![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মহাবিশ্বের যতগুলো ধীর প্রক্রিয়া আছে তার মধ্যে অন্যতম ধীর প্রক্রিয়া হোল বিবর্তন।ভাবছেন এ এমন কি ধীর আর,আমার নেট কানেকশানে তো ফেইসবুক এর হোম পেজ আসতেই ২০ মিনিট লাগে।আসলে আপনার ধারনাটি ঠিক নয়, বিবর্তন প্রক্রিয়ার একটি ধাপ সম্পন্ন হতেই লাগে লক্ষ বৎসর।লক্ষ লক্ষ বৎসর ধরে অভিযোজন আর DNA এর মধ্যে ঘটে যাওয়া দৈবাৎ কোন পরিবর্তনের ফলে ঘটে এই ধীর প্রক্রিয়াটি।যার জন্য প্রয়োজন হয় দূর মহাকাশ থেকে আসা কসমিক রে বা মহাজাগতিক রশ্নি।এভাবে এক প্রজাতির প্রাণীর দেহে ঘটে যাওয়া পরিবর্তনের ফলে তৈরি হয় নতুন আর একটি প্রজাতি।কিন্তু প্রশ্ন হোল কেন এই আকাইমা প্যাঁচাল ??
যদি আপনি পেছনে ফিরে তাকান,তবে দেখতে পাবেন এককোষী জীব তার টিকে থাকার প্রয়োজনে কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি করল।আগে সে এক কোষের সাহায্যেই খাওয়া থেকে শুরু করে তার সকল প্রকার কাজ চালাত।পরে ধীরে ধীরে সে বিভিন্ন কোষ গুচ্ছের ওপর কাজ ভাগ করে দিতে লাগল।যার ফলে তৈরি হোল বিভিন্ন টিস্যু।ভিন্ন ভিন্ন টিস্যু, ভিন্ন ভিন্ন কাজ করত।এ ধরনের সবচেয়ে আদি প্রাণীদের ফসিল পাওয়া যায় আজ থেকে প্রায় বিলিয়ন বৎসর আগে।আর এখনকার প্রাণী, যেমন মানুষের শরীরে তো অনেক রকম টিস্যু, যারা আলাদা কাজ করার মাধ্যমে আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে।আমরা বিবর্তনের পথ ধরে আরও একটু এগিয়ে আসি সেই আদি মাছদের কাছে, যাদের ছিল একটি স্পাইনাল-কর্ড বা নটোকর্ড।নটোকর্ড এর সামনের দিকে থাকত একটি ছোট স্ফীত অংশ যা তাদের মস্তিষ্ক।এর ওজন কিন্তু ছিল খুব কম প্রায় ১ গ্রাম এর মত।এই স্ফীত অংশটিই উন্নত প্রাণীদের মধ্য-মস্তিষ্ক(কিছু কিছু প্রাণীর ক্ষেত্রে) বা পশ্চাৎ-মস্তিষ্ক।প্রাণের বিবর্তনের ফলে আধুনিক প্রাণীদের স্পাইনাল কর্ড, পশ্চাৎ-মস্তিষ্ক,মধ্য-মস্তিষ্কের পাশাপাশি নতুন তৈরি হয়েছে আর একটি অংশ সম্মুখ-মস্তিষ্ক(Forebrain) যার তিনটি স্তর।স্তরগুলোর প্রথমটি হোল Reptile Complex(সরীসৃপ Complex ) বা R-Complex, লিম্বিক সিস্টেম ও নিও কর্টেক্স।
আসলে এই তিনটি নতুন স্তর তৈরি ও বিশেষত্ব অর্জনই আমাদেরকে বুদ্ধিমান প্রাণী হিসেবে বিকশিত করেছে।এখন একটি বিষয় লক্ষ্য রাখার মত যে,নতুন স্তর সংযোজন এর সাথে কিন্তু পুরনো স্তর-গুল পুরোপুরি লোপ পায় না।বরং নতুন স্তরগুলোর পাশাপাশি পুরনো স্তরগুলোও থাকে।একটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে।মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর ভ্রুনাবস্থায় এখনো ফুলকারন্ধের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়, যেটি কিনা আরও নিম্ন জলজ প্রজাতির বৈশিষ্ট্য।প্রাণীরা উন্নত হবার সাথে সাথে তাদের ফুলকা-রন্ধ বিবর্তিত হয়ে ফুসফুস এ পরিণত হয়েছে।কিন্তু ভ্রুনাবস্থায় এখনো তারা ফুলকা রন্ধের সাহায্যে কাজ চালায়,যেটি আবার চালিত হয় নাভি-রজ্জু দ্বারা।এসব আলোচনা থেকে স্পষ্টতই বোঝা যায় যে আমাদের মস্তিষ্ক যতই বিবর্তিত হোক না কেন,এরা অবশ্যই ধারণ করে এদের আদিমতম পূর্বপুরুষদের কিছু Anatomical অংশ।যার স্বভাবতই থাকতে পারে কোন Physiological Function ও।পূর্বে বর্ণিত তিনটি নতুন স্তরগুলো আসলে উন্নত প্রাণীদের বৈশিষ্ট্য।এদের মধ্যে আবার প্রথমে বিকশিত হয়েছে R-Complex অংশটি এবং পরবর্তীতে প্রাণ আরও বিকশিত হবার ফলে লিম্বিক সিস্টেম ও নিও কর্টেক্স এর আবির্ভাব হয়েছে। R-Complex এর প্রথম আবির্ভাব ঘটে আজ থেকে প্রায় কয়েকশো মিলিয়ন বৎসর আগে।এটি প্রথম বিকশিত হয়েছিল এক প্রজাতির Reptile বা সরীসৃপদের মধ্যে।এর জন্যই এর নাম রাখা হয় R-Complex ।পরবর্তীতে এই Reptile Complex আরও বিবর্তিত হয়েছে ও তার বাইরে সংযোজিত হয়েছে লিম্বিক সিস্টেম ও নিও কর্টেক্স। R-Complex এর বিবর্তন হয় মধ্য-মস্তিষ্কে এবং আশ্চর্যের বিষয় যে কয়েক মিলিয়ন বছর পূর্বে সরীসৃপদের মধ্যে বিকাশ পাওয়া মস্তিষ্কের একটি অংশ এখনও সক্রিয় রয়েছে,আমাদের মত আধুনিক মানুষদের মধ্যেও।“ল্যাবরেটরি অফ ব্রেইন ইভুলুসন এন্ড বিহেভিয়ার” এর প্রধান বিজ্ঞানী পল মাকলি দেখিয়েছেন যে,আক্রমণাত্মক আচরণ,আধিপত্যবাদমুলক কাজ এবং সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে R-Complex বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।কিছু বিরল ব্যতিক্রম ব্যতীত এটি ধারনা করা হয় যে আধুনিক মানুষের আমলাতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক আচরণের ক্ষেত্রে এটি যথেষ্ট প্রভাব ফেলে।কিন্তু আমারা আমাদের প্রতিবেশীদের সাথে ঝগড়া বা জোর করে সম্পত্তি দখল করবার ক্ষেত্রে আমাদের আচরণের ঠিক কতটুকু অংশ এই R-Complex দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় তা হিসেব করে বলা কঠিন।তবে এটুকু নিশ্চিত করেই বলা যায় আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, রাজনৈতিক মারপ্যাঁচ,ঝগড়া-বিবাদ ও অধিকার আদায়ের মরনাত্তক চেষ্টার সাথে যারা জড়িত তাদের এই আর কমপ্লেক্স সাধারণ মানুষের চেয়ে একটু বেশি সক্রিয়।আর এ কারণেই তাদের মধ্যে বর্বর সরীসৃপদের মত আচরণের আধিক্য লক্ষ্য করা যায়।তাদের মধ্যে এই অংশ বেশি সক্রিয় বলেই তারা এসব পেশায় ও জটিলতায় জড়িয়ে যায়।এসব আমলা-তান্ত্রিক ও রাজনৈতিক ব্যাপার যদি নিয়ন্ত্রিত হয় আর কমপ্লেক্স দ্বারা তাহলে কি মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী হবার তেমন কিছুই নেই ???
এ ব্যাপারে আশার বানী দেখিয়েছেন “ হিমাংশু রিচারচ ল্যাব(HRL)” এর বিজ্ঞানীরা।তারা জানায়,মানুষের মত আধুনিক প্রাণীর ৮৫% কার্যক্রম নিয়ন্ত্রিত হয় নিও কর্টেক্স দ্বারা।আর বাদবাকি ১৫% নির্ভর করে লিম্বিক সিস্টেম ও আর কমপ্লেক্স এর উপর।আর মানুষের মত প্রাণীরা Extra somatic বা মস্তিষ্ক কোষ-জাত নয় এমন বুদ্ধিমত্তারও অধিকারী।সেটা তারা অর্জন করেছে বিজ্ঞান, সাহিত্য ও শিল্পকলা বিকাশের মাধ্যমে।তাই আর কমপ্লেক্স সবার ক্ষেত্রে অতোটা ভুমিকা রাখতে পারে না।পারে শুধু তাদেরই, যাদের ক্ষেত্রে এই অংশ বিশেষ ভাবে সক্রিয়।HRL এর বিজ্ঞানীরা জানান আসলে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের এরকম নিম্ন-প্রজাতির বর্বর আচরণের কারণও এই আর কমপ্লেক্স।তবে যেসব মানুষদের মধ্যে এই অংশ বেশি সক্রিয় তাদেরকে তারা এসব পেশায় না যেতে অনুরোধ করেন।ও পরামর্শসুচক ভাবে বলেন এদের উচিত নিয়মিত বিজ্ঞান, সাহিত্য ও শিল্পকলার চর্চা করা।এতে তাদের নিও-কর্টেক্স , আর কমপ্লেক্সকে প্রশমিত করার সুযোগ পাবে।
আর সার কথা এই যে বাংলাদেশ সহ সকল দেশের রাজনীতিবিদদের উচিত তাদের নিও-কর্টেক্স দ্বারা আর কমপ্লেক্সকে প্রশমিত করার চর্চা করা।কারণ সাধারণ মানুষের মধ্যে এই আর কমপ্লেক্স খুব বেশি সক্রিয় হলেও বড়জোর ১০ জন মানুষের জীবন বিপন্ন করতে পারবে।কিন্তু একজন জাতীয় নেতার মধ্যে এই আর কমপ্লেক্স যদি নাও সক্রিয় হয় তবুও তার সামান্য একটি ভুলের কারণেও বিপন্ন হতে পারে লাখো মানুষের জীবন।আর আর কমপ্লেক্স খুব বেশি সক্রিয় হোলে কি হতে পারে তা ভাবাই যায় না।আর এর ফল ও আমরা(বিশেষ করে বাঙ্গালী জাতি) দেখতেই পাচ্ছি।তাই মানব জাতীর ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে সবার উচিত এসব বর্বরদের মানবীয় গুণাবলীর বিকাশ ঘটানো।কি ভাবতেছেন, তাইলে ওরা জাঁতটাই এইরকম ??!!
©somewhere in net ltd.