![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার বিশ্বাস ভাবাদর্শী মারা যায় কিন্তু ভাবাদর্শ মরেনা। তাই মার্ক্সবাদী হতে চাইনা, কার্ল মার্ক্স হতে চাই
পানি। পুকুরে, নদীতে বা সমুদ্রে। তারপর একসময় সুর্যের তাপে উপর থেকে উপরে। পাহাড়ের টানে বা বাতাসের মায়ায়। সময় শেষে আবার ঝরে পরা। গভীর থেকে আরো গভীরে। যার শুরু আছে তার শেষও থাকবে। শুরুটাই আসলে শেষের কারন। যার শুরু নেই তার শেষও নেই।
অ্যামাজনের মতই গভীর জঙ্গল কিনলে। পাশেই ছোট একটি গ্রাম। লিও। সবুজ ঘন জঙ্গলের পাশে সাজানো গ্রাম লিওর ফুটপাথেই জন্ম গ্রাফির। আর পাচটা কুকুরের মত সারাদিন ঘুরে ঘুরে মানুষের ফেলে দেয়া উচ্ছিষ্ট খাদ্য থেকে ভালই দিন চলে যেত তার। কষ্ট ছিলনা। মাঝেমাঝে কিছু মানুষের গালি শোনা ছাড়া। তবে কুকুরের জীবন কিনা। বাকীদের মত তারও সব সয়। গ্রাফির দখলে ৩ টা ডাস্টবিন ছিল। সেখান থেকে যা পেত তা দিয়ে তার চলত ভালই। সারাদিন ঘুম। দুবেলা খাওয়া। আর রাতের বেলা প্রতিবেশী কুকুরদের সাথে এলাকার লড়াই। এক জীবনে এর চেয়ে বেশি রোমান্স সে কখনো আশা করেনি। সময়ের সাথে সাথে বয়স বাড়ল। এর সাথে গ্রাফির জীবনটাও সহজ থেকে সহজতর হতে থাকল।
কোন এক রাতে গহীন কিনলের ভেতর থেকে তিনজন আগন্তুক বেড়িয়ে আসল। সাহস, বুদ্ধি আর বলিয়ান কন্ঠ তিনজনের চেহারাতেই স্পষ্ট। উদ্দেশ্য কিনলের সীমানা পেরিয়ে বিশ্ব জয়। লিওতে পা রাখতেই সর্বপ্রথম তারা গ্রাফির সামনে পড়ল। আগন্তুক কিন্তু গ্রাফির তাদের অচেনা মনে হলনা। সে স্পষ্ট তাদের চোখে বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন দেখতে পেল। এ যেন এক কঠিন মুহুর্ত তার জন্য। হয় চিরচেনা কিনলে গ্রামের রক্ষা করতে তাদের ওপর ঝাপিয়ে পড়া। না হয় বিশ্ব জয়ে তাদের সাথ দেয়া। লোকগুলো ধীরে ধীরে এগুতে থাকল গ্রামের দিকে। এবং তার সাথে সাথে গ্রাফির অন্তিম মুহুর্তও এগিয়ে আসতে লাগল। হয় প্রিয় জন্মভুমি। না হয় পুরো বিশ্ব। হয় দায়িত্ব। না হয় ক্ষমতা। একদিকে ভালবাসা। আরেকদিকে ভয়। দেখতে দেখতে লোকগুলো গ্রাফির সামনে এসে গেল। এরাই বিশ্বের ভবিষ্যৎ ত্রানকর্তা। এ মুগ্ধতা তাকে আগে কোনদিন ছুতে পারেনি। গ্রাফি তাদের চোখ ভরে দেখল। সাথে পুরো বিশ্ব অবাক হয়ে দেখল কিভাবে গ্রাফি সবকিছু ভুলে তাদের সামনে মাথা নত করে তাদের কুর্নিশ করল। আগন্তুকদের অনুরোধ করল তাদের অভিযানে তাকে নিতে। আগন্তুকত্রয়ের গ্রাফিকে ভাল লাগল। শুরু হল তাদের যাত্রা। পুরো উদ্দমে, তীব্র ক্ষমতার সাথে তারা নিজেদের এক নতুন বিশ্ব উপহার দিবে এটাই লক্ষ্য।
এই প্রথম গ্রাফি তার এলাকার বাইরে পা রাখবে। এ এক অন্যরকম উত্তেজনা। কিন্তু তার থেকে যেটা বেশি সেটা হল ভয়। তার স্বজাতি যারা ওই এলাকার নিয়ন্ত্রন করে তারা কি তাকে মেনে নেবে। না নিলে গ্রাফি তাদের সাথে লড়াইয়ে একা পারবে কিভাবে এ ভয় গ্রাফিকে ঘিরে রাখল প্রতিটা পদে। তবুও কোন এক অদৃশ্য ক্ষমতাবলে সে আগন্তুকত্রয়ের সাথে এগুতে থাকল। অনেকটা দিন তারা এভাবে চলতেই থাকল। গ্রাফি অনেক আগেই তার জন্মভুমির পথ ভুলে গেছে। নিষ্পাপ গ্রাফির এখন তাদের সাথে পথ চলা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। এ ভাবতে ভাবতে গ্রাফি দলের অনেকটা পিছে পরে গেল। হঠাত সে দেখতে পেল সামনে কতগুলো কুকুর হিংস্রতা নিয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছে। আগন্তুকত্রয় ততক্ষনে অনেকদুর এগিয়ে গেছে। এমন বিপদে গ্রাফি আগে কোনদিন পরেনি। সে জানে কুকুরের দলটা তাকে তাদের এলাকায় পেলে ছিড়ে খাবে। এটা তার এলাকা হলে সেও একই কাজ করত। গ্রাফি ওইখানে দাঁড়িয়ে থাকে। দেখতে দেখতে কুকুরের দল গ্রাফিকে ঘিরে ফেলে। মৃত্যু থেকে গ্রাফির দুরুত্ব এখন মাত্র কয়েক মুহুর্ত। তীব্র ভয় তাকে পুরোটা অবশ করে ফেলে। নিশ্চিত মৃত্যুকে এত কাছ থেকে দেখে গ্রাফি নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে থায়ে থাকে। অভিযাত্রার এমন ইতি সে ভাবতেও পারেনি। সে চোখ বন্ধ করে শেষের প্রস্তুতি হিসেবে। হঠাত ঘিরে থাকা কুকুরগুলো পুরো শক্তি দিয়ে পালাতে থাকে। নিজেদের জীবন রক্ষায় এমন চীৎকার এমন আকুতি গ্রাফি আগে কখনও দেখেনি। সে একটু দুরেই দেখতে পায় তিনটা ছায়া মুর্তি কুকুরগুলোর দিকে ধেয়ে আসছে। গ্রাফির আর বুঝতে বাকি থাকেনা সেই অলিখিত অঙ্গিকার তাকে বাচাতে আজ মরিয়া। প্রকৃতি স্বইচ্ছায় আজ তাকে এক মহান ক্ষমতা দান করেছে। এই প্রথম সে ক্ষমতার এত তীব্রতা অনুভব করে। এটা যে তাকে সন্মানের শীর্ষে নিয়ে যাবে, তাকে তার স্বপ্নের সবকিছু দেবে এটা তার বুঝতে বাকি থাকেনা।
এমন অনেক ছোট ছোট বিপদ কাটিয়ে অভিযাত্রীদের যাত্রা চলতে থাকে। তারা জানেনা এ যাত্রার শেষ কোথায়। তবে তারা যে একে অপরের সাথে অলিখিত এক অঙ্গিকারে আবদ্ধ এটা সবাই জানে। সততা, ন্যায়, সাহস ই পারে তাদেরকে তাদের গন্তব্যের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে। ক্ষমতার এই বিক্রম গ্রাফিকে গ্রাস করতে থাকে। যাত্রা পথে যে কোন ভয়ের সাথে সে চরম সাহসে লড়াই করে। যে অবহেলা তার স্বজাতির চিরসাথী ছিল সেই অবহেলাও আজ তার কাছে বিপদ মনে হয়। কোন এক অদেখা ভয়ের কারনে সে আজ পেতে চায় পুরো পৃথিবীর কুর্নিশ। অবাধ্য সকলকে মৃত্যুকুপে পাঠাবে মনে মনে শপথ করে সে। এভাবে একের পর এক সাহসী, নিরীহ, ভাল, খারাপ অনেকের রক্তের ওপর দিয়ে গ্রাফি এগুতে থাকে সামনের দিকে। আগন্তুকত্রয় এটা পুরোটা মেনে নিতে না পারলেও অদৃশ্য মায়ায় কিছু বলতে পারেনা। তার জন্য তারা তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করতে থাকে ক্ষনে ক্ষনে। আর গ্রাফির ওপর বাড়তে থাকে স্বজাতির সাথে বিশ্বাস ঘাতকতার বোঝা। কিন্তু এই বোঝা ক্ষমতার এই দাপটে গ্রাফিকে ছুতে পারেনা। একদিন অভিযাত্রীদের সামনে আসে এক কুকুর দম্পতি। সব জানার পরে শান্তির জন্য তারা অভিযাত্রীদের পথ ছেড়ে দেয়। এতে দলের সবাই খুশি হয়। আবার তারা তাদের যাত্রা শুরু করে। কিন্তু গ্রাফির নজর গিয়ে পরে দম্পতির সুন্দরীটির দিকে। পৃথিবীর সব কিছুই তার কেন নয় এমন চিন্তায় মগ্ন থাকা গ্রাফি ভুলে যায় তার অঙ্গীকার, তার দায়িত্ব। পথভ্রষ্ট তরুন পশুটি তীব্র দাপটে মেরে ফেলতে চায় আরেক সুন্দরী পশুর স্বামীকে। দায়িত্বের কাছে বন্দী নিষ্পাপ কুকুরটিও তীব্র বিক্রমে পালটা আক্রমন করে। শুরু হয় পাপ আর কর্তব্যের লড়াই। কর্তব্যের কাছে পাপ যখন ধরাশায়ী তখন গ্রাফি সাহায্য যায় আগন্তুকত্রয়ের। কিন্তু লক্ষ্যের কাছে বন্দী আগন্তুকত্রয় বুঝতে পারে এখানেই শেষ করার সময়। নেশার কাছে অন্যায় কে প্রশ্রয় দিলে প্রকৃতিও তাদের ক্ষমা করবেনা। তারা নিষ্পাপ সাহসী পশুটিকে নির্দেশ দেয় এই অহমিকার ইতি টানতে। সন্মান আর ভালবাসার কাছে পরাজয় ঘটে ভয়ের। আগন্তুকত্রয় গ্রাফিকে পিছে ফেলেই এগুতে থাকে নিজেদের লক্ষ্য জয়ে। তাদের যাত্রার শেষ কোথায় তারা জানেনা। শুধু জানে একটি কালো অভিযাত্রার শেষ তারা করতে পেরেছে।
©somewhere in net ltd.