নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি পাগল।আমি ভাল হতে চাই তাদের মতো যারা সমাজে অনাচার হওয়া দেখে ও রাতে সুখের ঘুম ঘুমাতে পারে....

কবি এবং হিমু

কবি এবং হিমু › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি অনেক কিছু শিখতে পারলাম,আপনারা পারবেন কি ?চেষ্টা করে দেখুন না...।

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:০৩

কয়েকদিন ধরে ৩০ লক্ষ নিয়ে সামুতে যে হারে লেখা হচ্ছে।একজন ব্লগার আরেকজনকে ছাগু,দালাল,পাকিদের বন্ধু বা বিরিয়ানীখোর নানা রকম ভাবে সম্বোধন করেছেন।আমি এতো ভারী বিষয় নিয়ে লিখতে যাই না।আমার বাবা বলেছিলেন ইসলাম নিয়ে বা যে কারু ধর্ম নিয়ে যত গবেষনা করবে তোমার মাথায় ততই প্রশ্ন জাগবে।তার থেকে ভাল সামান্য কিছু দিনের মেহমান হয়ে নিজ ধর্মের ৫টি মূল বিষয় আকঁড়ে থাকো,সত্য কথা বলো তাহলেই নিজে একজন সত্যিকারের মুমিন হতে পারবে।দেশের ইতিহাস নিয়ে একজন আরেকজনকে গালাগালি না করে দেশের ভাল কি করে হয় সেটা চিন্তা করে সময় কাটানোই মনে হয় ভাল।৪৪ বছর চিন্তা করে তো জাতি দেখলো বাকি ৪৪ টা বছর চিন্তা না করে আসুন এক সাথে চলি।দেখি দেশটা সোনার হয় কিনা।
ভারী লিখা লিখতে হলে অনেক কিছু জানতে বা পড়তে হয়।কারটা পড়বো সেটাই ঠিক করতে পারি না।অমুকের লেখা ইতিহাস পড়লে তমুক দল বলবে এটা ভূল ইতিহাস।কিছু দিন ধরে চলে আসা এই লেখালেখিতে জানি না এ লেখাটা কতোটুকু সহযোগিতা করবে।একটি অনলাইন পত্রিকায় লেখাটি পড়লাম।অনেক কিছু জানতে পারলাম।হয়তো আমার মতো অনেকে লেখাটা পড়েছেন তারপর ও সামুতে লেখাটা শেয়ার করলাম।কোন রকম কলম চালানো ছাড়াই।
কায় কাউস
#০১
"... বাংলাদেশে কোন পরিসংখ্যানই নির্ভরযোগ্য নয়। একটা নজীর-বিহীন বিপ্লব, একটা সর্বাত্মক গৃহযুদ্ধের সময় হিসেব-নিকেশ পাওয়া তো আরো অসম্ভব, বিশেষ করে নিরপেক্ষ সংবাদ সংগ্রহের ওপর নিয়ন্ত্রণের কারণে। প্রচারণার কাজে আমরা যারা লিপ্ত ছিলাম, হতাহতদের সংখ্যা সম্বন্ধে সাংবাদিকদের আমরা অনুমান-ভিত্তিক একটা হিসাব দিতাম। অভিজ্ঞতার আলোকে তারা আমাদের অনুমানের ওপর নির্ভর করতে শিখেছিলেন। আমাদের অনুমান মতো মুক্তিযুদ্ধে তিন লাখ মানুষ মারা গেছে বলে বিদেশী মিডিয়া খবর দিয়েছিলো। শেখ মুজিবুর রহমানকেও আমরা সে সংখ্যাই বলেছিলাম। কিন্তু ক্ল্যারিজেস হোটেলের সংবাদ সম্মেলনে এবং ডেভিড ফ্রস্টের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে মুজিব ভাই তিন লাখকে কেন তিন মিলিয়ন (ত্রিশ লাখ) বলে উল্লেখ করেছিলেন তার কোন সঙ্গত ব্যাখ্যা আমি খুঁজে পাইনি। কোরিয়া কিংবা ভিয়েতনামে বছরের পর বছর স্থায়ী নৃশংস যুদ্ধেও আধ মিলিয়নের (পাঁচ লাখ) বেশি লোক মারা যায়নি॥"
- সিরাজুর রহমান / ইতিহাস কথা কয় ও নির্বাচিত রাজনৈতিক প্রবন্ধ ॥ [ শিকড় - ফেব্রুয়ারী, ২০০২ । পৃ: ৭৮-৭৯]
#০২
জুলফিকার আলী ভুট্টো শেখ মুজিবকে মুক্তি দিয়েছেন জানতে পেরে তাজউদ্দিন সাহেব সুসংবাদটি দেশবাসীকে জানানোর জন্য ৩ জানুয়ারী সোমবার রাত ১১ টা ৫০ মিনিটে টেলিভিশনে চার মিনিটের ভাষণ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন -
" দশ লক্ষাধিক মানুষের আত্মাহুতির মাঝ দিয়ে আমরা হানাদার পশুশক্তির হাত থেকে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা বিধৌত বাংলাদেশকে স্বাধীন করে ঢাকার বুকে সোনালী রক্তবলয়খচিত পতাকা উত্তোলন করেছি। কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা লাভের আনন্দ অপূর্ণ রয়ে গেছে। কেননা আমাদের মহান নেতা জাতির পিতা মুক্তির দিশারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এতদিন পর্যন্ত শত্রুর হাতে রয়েছেন।" (দৈনিক বাংলা, জানুয়ারী ৪, ১৯৭২)
শেখ মুজিব পাকিস্তান থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডন, দিল্লী হয়ে ঢাকায় আসেন ১০ জানুয়ারী। বিমানবন্দর থেকে নিজের বাড়িতে না গিয়ে সোজা চলে আসেন রমনা রেসকোর্সে অধীর আগ্রহে অপেক্ষারত লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাবেশে। দেশবাসীকে তিনি জানালেন -
"বর্বর পাক বাহিনী অন্তত: পক্ষে ৩০ লাখ বাঙালিকে হত্যা করে।" (দৈনিক বাংলা, জানুয়ারী ১১, ১৯৭২)
আমরা গ্রহণ করেছি শেখ মুজিবের তথ্যটি, নাকচ করে দিয়েছি তাজউদ্দিন সাহেবেরটি। অথচ বিপরীতটি হওয়াই উচিত ছিল। তাজউদ্দিন সাহেব নয় মাস যুদ্ধে ছিলেন, সার্বিক নেতৃত্ব দিয়েছেন সরকারের, যোদ্ধাদের, শরনার্থীদের, অভিভাবক ছিলেন বাংলাদেশের ভিতর আটকে পড়া সব মানুষের।মোটামুটি সব তথ্য তার কাছে পৌঁছাত।অপরদিকে শেখ সাহেব বন্দী ছিলেন পাকিস্তানে - দেশ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে॥
- ড. সাঈদ-উর রহমান / কালে কালান্তরে ॥ [ আফসার ব্রাদার্স - জুলাই, ২০০৪ । পৃ: ২০২ ]
#০৩
"... বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১০ই জানুয়ারী, ১৯৭২ সোমবার স্বাধীন বাংলাদেশে আসার পথে আগে লন্ডনে গেলে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রখ্যাত সাংবাদিক মি: ডেভিড ফ্রস্ট বাংলাদেশ সম্বন্ধে বঙ্গবন্ধুর এক বিশেষ সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছিলেন। ইংরেজিতে উক্ত সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময় এক প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন - একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে বাংলাদেশে "থ্রী মিলিয়ন" (৩০ লাখ) মানুষ শহীদ হয়েছেন্।
লন্ডনে প্রখ্যাত সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট-এর নিকট বঙ্গবন্ধু যখন "থ্রী মিলিয়ন" শহীদ হওয়ার কথা বলেছিলেন, তারও আট মাস আগে মুজিবনগরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামানের নির্দেশে সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভাতে রেডক্রসের সদর দপ্তরে পাঠানোর জন্যে ৫ই মে, ১৯৭১ (স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরুর মাসখানিক পরেই) বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটির সেক্রেটারী এম. ফখরুল হোসেন যে টেলিগ্রামটি টাইপ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দিয়েছিলেন, তাতেও তিনি আমার সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশে মিলিটারী ক্র্যাকডাউনে "থ্রী মিলিয়ন" (৩০ লাখ) শহীদ হওয়ার কথাই লিখেছিলেন।
এরপর কূটনৈতিক মিশনে ৫ই সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ আফগানিস্তানের কাবুল থেকে বাসে ইরানের তেহরানে পৌঁছানোর পর ১০ই সেপ্টেম্বর, শুক্রবার রাতে তেহরানে ভারতীয় দূতাবাসে রাষ্ট্রদূত এম. এ. রহমানের অফিস কক্ষে বসে তারই টাইপ মেশিন ব্যবহার করে ইরানের শাহেনশাহ মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলবীর নিকট পৌঁছে দেয়ার জন্য ১৫ পৃষ্ঠার যে চিঠিখানা ইরানের প্রধানমন্ত্রী আমীর আব্বাস হোভায়দার নিকট লিখেছিলাম, তাতেও আমি বাংলাদেশে মিলিটারী ক্র্যাকডাউনে "ফোর মিলিয়ন" (৪০ লাখ) শহীদ হয়েছেন লিখেছিলাম।
বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বাংলাদেশে আসার পথে লন্ডনে প্রখ্যাত সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্টের প্রশ্নের জবাবে যখন বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় "থ্রী মিলিয়ন" (৩০ লাখ) শহীদ হওয়ার কথা বলেছিলেন তখন সেটা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ জেনেছিলেন। তখন থেকে সংবাদপত্রে, টিভি, রেডিও ও অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমে এবং বিভিন্ন সভায় বক্তব্য রাখার সময় বাংলাদেশের সকল নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হওয়ার কথাই সব সময় বলেছেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বিভিন্ন প্রেস কনফারেন্সে, রেডিও, টি.ভি, মুভি ইন্টারভিউ-এ এবং সভায় ইংরেজিতে বক্তৃতা দেয়ার সময় সাংবাদিকগণ আমাকে প্রায়ই প্রশ্ন করেছেন - বাংলাদেশে একাত্তরে কত মানুষ শহীদ হয়েছেন? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তর দিতে যেয়ে কখনও "থ্রী মিলিয়ন" আবার কখনও বা "ফোর মিলিয়ন" বলেছি। ফলে শ্রোতারা আমার বক্তব্যকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেছিলেন।
যেহেতু বঙ্গবন্ধু শহীদ-এর সংখ্যা "৩০ লাখ" বলেছিলেন, তাই জাতির জনকের মুখ থেকে বের হওয়া উক্ত সংখ্যাটিকেই দেশবাসী স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ হওয়ার সঠিক সংখ্যা হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। ফলে আজও সেই সংখ্যাটি চালু আছে।
পঁচিশ বছর আগে "মিলিয়ন" এবং "বিলিয়ন" শব্দ দুটি বিদেশে বহুল প্রচলিত থাকলেও আমাদের দেশে ঐ ইংরেজি শব্দ দুটির ব্যবহার তখন খুবই সীমিত ছিল বিধায় একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমার ধারণা ছিল যে, "এক মিলিয়ন"-এর অর্থ হচ্ছে "এক লাখ"। আসলে "এক মিলিয়ন"-এর অর্থ যে "দশ লাখ" তা তখন জানতাম না। একাত্তরে আমি যখন বিভিন্ন প্রেস কনফারেন্সে "থ্রী মিলিয়ন" শহীদ হওয়ার কথা বলেছিলাম তখন আসলে "তিন লাখ" শহীদ হওয়ার কথাই বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমার অজান্তেই ৩০ লাখ শহীদ হওয়ার কথা বলেছিলাম। যার ফলে শ্রোতারা আমার বক্তব্যকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেছিলেন। মিলিয়ন শব্দের সঠিক অর্থ না জেনে ভুল বলায় আসলে আমাদের উপকারই হয়েছিল।"
- মুহাম্মদ নূরুল কাদির (এডভোকেট, সুপ্রীম কোর্ট। সাবেক ভ্রাম্যমাণ কূটনৈতিক প্রতিনিধি। মুজিবনগর সরকার।) / দুশো ছেষট্টি দিনে স্বাধীনতা ॥ [ মুক্ত প্রকাশনী - মার্চ, ১৯৯৭ । পৃ: ৩৪৫-৩৪৬]
#০৪
"... The next two weeks were dreadful. The non-Bengali men wherever they could be found were rounded up and several hundred of them were killed by some EPR and police personnel hurriedly retreating from the scene of the battle between the Pakistan army and our own forces composed of the EPR, police and students and workers. Some local men also joined with the EPR jawans in the indiscriminate killing of the non-Bengalis.
Two of the local (Kaptai) killers became very famous as they were in competition between them as to who would beat the other in the final score. One of them Abdul Jabbar was killed in India by the Mukti Bahini boys for his misdeeds. The other Shukkur Ali, who owned a meat shop in Kaptai Bazar, became a prominent political leader of Kaptai after the killing of Sk Mujib in 1975. He made a fortune by the grace of his mentors and by selling teak wood from the Kaptai forests. While those who understood the consequences of these killings were going through the most harrowing time, the killers were as nonchalant as the Pakistani soldiers.
'They demanded money from me. I gave them everything I had and now they are killing me', lamented Guljuddin Khan Pathan, a contractor, while he was waiting in the death row. As the executions were going on, the women and children of the nearby housing colony who could see the killings were screaming in fear and distress. Hell broke loose on us.
A non-Bengali man clad only in a loin cloth and totally emaciated appeared from no-where and before he could open his mouth a hue and cry was raised "Spy, spy...' and before I could render any help to him the three or four men who were around beat him black and blue within seconds. I just managed to stop them from killing him and asked the man who he was but he could hardly talk. He had an empty bowl in his hand and I could see that he had not eaten anything at least for a few days and he came out of his hiding to beg for some food. His teeth were very clean and well taken care of. I sensed he came from a good social standing and some how escaped the killers.
One of the young men from the crowd offered to take him to the non-Bengali camp on the other side of the river but I think the man would die before he could walk that distance after the hard beating he got or he would be killed on the way by some other brave men. He was allowed to go with his escort. I thought he had no chance of surviving even if he reached the camp.
Two or three days later when the situation was more desperate for us I was surprised to see the man near our compound. He reduced further to simply skin and some bones. I did not know what to do. This man would surely incriminate me when the army would come because he saw me moving with a rifle.
I raised the rifle to my shoulder and took aim at where his weak heart was beating like hell. The man could hardly raise his hands asking for mercy and his lips were trembling. I did not know what he was murmuring about. Probably he was begging for mercy or may be he said, 'Shoot me, I can't take any more. I have lost every one and now kindly press the trigger'. I paused and thought that only a few days ago I risked my life trying to save Javed's and now I was about to shoot some one for my own safety.
I took a great risk. Slowly I lowered the rifle and drove away. When I returned in the evening I thought I would give the man some food from my scanty share and save him from starvation. But I couldn't find him. I guess he staggered away to the nearby jungle to die a peaceful death. I felt bad that I couldn't save his life and yet two decades later I have reasons to feel good that I didn't press the trigger on him. By chance if he is alive to-day he would often remember me, if not with reverence, at least not with hate.
... Through the day and night bus loads of EPR men withdrawing from remote border areas were leaving for Chittagong to join others. The non-Bengali EPR men were killed by their colleagues/ Some of them were thrown overboard in the lake with their hands and feet tied with ropes, we were told. At night when the buses and trucks sped for Chittagong the resulting noise was simply frightening, raising our agony and tension.
... Unfortunately, the Indian Muslims were totally against Bangladesh. The Calcutta Muslims used to hold religious functions and meetings in which they made use of every opportunity to criticize us and accuse India for working against Pakistan. The attitude of the West Bengal Muslims was so bad that the Government of India had to take precaution against communal riots breaking out. Fleeing Bengalis in distress were very badly treated even by their relatives on the Indian side of the border, some were not given even temporary shelter for a few days.
To be honest we also gave them very harsh treatment. A large number of Muslims who migrated from South India, Bihar and even West Bengal to East Bengal after the partition of India in 1947, and even their children who were born in Bangladesh were killed by our men and there was no secret about it."
- Faruq Aziz Khan (Secretary to Prime Minister Tajuddin Ahmed, Chairman - SPARSO) / Spring 1971 : A Centre stage Account of Bangladesh War of Liberation. [ UPL - 1993 / P. 89-91, 202 ]
#০৫
"... বিল্লাল শেখের তাড়া ছিল খুব। তবু আলাপে জমে গেলেন। 'এখানকার সাম্প্রদায়িক অবস্থা কেমন?' ম্লান হাসলেন বিল্লাল শেখ, 'আপনারা বিদেশী লোক। সেসব জেনে কী করবেন। এই জায়গাগুলো মুসলমান প্রধান এলাকা। কিন্তু হলে কী হবে তারা তো বেশিরভাগই গরিব। গরিব লোকদের কী কিছু করার থাকে? তবে সিপিএম সরকার থাকায় আমরা কিছুটা আরামেই ছিলাম। কিন্তু এখন বিজেপি নামে একটা দলের জন্ম হয়েছে। তারা আমাদের তাড়িয়ে দেবে বলে হুমকি দেয়। চৌদ্দ পুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে কোথায় যাব বলুন তো?'
তারপর এল মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ। ১৯৭১ সালে না কি পলাশীতে বাংলাদেশের বহু লোককে এনে হত্যা করা হতো। স্থানীয় লোকেরা নাকি বহু লাশ দেখেছে সে সময়। রক্ত জমে কালো হয়ে থাকত পলাশীর মাটিতে।
বিল্লাল শেখ কাদের সিদ্দিকীর প্রসঙ্গ তুললেন। আমি বললাম, 'তাকে আপনি চেনেন?'
বললেন, 'এই পলাশীর কাছেই তো ছিল তার ঘাঁটি। একবার হলো কী জানেন, দলবল নিয়ে মাথায় হ্যাট লাগিয়ে এলেন মনুমেন্ট দেখতে। খুব হাসাহাসি সঙ্গীসাথীদের নিয়ে। ফেরার পথে গণেশ গেল উল্টে। গাড়ি করল এক্সিডেন্ট। হাড়-হাড্ডি ভাঙল কয়েকজনের। সে যাত্রায় তো আমরাই বাঁচালাম ওকে। তখন কী আর জানতাম ও বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে এসেছে?'
- আবদুল হাই শিকদার / পলাশী ট্রাজেডীর ২৩৪ বছর পর : সিরাজদৌলা মুর্শিদাবাদ ॥ [ জ্ঞান বিতরণী - ফেব্রুয়ারি, ২০০৫ । পৃ: ১৯-২০ ]
#০৬
"... একাত্তর নাকি আমাদের জাতির 'স্যালভেশনের' মাইলফলক। আর ১৬ই ডিসেম্বর, সে তো আমাদের 'মহান বিজয়ের' সিংহদুয়ার। অতএব এখান থেকেই শুরু করা যাক।
... রানু (প্রয়াত কমরেড রাশিদা) গ্রামের বাড়িতে চলে গিয়েছিলো শহরে পাঞ্জাবী সেনাদের আগমনের আগেই। ২৫শে মার্চের পর পাঞ্জাবী সেনাদের হাতে জান খোয়ানোর চেয়েও বেশি, ইজ্জত খোয়ানোর ভয়ে শহর থেকে সব মেয়েমানুষ দলে দলে গ্রামে পাড়ি জমিয়েছিলো। কিন্তু এ ক্ষেত্রে রানুর দৃষ্টিভঙ্গি ছিলো ভিন্নতর। আসলে রানু নিজের আজন্মলালিত শহরটিকে ছেড়ে গ্রামে চলে গিয়েছিলো আর দশটি মেয়েমানুষের মতো যতটা না পাঞ্জাবীদের ভয়ে,. তার চেয়েও বেশি অন্য এক বিশেষ ঘটনাকে কেন্দ্র করে। ঐ বিশেষ ঘটনাটি ঘটে যাওয়ার পর এ শহরের বাতাস যেনো পাথর হয়ে চেপে বসেছিলো ওর বুকে।
'ক্রাকডাউনের' পর ঢাকা থেকে পাঞ্জাবী সেনাদের আগমনের পূর্বমুহুর্ত পর্যন্ত আমাদের এ মফস্বল শহরটি ছিলো পুরোপুরি মুক্ত এলাকা। বিশেষ করে ২৭-২৮ মার্চে শহরতলী এলাকায় অবস্থিত ইপিআর ক্যাম্পের সব অবাঙালি অফিসার-জওয়ান বউ-বাচ্চা সহকারে খতম হওয়ার পর গোটা শহর তখন পুরোপুরি শত্রুমুক্ত। এক অভাবিত মুক্তির স্বাদে কয়টা দিন শহরের অলিতে গলিতে আর ঘরে ঘরে আপাতমুক্তির আনন্দ-উল্লাসের কী যে জোয়ার বয়েছিল, তা স্বচক্ষে না দেখলে বোঝা যায় না। রানুর মনেও আনন্দ-উল্লাসের হয়তো কমতি ছিলো না।
কিন্তু এরই মাঝে হঠাৎ এক সকালে 'স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান চেতনা' হুমড়ি খেয়ে পড়লো শহরের বিহারী কলোনীগুলোর ওপর। হৈ হৈ রৈ রৈ করে রীতিমতো কুরুক্ষেত্র আর লংকাকান্ড চললো পুরো তিন দিন। বিহারী ছেলে, বুড়ো ও নারী-পুরুষের রক্তের স্রোত বয়ে গেলো কলোনীগুলোর ওপর। সম্পূর্ণ নিরস্ত্র, নিষ্ক্রিয়, অসহায় নারী-পুরুষ-শিশুর ওপর একতরফা হত্যাযজ্ঞ চললো পুরো তিনটে দিন।
রানু এই চরম লোমহর্ষক বর্বর মুহুর্তেও কাউকে না জানিয়ে একাকী কলোনীতে দৌড়ে গিয়েছিলো। তাহমিনাদের ঘরের আঙীনায় পৌঁছে ওর বাবা-মা'র লাশ দেখে আৎকে উঠলেও সে পিছ-পা হয়নি। প্রিয়তমা বান্ধবীকে উদ্ধারের আশায় অতি দু:সাহসে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সে তাহমিনাদের ঘরে ঢুকে পড়েছিলো এবং ঢুকেই আর্তচিৎকারে কলোনীর আকাশ প্রকম্পিত করে দিয়েছিলো। রানুর চোখের সামনে এক বীভৎস দৃশ্যের নিস্তব্ধতা। মেঝেতে তাহমিনার লাশ পড়ে আছে চিৎ হয়ে, পরনে ওর একটি সুতোও নেই। রক্তে সারা ঘর ভাসছে।
তার পরদিনই রানু শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যায়। 'মুক্তিযুদ্ধের' পুরো ৯টি মাস রানুকে অনেক বোঝাবার চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হই। ওর মনে বদ্ধমূল ধারণা জন্মায় ৭১-এ এই দেশের মাটিতে অসহায় মানুষকে নির্বিচারে হত্যা, অবলা নারীর ওপর বলাৎকার ইত্যকার পাশবিক কার্যকলাপ প্রথম নাকি শুরু করে একশ্রেণীর বাঙালিরাই। রানুকে যদি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লেখার দায়িত্ব দেয়া যেতো, তাহলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিশ্চয়ই শুরু হতো এই কলংকময় অধ্যায় দিয়ে।
কিন্তু রানু কি সেদিন জানতো, ৭১-এ 'মহান মুক্তিযুদ্ধের' সূচনায় এমন নারকীয় যজ্ঞ টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া সর্বত্রই চলেছিলো নির্বিচারে। পাঞ্জাবীদের 'মালাউন' নিধন এবং বাঙালিদের 'বিহারী' নিধন এ দুয়ে মিলে তৈরি হয়েছিলো যে 'ককটেল' এবং তারই সাথে দিল্লীর সঞ্জীবনী সুধা পান করে যাত্রা শুরু হয়েছিলো যে 'মুক্তিযুদ্ধের', আজকের এই ১৬ই ডিসেম্বরে তো তারই ষোলকলা পূর্ণ হলো।
... মাথার মধ্যে নানান আবোল তাবোল চিন্তা ঘোরপাক খেতে থাকলেও কখন যে ভিড়ের মধ্যে নিজেকে সমর্পিত করেছি, তা টের পাইনি। নিরবচ্ছিন্ন গণমিছিলের সাথে কদম মিলিয়ে হাঁটতে হাঁটতে রেললাইন ক্রস করে সদর রাস্তায় এসে দাঁড়ালাম। রাস্তা নয় যেনো এক খরস্রোতা নদী। বানের পানির মতো অগুণতি মানুষের 'বিজয় মিছিল' এগিয়ে চলেছে সদর রাস্তা জুড়ে।
... সামনেই বিছমিল্লাহ রেস্টুরেন্ট। ... শহীদ মাস্টারকে কাছে পেয়ে অনেক কথাই বলার জন্য মনের ভিতর আকুলি বিকুলি করছে। মনের ভিতর জমে থাকা শ্বাসরুদ্ধকর ৯ মাসের হাজার কথার ঢাকনাটি খুলে দিয়ে মাত্র মনের কথা বলতে শুরু করেছি, এরই মধ্যে হুড়মুড় করে গোটা রেস্টুরেন্ট প্রকম্পিত করে ঘরের মধ্যে এসে ঢুকলো ইসমাইল হোসেন মন্টু, সঙ্গে তার প্রায় পুরো কোম্পানীর লোকজন।
: আওলাদ মিয়া, আমারে রঙ চা দিবা চিনি কম দিয়া।
পাশের টেবিলে বসা বঙ্কিম মোক্তারের সাথে মন্টু সাহেব মাইকের মতো আওয়াজ করে গল্প জুড়ে দিল।
: দেরাদুনে ট্রেনিং-এর সময় বুঝলেন বাবু, সেই যে রঙ চা খাওয়ার অভ্যেস করলাম, দুধ চা এখন মুখেই রোচে না।
মন্টু সাহেবের পাশের টেবিলে বসা জল্লাদ মান্নান টিপ্পনী কাটে,
: মন্টু ভাই, দ্যাশ স্বাধীন করলাম তোমার ঐ দেরাদুন-ফেরাদুনের উমদা চায়ের গল্প শুনবার জন্য নাকি। ওসব থুইয়া আগরতলা-গৌহাটির রঙিলাদের দু'একটি রোমান্টিক গল্প কও, মনটা একটু চাঙ্গা হোক।
জল্লাদ মান্নানের টিপ্পনী মন্টু সাহেবের মনের মধ্যে সুড়সুড়ি দেয়।
: ইন্ডিয়ার মতো দ্যাশ হয় না, বুঝলেন বাবু। ও দেশের মানুষ কী স্বাধীন জীবন যাপন করে। ২৩ বছর পাঞ্জাবীগো গোলামি কইরা স্বাধীনতার স্বাদ ভুইল্লাই গেছিলাম আমরা। ইন্ডিয়া না গেলে দ্যাশের পোলাপানগো চোখ-মুখই খুলতো না।
মুহুর্তের মধ্যে সম্ভবত আগরতলার কোন এক 'চারুবালা' অথবা গৌহাটির কোন এক 'হেমামালিনী'র শরীরের অভাবনীয় স্বাদের জাবর কাটতে কাটতে মন্টু সাহেব কিছুক্ষণের জন্য চোখ আধ-বোজা হয়ে অন্য জগতে চলে যায়। তার সে জগতের কথা আমি কিছুটা আঁচ করতে পারি।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে আমার কাছে মন্টুর পরিচয় ছিলো সিনেমার টিকিট ব্ল্যাকারে'র। অনেকবার ওর কাছ থেকে ব্ল্যাকে টিকিট কিনে সিনেমা দেখেছি। সেই সুবাদে মন্টুর সাথে আমার একটা ব্যবসায়ী সম্পর্কও গড়ে উঠেছিলো। আর সেই সম্পর্কের সুবাদেই জানতাম, শহরের এক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোনায়েম খানের কীরকম ভাই স্থানীয় মুসলিম লীগের এক ডাকসাইটে নেতার মেয়ে সুলতানাকে মন্টু ভালোবাসে। মুসলিম লীগের দোর্দন্ড প্রতাপ-প্রতিপত্তির সেই আমলে মন্টুর মতো একজন টিকিট 'ব্ল্যাকারে'র জন্য সুলতানার সাথে প্রেম করা 'বামন হয়ে চাঁদ ধরার' মতো ব্যাপার ছিলো বৈকি। কিন্তু আজ তো দিন বদলে গেছে। সেদিনের সেই মন্টু 'ব্ল্যাকার' আজ ইসমাইল হোসেন মন্টু সাহেব 'মুক্তিবাহিনীর' নামী দামী কমান্ডার। ...
: কি রাজু ভাই, এবার সুলতানাকে 'ম্যারেজ' করতে পারবো তো?
মন্টুর কথায় আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম। আমি জানি সুলতানার বাবা 'শান্তি' কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। পাঞ্জাবীদের পরাজয়ের পর বর্তমানে তিনি পলাতক। আমি নিশ্চিত করেই বলতে পারি, বন্দুকের জোরেই হোক অথবা 'শান্তি কমিটির' চেয়ারম্যান সাহেবের প্রতি ক্ষমাপ্রদর্শনের বদৌলতেই হোক সুলতানার মতো মেয়েকে হাতের মুঠোয় পাওয়া মন্টুর কাছে আজ পান্তাভাত॥"
- রইসউদ্দিন আরিফ (সাবেক সম্পাদক, পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি) / আন্ডারগ্রাউন্ড জীবন সমগ্র ॥ [ পাঠক সমাবেশ - ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ । পৃ: ১১৯-১২৮ ]
#০৭
"... লেখক-লেখিকাদের ডায়েরির মতো লেখা বইগুলিও আমাকে সাহায্য করেছে (জোছনা ও জননী লেখার ব্যাপারে - KK)। ঢাকা শহরে প্রতিদিন কী ঘটছিল ডায়েরি পড়ে তা বোঝা যাচ্ছিল। তবে এই প্রসঙ্গে ছোট্ট একটা ঘটনার কথাও বলি। ডায়েরি জাতীয় গ্রন্থগুলি পড়ে আমার মনে হয়েছে সেগুলি তখনকার লেখা না। পরে তারিখ দিয়ে সাজানো হয়েছে। কারণ একজন কোনো এক বিশেষ দিনে লিখছেন - ঢাকা শহরে সকাল থেকেই প্রবল বর্ষণ, আরেকজন একই দিনে লিখছেন - কঠিন রোদ। রোদে ঢাকা শহর ঝলসে যাচ্ছে। একজন লিখছেন - এই মাত্র খবর পেলাম প্রবাসী সরকার শপথ নিয়েছে। অথচ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হয়েছে তার দুদিন পরে। ডায়েরি রচনায় রাজনৈতিক মতাদর্শও কাজ করেছে। কারো কারো ডায়েরিতে প্রতিদিনকার সমস্ত খুঁটিনাটি আছে, কিন্তু জিয়াউর রহমান নামের একজন মেজর যিনি কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার যুদ্ধে সবাইকে আহ্বান করেছেন সেই উল্লেখ নেই। তার নামটিও নেই।
... বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের দলিলের পনেরো খন্ডের মধ্যে সাতটি খন্ড আমি মন দিয়ে পড়েছি। আমার উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধের দলিল থেকে সরাসরি অনেক অংশ ব্যবহার করেছি। এই দলিল নিয়েও আমার কিছু খটকা আছে। একটি শুধু বলি - রাজারবাগ পুলিশ লাইনে বন্দি তরুণীদের উপর নির্যাতনের সাক্ষ্য গ্রন্থবদ্ধ করা হয়েছে। বলা হচ্ছে তাদেরকে পায়ে দঁড়ি বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হতো। যে তরুণীদের রাখা হয়েছে ভোগের জন্যে তাদেরকে এভাবে ঝুলিয়ে রাখার পেছনের যুক্তি আমার কাছে পরিষ্কার না। তারপ্রেও ধরে নিলাম তাই করা হয়েছে। যা আমার কাছে একেবারেই গ্রহণযোগ্য না তা হলো সাক্ষ্যদানকারী বলছেন এইসব তরুণীদের সঙ্গে বই-খাতা-কলম ছিল। অর্থাৎ স্কুল বা কলেজে যাবার পথে তাদের ধরা হয়েছে। যে ভয়ঙ্কর সময়ের কথা বলা হচ্ছে সে-সময় স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটি সবই বন্ধ। বইখাতা নিয়ে কারো বাইরে যাবার প্রশ্নই উঠে না। আমার ধারণা সাক্ষ্যপ্রমানমূলক তথ্যগুলি ভালোমতো যাচাই করা হয় নি। তাছাড়া জাতিগতভাবেও আমরা অতিকথন পছন্দ করি॥"
- হুমায়ূন আহমেদ / জোছনা ও জননীর গল্প ॥ [ অন্যপ্রকাশ - জুন, ২০০৪ । ভূমিকা ]
#০৮
"... একটি অভিজ্ঞতা যা আজো আমাকে হানা দেয়। কালুরঘাটের অনুষ্ঠান শেষ করে রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছি। দেখলাম একটা গাড়ি আটকানো হয়েছে। ভেতরে একটি অবাঙালি পুরুষ ও একটি বাঙালি মহিলা। সড়কের বিভিন্ন পোস্ট যারা পাহারা দিচ্ছিলেন তারাই আটকেছে।
অবাঙালি পুরুষটিকে মহিলাটির কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া হলো। মহিলাটিও কিছুতেই ছাড়বে না তাকে। অনুনয়, বিনয়, পায়ে ধরা সমস্ত কিছুই মহিলাটি করছেন। কিন্তু কোন কিছুতেই কোন ফল হলো না। মহিলাটির শাড়ি ও ব্লাউজ ছিঁড়ে গেল। তাকে জোর করে গাড়িতে তুলে দেয়া হলো। গাড়িটি আবার চলে গেলো উল্টোমুখে। অবাঙালি পুরুষটির হাতে ছিল একটি ব্রিফকেস, সম্ভবত: তার মধ্যে টাকা, গহনা ইত্যাদি থাকলেও থাকতে পারে। পুরুষটিকে নিরাপদে পার করে দিতে বাঙালি হয়েও মহিলাটি এসেছিল, ভেবেছিল সফল হবে।
পুরুষটিকে সামনেই একটি গাছের পেছনে নিয়ে যাওয়া হলো। সড়ক পাহারায় যারা নিযুক্ত ছিলেন, তাদের কাছে তখন রাইফেল না থাকায় রাস্তার পাশের কোন বাসা থেকে একটা ভোঁতা ছুরির মতো কেউ এনে দিয়েছিল। সেই ভোঁতা অস্ত্রটি দিয়ে অবাঙালি লোকটিকে শেষ পর্যন্ত অনেক কষ্টে মারা হয়েছিল।
আজো ভাবি, যুদ্ধের সময় মহিলাটি কেনো তার নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিল? যুদ্ধের চেয়েও কি তবে প্রেম বড়? মানুষের সাথে মানুষের যে নাড়ির যোগ তা কি আবহমান প্রবাহিত? মানুষে মানুষে নিজেদের মধ্যে যতো যুদ্ধই করুক সবকিছুরই উর্ধ্বে মানুষ ও মনুষ্যত্বই শেষ কথা? তবে কি সব যুদ্ধের লক্ষ্য মানুষ ও মনুষ্যত্বের বিজয় ঘোষণার সমাপ্তির সংগীত? ....
আমার লেখা একটি শ্লোগান (স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত) : "ওরা মানুষ হত্যা করছে, আসুন আমরা আমরা পশু হত্যা করি" সে সময় বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল॥
- মুস্তফা আনোয়ার ( স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দ সৈনিক) / মুস্তফা আনোয়ার রচনা সমগ্র ॥ [ সম্পাদনা : আব্দুল মান্নান সৈয়দ । ঐতিহ্য - ফেব্রুয়ারী, ২০১০। পৃ: ৩৭০ ]
#০৯
“... ফরিদপুরের এক সুবৃহৎ গোডাউন ভরে বন্দি শ পাঁচেক বিহারিতে। হয় বন্দি বিহারীদের মারতে হয়। নয়ত ক্ষেপা জংগি জনতার হাতে তুলাধুনায় মুক্তি গেরিলাদের মরতে হয়। অগত্যা তাদের প্রতি মৃত্যুদন্ডের নিষ্ঠুর রায় ঘোষিত। সোবেহ সাদেক নাগাদ একশজন করে করে বন্দিকে গুলিতে হত্যা করা হয়। বিহারি অত্যাচার দমন করে ক্যাপ্টেন বাবুল ও মুক্তিরা ফিরে আসেন মাঝবাড়ি ক্যাম্পে॥"
- কর্ণেল (অব:) মোহাম্মদ সফিক উল্লাহ, বীর প্রতীক / একাত্তরের রনাঙ্গণ : গেরিলাযুদ্ধ ও হেমায়েতবাহিনী ॥ [ আহমদ পাবলিশিং হাউস - মার্চ, ২০০৪ । পৃ: ১৯৫ ]
#১০
“... আমাদেরই দলের এক কিশোর বালুবাড়িতে থাকতো। তাদের প্রতিবেশী ছিল পাঞ্জাবি সেনা অফিসার। তার এক কিশোরী কন্যা ছিল। দু'জন পরস্পরকে চিনতো, হয়তো পরস্পরকে ভালো লাগতো। কিন্তু যাকে বলে প্রেম তেমন কিছু ছিল না। নদীর পাড়ে দাঁড় করানো হয়েছে পাক সৈন্য ও অবাঙালি পরিবারদের। ইপিআর সদস্যরা তাদের গুলি করে মারবে। বালুবাড়ির সেই কিশোরটি দেখছে, তার প্রতিবেশী পরিবার ও সেই কিশোরী মৃত্যদন্ডাজ্ঞাপ্রাপ্তদের লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটি ছটফট করছে, হয়তো ভাবছে কোনভাবে বাঁচানো যায় কিনা তার চেনা সেই কিশোরীটিকে। হোক না সে উর্দুভাষী। কিন্তু সে তো কোন অন্যায় করেনি। ভালো লাগার দাবি নিয়ে কি তাকে বাঁচানো যায় না? না, যায় না। এমন পরিবেশে কিছুই করা যায় না। এ যে যুদ্ধ। তবু ছেলেটির মন মানছে না, সে ছটফট করছে। এমন সময় সেই কিশোরী দেখতে পেল উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে আছে তার প্রতিবেশী কিশোর। মেয়েটি তখন তার নাম ধরে চিৎকার করে ডাকতে আরম্ভ করলো' - 'ভাই, মুঝে বাঁচাও,মুঝে বাঁচাও।' এক পর্যায়ে মেয়েটি উচ্চস্বরে বলে উঠলো, - 'মুঝে বাঁচাও, ম্যায় তুমকো শাদী করোঙ্গা, মুঝে বাঁচাও।' কিন্তু কোন আর্ত নিবেদন কোন কাজে আসেনি। অপরদিক থেকে একটি রাইফেলের গুলি মেয়েটির কন্ঠস্বর স্তব্ধ করে দিল। ...৭১ সালে এরকম কত ঘটনা দেখেছি।তারপর ভুলে গেছি। ...
... কাঠের চুলোয় নৌকার ওপর রান্নার অসুবিধে হলো না। দুটো মাটির শানকি ছিল। সেগুলো ভালোভাবে ধুঁয়ে আমরা খাওয়ার ব্যবস্থা করছি। এমন সময় নদীর বাঁ দিকে দেখলাম, পাড় থেকে নেমে কয়েকটা লোক কি যেন টানাটানি করছে। একটু লক্ষ করতেই বোঝা গেল, সেটা একটি মেয়ের লাশ। লোকদের কাজকর্ম দেখে মনে হলো, লাশ থেকে তারা কিছু নেওয়ার চেষ্টা করছে। মাঝি বললো, তারা লাশটির শরীর থেকে গয়নাগাটি খুলে নিচ্ছে।
এই দৃশ্য দেখতে থাকার সময় হঠাৎ সামনের দিকে নজর পড়ায় দেখা গেল এক ভয়াবহ দৃশ্য। একসাথে অনেকগুলো মেয়ের লাশ নদীর ওপর ভাসছে। সকলের পরনে শালোয়ার কামিজ।বোঝার অসুবিধা নেই, সেগুলো অবাঙালি মেয়েদের লাশ। সেই মেয়েদের লাশের সাথে বাচ্চাদের লাশও দেখা গেল। নৌকো লাশগুলোকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যেতে থাকলেও লাশ কাতারবন্দী হয়ে আরও দেখা গেল। বোঝা গেল, সামনে বড় আকারে কোথাও অবাঙালী নিধন হয়েছে। আমরা খেতে বসার সময় এভাবে ভাসমান লাশ্গুলো দেখে সঙ্গে সঙ্গে খাওয়ার প্রবৃত্তি আর থাকলো না। আমরা দেখতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর সেই লাশের মিছিল শেষ হলো। আমরা খেতে বসলাম। খেতে তো হবেই। কোন রকমে খেলাম, মাঝিও আমাদের সঙ্গে খেলো, মনে হয় সোজা হাঁড়ি থেকেই।
লাশগুলো আসছিল টেকেরহাটের দিক থেকে। পরে আমরা শুনেছিলাম যে, ঐ এলাকার কাছাকাছি এক জায়গায় দুটি লঞ্চ দাঁড় করিয়ে তার যাত্রী বিহারী মেয়ে ও তাদের বাচ্চাদের বাঙালীরা খুন করে নদীতে ফেলে দিয়েছিল। ঐ মেয়েরা আসছিল যশোরের নড়াইল শহর থেকে। তখন সেখানে এসডিও ছিল কামাল সিদ্দিকী। চারিদিকে বাঙালীরা খুন খারাবী করতে থাকার সময় প্রথম চোটে পুরুষদের মেরে ফেলেছিল। মেয়েদেরকে আটক করে পরে খুন করার ব্যবস্থা করেছিল। সে সময় তাড়াতাড়ি কামাল সিদ্দিকী, যে আমার পরিচিত ও ছাত্র স্থানীয় ছিল, তাড়াতাড়ি দুটি লঞ্চ ভাড়া করে মেয়েদেরকে বরিশালের দিকে পাঠিয়ে সেখান থেকে অন্য কোথাও সরিয়ে নেয়ার, হতে পারে ভারতের দিকে পাঠিয়ে দেওয়ার কোন ব্যবস্থা করছিল। পথে বাঙালীরা লঞ্চ দুটি আটক করে সেই নৃশংস হত্যাকান্ড করে। সেই নৃশংসতার বিবরণ টেকেরহাটেই শুনেছিলাম। কামাল সিদ্দিকী এরপর কলকাতায় চলে গিয়েছিল। ১৯৭১ সালের পর আমার সাথে ঢাকায় দেখা হয়েছিল॥”
- হায়দার আকবর খান রনো / শতাব্দী পেরিয়ে ॥ [ তরফদার প্রকাশনী - ফেব্রুয়ারি, ২০০৫ । পৃ: ২৬২-২৬৩ ]
#১১
"... In London under the pressure of snoopy, horrendous congregation known as the Press, Sheikh unequivocally put the liberation war death toll to One Million. After sniffing refreshing air there, and being in the proximity of the Russian and Indian Embassies, the Sheikh finally was marching in triumph to Sonar Bangla via mentor Indira Gandhi's capital, New Delhi, where amid tumultuous, ear-shattering reception, he addressed a mammoth public rally. It took the British Air Force jet only nine hours to reach New Delhi nonstop. But, within this short span of time a great turnover materialized. While providing the casualty figure for the second time after his release from Pakistan jail, the Sheikh made a sharp, vertical-rocketeering and pranced the figure three fold: 'Three Million to be exact'.
The Sheikh was endowed with the virtue of dynamism, flexibility and adaptability, and wherever and whenever the occasion needed them, he did never lag behind applying them; was always equipped with a deep feeling of a long-range sensitivity, and what they call it, "paving stones in the Hell", was always armed with a gush of ready-made answers inside his head.
... But, the point of everlasting interest was that even after the sad demise of the Sheikh and between the two figures of one million and three million war casualty, the nation and national leaders alike, in all walks of life, in public lectures and drawing room discussions, in private gossips and seminars, arduously and unflinchingly, not only continued to pronounce and repeat the latest three million figure provided by Sheikh, but in the process of sheer ideo-motor-action, built up a solid edifice of actuality and belief out of sheer habit."
- Iqbal Ansari Khan / The Third Eye : Glimpses of the Politicos ॥ [ UPL - September, 1991 । P. 16-17 ]
#১২
“... মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আর শহীদের বিকৃত সংখ্যা পুনরুদ্ধার না করলে কোনোটারই সতীত্ব আর রক্ষা হবে না। বঙ্গবন্ধু আর জয় বাংলার পাঁচফোড়নের খপ্পরে পড়ে জাতির বুদ্ধিবৃত্তি ধ্বংস হচ্ছে। তাই ইতিহাস বদলে দেয়ার বদলে সত্য আদায় করতে হবে। ’৭১-এ জনসংখ্যা সাত কোটি। মুজিব বললেন, ৩০ লাখ শহীদ। পাটিগণিতের হিসাব অনুযায়ী ৭০০ লাখের ৭ মার্চের বক্তৃতা অনুযায়ী পাঁচ শতাংশ ৩৫ লাখ। একে সর্বনিম্ন মূল্যে আনলে শহীদের হার দাঁড়ায় ২০:১ অর্থাৎ প্রতি ২০ জনে একজন, যে প্রশ্নটি তুলেছে ইংল্যান্ডের বিখ্যাত কাগজ ইকোনমিস্ট। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কাবাব ব্যবসায় আর ৩০ লাখ সংখ্যা নিয়ে মুজিববাদীদের মিথ্যাচার রুখতে হবে, অন্যথায় শহীদের সতীত্ব নষ্ট হবে। এই দেশে কোনো গ্রাম বা শহর নেই, যেখানে কেউ বলতে পারবে প্রতি ২০ জনে একজন শহীদ হয়েছে। নরসিংদী বা রাজশাহীতে হয়নি। খুলনা বা ময়মনসিংহে হয়নি। এমনকি মেহেরপুরেও হয়নি। তাহলে হয়েছেটা কোথায়? ৩০ লাখ সত্য হলে একটি পাড়ায় যদি এক হাজার লোক থাকে, ন্যূনতম ৫০ জন শহীদ হতে হয়েছে। শেখ হাসিনার মতো ফাঁকা বক্তৃতার বদলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ৬০ লাখ ইহুদি হত্যার বিশ্বাসযোগ্য হিসাব তারা কাগজপত্রে তৈরি করেছে। কিন্তু শেখ মুজিব বা হাসিনার সরকার কি গণহত্যার না মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা আজ অবধি করতে পেরেছেন? কাজে নয় শুনে মুসলমান। নেত্রী যা বলেন, মুজিববাদীরা শিশুদের মতো লাফায়। মুজিববাদীরা সহজ পাটিগণিত পড়লেই উদ্ধার হবে ৩০ লাখ না ৩০ হাজার। সুতরাং শহীদের সম্মানে এখন থেকে বলা হোক, ৩০ হাজার। বলতে বলতেই ইতিহাস শুদ্ধ হবে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অন্য গবেষণাগুলো কী বলে? যেমন শর্মিলা বোসের ‘ডেড রেকোনিং’ বইয়ে দুই বছরের মাঠপর্যায়ে গবেষণা অনুযায়ী শহীদের সংখ্যা ৩০ হাজার কিংবা কম এবং অপারেশন সার্চলাইটে মৃতের সংখ্যা ৭০০ কিংবা কম। এ ছাড়াও রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ভিন্ন মত, যা আওয়ামী মত থেকে ১০০ ডিগ্রি উল্টো। এর বিরুদ্ধে তথ্য-উপাত্ত যদি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও দিতে পারেন বক্তব্য প্রত্যাহার করব। ’৭১ শেষে মানুষ যখন ফিরতে শুরু করল, এমনকি শহরের মানুষেরাও বলেনি দু-একজনের বেশি শহীদের কথা। শেরপুরের জনসংখ্যা কয়েক হাজার হলেও, সম্মুখ সমরসহ সামরিক বেসামরিক ৪০ জনের মতো নিহত হয়েছিল। শহীদের সংখ্যা ঊর্ধ্বে ২৪, বাকিরা পাকিস্তানি। এই একটি উদাহরণই কি যথেষ্ট নয়? তাহলে এই উদ্ভট সংখ্যাটির স্রষ্টা কে? যখনই প্রশ্ন তুলি, বড়ভাইয়েরা ধমক মারেন, মুজিব যেটা বলেছেন, তর্ক করতে নেই। এ জন্যই কি প্রজন্ম চত্বরে মিথ্যার জয় আর সত্যের পরাজয়? আজ বলছি, একটি দেশের কয়টা স্বাধীনতা দিবস থাকা উচিত। কয় মাস স্বাধীনতার মাস হয়। বিশ্বে আর কোথাও বিজয় আর স্বাধীনতা দিবস বলে আলাদা কিছু নেই। ২১ ফেব্র“য়ারি একটি দিবস, এক মাস পালনের কোনো কারণ নেই। জাতিকে বিপথগামী করতেই আওয়ামী লীগ মাস আর দিবসের ব্যবসায় করছে বলে প্রমাণ করেছে। সুতরাং চেতনার ব্যবসায় বন্ধ করতে ফরমালিনমুক্ত রাজনীতি ফিরিয়ে এনে জাতির মাথায় রাজনীতির ফরমালিন ঢালা বন্ধ করতে হবে।
... জামায়াতকে বলছি, কারা করেছিল খুন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ? ’৭১-এ আপনাদের ভূমিকা স্পষ্ট করুন অন্যথায় জাতির সামনে আরো ভয়ঙ্কর দুর্দিন। গৃহযুদ্ধও অসম্ভব নয়। এ কথা স্পষ্ট, মুক্তিযুদ্ধ প্রশ্নে একপক্ষ মনে করে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ অর্থাৎ তলে তলে পাকিস্তান জিন্দাবাদ। অন্যপক্ষ মনে করে জয়বাংলা-কাল্ট। ৪২ বছর ধরে একপক্ষরে কথাই শুনছে মানুষ। তিন লাখ অবাঙালি নিখোঁজ হলো কেউ কিছু বলছে না। জেনেভা ক্যাম্পের প্রশ্ন, ‘আমাদের তিন লাখ মানুষ গেল কই’? তিন লাখই কি তাহলে ৩০ লাখ? সুতরাং মুক্তিযুদ্ধ শেষের দিকে যে ম্যারাথন খুনাখুনি হলো, বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ সব ঘটনাই স্পষ্ট করুন। ’৭১-এর রণাঙ্গনের শত শত টিভি ফুটেজসহ ভূরিভূরি রিপোর্টিং এবং গবেষণা, তথ্য-উপাত্ত ইন্টারনেটে। এসব জানলে স্বপ্ন ভঙ্গ হবেই। আদমজী জুটমিল, মিরপুর কলোনি থেকে সিবিএস, এনবিসির রিপোর্টিং, ‘ভারতীয় সৈন্যদের জন্য না হলে আরো তিন লাখ খুন হওয়ার সম্ভাবনা’। সত্য সন্ধান থাকলে ইন্টারনেটের যুগে সব সম্ভব। ইন্টারনেটে কয়েকটি লাইব্রেরির সমান মুক্তিযুদ্ধের তথ্য পাওয়া যাবে। মুক্তিযুদ্ধ যে একটি দলের সম্পদ নয়, এই ধারণাও ভাঙাতে হবে। জামায়াতের উচিত, গণতান্ত্রিক অধিকার বজায় রাখতে পাল্টা নির্মূল কমিটি করে গবেষণা, প্রকাশনা, প্রচারে গিয়ে ’৭১-এর পাল্টা বক্তব্য তুলে ধরা। পরিবর্তন আসবেই। সবারই সত্য সন্ধানের অধিকার এবং প্রয়োজন আছে কারণ এই বিতর্ক থেকে জাতিকে মুক্ত হতে হবে।
শর্মিলা বোসের ডেড রেকোনিং বইতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে কিছু আলোকপাত করায় তা একটি দলের বিরক্তির কারণ হয়েছে। পৃষ্ঠা নং-৬৭। প্রত্যদর্শী ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সংরক্ষতি নিহতদের হিসাব উল্লেখ করে লিখেছেন, ২৫ মার্চ রাতে ক্যাম্পাসে ও দেশের বিভিন্ন স্থানে নিহতের সংখ্যা যোগ করে হাজার হাজারের বদলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ১৪৯ জন নিহত হয়েছে। পর দিন অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পুরান ঢাকার হিন্দুপ্রধান শাঁখারিপট্টিতে পাকিস্তানি হামলায় আট হাজার নারী-পুরুষ, শিশু নিহত হয়েছে দাবি করে পাকিস্তানি সাংবাদিক অ্যান্থনি ম্যার্কেনহাস লন্ডন টাইমসে যে রিপোর্ট লেখেন শর্মিলা বোসের আপত্তি, ওই সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না এবং তথ্যটি সম্পূর্ণ ভুল বরং প্রত্যক্ষদর্শী অমিয় শূরের বরাত দিয়ে শাঁখারিপট্টিতে হাজার হাজার খুনের বিপরীতে লেখেন, ‘…অমিয় শূর ও তার পরিবার বাড়ির ভেতরে অক্ষত ছিলেন, ৯ মাসে অন্তত এক লাখ অবাঙালি নিহত হয়েছে। …আঙিনায় পড়েছিল একটি শিশুসহ ১৪ থেকে ১৬টি মৃতদেহ।’ ’৭১-এর ১ মার্চ থেকে এপ্রিল মাসের কিছুদিন পর্যন্ত এবং ডিসেম্বর মাসের যুদ্ধ শেষে দেশের বিভিন্ন স্থানে অবাঙালি হত্যা, ধর্ষণ, সম্পদ লুণ্ঠনের ঘটনা ইতিহাস থেকে ছিটকে যাওয়ায় অনেকের মতো শর্মিলা বোসও একে রহস্য মনে করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর লেখককে যেসব বইপত্র সরবরাহ করেছিলেন, সেখানে ড. রাব্বির হৃৎপিণ্ড বের করে ফেলা এবং আলীম চৌধুরীর চুক্ষ উৎপাটনের কথা লেখা থাকলেও পরবর্তী সময়ে লেখক উভয়ের স্ত্রীর সাথে কথা বলে জানতে পারেন, ঘটনা সে রকম নয়। ড. আলীমের চোখ জায়গামতো ছিল। রাব্বির বুকও বিদীর্ণ ছিল না। অন্য দিকে এ ধরনের উত্তেজিত সংবাদ তৈরিতেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ৩০ লাখ বাঙালি হত্যা ও দুই লাখ নারী ধর্ষণের খবর প্রত্যাখ্যান করে লেখকের দাবি, এ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটিও সঠিক পরিসংখ্যান হয়নি। কল্পকাহিনী-নির্ভর ইতিহাসের ওপর নির্ভর করে তথ্যভিত্তিক ও সত্যাশ্রয়ী করার প্রয়াস থাকা উচিত। ’৭২ সালে তদন্ত কমিশন গঠন হলে প্রায় দুই হাজার পরিবারের বেশি সাড়া দেয়নি। দতার সাথে বইটির শেষে প্রত্যদর্শী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বিশাল তালিকাসহ ভারতীয় এবং পাকিস্তানি সৈন্যদের বক্তব্য স্থান পেয়েছে। ৩০ লাখ শহীদের বিপরীতে বলেছেন, যে স্ফীত সংখ্যা দেখানো হয়েছে তা অবাস্তব। এসব সংখ্যার গ্রহণযোগ্য দালিলিক প্রমাণ না থাকায় বেশির ভাগই অগ্রহণযোগ্য। তার এই গবেষণার সাথে একমত একটি বিশাল জনগোষ্ঠী।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রচণ্ড উত্তেজনা ও কল্পকাহিনীর শিকার মানুষ। ’৭১-কে যত অপপ্রচার ও অপব্যবহার করা হয়েছে ইতিহাসে দ্বিতীয় নজির নেই। কিন্তু আমার শহরে প্রত্যক্ষদর্শীর অভিজ্ঞতা, ’৭১-এ মুক্তিযোদ্ধারা যখন অপারেশন চালাচ্ছে তখন জামায়াতের লোকেরা সাহায্য না করলে অনেকেই বাঁচত না (আমার বাড়ির ওপরেও ভয়ঙ্কর শেলিং হয়েছে)। এসব প্রত্যক্ষদর্শী এখনো বেঁচে। গায়ের জোরে কেউই মোড়ল হয় না। যখন ফিরলাম, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কেন, বসনিয়া কিংবা রুয়ান্ডার মতোও কিছুই চোখে পড়েনি। সীমান্ত সংলগ্ন আমার বিশাল এলাকায় শহীদের সংখ্যা ৪০ জনের বেশি নয়। শহরের পরিচিতদের মধ্যে তিন-চারজনকে হত্যা করেছিল পাকবাহিনী, তাহলে ৩০ লাখের উদ্ভট সংখ্যা এলো কিভাবে? ইকোনমিস্টের হিসাব অনুযায়ী ৩০ লাখ শহীদ হলে প্রতি ২০ জনে একজন মারা যাবে। সরকার বদল হলে মুক্তিযুদ্ধের বিকৃতি ও মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যাও বাড়ে (’৭১-এর এক লাখ এখন প্রায় আড়াই লাখ)। প্রায় দুই দশক ধরে একদল মস্তিষ্কশূন্য সম্প্রদায় যাদের কোনো তাত্ত্বিক জ্ঞান নেই, ঘৃণা-বিদ্বেষ তাড়িত এদের শিকার মানুষ। যারা ট্রাইব্যুনাল করছেন তাদের তথ্য-প্রমাণ ও নিরপেক্ষতা নিয়েও সন্দেহ। সাী মোহন মুন্সি আর জহিরুল হক মুন্সিকে আমার চেয়ে বেশি চেনেন না। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমি আজ পর্যন্ত বিভ্রান্ত তাই দলবলসহ ২০০৫ সালে সোহাগপুর গ্রামে দু’বার গিয়েছি। বিধবা গ্রাম নামে খ্যাত সেখানে এক রাতেই ১৮১ জন পুরুষকে হত্যা করেছে পাকবাহিনী। এদের কেউ বলেনি কামারুজ্জামানের কথা। ট্রাইব্যুনাল বলছে অপারেশন সার্চলাইট থেকে সোহাগপুর গ্রাম এবং আমার শহর সবখানেই কামারুজ্জামান। যুদ্ধ কি এতই সোজা? ধরা যাক ধর্ষণ। কবির সাহেবরা যত ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন একমাত্র আসমানি ফরমান কিংবা অত্যাধুনিক মেডিসিন ছাড়া এই অঙ্ক পূরণ করা কোনো মানুষের পইে সম্ভব না। ’৯৬ সালের আগে বাজারে ‘ভায়াগ্রা’ জাতীয় কোনো মেডিসিন ছিল না। সুবিচারে সব যুক্তিই গ্রাহ্য করা উচিত। ’৭১-এ দখল করা সম্পত্তিগুলো ঠিকঠাক ফিরে পেয়েছিল শহরের মানুষ। এ রকম বহু উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। দেশে ফিরে লুটপাট ও হত্যকাণ্ড আমরাও প্রচুর দেখেছি। ৯ মাস ছিলাম ওপারে তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণা, জামায়াতের সাহায্য ছাড়া হত্যাকাণ্ড বাড়ত। একটি যুদ্ধোত্তর দেশ কখনোই এত দ্রুত ঘুরে দাঁড়াত না যদি প্রচারিত ধ্বংসযজ্ঞের আয়তনের ন্যূনতম গভীরতাও থাকত। ’৭১-এর ইতিহাসকে এমনভাবে কাটাকুটি করা হয়েছে যে, এর কোনো চেহারাই উদ্ধার করা কঠিন। বিষয়টা যেমন অন্যায় তেমনই উদ্বেগজনক॥"
- মিনা ফারাহ (কলামিস্ট, লেখিকা)
তথ্যসূত্র : অন্তর্জাল ও জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত কলাম থেকে সংগৃহীত
#১৩
“... ১৯৭১ সাল নিয়ে সব পক্ষই নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিজেদের বক্তব্য বলে যাচ্ছে। তবে বিশ্বব্যাপী বিজয়ী বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী ও তাদের ভারতীয় মিত্রদের বক্তব্যই ব্যাপকভাবে প্রাধান্য পাচ্ছে। তাদের প্রচারের ডামাডোলে অন্য সব বক্তব্য পুরোপুরি ঢেকে রয়েছে। এই গ্রুপটাই ১৯৭১ সাল নিয়ে অন্য বক্তব্যগুলোকে প্রকাশ হতে দিচ্ছে না। এ কারণেই ডেড রেকনিং - এর প্রকাশ ও প্রচারের বিরোধিতা করছে। তারা মনে করছে, বইটি ব্যাপকভাবে প্রচারিত হলে গোমর ফাঁস হয়ে যাবে। এ কারণেই তারা এমনকি প্রকাশের আগে থেকেই বইটির তীব্র বিরোধিতা করছে। তারা সম্ভব সব উপায়ে বইটির প্রচার বন্ধ করার চেষ্টা করছে। এমনও দেখা গেছে, যারা বইটি পড়েনি, তারাও এর বিরুদ্ধে কলম ধরেছে। ‘জ্ঞানই শক্তি’- কথাটি যে কত সত্য তারা তা বোঝে। তারা মনে করে, বইটি যারা পড়বে, তারা ১৯৭১ সালের ঘটনা সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান লাভ করবে। এতে করে যারা এখন মিথ্যার বেসাতি করছে, তারা নানা প্রশ্নের মুখে পড়বে। তারা মনে করছে, যত কম লোক বইটি পড়বে, তাতে তাদের সুবিধা বেশি হবে। কারণ সত্য প্রকাশিত হলে একচ্ছত্র আধিপত্য নস্যাৎ হয়ে যাবে।
প্রচলিত ধারণার বেশির ভাগই অসত্য। ওই যুদ্ধের অনেক তথ্যই অতিরঞ্জিত, বানোয়াট। অনেক তথ্যই বিকৃতভাবে পরিবেশন করা হচ্ছে। আবার অনেক তথ্য পরিকল্পিতভাবে চেপে যাওয়া হচ্ছে। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী মানেই ‘বদমায়েশ’- এমন একটি ধারণা ছড়ানো হয়েছে। বিজয়ী জাতীয়তাবাদীরা বাঙালিমাত্রই নির্যাতনের শিকার এবং পাকিস্তানি মাত্রই দুর্বৃত্ত- এত সাদামাটাভাবে একাত্তরের ঘটনা বিশ্লেষণ করা যায় না। হিসাবটা এত সহজ নয়। বিজয়ের আনন্দে অনেক মুক্তিযোদ্ধা সংখ্যালঘু নারীদের কে ধর্ষন করেছে, অখন্ড পাকিস্তানের সাপোর্ট যারা দিত তাদের কে দিনে দুপুরে রাজাকার খেতাব দিয়ে জবাই করে হত্যা করেছে, অনেক মুক্তিযোদ্ধা ব্যাংক লুট করে, হিন্দু সম্পত্তি দখল করে পরবর্তীতে কোটিপতি বনে গেছে।
এক পক্ষ দেবতুল্য আর অপর পক্ষ শয়তান ? মিসরের ‘তাহরির স্কোয়ারের’ আন্দোলনকারীরা বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার পতাকাবাহী হিসেবে স্বীকৃত। কিন' তাদেরই একটি অংশ ওই নারী সাংবাদিক লারা লগানের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন চালিয়েছিল। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ওই ঘটনাটি চেপে গিয়েছিল। কিন' লারা লগান সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, ফলে তার কাহিনী প্রচারিত হয়। লারা জানান, হোসনি মোবারকের পতনের পর তাহরির স্কোয়ারে আন্দোলনকারীরা যখন উল্লাস করছিল, তখন একদল (বিক্ষোভকারীদেরই একটি অংশ) লোক তাকে ধর্ষণ করে। তারা এখানেই ক্ষান্ত হয়নি। তারা ওই সময়ের বিকৃত ছবিও মোবাইল ফোনে ধারণ করে। পরিসি'তি আরো ভয়াবহ দিকে যেতে পারত। তবে বোরকা পরিহিতা একদল নারী তাকে উদ্ধার করলে তিনি রক্ষা পান। পরে সৈন্যরা তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। অর্থাৎ যারা স্বৈরশাসকের বিরোধিতাকারী মাত্রই যে তারা সবাই অহিংস, গণতন্ত্র বা মানবাধিকারের প্রবক্তা নয়, ব্যাপারটা তা নয়। ওই ঘটনা আমাদের এই ধারণা দেয় যে, রাজনৈতিক সংগ্রাম ও গৃহযুদ্ধ জটিল ব্যাপার এবং ওই ঘটনাগুলো কেমন হওয়া উচিত তা কল্পনা অনুযায়ী বর্ণনা না করে বরং প্রমাণের দিকে নজর দেয়া উচিত। ১৯৭১ সালের ঘটনার ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য। ১৯৭১ সালের যুদ্ধেরও এ ধরনের ভিন্ন মাত্রা রয়েছে॥"
[ শর্মিলা বসু তার “ডেড রেকনিং: মেমরিজ অব দ্য ১৯৭১ বাংলাদেশ ওয়ার”এর সমালোচনার জবাবে ]
#১৪
ভুট্টোর মতই মুজিবও একটি কমিশন গঠন করেন এবং কমিশনের রিপোর্ট পছন্দ না হওয়ায় তিনিও সেটি হাপিস করে দেন – যেহেতু সেটিতে নিহতের সংখ্যা তাঁর প্রচার করা তিন মিলিয়নের চেয়ে অনেক কম ছিল।
“Sources in Bangladesh reported that the draft report showed an overall casualty figure of 56,743. When a copy of this draft report was shown to the Prime Minister, “he lost his temper and threw it on the floor, saying in angry voice 'I have declared three million dead, and your report could not come up with three score thousand! What report you have prepared? Keep your report to yourself. What I have said once, shall prevail.”

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৫৯

মুহাম্মদ তৌকির হোসেন বলেছেন: এখন এটা সত্যিই বিতর্কের বিষয়। সঠিক ইতিহাস আমাদের কাছে পৌঁছছে কিনা এ দিকটা দেখার কেউ নেই অথচ সবাই আমাদের ইতিহাসের সমুদ্রে ভাসিয়ে দিতে ইচ্ছুক। :(

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৪৩

কবি এবং হিমু বলেছেন: তাই তো দেশটার এই অবস্তা ৪৪ বছর পর ও

২| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:১০

কালীদাস বলেছেন: আপনার পোস্টটা ফাকিস্তান এম্বেসিতে ফরোয়ার্ড কইরা দিতাছি। হেরা খুশি হইব আশা করি :D

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৪৮

কবি এবং হিমু বলেছেন: ধন্যবাদ কষ্ট করে কাজটা করার জন্য।তার মানে বুঝা গেল আপনি পাকিদের গুপ্তচর মানে সোজা ভাষায় দালাল আর কি।দালাল কত প্রকার জানেন তো?কারন ৯৭ জন ব্লগার বা ভিজিটর এই লেখাটা এখন পর্যন্ত পড়ছে কেউ সাহস করেনি এই কাজটা করতে,আপনি করেছেন।আপনাকে রিমান্ডে নিলে জাতি অনেক কিছু জানতে পারবে।

৩| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৪৭

কালীদাস বলেছেন: শুরু করছেন পাঁচ লাখ মারা গেছে এরকম নিউজের লিংক দিয়া, শেষ করছেন রিপোর্ট হাপিস করা নিয়া, কোথাও নিজের মন্তব্য লেখেন নাই পরিষ্কার কইরা- আর আমারে ট্যাগ মারলেন ছাগু বইলা =p~ নতুন ব্লগিং ধরছেন বুঝার জন্য আর কিছু লাগে না। পাঠান পারলে রিমান্ডে, ব্যাপার না। ৯৭ জন ভদ্রতা কইরা আপনারে জামাতী রগকাটা জারজ বলে নাই বইলা সবাই চুপ থাকব ভাবাটা ঠিক না।

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ ভোর ৫:৪৪

কবি এবং হিমু বলেছেন: আমার লেখাটা ভাল ভাবে মনে হয় পড়েন নি।কিছু পড়ার পরই মনে হয় আপনার চেতনায় আঘাত লেগেছে।লাগবেই,এতো কষ্ট করে দেশটা স্বাধীন তো আপনারাই করেছেন।আমি পরিস্কার লিখেছে যেমনটা আমি পড়েছি লেখাটা ঠিক সেই রকম শেয়ার করেছি কোন রকম কলম চালানো ছাড়াই।আর এটা ও লিখেছি যে এতো ভারি বিষয়ে লিখতে গেলে যা যা লাগে আমার তা নেই।আমি এই লেখাটা শেয়ার এ কারনে করলাম যে আমাদের মতো নতুন প্রজন্মের কাছে ইতিহাস একটা ঝাপসা আয়না।কোন সরকার এটা ক্লিয়ার করেনি।না কোন ইতিহাসবিদ।তাই আমাদের কাছে দিনটা বড়।আমরা কেবল জানি শহীদদের সম্মান জানাতে।১০ জন হলে ও শহীদ বা ৩০ লক্ষ হলেও।আমরা আপনাদের মতো বড়দের কাছ থেকে শিখতে পারিনি কি করে সম্মান দিতে হয় তাদের,কেবল এটা শিখেছি সংখ্যা নিয়ে গলা ফাটাতে আর বিরিয়ানি খেতে।বড় ভাইয়েরা যা শিখাবে আমরা তো তাই শিখবো,তাই না :P :P

৪| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৫২

কালীদাস বলেছেন: আর দালালের কথা জিগাইলেন জানি কিনা? =p~ =p~ =p~ আপনে এই ব্লগের নাম শুনার মেলা বছর আগে এই ব্লগের আপনার মত জামাতী *** খেদানির জন্য নিজের সোশ্যাল স্ট্যাটাস ভুইল্ল্যা কিবোর্ড চালাইতাম। বড় হন, মানুষ হন, দেশরে ভালবাসতে শিখেন।

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ ভোর ৫:৩৫

কবি এবং হিমু বলেছেন: ধন্যবাদ।আপনার মতামতের জন্য।আর সবার মতো আপনি চুপ করে থাকেন নি বলে।আওয়াজ তুলেছেন।জ্বি ব্লগে নতুন।আপনাদের মতো সিনিয়র ব্লগারদের থেকে আর কিছু শিখতে না পারলে ও কিছু শব্দের সাথে পরিচিত হতে পেরেছি বা শিখলাম।সেটাই বা একজন নতুন ব্লগারের জন্য কম কি।আর না ভাই আমরা ভাগ্যবান এ কারনে আমাদের গ্রামে রাজাকারের জন্ম যেমন হয়নি তেমনি পাক-বাহিনী ও আসতে পারে নি।সেই মতে আর যাই হোক আমাদের দেহে রাজাকারের কোন রকম ছিটা নেই।আল্লাহকে ধন্যবাদ দিতেই পারে আমাদের পূর্ব পুরুষরা এবং নতুন প্রজন্ম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.