নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হিমু রির্টান

হিমু রির্টান › বিস্তারিত পোস্টঃ

নীলিমার নীল জুতো

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:৪৮

আজ নীল জুতো জোড়ায় হাত
দিতেই খেঁকিয়ে উঠলো
দোকানদার। লোকজনের
সামনে প্রচণ্ড চিল্লিয়েই
বলতে লাগলো, " রোজ রোজ
কি পাইছেন ? খালি আহেন
জুতা পায়ে দেন। দাম
জিগান আর চইলা যান। "
দোকানদারের এমন বাজে
ব্যবহারে নীলিমা চুপচাপ।
কোন কথা না বাড়িয়ে
হাটা শুরু করে দিলো। তবে
মন যেতে চাচ্ছে না। মাত্র
দেড়শ টাকা দাম জুতো
জোড়ার। আগামীকাল বেতন
পাবে নীলিমা। টাকা
পেয়েই আগে এই জুতো জোড়া
আগে কিনবে। পাশ ঘুরে যখন
কদম ফেললো মনে হলো একটা
ছেলে ফ্যালফ্যাল করে
নীলিমার দিকে চেয়ে
রয়েছে।
পাত্তা দিলো না
নীলিমা। রাস্তার পাশে
ফুটপাত জুড়ে এসব জুতোর
দোকানে কত ছেলে পিলেই
আসে। কতজনই চেয়ে থাকে ?
কত কথা বলে - এসব নিয়ে
ভাবার সময় কোথায়।
হাটতে হাটতে ব্যথায়
ককিয়ে উঠে নীলিমা। মাঝ
বরাবর থেকে ক্ষয় হয়ে
গিয়েছে জুতো জোড়ার।
তাই হাটার সময় প্রায়ই
রাজপথের উপর বাস্তুহারা
ইট পাথরের টুকরোগুলো
কোমল পদ্ম মতো চরণের ত্বক
ছুঁয়ে দিতে ব্যর্থ হয় না।
নীলিমা বাসায় চলে আসে।
ঘরে চাল নেই আগে থেকেই
জানতো নীলিমা। তাই
গার্মেন্টসে টিফিনের
বদলে পাওয়া পনের টাকা
দিয়ে একটা বনরুটি আর কলা
নিয়ে আসে।
খেয়ে দেয়ে আর গলা অব্দি
জল পান করে ঘুম দেয়
নীলিমা। কাল আবার
সকালে ছ'টায় ঘুম থেকে
উঠতে হবে।
ঘুম থেকে উঠে আবার ছুটে
নীলিমা। তবে আজ মনটা
বেশ খুশী নীলিমার। বেতন
পাবে আজ। তাই আজ সবার
আগেই গার্মেন্টসে আসে
নীলিমা।
অন্যদিনের চেয়ে আজ কাজও
খুব ভালোভাবে করছে
নীলিমা। ফ্লোরের সবাই
অবাক হয়ে নীলিমাকে
দেখছে। মেয়েটা এতো খুশী
কেন - এটা যেন জাতীয় প্রশ্ন
হয়ে গেছে সবার মনে।
তবে নীলিমার মনটা ভেঙে
যায় যখন দুপুরে শুনতে পায়
আজ বেতন দেবে না।
নীলিমার এতোটা খারাপ
লাগে তা আর নীলিমা
কাউকে বুঝাতে পারে না।
আজ বৃহস্পতিবার। আজ বেতন
না পেলে আরো দু'দিন
অপেক্ষা করতে হবে।
রবিবারের আগে বেতন হবে
না।
ফ্লোরের বাথরুমে গিয়ে
একা একা কাঁদে নীলিমা।
ছুটির পর বাসায় ফেরার সময়
নীলিমার হৃদয়টা আবার
টাটিয়ে উঠে রাস্তার
পাশের দোকানে সেই নীল
জুতো জোড়া দেখে।
জুতো জোড়ার দিকে
অনেকক্ষণ তাকিয়ে আবার
হাটা শুরু করে। কেন যেন
মনে হলো নীলিমার
গতকালের সেই ছেলেটা
নীলিমার পেছন পেছনই
হাটছে। আচমকা পেছনে
ফিরে গেলো নীলিমা।
নাহ!! নেই সেই ছেলেটা। তবু
কেন যেন মনে হলো
নীলিমার আশেপাশেই
ছেলেটা রয়েছে।
শুক্র, শনি এই দু'দিন
ফ্যাক্টরিতে যাওয়া ও
আসার সময় প্রতিবারই
নীলিমা দূর থেকে নীল
জুতো জোড়া আড়চোখে
দেখে গেছে।
আজ রবিবার। আজ নীলিমা
যেমন খুশী তেমন তাড়াও।
কখন বেতন দেবে ; কখন ছুটি
হবে। গিয়ে জুতো জোড়া
কিনবে।
অবশেষে প্রহরের পালা শেষ
হয়। বেতনটা পেয়েই হাফ
বেলার জন্য ছুটি নেয়
নীলিমা। ওর খুব ইচ্ছে হচ্ছে
আজ সেই নীল জুতো জোড়া
কিনে ; তা পরে সমস্ত শহর
জুড়ে হেটে বেড়াবে।
আধুনিকতা ও সভ্যতার
মেকাপে রাঙানো এই
শহরের প্রতিটি
অলিগলি,রাজপথ আর
ফুটপাতে এঁকে যাবে তার
পদচিহ্ন। কিন্তু ভাগ্য সহায়
না হলে যা হয়। এসে দেখে
জুতোর দোকানটা বন্ধ।
পাশের দোকানে খোঁজ
নিতেই দোকানদা বললো , "
সে তো মাল আনতে গেছে।
একটু দেরী হবে আসতে। "
মনটা আবার খারাপ হয়ে
যায় নীলিমার। বাসায়
যাবে কিনা অপেক্ষা করবে
ভাবতে ভাবতে অপেক্ষা
করারই সিদ্ধান্ত নেয়। দুপুর
গড়িয়ে বিকেল ; বিকেল
গড়িয়ে সন্ধ্যে হলে যখন
সূর্যটা ডুবে যায় তখন দেখা
মেলে দোকানদারের।
ভ্যান ভরে মাল এনেছে
দোকানদার। ভ্যান থেকে
মাল নামানোর আগেই
দোকানদারকে বলে
নীলিমা, " ভাই!! সেই নীল
জুতাটা দেন আমারে আগে।
দুপুর থেইকা খাড়াইয়া আসি।
"
দোকানদার সহানুভূতির
কণ্ঠে বলে , " আপা!! ওই জুতা
তো আর নাই। তবে আজ আবার
নতুন মাল আনছি। নতুন
ডিজাইনের মাল। আপনারে
দেখাই পছন্দ হইবো। "
নীলিমা এমন কোন উত্তরের
জন্য প্রস্তুত ছিলো না। আর
কিছু না বলে দৌড়ে চলে
আসে। প্রতিদিনের মতো
আজও পুরোন জুতোর ফুটো
দিয়ে ইট পাথরের খোঁচা
লাগে। তবে আজ আর
নীলিমা ব্যথা পায় না।
কোন অনুভূতিই নেই ওর।
বাসায় এসে দরজায় খিল
দিয়েই বালিশে মুখ লুকিয়ে
কাঁদতে থাকে। এমন সময়
দরজায় কে যেন নক করলো।
মনে মনে বেশ রেগে গেলো
নীলিমা। শান্তিতে একটু
কাঁদবে তারও উপায় নেই।
মনে হয় বাড়ীওয়ালা
এসেছে ভাড়া চাইতে।
নীলিমা ওড়নায় মুখ মুছে
নেয় ভালো করে। তারপর
উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখে
কেউ নেই। তবে দরজা নক
করলো কে ?
এমন সময় মেঝেতে চোখ যায়
নীলিমার। একি ? সেই নীল
জুতো জোড়া রাখা ওখানে।
তার উপর একটা গোলাপ ফুল
আর একটা শাদা কাগজের
টুকরো। কে রেখে গেলো
এখানে ? আর কিভাবেই বা
জানলো এই জুতোর কথা ?
নীলিমা জলদী করে গোলাপ
ও কাগজের টুকরোটা তুলে
নেয়। ঘরে এসে লাইট
জ্বালিয়ে কাগজের
টুকরোটাতে চোখ বুলাতেই
বিস্ময়ে অবাক হয়ে যায়
নীলিমা। ভেবেছিলো যে
দিয়েছে তার নাম ঠিকানা
লেখা এখানে। কিন্তু নাহ !!
অমিমাংসিত বিস্ময়ের জন্ম
দিয়ে সস্তা খাতার
কাগজের টুকরোতে কে যেন
লিখে রেখেছে , "
ভালবাসি। "
কর্টেসি: রেজোয়ান খান

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.