছেন:

চমৎকার পোষ্ট +++

শুভ নববর্ষ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.