![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হৃদয়ে লাল-সবুজ পতাকা, স্বপ্ন দেখি বাংলাদেশে আর্ন্তজাতিক ম্যারাথন হবে- শিবশংকর পাল।
আজ বার্লিন আন্তর্জাতিক ম্যারাথন আসরেও থাকবো এটি হবে ব্যক্তিগত ১১৮ তম অংশগ্রহণদ
হুমায়ূন মুজিব
বাংলার চিরায়ত নদী-বিধৌত অঞ্চল; কাঁদামাটির গন্ধভরা লাল-সবুজের মাঝে বেড়ে উঠা নবাবগজ্ঞের সন্তান শিব শংকর পাল। পদ্মা অববাহিকার ইছামতি নদী তীরের এক সময়ের ডানপিটে বালক শিব শংকর শৈশব থেকেই দৌঁড়াতেন ছুটে বেড়াতেন নদীর পাড়, জমির আইল, বনবাদাড় ও মেঠোপথ দিয়ে। শৈশবের সেই দৌঁড় তার জীবনের সঙ্গে মিশে গেছে বিশ্বব্যাপী ম্যারাথন দৌঁড় মানবদের সঙ্গে। দৈনিক অধিকরণের সঙ্গে এভাবেই অভিব্যক্তি প্রকাশ করছিলেন বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ম্যারাথন মানব হিসেবে পরিচিত শিব শংকর পাল। শিব শংকর পালের জন্ম ১৯৬৫ সালের ১ লা সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার বর্ধনপাড়া গ্রামে, তাঁর বাবার নাম নরেশ চন্দ্র পাল,মা-শান্তি রানী পাল। শিবশংকর পাল ৪ ভাই ৪ বোনের মধ্যে বাবা মায়ের তৃতীয় সন্তান। তিনি বলেন, নবাবগঞ্জ থেকে এসএসসি, ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জিওগ্রাফিতে অনার্স-মাস্টার্স ও ঢাকা পলিটেকনিক থেকে ইলেকট্রিক্যাল ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ১৯৯০ সালে জার্মানীতে প্রবাসী হওয়ার পর সাড়ে ৩ বছরের ইলেকট্রিক্যাল ডিপ্লোমা করেছি। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি পেশায় ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। ২০০০ সালে জার্মানীতে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন পাল ইলেকট্রিক ফার্ম। পেশাগত জীবনে সাফল্য স্বরুপ তিনি জার্মানীর বাভারিয়া প্রদেশ থেকে পুরস্কারও পেয়েছেন, ২০১৭ সালের ৫ ই ডিসেম্বর বাভারিয়া প্রদেশের মেয়র জোসেফ স্মিথ তুলে দেন শিব শংকর পালের হাতে পুরস্কার। এর মধ্যে দিয়েই জার্মানীর ৫ জন সফল ব্যবসায়ীর মধ্যে ১ জন হিসেবে তালিকায় নাম করে নেন তিনি। তাকে নিয়ে একটি ছোট ডকুমেন্টারীও (ঢ়ষধহ ই) নির্মাণ করেছে জার্মান সরকারী টেলিভিশন ( তউঋ ). পেশার পাশাপাশি ম্যারাথন দৌড়, ইয়োগা ও সামাজিক কর্মকান্ড তার হবিতে পরিণত হয়েছে। ম্যারাথন দৌড়ের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন প্রাইমারী স্কুলে ৫ম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় স্কুলে কোন দৌড় প্রতিযোগিতা হলে অংশগহণ করতাম। বলতে পারেন দৌড় সবসময়েরই শখ ছিল। ছোটবেলা থেকেই অভ্যাস ঘুম থেকে উঠে নিয়মিত দৌড়ানোর। তিনি বলেন,জার্মানীতে প্রবাসী হওয়ার পর এই দৌড় আরো নিয়মিত হয়েছে বিশ্বের যেখানেই ম্যারাথন হোকনা কেন সুযোগ পেলেই তাতে অংশগ্রহণ করি। তিনি বলেন ম্যারাথনের ধারাবাহিকতা রাখতে তিনি প্রতিদিন ভোর বেলা উঠে ১১ থেকে ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত দৌড়াই। ছুটির দিন শনি-রবিবার ১৫ থেকে ২৫ কিলোমিটার দৌড়ানো হয়। ২৯ শে মে ২০১৯ সালে এভারেস্ট বেজ ক্যাম্পে হিলারী তেনজিনকে স্বরণ করে যে ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয়, এটি বিশ্বের সবচেয়ে কঠিনতম ম্যারাথন হিসাবে পরিচিত। সমতল পৃষ্ঠ থেকে বেজ ক্যাম্পে পৌঁছাতেই সময় লাগে দুই সপ্তাহ থেকে চার সপ্তাহ। তারপর সেখান থেকেই ম্যারাথনটা শুরু হয়। এভারেস্ট ম্যারাথনে শিব শংকর পাল আন্তর্জাতিক ভাবে সপ্তম স্থান লাভ করেন। সেখান থেকেই আনুষ্ঠানিক ভাবে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে ম্যারাথন দৌড় শুরু করেছেন শিবশংকর পাল। বিটিভির হানিফ সংকেত প্রযোজিত স্বনামধন্য ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান “ইত্যাদি”তে ২০১৯ সালেই তাকে নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রচার হয়েছিল। বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত সব ম্যারাথনে তিনি একের পর অংশগ্রহণ করে চলেছেন, এভারেস্ট বেজক্যাম্প, নিউইর্য়ক ম্যারাথন, শিকাগো ম্যারাথন, সিঙ্গাপুর ম্যারাথন, দুবাই ম্যারাথন, জুরিখ ম্যারাথন , প্যারিস ম্যারাথন , তেল আবিব ম্যারাথন, আলগয় প্যানোরমা ম্যারাথন, মিউনিক ম্যারাথন, বার্লিন ম্যারাথন, ফ্রাঙ্কফুর্ট ম্যারাথন, ডেনমার্কের কোপেনহাগেন ও সুইজারল্যান্ডের আল্পস পর্বত কে কেন্দ্র করে দূর্গম পাহাড়ী এলাকায় অলিম্পিকের পরে সবচেয়ে বড় ম্যারাথন যা ১৯৯৩ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে যা ইয়ংফ্রাউ ও আইগার মাস্ক পর্বতমালার ৪২ কিলোমিটার জুড়ে এ ম্যারাথন হয়। সম্প্রতি ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর শিবশংকর পাল তার ব্যক্তিগত ১১৭ তম ম্যারাথন পূর্ণ করলেন এই আসরের মধ্য দিয়ে, ১৫০ দেশের ৪ হাজার ২০০ জন প্রতিযোগী এই এই আসরে অংশগ্রহণ করে। ২৫ শে সেপ্টেম্বর বার্লিন আন্তর্জাতিক ম্যারাথনে তিনি অংশগ্রহণ করবেন এটি হবে তাঁর ব্যক্তিগত ১১৮ তম আসর। ম্যারাথনের ইতিহাস সর্ম্পকে তিনি বলেন, গ্রীসে ট্র্রয় যুদ্ধ জয়ের খবর রাজাকে পৌঁছাতে গিয়ে ম্যারাথন নামে এক সৈনিক ৪২.১৯৫ কিলোমিটার বা ২৬ মাইল পথ দৌড়ে সংবাদ পৌঁছে দেন। এরপর থেকেই তাঁর নাম অনুসারে গ্রীসের এথেন্সে প্রতিবছর আর্ন্তজাতিক ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয়। শিব শংকর পাল এ পর্যন্ত ১১৭ টি ম্যারাথনে অংশ নিয়েছেন এবং তার চুড়ান্ত লক্ষ্য ১৫০ টি ম্যারাথন আসরে অংশগ্রহন করা। পৃথিবীর বড় বড় শহরগুলোতে যেখানে হাজারো ব্যস্ততা, সেখানে ছুটি দিয়ে হলেও ম্যারাথন হয় কিন্তু বাংলাদেশে কোন আন্তর্জাতিক ম্যারাথন হয়না। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বাংলাদেশে তিনি আন্তর্জাতিক ম্যারাথন আয়োজন করবেন। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করেও ম্যারাথন প্রতিযোগিতা হতে পারে বলে তিনি মনে করেন। সামাজিক কর্মকান্ডেও রয়েছে তার বিশেষ অবদান। প্রবাসে বাংলাদেশ কমিউনিটির যে কোন অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত থাকেন, এছাড়া মাতৃমন্দির নামে জার্মানীতে একটি সংগঠন রয়েছে যা প্রতিবছর দূর্গাপুজা সহ বড় পুজাগুলোর আয়োজন করে থাকে। এছাড়া রয়েছে ইয়োগা সেন্টার যেখানে তিনি নিয়মিত যোগব্যায়ামের অনুশীলন করেন। তারসাথে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনলাইনে ও অংশগ্রহন করেন তার অনুসারীরা। তিনি জানান করোনা ভাইরাসের প্রারম্ভে মিউনিখে একবার একক আল্ট্রা-ম্যারাথনের আয়োজন করেন। সেখানে ৫২ কিলোমিটার দৌড়ে প্রায় ১৫ হাজার ইউরো ডোনেশন লাভ করেছিলেন এবং তা পুরোটাই বাংলাদেশে ডোনেট করেছেন। এছাড়া দেশে তিনি দেশে ২৫ জন বৃদ্ধাকে প্রতিমাসে আর্থিক সহযোগিতা করেন, তাছাড়া জার্মানীতে বাঙ্গালী কমিউনিটির কেউ কর্মসংস্থান খুঁজে না পেলে তাকে কাজের ব্যবস্থা করে দেন। তার ইচ্ছা রয়েছে সুযোগ থাকলে দেশে সেবামূলক একটি ইয়োগা সেন্টার চালু করবেন।
©somewhere in net ltd.