![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শুক্রবার সকালে যখন ঘুমের শীর্ষবিন্দুতে অবস্থান করছি,
স্বপ্নের ঘোরে বিছানা থেকে ধপ
করে সরাসরি নিচে। ঘুম ভেঙেই
আসে পাশে তাকালাম কেউ
দেখে ফেলেছে কিনা কে জানে। কেউ নেই
দেখে যেই না আবার শুতে যাব তখনি রবি আমার
কোলের মধ্যে ধুপ করে বসে বললো, "আব্বু,
আমি দেখেছি, দেখেছি।" মোটামুটি অবাক হবার
ভান করে জিজ্ঞাসা করলাম কি দেখেছ সোনা?
তাতে ও যা উত্তর দিল, আমি কল্পনাও করতে পারিনি,
১০০০ ভোল্টের শক খেলেও হয়ত অমন অবস্থা হত
না আমার। ওর সোজা উত্তর, "তুমি কাল আম্মুকে চুমু
খেয়েছ, দেখেছি"। এখন আমি যদি ওকে নিষেধ
করি কাউকে না বলার জন্য, তাহলে ও
সবাইকে বলে দিবে, even ওর দাদা দাদিকেও বাদ
দিবে না। সুতরাং অন্য রাস্তা ধরতে হবে। আমি ওর
কপালে, চোয়ালেও কয়েকটা চুমু দিয়ে বললাম, "এই
নাও তোমাকেও দিলাম।" বেশ খুশি হল ও, বুঝলাম, কাজ
হয়েছে। আমদের কথাবার্তা শুনে রান্না ঘরের দরজার
ওপাশ থেকে রুহি বলল,
"নাস্তা সেরে রেডি হয়ে নাও,
একটা কাজে যেতে হবে, আমি আব্বু আম্মুর ওষুধ
টা দিয়ে আসছি। আর হ্যা, রবিকে আজ নিয়ে যাব না,
ও দাদা দাদির কাছে থাক আজ।" আগের
থেকে আমাকে সবকিছু জানিয়ে রেখেছিল বলে নতুন
করে কিছু জিজ্ঞাসা করলাম না। চুপচাপ
রেডি হয়ে নিলাম। ড্রাইভার চাচাকেও আগেই
বলা ছিল, চাচাও গাড়ি বের করে রেডি। সব কিছু
বুঝিয়ে দিয়ে আমি রুহি গাড়িতে চড়ে বসলাম, আমার
পাশে রুহি, রাস্তায় সংসার আব্বু আম্মু
রবি সবাইকে নিয়েই কথা হল।
গাড়ি এসে থামলো বিখ্যাত এক গাইনী ডাক্তারের
চেম্বারের সামনে। ভিতরে গেলাম আমরা, report
গুলো দেখলেন ডাক্তার ম্যাডাম, চোখমুখ ঠিক আগের
কয়েকজন ডাক্তারের মতই অন্ধকার হয়ে গেল। অল্পকিছু
কথার পর আমি আর কথা বাড়ালাম না, এসে আবার
বসলাম গাড়িতে, এবার আমার আরো অনেক
কাছে বসলো রুহি, আমার বুকে মাথা রেখে।
মাঝে মাঝে নাক টানার শব্দ হচ্ছে,
মাথাটা ঝাকি দিচ্ছে মাঝে মাঝে। আমি চুলের
মধ্যে বিলি কেটে দিচ্ছি, বুকের
সাথে আলতো করে চেপে রেখেছি নিরব
সান্তনা হিসেবে, কারন সরব সান্তনা দেবার
ভাষা আমার জানা নেই, বাবা হতে পারব
না বলে যেখানে নিজেকেই সান্তনা দেবার
ক্ষমতা আমার নেই, তাহলে মা হতে পারার
অক্ষমতা কে আমি কোন সাহসে সান্তনা দিতে যাই।
রবির বয়স ২৩ দিন পর ৪ হবে। কোন মায়ের কোল
খালি থাকে না, সৃষ্টিকর্তা হয়ত রাখেন না, মাতৃত্ব
কে অবহেলার ক্ষমতা তিনিও অর্জন করতে পারেন নি,
ভরে দিয়েছেন রুহির কোলও, যেদিন প্রথম
জেনেছিলাম মা হওয়ার অক্ষমতার কথা। দু:খিত, একটু ভুল
হয়ে গেল, সন্তান জন্ম দিতে পারেনি রুহি, কিন্তু
মা সে ঠিকই হয়েছে, সবাই যা পারেনা ও
তা পেরেছে, হাসপাতালের একটি মানুষের
বাচ্চা পরিচয়ের মেয়েকে নিজের
মেয়ে বানিয়েছে, স্বপ্ন তৈরি করেছে, স্বপ্নের নাম
রেখেছে "রবি"। এসব ভাবতে ভাবতেই বাসায়
চলে এসেছি, রবি তখন গেটে দাড়িয়ে আমাদের জন্য
অপেক্ষা করছে, দেখতে পেয়েই জোরে চিতকার
দিল,"আম্মু, আম্মু আম্মু, রুহি তখন শাড়ি আচল দিয়ে চোখ
মুছতে মুছতে রবির বাড়ানো হাতের
দিকে এগিয়ে যাচ্ছে....আমি দাড়িয়ে আছি মা মেয়ের
মিলন দেখার অপেক্ষায়...
©somewhere in net ltd.