![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
[ বি:দ্র: সাধারনত বিশেষ দ্রষ্টব্য লেখার শেষে থাকে। কিন্তু আমার লেখার শুরুতে থাকার বিশেষ কারণ রয়েছে। এই লেখাতে আমি আমার নিজের শেখা- না শেখা বিষয় গুলো নিয়ে লিখেছি, সমালোচনা করেছি। সমালোচনা করেছি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার, শিক্ষাদাতার। লেখাটা অনেকেরই পছন্দ হওয়ার কথা না। এমনকি আমার দেওয়া যুক্তি দেখে আমাকে পাগলও ভাবতে পারেন, অনেকে আবার আমার কথায় কষ্ট পেয়ে গালিও দিতে পারেন। তাই, যদি কেউ লেখাটি পড়েন (যদিও এতো বড় লেখা কেউ পড়ার কথা না) তাহলে নিজ দায়িত্বে পড়ুন, আর লেখাটি পড়ে কষ্ট পেলে, আমায় ক্ষমা করুন।]
দেখতে দেখতে জীবনের প্রায় ২২ বছর কাটিয়ে ফেললাম, যার ১৬ বছরই ছাত্রজীবন। জীবনের বেশিরভাগ সময় জুড়েই ছিল ছাত্রজীবনের আধিপত্য। বই, খাতা, টেবিল, চেয়ারের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে অর্জন করেছি তথাকথিত জ্ঞানার্জন। এই ২২ বছরের জীবনে কিছু প্রশ্ন প্রায়ই তাড়া করে-
কি শিখেছি? কি শিখছি? যা শিখছি, তা কি বাস্তব জীবনে কাজে লাগাতে পারছি? যদি কাজে লাগাতে না পারি, তাহলে কেন লাগাচ্ছি না বা লাগাতে পারছি না? নাকি এখনও বইয়ের পৃষ্ঠা থেকে বের হতে পারিনি? তবে কি মূল্য রইল এই পড়াশুনার? যা শিখছি, তা কি ঠিক, নাকি ভুল? কোনটা ভাল, কোনটা মন্দ সেটা বিবেচনা করতে কি শিখেছি ১৬ বছরের ছাত্রজীবনে? যদি ভাল মন্দ বিচার করতে শিখে থাকি, তাহলে কেনো ভুল সিদ্ধান্ত নিই? আর যদি শিখে না থাকি, তাহলে কি শিখলাম এতোদিন? পড়াশুনা কি শুধু একটা সনদ পত্রের জন্য? শুধু কি একটা চাকরি পাবো বলে? আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কি উন্নত দেশগুলোর চাকর হওয়ার শিক্ষাব্যবস্থা নয়? একগাদা বই মুখস্ত করেই কি অনেক কিছু শিখে ফেলেছি ভাবছি না?
প্রশ্নগুলোর উত্তর খোজতে গিয়ে আমার চিন্তাশক্তি স্থির যায়। ১৬ বছরে কতটুকুই শিখতে পেরেছি, এ নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আর যা শিখছি তার যথাযথ প্রয়োগ করতে পারছি কি না তাতেও সন্দেহ আছে। আবার যা শিখছি তা সব সময় সঠিক কি না এই নিয়েও সন্দেহ আছে। যেমন একটা ছোট উদাহরণ দিয়ে শুরু করি-
ছোট বেলায় একটা চিরন্তন সত্য কথা শিখেছি, "সূর্য পূর্ব দিকে উঠে"। একটু বড় হয়ে শিখেছি "পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরে"। তাহলে কেন ছোট বেলায় ভুল শেখানো হল? সূর্য যেহেতু পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে না, সেহেতু সূর্যের পূর্ব দিকে উঠা আর পশ্চিম দিকে অস্ত যাওয়ার কোন যুক্তি আছে কি? অনেকে আবার এটাকে ভুল হিসেবে বিবেচনাই করবেন না। বলবেন এটা কথার কথা। বাচ্চাদেরকে বুঝানোর জন্যে এর চেয়ে ভাল কোন বাক্য হতে পারে না। কিন্তু একবার ভেবেছেন যে এই কথার কথা ছোট বাচ্চাদের মনে কতটুকু বিশৃংখলার সৃষ্টি করতে পারে?
যখন ওরা একটু বড় হয়ে জানবে, আসলে সূর্য উঠেনা, পৃথিবী ঘুরে; তখন সেই শিশুরা বইগুলোর লেখকদেরকেই দোষারোপ করে; যেমনটা আমি করেছিলাম।
ছোটবেলায় শিখেছি "কখনও মিথ্যে কথা বলনা", "কখনও অন্যায় করবে না, অন্যায়কে প্রশ্রয় দিবে না", "অন্যায় যে করে আর যে সহে দুইজনেই সমান অপরাধী"। কিন্তু যারা শিখিয়েছেন মিথ্যে বলা পাপ, তাদেরই দেখেছি মিথ্যে বলতে। আর যারা একসময় শিখিয়েছেন অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে, পরবর্তীতে উনারাই শিখিয়েছেন "যে সহে, সে রহে; কেউ অন্যায় করতে দেখলে কিছু বল না, সেই স্থান থেকে সরে যেও, দেখেও না দেখার ভান করো"। তাহলে কোন কথাটাকে সত্য বলে ধরে নেব? "অন্যায় যে করে আর যে সহে দুইজনেই সমান অপরাধী" নাকি "যে সহে সে রহে"?
তবে বাস্তব জীবনে দেখেছি অন্যায়ের প্রতিবাদ করা অপরাধ, কারণ অপ্রিয় সত্য কথা কারো পছন্দ হয়না।
এবারে নজর দিই চিরায়ত পাঠ্য পুস্তক ভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থায়।
প্রথমেই বলি বাংলা নিয়ে। ১ম শ্রেনী থেকেই বাংলা বলতে বুঝেছি মজার মজার ছড়া, গল্প, কবিতা। "ঐ দেখা যায় তাল গাছ, ঐ আমাদের গা" অথবা "ট্রেন চলেছে, ট্রেন চলেছে, রাত দুপুরে ঐ" পড়তে পড়তে যখন খানিকটা বড় হলাম, তখন শুরু করলাম ব্যাকরণের অ-আ-ক-খ। আমার কাছে মনে হয় বাংলা বিষয় থেকে শেখার মত ব্যাকরনই একমাত্র বিভাগ। আবার ভাষাগত দিক উন্নয়নের জন্য গল্প, কবিতা অনেক কাজের। আর কিছুই জীবনে কোন কাজে আসেনি, আসবেও না। তবে হ্যাঁ, এটা ঠিক যে বাংলা ছড়া, কবিতা, গল্প অধ্যয়নের মাধ্যমে বাচ্চারা বাংলা সাহিত্যের প্রতি অনুরাগী হবে। বাংলা সাহিত্যের প্রতি তাদের ভালবাসার সৃষ্টি হয়। বাংলা সাহিত্য থেকে মজা নিতে চায়। তাই হয়ত একসময় স্কুলের পড়ার বইয়ের নিচে লুকিয়ে সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে তিন গোয়েন্দা, হিমু অথবা মাসুদ রানা পড়ে। বাংলার প্রতি অনুরাগের সাথে সাথে অনেকের মাঝে জন্ম নেয় লেখক প্রতিভা। ট্রেন কবিতাটি পড়ে অনুপ্রানিত হয়ে হয়ত একসময় লিখে বসে একটি ছড়া অথবা কবিতা। অথবা পরীক্ষার হলে বসে রচনা লিখতে গিয়ে মনের মাধুরি মিশিয়ে লিখে ফেলে এক অসাধারণ প্রবন্ধ। কিন্তু আফসুস, তাকে অনুপ্রেরণা দেবার মত কেউ নেই। বরং পাঠ্যবইয়ের নিচে লুকিয়ে পড়ার সময় ধরা খেয়ে বা পড়ার টেবিলে বসে ছড়া লেখতে থাকা অবস্থায় ধরা খেয়ে মায়ের বকুনি ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়না। অথবা দেখা যায়, পরীক্ষার হলে বসে সেই অসাধারণ প্রবন্ধ লিখা ছেলেটি রচনাতে পেয়েছে সবচেয়ে কম নম্বর। তার দোষ সে শিক্ষকের কথামত ডঃ অমুকের লিখা বইয়ের রচনা মুখস্ত করে লিখেনি। তাই সব মনের মাধুরি ঝেড়ে ফেলে সে গুরুবাক্য মেনে রচনা মুখস্ততেই ব্রতী হয়। তাতে লাভ খুব বেশি হয়না। শুধু মৃত্যু হয় সৃজনশীলতার।
আমার কাছে কেন জানি মনে হয়, বাংলা গদ্য-পদ্য আমাদের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার কারণ হলো, আমরা যাতে বাংলা অনুরাগী হই; আমাদের মধ্যে যাতে করে বাংলা চর্চার মনোভাব সৃষ্টি হয়; যাতে করে বাংলা গদ্য-পদ্যে অনুপ্রানিত হয়ে নিজের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ লিখতে পারি; যাতে করে হয়ে উঠতে পারি আগামীদিনের হুমায়ুন আহমেদ অথবা শামসুর রহমান।
হয়ত দেখা যেতে পারে কারো কারো মাঝে লেখক প্রতিভা ছিল, কিন্তু সেটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এর কারণ দুটি। প্রথমত, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাই এমন যে সেখানে শিক্ষার্থীর ভেতরের প্রতিভার বিকাশের সুযোগ দানের বদলে তাকে পরীক্ষায় এমন সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হচ্ছে যেখানে তার প্রতিভার বিকাশ ঘটছে না। কিছু গতানুগতিক প্রশ্ন মুখস্ত করলেই ব্যাস, হয়ে গেল। দ্বিতীয়ত, সে দেখে আসছে যে যারা মুখস্ত করে উত্তর দিচ্ছে তারা বেশি নম্বর পাচ্ছে। তাই বেশি নম্বরের আশায় শিক্ষার্থী মুখস্তকেই পুঁজি করছে, কারণ বাবা-মা প্রতিভাবান ছেলে চাননা, সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া ছেলে চান।
বাংলা পরীক্ষার কিছু গতানুগতিক প্রশ্ন ছিল। যেমন: "আলোচ্য অংশে কবি কি ভাব ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন?" অথবা এরকম "কে, কেন, কখন, কাকে এই উক্তি করেছিল?"। এই প্রশ্নের উত্তর আবার নিজের ভাষায় লেখলেও হবে না। বাজারে কিছু তথাকথিত গাইড বইয়ে দেশের সেরা সেরা পন্ডিতেরা নিজের মনের মাধুরি মিশিয়ে লিখে দেন। আর ছাত্ররা সেই প্রশ্নের উত্তর মুখস্ত করে পরীক্ষার হলে গিয়ে বমি করছে। কেন? কেন এমন হবে? কে কাকে কি উক্তি করলো সেটা মুখস্ত করে আমাদের কি লাভ? আমরা কি এমন প্রশ্ন করতে পারতাম না, যেমন: "পাঠ্যবইয়ের 'স্বাধীনতা' কবিতার আলোকে দেশপ্রেম মুলক একটি কবিতা লিখ" অথবা এমন "দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে নিজের ভাষায় একটি প্রবন্ধ লিখ"। এটা ঠিক যে সবার মধ্যে কবি বা লেখক প্রতিভা নেই। কিন্তু যাদের মধ্যে আছে ওরা তো পারতো? এতে গাইড বই থেকে মুখস্ত করার কথা কেউ ভাবতো না। যেহেতু সবার ভেতর লেখনী প্রতিভা থাকেনা, তাই যদি কেউ এক লাইনও লিখার চেষ্টা করে, তাহলেই তাকে নম্বর দেওয়া হবে। এতে কাউকে আর মুখস্ত নির্ভর হতে হবেনা। কারো প্রতিভার অকাল মৃত্যুও ঘটবে না।
বাংলা নিয়ে তো অনেক জ্ঞান বিতরণ করলাম, এখন আসি অন্য বিষয়ে। ইংরেজি ও গনিত নিয়ে বলার মত কিছু নাই। এই দুই বিষয়ের কোন ত্রুটি এখন মাথায় আসছে না। তবে গনিতের একটি মজার বিষয় লক্ষ্য করেছি যে ছোটবেলায় যে বিষয়গুলোকে খারাপ বলে পরিচয় করিয়ে দিতেন, সেই বিষয়ের উপরই অংক কষতে হয়েছে। যেমন, সুদ কষার অংক অথবা তাসের অংক। যে ছেলেটাকে সবসময় তাস থেকে দুরে রাখা হয়েছে, পরীক্ষার হলে তাকে সেই তাসের উপর পরীক্ষা দিতে হয়েছে। যে জানত না এক প্যাকেটে কয়টা কার্ড থাকে তাকে নিজে নিজে চিনে নিতে হয়েছে হরতন, চিরতন, রুইতন, ইস্কাটনকে। বিষয়টা কেমন অদ্ভুত। আর কত লিটার দুধে কত গ্রামে পানি মেশালে কি হবে এই অংকগুলো ব্যাপক বিনোদন দেয়।
এবার বলি পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে। পদার্থবিজ্ঞানের ব্যবহারিক অংশ ছাড়া বাকি অংশগুলো নিয়ে আমার কিছু এলার্জি আছে। E=mc^2 অথবা PV=nRT প্রমান গুলি স্টেপ বাই স্টেপ মনে রেখেই পরীক্ষা দিয়েছি, এক কথায় মুখস্তই বলা চলে। কখনও বুঝার চেষ্টা করিনি কি বুঝাতে চাইছে ওগুলি। সত্যি বলতে প্রয়োজন পড়ে নি বিষয়গুলো বুঝার, প্রয়োজন পড়েছে মনে রাখার আর পরীক্ষার হলে বমি করার। তাই হয়ত আমাদের মাথায় নতুন কোন সুত্রের চিন্তাভাবনাও আসেনা।
রসায়নেও একই কাহিনী। বিক্রিয়া মনে রাখার প্রয়োজন পড়েছে, মুখস্ত করেছি। আমরা নিজেকে বানিয়েছি ফটোকপি মেশিন। মস্তিস্ককে এমনভাবে ধোলাই করা হয়েছে যেন আমাদের কাজ শুরু ফটোকপি করা আর নতুন নতুন সুত্র/বিক্রিয়া আবিষ্কারের জন্য লোক নিযুক্ত আছেন, আমরা কেন এসব করে সময় নষ্ট করবো।
জীববিজ্ঞানের অবস্থা তো আরও জটিল। আমরা একাদশ-দ্বাদশ শ্রেনীতে থাকতে প্রানীবিজ্ঞানের বইতে পেয়েছিলাম, ও পজেটিভ গ্রুপের রক্ত হচ্ছে সর্ব দাতা আর এবি পজেটিভ হচ্ছে সর্ব গ্রহীতা। অর্থাৎ, ও পজেটিভ রক্তের গ্রুপের ব্যক্তি অন্য যেকোন গ্রুপের রক্তের অধিকারী ব্যক্তিকে রক্ত দিতে পারে। অনুরুপভাবে, যার রক্তের গ্রুপ এবি পজেটিভ সে যেকোন গ্রুপের রক্ত গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু বাস্তবে তেমনটা হয়না।
কিছুদিন আগে মেডিক্যালে অধ্যয়নরত আমার এক বন্ধুর সাথে আড্ডা দিতে দিতে এক পর্যায়ে সে আমার রক্তের গ্রুপ জিজ্ঞেস করেছিল। আমি বলেছিলাম, "এবি পজেটিভ"। তখন সে আমাকে সাবধানে থাকতে বলেছিল। এই গ্রুপের রক্ত নাকি সহজে পাওয়া যায় না। উল্লেখ্য, আমার বন্ধুটি সন্ধানি ব্লাড ব্যাংকের একজন সদস্য। আমি তখন ওকে বলেছিলাম, "চিন্তা কি? আমার তো এবি পজেটিভ। আমি তো যেকোন গ্রুপের রক্ত নিতে পারবো"।
তখন জানা হলো আসল কাহিনী। যে বলল, "এবি পজেটিভ সর্ব গ্রহিতা হলেও অন্য গ্রুপের রক্ত দেওয়া হয়না"। তার কারন জিজ্ঞেস করাতে সে আন্টিজোন, এন্টিবডি সহ আরো কিছু বিষয় নিয়ে বিশদ বর্ননা করেছিল। যার সারমর্ম দাড়ায়, এক ব্লাড গ্রুপের ব্যক্তিকে অন্য ব্লাড গ্রুপের রক্ত দেওয়ার বিধান আগে পড়ে আসলেও এমনটা বাস্তবে করা হয়না। কারণ, এটা বিপদজনক যা অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ ও হতে পারে।
এভাবেই বছরের পর বছর চলে আসছে আমাদের তথাকথিত কৃতবিদ্যের শিক্ষাদান আর শিক্ষাগ্রহণ। আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে যদি এতো এতো ভুল পায়, তবে না জানি শিক্ষাবিদেরা কত কত ভুল বের করতে পারতেন। শিক্ষাবিদরা কি পারতেন না কিছু করতে? চেষ্টা করলে ঠিকই পারতেন। জানি কেউ দায় নেবেন না। কার দায় পড়েছে। এভাবেই চলছে, হয়ত চলতে থাকবে। অন্যের সমালোচনা করছি, কিন্তু নিজে কি করেছি নিজের অবস্থান থেকে? যেখানে আমি নিজেই ঠিক নাই, সেখানে অন্যকে আর বেশি দোষারোপ করার সাহস হলো না।
©somewhere in net ltd.