![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজ আপনাদের সাথে অন্য রকম এক ভালবাসার গল্প শেয়ার করবো।জানি এটা কেবল আমার একার ভালবাসা নয়।সামুতে এ রকম ভালবাসার মানুষ অনেক আছে।যুদ্ধ,রাজনীতি আর ঈশ্বর নিয়ে লেখা পড়তে পড়তে মহা বিরক্ত।তাই সবাইকে ফেলে আসা ভালবাসার কথা,ভাল লাগার কথা মনে করিয়ে দেবার জন্য আজকের এ লেখা।
আমি গ্রামের মানুষ।পাহাড় আর চা-বাগানের পরিবেশে মানুষ হওয়া।শহরের মানুষগুলো যাদের বাগানি বলে ডাকে।শহরে আসার পর জানতে পারলাম বা শুনলাম"বাগানি"শব্দটা।এটার গল্প না হয় অন্যদিন করা যাবে।আজ আপনার-আমার ভালবাসার গল্প করি।
কৈশোরে নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি টান মনে হয় কম-বেশি সবার থাকে।এক বড় ভাইয়ের মুখে শোনা রসময় গুপ্ত নামের নাকি একজন লেখক আছে যে কিনা অনেক ভাল লিখে।তো তার বই কোথায় পাওয়া যায়?আমাদের বাজারের লাইব্রেরিতে নাকি পাওয়া যায় না।বাড়ি থেকে ৯ কি:মি দূর রেলওয়ে ষ্টেশনের।আমার নিজের সাইকেল ছিল না।বন্ধুর সাইকেল নিয়ে প্রখর রোদে রওয়ানা দিলাম।তখন আমি ক্লাশ সেভেন এর ছাত্র।আমার জানা ছিল না রসময়গুপ্ত কি নিয়ে লেখে কেবল শুনেছিলাম বইগুলো নাকি পড়তে হেব্বি লাগে।সোজা গিয়ে দোকানদার কে বলেছিলাম রসময় গুপ্তের একটা বই দেন তো।পকেটে ৩০ টাকা ছিল।আশে-পাশে কিছু যুবক পত্রিকা পড়ছিল।তারা বা দোকানদার আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো,যে কি বলবো।মনে হচ্ছিল আমি বিরাট কোন অপরাধ করে ফেলেছি।আমি আবার বললাম আছে নাকি তার বই?লোকটি মাথা নেড়ে না করে দিল।কবে আসবে? উত্তরে জানালো,জানে না।এতো কষ্ট করে আসাটাই বৃথা হলো।তারপর একটা বইয়ের উপর চোঁখ আটকে গেল।''প্রেতাত্মা-১,কাজি আনোয়ার হোসেন।"মনে করলাম ভূতের কোন কাহিনি হবে।সেটাই কিনে নিয়ে চলে আসলাম।
সেই থেকে সেবার সাথে ভালবাসা।যা কিনা আজ ও অটুট।মাসুদরানা থেকে তিন গোয়েন্দা।জুল ভার্নের অনুবাদ বইগুলো ছিল অসাধারন।তারপর একদিন পরিচয় হলো রক বেননের সাথে।রক বেননের হাত ধরে বিদ্যুৎ এরফান।স্বপ্নে কতোদিন টেস্কাস থেকে মেক্সিকো ঘুরে এলাম।ভাবতাম যদি এরকম একটা খামার হতো।একপাল ঘোড়া হতো।নায়িকাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারতাম।কেউ ভয়ে লাগতে আসতো না।সবাই রক বেনেন বা এরফান মনে করতো।তিন গোয়েন্দাদের দলে মিশে নিজে হয়ে গেলাম কিশোর।কতো চুরির আর রহস্যর সমাধান করে দিলাম
মাসুদ রানা আমার জীবনের প্রথম ভালবাসা।অগ্নি পুরুষ পড়ার পর কতো বার কেঁদেছি তার হিসেব রাখিনি।আজ প্রায় ১৭ বছর।ভালবাসা একটু ও কমেনি।মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ আমি।সবসময় বই কিনতে পারতাম না।মাসের শেষে যখন মা কিছু টাকা দিত তা নিয়ে সোঁজা হাজির হতাম রেল স্টেশন।ওয়েস্টার্ন,মাসুদ রানা,তিন গোয়েন্দা নয়তো বা জুল ভার্ন।চিন্তা করতাম একদিন বড় হবো।টাকা থাকবে পকেটে মনের মতো বই কিনবো।ডিবিবিএল এ চাকুরী করার সময় জীবনের প্রথম বেতন দিয়ে পছন্দের ১৩টা বই কিনে নিয়ে গিয়েছিলাম।বাড়ীতে যাবার পর ছোট্ট বোন বললো মানুষ প্রথম বেতনের টাকা দিয়ে মায়ের জন্য না হয় বোনের জন্য কিছু কিনে আনে,আর তুমি আনলে বই!!আমার মা সেদিন মুচকি হেসেছিল।
দেশে আমার রুমের লাইব্রেরিতে আজ ২১০০ মতো সেবা প্রকাশনীর বই।আমার মা অনেক যত্ন নেয় বইগুলোর।মাকে বলেছিলাম এ ভালবাসা আমি আমার সন্তানগুলোর মাঝে ছড়িয়ে দেব।আমি জানি না আজকাল কার কৈশোর ছেলে বা মেয়েগুলো বই পড়ে কিনা?সেবা প্রকাশনী বা মাসুদ রানার নাম জানে কিনা?আজকাল তো আর টাকা দিয়ে বই কিনতে হয় না।অনলাইনে চাইলেই পড়তে পারে।কতো সহজ এখন!!আজ এতোটা দিন পর ও যখন এই দূর প্রবাসে বসে সেবা প্রকাশনীর বইগুলো পড়ি নিজের মাঝে সেই আগের দেখা স্বপ্নগুলো উঁকি দেয়।স্মৃতির জানালায় অনেক কিছু এসে কড়াঘাত করে।
আপনাদের বলতে ভূলেই গিয়েছিলাম কলেজে উঠার পর কিন্তু সেই গুপ্ত মহাশয়ের বই পড়ে ছিলাম ।জানি আমাকে এখন আপনাদের খারাপ মনে হচ্ছে।আমি ভনিতাটা করতে জানি না,তাই সব কিছু স্বীকার করতে পারি বা সত্যটা বলতে বা লিখে জানাতে পারি।কারন শহুরের মানুষগুলোর কাছে যে আমরা বাগানী!!!
২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ২:৪১
কবি এবং হিমু বলেছেন:
২| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:৫৯
চাঁদগাজী বলেছেন:
বাগানের পাগান
২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:১০
কবি এবং হিমু বলেছেন: লেখাপড়া কমতো তাই পাগানটা কি জিনিস বুঝলাম না।একটু বললে ভাল হয়.
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:১০
Jahirul Sarker বলেছেন: অসাধারণ। অনুভূতির দুয়ার খুলে দিল।