নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হিমু রির্টান

হিমু রির্টান › বিস্তারিত পোস্টঃ

অবশেষে আমি মা হলাম

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ৮:৫৯

আমি পাঁচ বছর ধরে
আত্মগোপন করে আছি। আমার
এই আত্মগোপন আমার
অক্ষমতাকে ঢাকার জন্যই শুধু
নয়, আমার পছন্দের মানুষটার
জীবণটাকে নষ্ট থেকে
বাঁচানোর জন্যও। আজ পাঁচ
বছর পর হুট করেই সেই
মানুষটার সাথে
অনাকাঙ্খিত ভাবে আমার
দেখা হয়ে গেলো।
একটা দুই আড়াই বছরের শিশু
রবির হাতটা শক্ত করে ধরে
আছে। বুঝতে আর বাকী নেই
যে এটাই রবির মেয়ে।
রবি নিজের জীবণটা
গুছিয়ে নিয়েছে দেখে বেশ
ভালোই লাগছে। আমি তো
এটাই চেয়ে ছিলাম। ওর
মেয়েটা দেখতে বেশ
মিষ্টি হয়েছে। বাবার
মুখের আদলের সাথে বেশ
মিল আছে দেখলাম। অফিস
টুরে এসে ছিলাম মধুটিলায়।
এখানে অনেক দর্শনার্থীর
ভীড়ে নাটকীয় ভাবে
মুখোমুখিই দেখা হয়ে গেলো
রবির সাথে। মুখো মুখি
আমার সামনে দাড়িয়ে
একটা তিক্ত মুখ করে রবি
দাড়িয়ে আর আমার দৃষ্টি
বিস্ময় থেকে শিক্ত। আমি
ওর মেয়েটাকে আদর করলাম,
বুকে টেনে নিতেই রবি
ছাড়িয়ে নিলো। একটা
ঘৃণার দৃষ্টিতে আমার দিকে
তাকিয়ে ওর দু চোখ হুট করেই
শিক্ত হয়ে গেলো। খুব দ্রুতই
সে চলে গেলো, একটা কথাও
বললো না আমার সাথে।
আমি কখনো মা হতে পারবো
না বলে রবিও আজ তার
সন্তানকে আমার বুকে টেনে
নিয়ে আদর করতে দিলো না।
হে আল্লাহ সব মানুষ গুলোর
অনুভূতি বদলে যায় কিন্তু
আমার কেনো বদলায় না? কি
অপরাধ আমার? আমি বন্ধ্যা
এই দোষ কি আমার?
ফার্স্ট ইয়ারের প্রথম দিকে
এমন একটা রোগ হলো যেটা
দীর্ঘ চার বছর ট্রিটমেন্টের
পরেও সারল না একটুও।
বাহিরে আমি সুস্থ কিন্তু
ভেতরটা পুরোপুরিই রুগ্ন।
ভয়ঙ্কর একটা দিন এলো, আমি
বেঁচে থাকা আর মরে
যাবার মাঝামাঝি
অবস্থান করছি। লাস্ট একটা
ট্রিটমেন্ট ডাক্তারের
হাতে আছে, ওষুধটা ছয় মাস
খেতে হবে, খেলে আমি
বেঁচে যাবো তবে কখনো মা
হতে পারবো না। আর যদি
না খাই তবে মরে যাবো।
আমার ফ্যামিলী বাধ্য হয়ে
ছিল ঐ ট্রিটমেন্ট করাতে।
কারণ মৃত্যু ছাড়া আর
কোনোই অপশন ছিল না।
ডাক্তার এবং আমার
ফ্যামিলী ব্যাপারটা
প্রথমে আমার কাছে গোপন
রাখলেও ট্রিটমেন্ট শেষে
বিষয়টা আমি জেনে
গেছিলাম।
একটা পূর্ণাঙ্গ পরিবার
দিতে অক্ষম একটা নারী
আমি। যেদিন জানলাম যে
আমি কখনো মা হতে পারবো
না সে দিন আকাশ মাটি
ভেঙে কাঁন্না এসে ছিল।
আমি একজন নারী অথচ আমি
কখনোই মা হতে পারবো না।
কোনো শিশুই আমাকে মা
বলে ডাকবে না কখনো এর
চেয়ে বড় শাস্তি পৃথিবীতে
আর কি হতে পারে? রবির
কাছে কিচ্ছু লুকাতে চাইনী
কারণ আমরা একে অপরকে
ভালবাসি ভবিষ্যতে
আমাদের বিয়ে করার
প্রতিশ্রুতিও ছিল তাই
আমার জীবণের সব অক্ষমতার
কথা তার জানা উচিত। ওর
সাথে দেখা করলাম
রাজবাড়ীতে। এখানে
একটা কাঠ গোলাপ গাছ
আছে যেটা আমার খুব প্রিয়।
রাজবাড়ীর ভেতরে বাঁকা
দীঘির পাড়িতে গাছটার
দুটো ডাল দীঘির জলে হেলে
আছে। গাছটার নিচে দু জন
বসে আছি, রবি উৎকন্ঠ আমি
কি বলবো সেটা শোনার
জন্য। কিন্তু আমি কি ভাবে
শুরু করবো সেটাই ভেবে
পাচ্ছি না।
--রবি তোর বেবীদের কেমন
লাগে?
--খুবই ভালো, তোরও তো
ভালো লাগে।
--হ্যা লাগে তো
--হঠাৎ এই প্রশ্ন কেনো
করছিস?
--এমনি জানতে ইচ্ছে করলো
তাই।
--এটা জানার জন্যই কি এই
নির্জনে ডেকেছিস?
--তা নয় আসলে এমনিতেই
--কি রে রইচের মাম্মী
বিয়ের আগেই রইচকে নিয়ে
ভাবতে শুরু করেছিস যে?
বিয়ে করার লগে লগেই মা
হইতে চাস নাকি
ডাকুরানী? ভাব দেইখা তো
মনে হইতাছে যে, আমারে
লেখা পাড়াও শেষ করতে
দিবি না। শোন ফাইনাল
এক্সামের আগে কিন্তু আমি
এই সব বাবা টাবা হইতে
পারুম না কিন্তু!
--সেটা কখন বললাম?
--এই তো কিছু দিন আগেও তো
বলে ছিলি যে আমাদের টু ইন
বেবী হবে মানে তুই টু ইন
বেবী চাস সাথে আমিও
চাই। ভুইলা গেছস?
ওর কথা শুনে বার বার চোখ
ভিজে আসছিল। খুব কষ্টে
নিজেকে সামলে রেখেছি।
আমি একটা মুচকী হাসি
দিয়ে বললাম-
--বিয়ের পর যদি আমার
বেবী না হয় তাহলে কি
করবি রবি?
--হবে না কেনো?
--অনেকেরই তো হয় না
--আমি জানি আমাদের হবে,
আমার মেয়েটা দেখতে হবে
ঠিক আমার নয়নের মত ওর
নাম রাখবো আঁখি।
আর পারছি না চোখে বাঁধ
দিতে। হে আল্লাহ কিছুটা
সময় অন্তত আমাকে স্থির
থাকতে দাও! কাঁদার জন্য
তো সারাটা জীবন
সাজিয়েই রেখেছো! আমি
নিজেকে সামলে নিয়ে
বললাম-
--আমি তো কালো তাই
আমার মত হতে হবে না
--আবার কালো নিয়ে শুরু
করে দিলি? এই তরে না কত
দিন কইছি এমন কথা কইবি
না! আমার বুঝি কষ্ট হয় না?
যাহ তর লগে কথা নাই!
পাগল ছেলেটা কেমন
অভিমান করে গাল ফুলিয়ে
মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে বসে
আছে। অথচ আজকের পর ওর এই
বাচ্চাদের মত অভিমান করা
মুখটা আমি আর দেখবো না।
কি করে বাঁচবো রে আমি
তোকে না দেখে? আমি বেশ
সিরিয়াস হয়ে বললাম-
--না বললেই কি সত্যিটা
মিথ্যে হয়ে যাবে রবি?
--নয়ন তোর কি হয়েছে? এত
সিরিয়াস ভাবে সব কথা
নিচ্ছিস কেনো?
--কই কিছু না তো!
--কিছু তো একটা হয়েইছে, বল
কি হয়েছে?
এবার হয়ত বলার সময়টা এসে
গেছে। এখনই ওকে বলবো। আর
কথা বাড়াতে চাই না। আর
কোনো ভবিষ্যৎ সুখের গল্প
শুনতে চাই না আমি। চোখ
বন্ধ করে একদমে বললাম-
--রবি আমি কখনোই মা হতে
পারবো না
--এই আজাইরা কথা কোন
জ্যোতিষ কইছে রে? তুই
আবার জ্যোতিষরে হাত
দেখাইছস ডাকুরানী? তরে
না কত বার কইছি যে
কাউরে হাত দেখাবি না!
যে জ্যোতিষ এমন ব্যক্কইল্যা
কথা কইছে তার ঠিকানা দে
হ্যারে গিয়া পিডামু।
--ডাক্তার বলেছে
আমার কথা শুনে রবি
বিস্ময়কর স্বরে বললো-
--কিহ্!
--হ্যা রবি ডাক্তার বলেছে
এবার রবি দাড়িয়ে গেলো।
যেনো আমার মত ওর
মাথাতেও আকাশ ভেঙে
পড়েছে। খানিকক্ষণ চুপ
থেকে বললো-
--ভাগ্যে না থাকলে বেবী
হবে না তাতে কি হইছে?
যাদের বেবী হয় না তারা
কি বেঁচে থাকে না?
--ওটা কি একটা পূর্ণাঙ্গ
সংসার হয় রবি?
--না হলেও তো করার কিছু
নেই নয়ন।
--তোর ফ্যামিলী এটা
কখনোই মেনে নেবে না
আমি জানি।
--ফ্যামিলীকে এই ব্যপারটা
জানাতেই কি হবে?
--এক সময় তো তারা ঠিকই
জানবে!
--বিয়ের পর অনেকেরই বেবী
হয় না সবাই তেমনটাই
ভাববে
--এত বড় মিথ্যা নিয়ে আমি
নতুন জীবণ শুরু করতে চাই না
রবি।
--তাহলে কি চাস বল?
--আমি তোর জীবন থেকে
সরে যেতে চাই রবি।
--তোর মাথা খারাপ হয়ে
গেছে নয়ন? গুনে দেখেছিস
যে আমাদের সম্পর্কটা কত
বছরের?
আমার আর রবির সম্পর্ক
কলেজ লাইফ থেকে। আমরা
ক্লাশমেট ছিলাম।
ভার্সিটি লাইফেও আমরা
একই ডিপার্টমেন্টে পড়ি
তাই সম্পর্কের বয়সটা সত্যিই
অনেক বছরের। আমি
স্বাভাবিক ভাবেই বললাম-
--দেখেছি
--এত বছরের সম্পর্ক ভেঙে
দিয়ে আমাকে উপেক্ষা
করে তুই বাঁচতে পারবি নয়ন?
কাঁন্নায় স্বর আটকে আসছে,
তোকে ছাড়া বেঁচে
থাকাটা যে আসলেই বেঁচে
থাকা নয় রে রবি। তবুও আমি
চাই না তোর জীবনটা নষ্ট
হোক। আমাকে কেন্দ্র করে
তোর ফ্যামিলীতে দিন
রাত একটা অশান্তির ঝড়
বইবে সেটা রোজ তোকে
যাতনার বিষ ফুটাবে। আমি
সেটা চেয়ে চেয়ে দেখতে
পারি না রবি।
তাই তোকে ছাড়াই আমাকে
যে বেঁচে থাকতে হবে
একলা।
--আমি তোকে ছাড়াই
বাঁচতে পারবো রবি।
--কি বললি?
--জানিসই তো যে অনু রাখীর
মত আমি অতো আবেগী নই।
আবেগ আমাকে কখনোই
দমিয়ে দিতে পারেনী।
--আমার দোষ কোথায়?
--তোর দোষ নেই
--তাহলে আমি কেনো
শাস্তি পাবো?
--আর প্রশ্ন করিস না রবি, আর
পারছি না।
দৌড়ে চলে এলাম আর নিতে
পারছিলাম না। রবির ছলছল
চোখ দুটোর দিকে তাকিয়ে
মনে হলো পৃথিবীর সব ভার
আমার বুকে চেপে বসেছে, উহ্
কি অসহ্য যন্ত্রণা যা হৃদয়
ছিদ্র করে দেয়!
এরপর থেকেই রবিকে এড়িয়ে
চলতাম, যতোটা পেরেছি ওর
দৃষ্টির আড়ালে থেকেছি।
ছেলেটা আমাকে হন্যে হয়ে
সারা ক্যাম্পাস খুঁজতো
আমি আড়ালে থেকে সব
দেখতাম। এই আড়াল থেকে
দেখাটা যে কতটা অসহ্য
যন্ত্রণার তা শুধু আমিই
জানি। তবুও ওর জীবনটাকে
আমার অক্ষম জীবনের সাথে
জড়িয়ে ওর সুন্দর জীবনটাকে
নষ্ট করতে পারি না আমি।
আমি সরে গেলে সে নিশ্চয়ই
জীবনটাকে নতুন করে
সাজাতে পারবে। জানি
রবি আমাকে ছাড়া
পৃথিবীটাকে আধার দেখবে।
বিবর্ণ হবে ওর জীবণের সব
রঙ। কিন্তু সময় এক দিন সব
ঠিক করে দেবে। নিজের
হাতে জীবনটাকে না
সাজাক ওর পরিবার তো ওর
জীবনটাকে সাজিয়ে দিতে
পারবে!
ঐ ঘটনার কিছু দিন পরই
আমাদের ফাইনাল এক্সাম শুরু
হয়। দারুণ একটা মানুষিক
চাপ নিয়ে আমরা দুটো মানুষ
পরীক্ষা দিলাম। পরীক্ষা
শেষে হোস্টেল থেকে যখন
বাড়ি ফিরে এলাম তখন
রবিকে না বলেই চলে এসে
ছিলাম। রবি আমার
ঠিকানা জানতো না। একটা
ছোট্ট শহরেও
ঠিকানাবিহীন একটা
মানুষকে খুঁজে পাওয়া সহজ
বিষয় নয়। এরপর আমার ফোন
নম্বরটাও বদলে ফেলে
ছিলাম। মাঝে মাঝে ওর
গলার স্বর শোনার পিপাসা
জাগত। নতুন নম্বর থেকেই
অনেক রাতে ওকে ফোন করে
চুপচাপ থাকতাম, ওপাশ
থেকে রবি হ্যালো হ্যালো
বলে বলে লাইনটা কেটে
দিতো। এটুকুতেই আমার
প্রশান্তি লাগতো। এভাবে
কিছু দিন যাবার পর আমার
নম্বর ব্ল্যাক লিস্টে চলে
গেলো।
খুব জানতে ইচ্ছে করতো রবি
কেমন আছে! ওর জীবনটা
কেমন ভাবে সাজিয়েছে
কিন্তু জানার চেষ্টা
করিনী। ফ্যামিলী থেকে
আমার বিয়ের জন্য চাপা
চাপি করেনী কারণ কোনো
সুপুরুষই আমার বন্ধ্যাত্ব সমেত
আমাকে বিয়ে করতে
চাইনী। যারা বিয়ে করতে
চেয়েছে তারা সবাই
সন্তানের বাবা ছিল। কেউ
ডিভোর্সী কেউ বিপত্নীক।
সব মিলে আমার মন কখনোই
আর বিয়েতে টানেনী।
অন্যের সন্তানের মা হয়ে
হয়ত মা সাজতেই পারতাম
কিন্তু সেই সন্তানের বাবা
তো কখনোই রবি হবে না।
তাই বিয়েটাকে দরকারী
ভাবিনী।
আজ পাঁচ বছর পর আমার সেই
অতীতটাকে সামনে দেখে
আমার মনে হচ্ছে জীবনের সব
ঘটনা যদি দুঃস্বপ্নের মত
হতো! ঘুম ভেঙে দেখবো
কিছুই হয়নী সব ঠিক আছে।
কিন্তু বাস্তবতা এমন সহজ
কিছু নয়।
পাঁচ বছর পর রবিকে দেখার
পর থেকে আমি খুব গোপনে
রবির জন্য অপেক্ষা করতাম।
সে বিবাহিত তার সন্তান
আছে এই সত্যিটা জানার
পরেও। মনে হতো রবির ঐ
সন্তানসহ রবিকে নিয়ে
কোথাও পালিয়ে যাই।
একটা নয় ওর পাঁচটা বউ
থাকুকগে তাতে আমার কিছু
যায় আসে না কিন্তু রবিকে
আমার চাই।
জানেন তো পাঠক মনের এই
ইচ্ছেটাকেও লুকিয়ে
রাখলাম। আমার প্রতি রবির
যে ঘৃণার দৃষ্টি আমি
দেখেছি তারপর ওর সামনে
দাড়াতে সাহস পাইনী।
এরপর আরো দু বছর কেটে
যায়। একটা কনফারেন্সে
রাখীর সাথে হঠাৎ দেখা
হয়ে যায়। এত গুলো বছর
যোগাযোগ করিনী অনেক
অভিমান জমে ছিল
মেয়েটার মধ্যে। সে গুলো
ভাঙানোর পরে রাখী
আমাকে রবির কথা
জিজ্ঞেস করলো। আমি
বললাম-
--দু বছর আগে এক দিন দেখে
ছিলাম তবে কথা হয়নী
--কথা হয়নী? যে মানুষটা
আমার সাথে নিয়মিত
যোগাযোগ রাখে শুধু তোর
কোনো খবর পাওয়া যাবে
কি না সেই আশায় সেই
মানুষটার সাথে তোর দেখা
হলো অথচ কথা হলো না?
--আমার খবর পাবার জন্য
তোর সাথে যোগাযোগ
করে? কেনো?
--কেনো মানে? অবুঝের মত
প্রশ্ন করিস না নয়না?
--বিবাহিত পুরুষ তার এক্স
গার্লফ্রেন্ড এর খবর কেনো
নেবে?
--কে বিবাহিত?
--রবি
--মাথা খারাপ হয়ে গেছে
তোর?
--আমি তো ওর মেয়েকেও
দেখেছি
--ওহ এই কথা! ওটা কার মেয়ে
জানিস?
--কার মেয়ে?
--ওটা রবির বোনের মেয়ে
--কিন্তু আমি তো
বাচ্চাটাকে রবিকে বাপী
বলে ডাকতে শুনেছি
--রবির বোন এবং বোনের
স্বামী কার এক্সিডেন্টে
মারা যায় তখন বাচ্চাটার
বয়স এক বছর। এরপর থেকে
বাচ্চাটার বাবা মা হয়ে
যায় রবি। রবি তোকে
ছেড়ে অন্য কারো সাথে
নতুন করে জীবন শুরু করেনী
রে নয়না। পাগল ছেলেটা
আজো তোকে সেই পাগলের
মতই ভালোবাসে। তুই কেনো
সম্পর্কটা ভেঙে দিয়ে চলে
গেছিলী সেটা আজো আমার
মাথায় ঢোকেনী। রবিকে
অনেক বার এই প্রশ্নটা করে
ছিলাম, রবি বার বার শুধু
একটাই কথা বলেছে,
"হয়ত আমার কোনো ভুল ছিল"
রবির কি ভুল ছিল নয়না যার
জন্য তুই এভাবে ওকে ছেড়ে
চলে গেলি?
--ভুল রবির ছিল না রে রাখী,
ভুল ছিল আমার।
রাখীর কথা শুনে আমি স্তব্ধ
হয়ে গেলাম। ওর থেকেই
রবির ঠিকানা আর ফোন
নম্বর নিলাম। কনফারেন্স
থেকে ফিরেই রবির সাথে
দেখা করতে ওর ফ্ল্যাটে
গেলাম।
দরজা খুলেই রবি আমাকে
দেখে স্তব্ধ হয়ে গেলো।
আমি নিজেও ভাষা খুঁজে
পাচ্ছি না। একজন খুনী
আসামীর মত দাড়িয়ে আছি।
রবির বিস্ময়কর দৃষ্টি এক
পলকেই তিক্ততার দৃষ্টিতে
রূপান্তরিত হয়ে গেলো।
--কি রে ভেতরে ঢুকতে
দিবি না?
রবি চুপচাপ সামনে থেকে
সরে দাড়ালো, বুঝলাম
ভেতরে ঢোকার রাস্তা
ছেড়ে দিলো। ভেতরে
গিয়ে হাবার মত দাড়িয়ে
রইলাম।
--কেনো এসেছিস নয়না?
--তোকে দেখতে এসেছি
--বাহ্ সাত বছর পর আমাকে
তোর দেখতে ইচ্ছে করলো?
--ভেবে ছিলাম জীবনটাকে
সুন্দর করে গুছিয়ে সুখে আছিস
তাই তোর সুখের রাজ্যে
আমি দুখী রানী হয়ে উঁকি
দিইনী
--তো আজ হঠাৎ উঁকি দিলি
যে? দুখী থেকে কি সুখী হয়ে
গেছিস নাকি?
--নাহ
--যে নিজে কখনো সুখী হতে
চায় না সে সুখী হবে কি
করে?
--ঠিকই বলেছিস রবি
--এত নিষ্ঠুর কোনো নারী হয়
নয়না? কত খুঁজেছি তোকে
জানিস? একটা এক বছরের
শিশু যার মা নেই, তাকে
সামলাতে আমার দিন রাত
এক হয়ে গেছে। আপাকে
হারানোর যন্ত্রণা ভুলতে
চেয়ে ছিলাম আপার
বাচ্চাটাকে তোর কোলে
তুলে দিয়ে কিন্তু তোর
ঠিকানা তো আমার জানাই
ছিল না। রোজ একটা
নিষ্পাপ শিশুকে বলতাম তার
মামনী আসবে, এই মিথ্যেটা
শুনে শুনেই সে বড় হয়েছে।
আজো তার মামনী ফিরে
আসেনী।
আমাদের কথোপকথনের মধ্যে
হঠাৎ রবির মেয়ে এসে
হাজির হলো।
--বাপী উনি কে?
--আমার পরিচিত তুমি
ভেতরে যাও মামনী
--বাপী তুমি রোজ বলো যে
আমার মামনী আসবে, সেই
কবে থেকে অপেক্ষা করে
আছি, মামনী কবে আসবে
বাপী?
মেয়েটার প্রশ্নের কাছে
রবি চুপসে গেলো। আমি
মেয়েটাকে বুকে টেনে
নিয়ে বললাম-
--তোমার নাম কি মা?
--আঁখি
আমাদের সন্তানের নামটা
আঁখিই রাখতে চেয়ে ছিল
রবি।
--দারুণ নাম
--তোমার নাম কি?
--নয়না
--তুমি আমার কে হও নয়না?
--আমি তোমার সেই
হারিয়ে যাওয়া মামনী
--সত্যি বলছো
--হ্যা সত্যিই বলছি, এখন
একবার আমাকে মামনী বলে
ডাকো!
আঁখি রবির দিকে তাকালো
হয়ত সে তার বাপীর সম্মতি
চাইছে। রবি অসহায়ের মত
চেয়ে আছে আঁখির দিকে।
আমার যেমন মা ডাক
শোনার প্রতি লোভ ছিল
তেমনি আঁখিরও মা ডাকার
প্রতি লোভ ছিল।তাই আঁখি
অবশেষে আমাকে মামনী
বলে ডেকে জড়িয়ে ধরলো।
আমি আঁখিকে বুকে জড়িয়ে
আদর করে কয়েকটা চকলেট
দিয়েই রবির ফ্ল্যাট থেকে
চলে এলাম। কারণ এর পরের
অনুভূতি গুলো নেবার সামর্থ্য
আমার ছিল না।
দু দিন পর ভোর বেলা ডোর
বেলের আওয়াজে ঘুম
ভাঙলো। দরজা খুলেই আমি
হা হয়ে গেলাম। আঁখি আর
রবি দাড়িয়ে আছে। রবি
বেশ রাগী মুখ করে বললো-
--তোর মেয়েকে রাখ আমার
কাজ আছে
--কি হয়েছে?
--তুই ওর মামনী এটা বলে এসে
তো তুই আরামেই আছিস আর
এদিকে দিন রাত মামনীকে
এনে দাও, মামনীকে এনে
দাও বলে বলে সে নাওয়া
খাওয়া সব ছেড়েছে।
--ও.. তাই বাধ্য হয়েই এসেছিস
বুঝি?
--হ্যা বাধ্য হয়েই এসেছি।
ভালো প্রেমিক হতে
পারিনী তাই ভালো বাবা
হবার চেষ্টা করছি।
--কে বলেছে তুই ভালো
প্রেমিক হতে পারিসনী?
--ভালো প্রেমিকই যদি হলাম
তাহলে এই সাত বছর ধরে
নিঃসঙ্গ জীবণ কাটালাম
কেনো?
--ভুল তো তোর ছিল না রবি!
কিন্তু আমি কখনো মা হতে
পারবো না সেই অক্ষমতার
দোষ কি আমার ছিল বল?
--আমি তো তোর অক্ষমতা
সমেতই তোকে চেয়ে
ছিলাম!
--এখন আর আমি অক্ষম নই এখন
আমি আঁখির মা। এখন যদি তুই
আমাকে বিয়ে না করিস
তাহলে আঁখির বাবার পদ
থেকে তোকে বহিষ্কার
করা হবে।
--আমার বন্দুকেই আমাকেই
গুলি?
--উ হু আমাদের বন্দুক
এতটা বছর পর অবশেষে আমার
অক্ষমতা ঢেকে গেলো।
অবশেষে আমি মা হলাম......
#সমাপ্ত

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:০৫

আটলান্টিক বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন।শুভেচ্ছা নেন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.