নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাঙলা

হিমাংশু কর

এমনকি মহাবিশ্বেরও শেষ আছে কিন্তু বোকামির শেষ নেই

হিমাংশু কর › বিস্তারিত পোস্টঃ

যুদ্ধ রঙ্গ।-১

১৯ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৫

দুই দিন আগে Nat Geo তে একটা পোগ্রাম দেখছিলাম। নাম Inside Indian army।শো-টির প্রথম থেকেই ইন্ডিয়ান আর্মিদের বিশাল কীর্তি ও গুণগান করা হচ্ছিল।দু একজন বীরের বীরত্বের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা করার পরই ঘোষণা করা হল, “এরকম বীরদের নিয়েই এগিয়ে চলে Indian Army, আর ইতিমধ্যেই গোটা দুটি বড় বড় যুদ্ধ জয় হয়েছে ।একটি ১৯৬৫ সালে(প্রথমটি নিয়ে আমার কোন আগহ নেই, তাই এটি নিয়ে কিছু বলব না)আর অপরটি ১৯৭১ সালে পাকিস্থানের সাথে ভারতের যুদ্ধ জয়।১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যুদ্ধ বিজয়ের পর উল্লাসে ফেটে পরে ভারতীয় বাহিনী।এইদিন পাকিস্থানি সেনাবাহিনীর ৯৫০০০ সৈন্যসহ জেনারেল নিয়াজি , ভারতীয় বাহিনীর কাছে পরাজয় স্বীকার করে।আর এই যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে জন্ম হয় নতুন একটি দেশ, বাংলাদেশ।



কি সুন্দর বক্তব্য।পাকিস্থানি বাহিনী ভারতীয় বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে পরাজয় স্বীকার করল আর জন্ম হল বাংলাদেশ নামে একটি নতুন দেশের।ব্যাপারটা কিছুটা এইরকম যেন, একটি মদ্দা হাতি একটি মাদি হাতির সাথে সঙ্গম করার ফলে কিছুদিন পর একটি জিরাফের বাচ্চার জন্ম হল। হাস্যকর বটে।পাকিস্থানি বাহিনীর সাথে ভারতীয় বাহিনীর যুদ্ধের কারনে বাংলাদেশ জন্ম নিলে সেটি কি ভারতের অধীনে একটি প্রদেশ হবার কথা ছিল না? তবে ভারত কেন জিরাফ জন্ম নেবার কথা প্রচার করে বেরায় ?



ভারতের এই রকম বক্তব্যের কারনে দক্ষিন এশিয়া সম্পর্কে জানে না এমন কারো মনে হতেই পারে পাকিস্থানের দুই প্রদেশ, পশ্চিম পাকিস্তান আর পূর্ব পাকিস্থান এই দুই প্রদেশই বোধহয় ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে।



মুলত ১৯৭১ সালের যুদ্ধটা ভারত-পাকিস্থান যুদ্ধ ছিল না।যুদ্ধটা শুরু হয় পাকিস্থানের দুই প্রদেশ, পূর্ব পাকিস্থান আর পশ্চিম পাকিস্থানের মধ্যে।পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ তাদের ন্যায্য অধিকার নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে ৭১ সালের আগে থেকেই সংগ্রাম করে আসছিল। আর ২৫-শে মার্চ অপারেশন সার্চ লাইটে নিরস্ত্র ও বেসামরিক জনগোষ্ঠীর উপর কাপুরুষ ও নিতান্ত বর্বর ধরনের আক্রমণের পর পূর্ব পাকিস্থান-পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ ও স্বাধীনতা ঘোষণা করে।পরে ভারত পূর্ব-পাকিস্থানকে সমর্থন করে যুদ্ধে সহায়তা করলে ভারতীয় সৈন্য বাংলাদেশের(কারন তখন আর দেশটি পশ্চিম পাকিস্তান নেই) মুক্তিবাহিনির সাথে যৌথ বাহিনী হিসেবে যুদ্ধ করতে থাকে।এবং ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যুদ্ধে জয়লাভ করে।পাকিস্থান সেনাবাহিনীর পক্ষে জেনারেল নিয়াজি যৌথ বাহিনীর কাছে পরাজয় স্বীকার করে।পাকিস্থান বাহিনীর এই পরাজয় স্বীকার অবশ্যই ভারতীয় বাহিনীর কাছে করে নি, এমনকি বাংলাদেশের একক বাহিনীর কাছেও না। যেটা সত্য সেটা স্বীকার না করা হীনমন্য জাতীর পরিচয়।



ভারত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যেটা প্রচার করে সেটা আসলে ভুল এবং পাশাপাশি মিথ্যা প্রচার।তারা নিজেরা মনে করতে পারে আমরা পাকিস্থানের সাথে যুদ্ধ করেছি, কিন্তু এটা প্রচার করা অবশ্যই অনৈতিক হবে যে সেই যুদ্ধে একটি নতুন দেশ বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে।বাংলাদেশের মানুষ তাদের নিজেদের প্রয়জনেই যুদ্ধ করেছে।আর সে যুদ্ধে জয়লাভও করেছে।তবে সেটা অবশ্যই ভারত-পাকিস্থান যুদ্ধ না , এমনকি পূর্ব পাকিস্থান–পশ্চিম পাকিস্থান গৃহযুদ্ধও না এবং সেটা অবশ্যই বাংলাদেশ পাকিস্থান যুদ্ধ। কারন বাংলাদেশ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েই যুদ্ধ করেছে।



বেশ কিছুদিন আগে প্রথম আলো পত্রিকায় ছাপানো একটি খবর নিয়ে বেশ আলচনার ঝড় বয়ে যায়।তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করেছে।প্রথম আলো বর্জন কর, এই কর , সেই কর বিশাল এক হুরুস্থুল কান্ড।এই রকম ঘটনার ব্যাপারে আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর নাগরিকদের কিছু জিনিস ভাবা দরকার।যদিও আলু পত্রিকা খুব বেশি গৌরব আশা করতে পারে না, তবুও এক্ষেত্রে প্রথম আলোর চাইতে ভারত ও তার বিশিষ্ট নাগরিকদের দোষ ও ভুলের পরিমান অনেক বেশি।কারন যে খবরটি নিয়ে এত হৈচৈ, সেটি ছিল ভারতের রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রচার করা বিবৃতির ফলাফলেরর জন্য আইএএনএস-র বক্তব্যের বাংলা অনুবাদ।তাই এক্ষেত্রে পত্রিকার চাইতে যে দেশের কারনে এই খবর তার দায় অবশ্যই বেশি।এ ব্যাপারে সবাই একমত হবার কথা।কোন একটি পত্রিকা তার কাটতি বাড়ানোর জন্য কোন বিশেষ খবর অনুবাদ করে ছাপাতেই পারে। সেক্ষেত্রে বক্তব্যের দায়ভার পত্রিকার থেকে বক্তব্য প্রদানকারী বেক্তিটিরই বেশি।



তবে সুখের বা দুঃখের বিষয় যাই হোক না কেন, আমাদের দেশের লোকজন যুক্তির উপর যতটা না নির্ভর করে তার চেয়ে হাজার গুন বেশি নির্ভর করে ঝোঁকের উপর। প্রথম আলোর প্রকাশিত সংবাদের জন্য তারা ঐ বিশেষ দেশটির বা তার কর্তাব্যেক্তিদের উপর রাগ না ঢেলে সমস্ত রাগ প্রথম আলোর উপর ঢালল। ব্যাপারটা আসলে স্বাভাবিক হত তখনই যদি লোকজন তাদের ক্ষোভটা বেশিরভাগ ঢালত ঐ বিশেষ দেশের কর্তাবেক্তিদের উপর, অল্প কিছু ঐ দেশটির মানুষদের মনোভাগ ও যুক্তিবোধের উপর আর বাকিটা আলু পত্রিকার উপর।কিন্তু আমাদের দেশে একদল লোক আছে যারা রামছাগলের মত হুজুগের উপর নির্ভর করে তাদের আবেগের লাগাম পরিচালিত করে।তারা কিছুটা এ রকম যে , প্রায় যেকোনো কিছুরই বিরোধিতা করতে পারে।বিরোধিতাটা কাদের উপর আর কতটা করা উচিত, সেটা যৌক্তিক না অযৌক্তিক কিংবা কতটা যৌক্তিক সেটা ভাবার ক্ষমতা তাদের নেই।আসলে সাধারন মানুষ ছারাও এক শ্রেনির বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর লোক আছে যারা অতি সচেতনতার জন্য যে কোন কিছুর বিপক্ষে যায়।জানা যায়, পশ্চিম বঙ্গে যখন প্রথম কম্পিউটার আনা হয় তখন সেখানে একশ্রেণীর বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীরা বিশাল এক আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। তাদের আন্দলনের চোটে তখন কম্পিউটার সরবরাহ করাই নাকি প্রায় অসম্ভব হয়ে পরেছিল।বিরোধীদের দাবি ছিল দেশে কম্পিউটার আসলে নাকি দেশের মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। কারন কম্পিউটার দিয়ে কাজ করা হলে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান নস্ট হবে ইত্যাদি, ইত্যাদি ।যাই হোক এরা এক শ্রেণীর তথাকথিত বিপ্লবী যারা তাদের অজ্ঞানতার জন্য সব বিষয়েরই বিরোধিতা করতে পারে।যা প্রাচীনকালে একবার শুনেছিল সেই মহিমান্বিত জ্ঞান নিয়ে বসে আছে।



এবার পত্রিকার ব্যাপারে আসি।পত্রিকার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হল তাদের কাটতি বাড়ান, সেটা যে করেই হোক।যে খবরটি নিয়ে এত আলোচনা ও সমালোচনা হয়েছে সে খবরটি ছাপানো ছাড়া তাদের আর উপায় ছিল না সেটা আমরা বুঝতেই পারছি।কিন্তু খবরটি ছাপানর পর খবরটির নিচের দিকে দু এক লাইন ফুটনোট দিতে পারত।যাতে পুরো বিষয়টি সাধারন মানুষ সহজভাবে নিতে পারে।কিন্তু তারা সেটিও করেনি, কারন তাতে হয়ত অনুবাদের মান খারাপ হয়ে যেতে পারে(!?)। যাই হোক এটা স্পষ্ট যে এই পত্রিকার কাছে দেশের স্বাধীনতার প্রশ্নের চেয়ে অনুবাদের মানের প্রশ্ন অনেক বড়।তবে আমি কিন্তু দুটি জিনিস বুঝতে পারি নি। এক, যে বক্তব্যে আমাদের দেশের স্বাধীনতা নিয়ে ভুল ও বিতর্কিত তথ্য থাকে তা একটি পত্রিকায় ছাপানো আবশ্যিক হয়ে যায় কি করে ?? আর একটি ফুটনোট অনুবাদের মান কমায় কিভাবে (কর্তিপক্ষের বয়ান অনুযায়ী)? ?



(.........চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.