নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

১৯৭১-

ক্ষণ-পূর্বক্ষণ

হুমায়ূন কবীর মুজিব (হুমায়ূন মুজিব),সাংবাদিক

ক্ষণ-পূর্বক্ষণ › বিস্তারিত পোস্টঃ

তাহলে কেমন হওয়া উচিত বাসযোগ্য্ ঢাকা ?

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৩৯

রাজধানীর আবাসিক এলাকাগুলো ক্রমশ বাণিজ্যিক এলাকায় রুপান্তরিত হচ্ছে;
তাহলে কেমন হওয়া উচিত বাসযোগ্য ঢাকা ?
হুমায়ূন মুজিব ঃ - রাজধানীর অভিজাত এলাকা থেকে শুরু করে সবধরনের আবাসিক এলাকা ক্রমশ বাণিজ্যিক এলাকায় রুপান্তরিত হচ্ছে। রাজধানীর বেশিরভাগ ভবনে এখন রয়েছে কোন না কোন অফিসিয়াল বা কমার্শিয়াল প্রতিষ্ঠান। এক সময় অফিস পাড়া বা ব্যাংকপাড়া বলতে বোঝাতো মতিঝিল এবং তার আশে-পাশের এলাকাকে। কিন্তু বর্তমানে গুলশান-১,গুলশান-২ এবং বনানী এলাকা নতুন বাণিজ্যিক এলাকায় পরিণত হয়েছে। এছাড়া উত্তরা-বারিধারা,নিকেতন,ধানমন্ডি এলাকাও পরিণত হযেছে বাণিজ্যিক এলাকায়। প্রতিটি আবাসিক এলাকার বিভিন্ন আবাসিক ভবনে রয়েছে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অফিস। মোহাম্মদপুর যেমন এনজিওপাড়া হিসেবে পরিচিত। রমরমা বাণিজ্যিক অফিস কার্যক্রমের কারনে আবাসিক এলাকাতে যানজট,গাাড়ি পার্কিং,শব্দদূষণ,ময়লা আবর্জনার স্তুপ তৈরী সহ নানা সমস্যায় জর্জরিত হচ্ছে।
রাজধানীর আবাসিক এলাকাগুলোতে নতুন নতুন ভবন তেরী হওয়ার পাশাপাশি নতুন নতুন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানও তেরী হচ্ছে। প্রভাবশালী মহল তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থে আবাসিক ভবন বিশেষ করে বাসা-বাড়ির জন্য যেসব ফ্ল্যাট সেগুলো ভাড়া নিচ্ছেন বাণিজ্যিকক ও অফিসিয়াল কাজে। এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অফিসিয়াল কাজে এসব এলাকায় প্রচুর গাড়ি যাতায়াত করে, এর ফলে যানজট সৃষ্টির সঙ্গে শব্দদূষণ তৈরী হচ্ছে। এছাড়া পরিবেশও দূুষিত হচ্ছে। রাস্তায় পার্র্কিং হওয়ার কারেেন মানুষের হাটাচলার অসুুবিধাসহ গাড়ির বিকট হর্ণের কারণে মানুষের শ্রবণ ক্ষমতায় আঘাত পড়ছে।
সূত্রমতে,কোনরকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই আবাসিক ্এলাাকায় দিন দিন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে। স্কুল-কলেজ, বিপণিবিতাান,রেস্টুরেন্ট,বিউটিপারলার,কোচিং সেন্টার,বার,লোকাল গার্মেন্টস সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। যে যার মতো পরিচালনা করছে প্রতিষ্ঠান। এ ব্যাপারে উদাসীন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্টান। রাজউক সূত্র বলছে প্রভাব সৃষ্টি করে বিভিন্ন মহল সিটি করপোরেশন থেকে,জয়েন্টস্টক থেকে প্রতিষ্ঠান থেকে আবাসিক এলাকার ঠিকানা দিয়ে লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে। ধানমন্ডি ৫০ দশকে গড়া উঠা আবাসিক এলাকা কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,রেস্টুরেন্ট,বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ যেমন বিশ্বাস গ্রুপের প্রধান অফিস ধানমন্ডিতে এলাকা হাাসপাতাল ক্লিনিকের তো অভাব নেই। ১৯৬১ সালে গড়ে উঠা অভিজাত এলাকা গুলশান-১ ও ২ এ অভিজাত এলাকার জৌলুস হারিয়ে এখন একটি পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যিক এলাকায় রুপান্তরিত হয়েছে।
বনানী,গুলশান,বারিধারা,বাড্ডা,নিকেতন,খিলক্ষেতসহ উত্তরা আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠেছে সূউচ্চ ভবন এসব ভবনে বিভিন্ন কর্পোরেট হাউস,বিদেশী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হোটেল মোটেল বাার দেশীয় ব্যাংক-বীমার কর্র্পোরেট হাউস,গার্মেন্টস প্রতিষ্টান,আবাসন প্রতিষ্ঠান,হাসপাতাল সহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় । এছাড়া এসব এলাকায় কলকারখানা ও এজেন্সির অফিস রয়েছে। বনানী এলাকার আশেপাশেতো বিভিন্ন বাজারের বিড়ম্বনা রয়েছেই। সবমিলিয়ে একসময়ের শান্ত¯িœগ্ধ সবুুজ আবাসিক ্এলাকা পরিণত হয়েছে পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যিক এলাকাায়।
রাজউক সূত্র বলছে আজ থেকে ১৫ বছর আগে ধানমন্ডি এলাকায় কোন ভবনের উচ্চতা ৪ তলার ওপরে ছিলনা,এখন ভবন নির্মাণ হচ্ছে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই সবাই বহুতল ভবন নির্মানের জন্য অনুমোদন চায়। ধানমন্ডিতে এখন বহুতল ভবনের অভাব নেই। এসব ভবনে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়,বিভিন্ন মাধ্যমের স্কুল কলেজ,হাসপাতাল,রেস্টুরেন্ট এর ছড়াছড়ি। আবাসিক এলাকার এই রুপান্তরের ফলে ঘনবসতি সৃষ্টি হচ্ছে তৈরী হচ্ছে ঘিজ্ঞি এলাকা। ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভলেপমেন্ট-আইপিডি নির্বাহী পরিচালক পরিকল্পনাবিদ ড.আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, একটি এলাকা যখন আবাসিক থেকে বাণিজ্যিক এলাকায় পরিণত হয় তখন সেই অঞ্চলের ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হয় না হলে সেই এলাকায় মানুষের বসতি কঠিন হয়ে যায়। ফলে পরিবহন নিয়ন্ত্রণ,শব্দদূষণ ও পরিবেশের বিষয়টি মাথায় রেখেই এই রুপান্তর করতে হবে।
তাহলে কেমন হওয়া উচিৎ বাসযোগ্য ঢাকা ?
অর্র্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা,বাসযোগ্য পরিবেশের সামগ্রিক চিত্র এবং সামাজিক অন্তর্ভুক্তির মতো বিষয়গুলো নিয়ে বাড়ছে চ্যালেঞ্জ। শহরের বিভিন্ন পরিসেবা ও জীবনযাপনের মান নির্ধারক সূচক অনুযায়ী ঢাকাকে আরো বাসযোগ্য করে তুলতে এখনো অনেক কিছু করা বাকি। বাংলাদেশের অর্থনেতিক রূপান্তরে ঢাকার ভূমিকা সবার আগে,পৃথিবীর জনবহুল মেগাসিটির মধ্যে ঢাকা একটি। কিন্তু অন্যান্য বড় শহরের মতো ঢাকাও ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। অর্র্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, বাসযোগ্য করে তোলার লক্ষ্য অর্জনে অসংখ্য প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে যেমন ঃ- কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ঘাটতির কারণে ড্রেন এবং নর্দমা আটকে শহরে জলাবদ্ধতার ঝুঁকি,কম খরচে বাসা পাওয়া যায় এমন ্এলাকাগুলো দূরে হওয়া,গণপরিবহনের স্বল্পতা এবং বিকল্প ও পর্যাপ্ত রাস্তা না থাকা, উন্নয়ন নীতিমালায় শিথিলতার অভাবে কর্মস্থলের কাছাকাছি কম খরচে আবাসন প্রকল্প নির্মিত না হওয়া।
দ্দধু এগুলোই নয়, নগরজুড়েই রয়েছে নানা অব্যবস্থাপনা। এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে নতুনভাবে বিনিয়োগ ও পরিকল্পনা করা জরুরি। ঢাকায় ৫০টিরও বেশি উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা রয়েছে। শহরের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রতিটি সংস্থার নিজস্ব ভাবনা রয়েছে। কোন বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন, অর্থসংস্থান এবং বাস্তবায়ন পরবর্তী রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কার হবে-এসব নিয়ে প্রায়ই প্রকল্পগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। তাই প্রয়োজন স্বমন্বিত নগর পরিকল্পনা। সময় এসেছে ঢাকার ভবিষ্যৎ নির্র্ধারণে বিভিন্ন খাত নিয়ে সম্মিলিতভাবে উন্নয়ন পরিকল্পনা করার।
নগর উন্নয়নের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো-কিভাবে তা যায় ? বিভিন্ন অবকাঠামোগত বিনিয়োগ এবং নীতিমালার সমন্বয়ে বিশ্বের বড় শহরগুলো সম্মিলিত উন্নয়নের কাাজ করেছে তিনটি পদ্ধতি অনুস্বরণ করে যেমন ঃ-
ট্রানজিট নির্ভর উন্নয়যন
ঈরিবহন রুট এবং ভূমি ব্যবহার নীতির সমন্বয়ে ট্রানজিট নির্ভর উন্নয়ন পরিকল্পনা করা হয়। নির্দিষ্ট জোনভিত্তিক এরিয়ায় জনসংখ্যা ও অবকাঠামোর ঘনত্ব ও ব্যবহার নির্ধারণ করা থাকে। এর উদ্দেশ্য হলো আবাসন ব্যবস্থা উন্নতকরণের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ও প্রশাসনিক ঘনত্ব নির্ধারণ এবং চলাচল সহজ করে তোলা।
যেমন ইউরোপ-আমেরিকায় বিভিন্ন সাবওয়ে স্টেশনের আশেপাশের অঞ্চল নিয়ে ভূমি উন্নয়ন পরিকল্পনা করা হয়। এর ফলে ভূমি ব্যবস্থাপনা ও পরিবহন ব্যবস্থা একে অপরের পরিপূরক হিসেবে ভূমিকা পালন করে। ঢাকার বর্তমান ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ( এমআরটি ) ও বাস রেপিড ট্রানজিট ( বিআরটি ) প্রকল্পে বিনিয়োগের পরিমাণ ২০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। আর তাই ঢাকায় ট্রানজিট নির্ভও সমন্বিত উন্নয়নের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।যেমন ভার্জিনিয়ার অর্লিংটন কাউন্টিতে ট্রানজিট বিনিয়োগ ও ভূূমি ব্যবহারের নীতিমালা একে অপরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে।
পরিবেশ ব্যবস্থাপনা নির্ভর সমাধান
ঢাকার জল-নিস্কাশন ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে পরিবেশ নির্ভও সমাধান সাশ্রয়ীভাবে জলাবদ্ধতার ঝুঁকি কমাতে পারে। সমতল ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য,নদীর দূরত্ব এবং অসংখ্য হ্রদ ও খাল থাকায় ঢাকায় বন্যা এবং বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃৃষ্টি হয়। জলনিস্কাশন ব্যবস্থাপনার উন্নতি এবং জলবায়ূ অভিযোজনে বিনিয়োগ ভবিষ্যতের বন্যা ক্ষয়ক্ষতি রোধ করে কোটি কোটি টাকা বাঁচাতে পারে।
শহুরে জলাভূমি সনাক্ত ও রক্ষার পাশাপাশি জল নিস্কাশন ব্যবস্থা উন্নত করতে শ্রীলংকার কলম্বোতে বিশ্ব ব্যাংক একটি সফল প্রকল্প পরিচালনায় সহায়তা করে, যে কারনে শহরটিতে জলাাভূমি সংরক্ষণের পাশাপাশি বন্যার ঝুঁকি কমিয়েছে। একইসঙ্গে কলম্বোর বাসিন্দাদেও বিনোদনের জন্য শহওে সবুজ পার্কের পরিমাণ আয়তনও বেড়েছে। ঢাকায় পানি ব্যবস্থাপনা এবং বন্যার ঝুঁকি কমানোর পদ্ধতিগুলো অত্যন্ত্য গুরুত্বপূর্ণ। শহরের বালু নদীর তীওে রয়েছে বন্যাপ্রবণ এলাকা। সেখানে ৬০ শতাংশ জমি বন্যাকবলিত থাকে। অথচ নতুন উন্নয়ন পরিকল্পনায় বর্তমান নিস্কাশন খাল এবং হ্রদগুলো এখন ভরাট হওয়ার উপক্রম। অথচ আমাদের সামনে হাতিরঝিল প্রকল্পের এক উজ্জল উদাহরণ রয়েছে। রাজধানীর আশেপাশের কৃষিজমি রক্ষাা ও পরিকল্পিত আবাসন গড়তে জলাশয় ও হ্রদগুলিকে হাতিরঝিলের পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুললে বিনোদন ও পর্যটনের মাধ্যমে আয়ের উৎসও তৈরী হবে।
ভূমি একত্রীকরণ
ভুটানের থিম্পুসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে নতুন করে নগর ঢেলে সাজানোর ক্ষেত্রে ভূমি একত্রীকরণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ঢাকার উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে শিল্প ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনার সঙ্গে নগর প্রসারণের ক্ষেত্রেও জরুরিভাবে ভূমি ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে পরিকল্পনায় বিনিয়োগ অগ্রাধিকার অনুসাওে স্যানিটেশন,পরিবহন,আবাসন,স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার মতো খাতগুলোকে যুক্ত করা যেতে পারে। সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন,স্টেশন,সবুজপার্ক এবং অন্যান্য ব্যবস্থাপনার জন্য জমি আলাদাভাবে নির্ধারণ করা যেতে পারে।
নতুন ডেল্টা প্ল্যান হতে পারে একটি মডেল ঢাকায় নগরায়নের চ্যালেঞ্জ, শাসন ব্যবস্থা এবং অর্থায়নের বিকল্পগুলোর একটি ডায়াগনস্টিক মূল্যায়ন করেছে বিশ্বব্যাংক; যা সরকারকে ঢাকার জন্য একটি কৌশল তৈরি করতে সহায়তা করবে। সেগুলো যেন অন্য প্রকল্পের সঙ্গে সংঘর্ষপূর্ণ না হয় এবং পূনরাবৃত্তি না হয়, সেজন্য পূর্বপরিকল্পিত এবং পরিপূরক প্রকল্প দাঁড় করাতে হবে। এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক তদারকি ও কাঠামো প্রয়োজন।
বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ একটি সম্ভাবনাপূর্ণ পরিকল্পনার উদাহরণ। এই পরিকল্পনার লক্ষ্যে রয়েছে বন্যা রক্ষা এবং জল নিস্কাশন ব্যবস্থাপনার উন্নতি। কিন্তু লক্ষ্যপূরণে নগর উন্নয়ন, জলবায়ূ স্থিতিস্থাপকতা, পানি সরবরাহ, শাসন ব্যবস্থা, জ্বালানি ও বেসরকারী খাতেও বিিিনয়োগ ও উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রয়োজন।


মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.