![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এ সমাজে আমি একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের প্রতিনিধি।হয়তো এ ব্লগ পাড়ার অনেকই এ দলটার সদস্য।আমরা এমন একটা পর্যায়ে আছি,না পারি কারু কাছে হাত পেতে কিছু চাইতে আবার না পারি কাউকে কোন কিছু দান করতে।আমাদের সব থেকে বড় অহংকার আমাদের আত্মসম্মান।নিজের সব কিছু দিয়ে হলে ও এটাকে রক্ষা করা চাই।
আমার পরিবারের বাকিরা যখন বিদেশ পাড়ি জমাচ্ছে তখন আমার বাবা সরকারি চাকুরিতে ব্যাস্ত।তখন বেতন এতোটা ছিল না।বাসা ভাড়া আর আমাদের তিন ভাই-বোনের পড়ালেখার খরচ দিতেই বাবা হিমশিম খেত।তাই নিজেদের বিশেষ করে আমার আর আমার বোনের স্বপ্নগুলো অনেকটা স্বপ্নই থেকে যেত।তারপর ও আমরা এগিয়ে যাই।আর সবার মতো।আমাদের জমির পাশে একে একে বড় বড় দালান তৈরি হতে দেখি।আমার মা সেসব দেখে কেবল একটা কথাই বলতেন আমাদের কবে বাড়ি হবে?সেসময় মনে করতাম হয়তো আমাদের কোন দিন ও বাড়ি বানানো হবে না।আমার চাচারা,আমার চাচাতো ভাই-বোনেরা অনেক অনেক এগিয়ে।আমরা কেবল দেখতাম তাদের স্বপ্নগুলো।
সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাবার প্রোমোশন হলো।দিন দিন আমরা বড় হলাম।সরকার বেতন বাড়ালো।কিন্তু আমাদের স্বপ্নের পরিধি বাড়তে পারেনি।বাসা ভাড়া ১৫০০ থেকে শুরু করে ১২০০০ হলো।আমি যখন কলেজে পড়ি তখন মা মাঝে মাঝে বলতো জানিস বাবু এতো দিনে যতটাকা বাসা ভাড়া দিয়েছি সেই টাকা দিয়ে একটা বাড়ি বানানো যেত।মায়ের কেবল একটাই চিন্তা একমাত্র বোনটাকে কি ভাড়া বাসা থেকেই বিয়ে দিতে হবে।কলেজে যখন পড়ি আমার বন্ধুরা যখন পালসার দৌড়ায় তখন বাবা একটা সাইকেল কিনে দিলেন।হিরো রেন্জার ম্যাক্স।যে স্বপ্নটা হাই স্কুলে থাকতে দেখতাম।সেটা পূরন হলো যখন স্বপ্নের পরিধী বেড়ে গিয়েছে অনেক।তারপর ও মাত্র ১৫ দিনের মাথায় সাইকেলের তালা কেটে কেউ চুরি করে নিয়ে যায়।কলেজে পড়ি তারপর ও সেদিন অনেক কান্না করেছিলাম।স্বপ্ন চুরির কান্না।
বাবা অনেকটা সাহস করে ব্যাংক থেকে হাউজ বিল্ডিং লোন নিয়ে শুরু করলেন আমাদের প্রথম স্বপ্ন পূরনের যাত্রা।পড়ার পর্ব শেষ করে অনেক ব্যাংকে পরীক্ষার পর পরীক্ষা দিয়ে একসময় হতাশ আমি চাকুরি পেলাম ডিবিবিএল ব্যাংকে।এবার স্বপ্ন পূরনের পালা।বাপ-বেটা চাকুরি করি আর আটকায় কে?কিন্তু দেখা গেল নিজের রুম ভাড়া,খাওয়ার খরচ দিয়ে সামান্য কিছু টাকা হাতে থাকতো।বুঝতে পারলাম আমাকে দিয়ে হবে না।এক বছর জব করার পর পাড়ি জমালাম সোনার দেশে।আমরা সিলেটিরা বিদেশকে সোনার দেশ বলেই জানি।এখন আমাদের সেই খালি জমিটাতে বিশাল একটা অট্টালিকা।আমার মায়ের সেই চির চেনা চিন্তাটা পালিয়ে গিয়েছে।
আমার ছোট ভাই,তার এমন কোন আবদার নেই যা আমি মেটাইনি।বাবা-মা আমার সাথে সবসময় ঝগড়া করে।আমি নাকি তাকে নষ্ট করে ফেলবো।নিজের সখ বা ইচ্ছে যেগুলো পূরন হয়নি সেগুলো ছোট্ট ভাইটা পূরন করুক।বাবা-মাকে নিজের স্বপ্নের কথা বললেই চুপ করে যান।একপ্রকার ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল।ছোট্ট ভাইটি এখন ঢাকায় একটা নামকরা প্রাইভেট বিশ্ববিদালয়ে পড়ে।ছোট বেলা নাটক বা ছবিতে দেখতাম বড়লোকেরা গুলশান বা ধানমন্ডি থাকে।নিজের এখন ও সেসব জায়গায় থাকার সুযোগ হয়নি।ছোট্ট ভাইটা এখন তার দুই বন্ধুর সাথে গুলশানে একটি ফ্লাট নিয়ে থাকে।নিজের কাছে কি রকম লাগে তা বুঝানোর মতো ভাষা আমার জানা নেই।
বোনের কাছে শুনলাম আজকাল নাকি ডিএসএলআরের ক্যামেরা না হলে চলে না।বুঝতে পারলাম ছোট্ট ভাইয়ের একটা ক্যামেরা দরকার।বোন লিস্ট দিলো।অল্প অল্প করে টাকা জমিয়ে ছোট্ট ভাইকে একটি আইফোন,একটি ক্যাননের ক্যামেরা আর একটি ম্যাকবুক পাঠালাম।সাত মাস অল্প অল্প করে টাকা জমিয়ে জিনিসগুলো কেনা।দেশে যখন সেগুলো ছোট্ট ভাইয়ের হাতে জিনিসগুলো পৌছালো তখন কল্পনায় বারবার ছোট্ট ভাইয়ের মুখটা দেখছিলাম।তার স্বপ্ন পূরনের হাসি মাখা মুখ।নিজের ভেতর এক প্রকার শান্তি পেলাম।মনে হচ্ছিল এ যেন নিজের স্বপ্ন।
দুদিন আগে বাড়ি(সিলেট) যাবার পথে আজিমপুর নামক জায়গায় আমার ছোট্ট ভাইয়ের স্বপ্নগুলো ছিনতাই হয়ে যায়।তিল তিল করে সাত মাসের জমানো টাকাগুলো ২ মিনিটে ছিনতাই হয়ে গেল!!ভাইটা পাগল প্রায়।নিজের কাছেই অনেক কষ্ট লাগলো শোনার পর।তাকে সান্তনা দিলাম তোর কোন ক্ষতি হয়নি এটাই মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া।বললাম চিন্তা করিস না।তোর জন্মদিনের আগে সব কিছু আবার পৌছে যাবে।দেশে হরতালের সময় গাড়ি পূরানো হয়,নষ্ট করা হয়।কিন্তু যারা করে তারা জানে না কতোটা কষ্ট আর কতোটা স্বপ্ন মিশে থাকে এসব জিনিসগুলোর সাথে।মনে পড়ে একবার হরতালে এক মহিলার কার ভেঙ্গে যাবার পর টিভি সাংবাদিকের কাছে তার কি কান্না।সে জানালো কতোটা কষ্ট করে সে এটা কিনেছিল।সেই মহিলার কান্না মাখা মুখটা বেশ মনে পড়ছে।সাথে নিজের ভাইয়ের।
লেখাটা এতো গুরুত্বপূর্ন নয়।কেবল নিজের দুঃখটা সবার সাথে শেয়ার করা।জানি দেশটার কোন পরিবর্তন হবে না।আমাদের মতো মানুষগুলোর তিলে তিলে জমানো স্বপ্নগুলো নিমিষেই ছিনতাই হয়ে যাবে ছিনতাইকারি দ্বারা,পুড়ে ছাই হয়ে যাবে কোন দলের নেতা-কর্মী দ্বারা।আবার আহত হতে পারে কোন পিকেটারের ছুঁড়ে মারা ইটের আঘাতে।
১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৫৮
কবি এবং হিমু বলেছেন: সত্য বলেছেন ভাই।আশাই আমাদের একমাত্র ভেলা
২| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:১৮
চাঁদগাজী বলেছেন:
আপনি যতটুকু পেরেছেন ৭০% -৮০% তাও পারেনি।
২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০৩
কবি এবং হিমু বলেছেন: কি যে বলেন না ভাই।এতো বড় একটা দেশ পেলাম আপনাদের জন্য।আপনাদের কারনেই তো আমরা স্বপ্ন দেখতে পারি।যদি ও আপনি হয়তো সেই সব সুবিধাবাদী মুক্তিযোদ্ধা হতে পারেননি যারা দেশ স্বাধীনের পর পর নিজেদের আখের গুছানোতে ব্যাস্ত ছিল।তাই হয়তো আপনি এখন ও মধ্যবিত্তের বৃত্তে বন্দী।
৩| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:২৯
কল্লোল পথিক বলেছেন: আমাদের মধ্যবিত্তদের স্বপ্নগুলো চিরকাল স্বপ্নে থাকে।
বাস্তবে ধরা দেয় না।তবুও তো আপনি কিছু পেয়েছেন।
৭০ থেকে ৮০ ভাগ তাও পায়না।
২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০৫
কবি এবং হিমু বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।হুমম কিছুটা হয়তো পেয়েছি।তবে নিজের চোঁখে নয় ছোট্ট ভাই-বোনের চোঁখে।সেটাই অনেক বড় পাওয়া মনে হয়।
৪| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৩২
খোরশেদ আলম সৈকত বলেছেন: খুব গুছিয়ে লিখেছেন ভাই। আমাদের মত মধ্যবিত্তরা স্বপ্ন নিয়েই বেচে থাকে।
২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০৬
কবি এবং হিমু বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই,কষ্ট করে পড়ার জন্য।আমরা স্বপ্ন নিয়েই বেঁচে আছি।স্বপ্নের মৃত্যু মানেই তো আমাদের মৃত্যু
৫| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৪৫
রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: কষ্টকর বাস্তবতা। সময় যতই গড়াক মধ্যবিত্তের সাধ্য আর সাধ্যের ব্যবধান সবসময়ই এক থাকে।
২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৫৪
কবি এবং হিমু বলেছেন: সবার দিন বদলায় কেবল এ শ্রেনীর মানুষগুলোর দিন বদলায় না
৬| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৩৬
লিযেন বলেছেন: মধ্যবিত্বের স্বপ্ন পূরন হয়,তবে একটু দেরিতে।
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৫৯
হাইপারসনিক বলেছেন: আবার আহত হবে মধ্যবিত্ত জনগোষ্টির স্বপ্ন ।ছিন্তাই হবে সকল আশা ।তবে এই টুকু মানি
সংসার সাগরে দুঃখ তরঙ্গের খেলা ,আশাই তার(মধ্যবিত্ত) একমত্র ভেলা ।