![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভালো থেকো ফুল, মিষ্টি বকুল, ভালো থেকো ভালো থেকো ধান, ভাটিয়ালি গান, ভালো থেকো। ভালো থেকো মেঘ, মিটিমিটি তারা। ভালো থেকো পাখি, সবুজ পাতারা।
মানুষটার কাণ্ড দেখে রেবেকার জেদ হচ্ছে।ছেলেটা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে কোথায় তাকে মাথায় পানি ঢালতে সাহায্য করবে তা না করে তিনি জ্ঞান ঝাড়চ্ছেন।সালেহীন আহমেদ নির্বিকার।সেলসিয়াস ফারেনহাইট এর সম্পর্কটা সমাধানের পর তিনি গম্ভীর হয়ে একটা ব্যাপার ভাবছেন।পরিবেশের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে আমাদের গরম লাগে ঘাম হয় অথচ শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে শীত করে শরীরে কাঁপুনি হয়। বড়ই রহস্য। জগতের সবকিছুতেই রহস্য কিন্তু তার জ্ঞান ক্ষুদ্র। অতি ক্ষুদ্র। তারপর ও তিনি তার অতি ক্ষুদ্র জ্ঞান দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সমাধান খোঁজার। বিয়ের পর থেকে রেবেকা এই মানুষটাকে দেখে আসছে।যতই দিন যাচ্ছে ততই অবাক হচ্ছে।তবে তার সব কাণ্ড যে তার কাছে খারাপ লাগে তা কিন্ত না।মানুষটার বুদ্ধি আছে সাহস আছে।ছেলেটা হয়েছে ঠিক তার উল্টো বোকা, ভীতু।এই বয়সেও সে ঘরে আলো জ্বালিয়ে ঘুমায়। অন্ধকারে তার ভয় লাগে। ছেলেটার জন্য রেবেকার ভীষণ চিন্তা হয়। এই বোকা ছেলেটা কিভাবে এই কঠিন জগতের মোকাবেলা করবে তিনি ভেবে পান না।ছেলেটার অল্প কিছুতে তিনি ঘাবড়ে যান।
আরফানের জ্বর উঠে বিকালে সন্ধ্যায় ওষুধ খাওয়ানো হয়।রাত দশটায় সালেহীন আহমেদ আবার জ্বর মাপেন।ওয়ান হানড্রেড টু পয়েন্ট ফাইভ ডিগ্রি ফারেনহাইট।কন্সটেন্ট ফিগার।বিকালে যা ছিল তাই।রেবাকে চিন্তিত হয়ে পড়েন।সালেহীন আহমেদ বলেন চিন্তার কিছু নাই ওষুধ এখনো অ্যাকশান শুরু করে নাই।রাতটা পার হোক সকালে ব্যাবস্থা নেবো।তিনি শুয়ে পড়েন।রেবেকা জানে মানুষটা শুলেও ঘুমাতে পারবে না।ছটফট করবে।এটা তার একটা কৌশল। তাকে অভয় দেওয়ার কৌশল। সকালে উঠে মনে হল আরফানের জ্বর বেড়েছে। জ্বরের চোটে ছেলেটা কিসব যেন বলছে কাঁপাকাঁপা গলায় মুনা হাতটা ছাড়ো প্লীজ হাতটা ছাড়ো। রেবেকা সালেহীন আহমেদ কে ডাকলেন দেখ ছেলাটা কিসব বলছে।সালেহীন আহমেদ বললেন চিন্তার কিছু নাই। আমি এর সমাধান করে ফেলেছি মুনা মানে হল আমাদের ময়মুনা।তাকে খরব দেওয়া হয়েছে।সকালের ট্রেনে সে রওনা দিয়েছে।লোকমানকে বাজারে পাঠিয়েছি।ডাক্তার আসলেই নিয়ে আসবে।বড় পুকুরে জাল ফেলা হয়ছে।মেয়েটা এতদিন পরে আসবে খাওয়াদাওয়ার একটা ভালো ব্যাবস্থা থাকা দরকার।শেষ রাতে রেবেকা ঘুমিয়ে পড়েন এর মধ্যে এত কিছু হয়ে গেছে তিনি কিছুই টের পাননী।দুপুর গড়িয়ে যায় তবু ময়মুনা এসে পৌছায় না।এদিকে জ্বর একটু কমে না অনবরত ছেলেটা প্রলাপ করে যাচ্ছে।ডাক্তার বলে গেছে গুরুতর কিছু নয় সেরে যাবে।কিন্তু রেবেকা কোনো মতে সস্থি পাচ্ছেনা। কয়েকদিন থেকে তিনি দুঃস্বপ্ন দেখছেন, এইসব বড় কোনো বিপদের লক্ষণ। বিপদ আসলে একসাথে আসে। মেয়টা এসে এখন পৌঁছায়নি না জানি তার কিছু হয়েছে।সালেহীন আহমেদ বললেন বাংলাদেশে রেল ব্যাবস্থা হচ্ছে শিকলের মত একটা গিট্টু খুলে গেলে পুরুটায় অকেজ।চিন্তার কিছু নাই স্টেশনে খোঁজ নেওয়া হয়েছে ট্রেন আসতে দেরি হবে। সন্ধ্যা নাগাত পৌঁছাবে। সন্ধ্যার একটু পরে ময়মুনা এসে পৌছায়।ময়মুনা বুদ্ধিদৃপ্ত মেয়। কিছুক্ষণ বাদেই সে বুঝতে পারে মুনা আর সে একনা।সে বলল বাবা তোমাদের ভুল হচ্ছে আরফান কখন আমাকে মুনা বলে ডাকেনী। আর সে আমাকে তুই বলে,তুমি বলার প্রশ্নই আসেনা। ঘটনা অন্য। সালেহীণ আহমেদ বলেন হ্যারে মা,আমিও কিছুটা আঁচ করতে পারছি।সকালবেলা মনে হল অনেকদিন তোকে দেখেনি তাই হয়ত তোর কথা মনে পড়েছে।রেবেকা বলল বাপ বেটি কিসব বলছিস আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না। ময়মুনা বলল খুব সহজ ব্যাপার মা তোমার বোকা ছেলে মুনা নামের কোনো মেয়ের প্রেমে পড়েছে আর জ্বরের তোড়ে তার নাম জপ করে যাচ্ছে। এইটা হল প্রেমের জ্বর। সে হেঁসে উঠল। রেবেকা বিরক্ত হয়ে বলল, ছেলেটা এই অবস্থায় তোরা কিভাবে ঠাট্টা করতে পারিস আমি বুঝি না। তুমি চিন্তা করোনা।দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। আরফানের কোন বন্ধুর নামকি জানো যাদের সাথে সবসময় ঘুরাফেরা করে। রেবেকা গভীর জলে পড়লেন। ছেলেটা স্কুল কলেজ শেষ করেছে অথচ তার কোন বন্ধুর নাম সে জানে না।জানবেই বা কিভাবে কখন কারো কথা বলেনি বাসাতেও আনেনি। ময়মুনা আরফানের মোবাইল ঘাটল। যা সন্ধেহ করছে তাই মুনা নামে একটা নম্বর সেভ করা আছে।সাধারনত এইসব ক্ষেত্রে সংকেতিক নাম ব্যাবহার করা হয় কিন্তু আরফানের ক্ষেত্রে তার প্রশ্নই আসে না। মুনাকে কল দিল।বেশি কিছু বলেনী শুধু আসার জন্য অনুরোধ করল। মুনা একটু অবাক হল আরফান তার বন্ধু একই ক্লাসে পড়ে।সে অসুস্থ এমনিতে তার যাওয়া দরকার সেখানে অনুরোধ করার কি আছে।
সকাল বেলা মুনা একাই এসে হাজির হল।দরজা খুলে ময়মুনা অনেকখন মুনার দিকে তাকিয়ে রইল তারপর দুহাতে তার মুখ তুলে ধরে বলল মাশ-আল্লাহ তুমি অনেক সুন্দর।মুনা সঙ্ককিত হল সঠিক ঠিকানায় এসেছে কিনা। ভিতরে এসে আরফানকে দেখে সে সঙ্ককা দূর হল।সে এসে আরফানের পাশে বসলো আর তখনি প্রলাপটা শুনতে পেলে।সে মোটামুটি হকচকিয়ে গেলে।ময়মুনা বলল দেখ আরফান মুনা এসেছে।আরফান চোখ মেলে তাকালো মুনার দিকে একটুপর চোখ বন্ধ করে ফেলল।তার প্রলাপটাও বন্ধ হয়ে গেল। সালেহীন আহমেদ বললেন মা তোমাকে দেখে তো মনে হচ্ছে তুমি বুদ্ধিমতি তা আমার বোকা ছেলেটার প্রেমে পড়লে কিভাবে?মুনা আরো হকচকিয়ে গেল।এখানে প্রেম আসলে কিভাবে।আরফান নিজেও এমন কিছু বলেনি। অনেকে আকার ইঙ্গিতে বুঝায় আরফান তাও করেনি।হাত ধরার একটা ঘটনা ঘটেছে কিন্তু তা নিছকই দুষ্টমি এর সাথে প্রেমের কোন ব্যাপার নেই।সালেহীন আহমেদ আবার বললেন তবে মা আমি একটা জিনিস ধরে ফেলেছি তুমি অনেক ভাগ্যবতী, কিভাবে ধরলাম বলত?মুনা চেয়ে রইল মুখ থেকে কোন শব্দ বের হল না।গতকাল বড় পুকুরে জাল ফেলা হয়েছিল তেমন কোন মাছ আসেনি আথচ আজকে তোমার জন্য জাল ফেলতে প্রথম ক্ষেপে বড় মাছটা পাওয়া গেছে। এরা থাকে গভীর জলে সহজে ধরা দেয় না।গত কয়েক বছরে এমন মাছ পাওয়া যায়নি। তুমি ভাগ্যবতী মা। আমার বিশেষ অনুরধ আজ দুপুরে আমাদের সাথে খেয়ে যাবে।সালেহীন আহমেদ চলে গেলেন। রেবেকা ব্যাস্ত হয়ে পড়ল নাস্তা তৈরিতে। মুনা একা একা বসে সব কিছু বুঝার চেষ্টা করছে। বড় মাছ পাওয়ার সাথে তার ভাগ্যবতী হওয়ার কি সম্পর্ক সে বুঝতে পারছে না। তার কাছে মনে হচ্ছে সে পাগলদের কারখানায় এসে হাজির হয়েছে।
বেশ কিছুখন পর ময়মুনা এসে মুনাকে বাহিরে নিয়ে যায়। এরপর এক প্লেট পেয়ারা এনে তার পাশে বসে।হালকা কণ্ঠে বলে আমি জানি তুমি আমাদের সবার আচরনে বেশ বিব্রত হচ্ছ। এর জন্য আমি তোমার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।আমি এটাও জানি আরফান তোমাকে পছন্দ করে এমন কথা কখন বলেনি এবং কখন বলতেও পারবে না। কিন্তু সে তোমাকে সত্যি পছন্দ করে। বোকাদের এই হল সমস্যা তারা ভালবাসতে পারে কিন্তু তা প্রকাশ করতে পারে না।আবার এটাও ঠিক এমন ভালোবাসা নিখাদ সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না।আমি আমার এই বোকা ভাইটিকে খুব পছন্দ করি তাই তাকে বুঝতে পারি।ও তোমাকে অনেক ভালোবাসে হয়তো তোমাকে কখন বলতে পারবে না কিন্তু নিরবে ভালোবেসে যাবে।এখন তুমি ঠিক করবে তুমি কি করবে।হুট করে কিছু বলার দরকার নেই। ভালো করে ভেবে চিন্তে দেখবে।মুনা চুপ কর রইল।কিছুখন পর সালেহীন আহমেদ এসে বলল মা কাটার আগে বড় মাছটা একবার এসে দেখে যাও তোমার ভালো লাগবে। বড়মাছ দেখার কোন ইচ্ছাই মুনার নেই কিন্তু সে অনুরধ ফেলতে পারলো না।বড় মাছ দেখে সে সত্যি অবাক হল। কারণ এতো বড় মাছ সে আগে দেখেনি। তার উচিত গাম্ভীর্য ধরে রাখা কিন্তু তা সে পারলো না। বাচ্চাদের মত চিৎকার দিয়ে উঠল ও মা এতো বড় মাছ।মুনাকে খুশি করার জন্য সালেহীন আহমেদ নিজেই মাছ কাঁটা শুরু করলেন।সাথে মুনাকে বড় মাছ কাটার নিয়ম কানুন বুঝাতে থাকলেন।মুনা বেশ মনোযোগ দিয়ে দেখছে।মাছ কাটার যে এত নিয়ম কানুন আছে সে আগে জানতো না। তার বেশ ভালো লাগছে।
একটা সময় পর মুনা ভুলেই গেল সে এই বাড়িতে প্রথম এসেছে। তার মনে হল অনেক দিন থেকে সে এদের সাথে থাকছে। এরা প্রতেকে তার খুব আপনজন। একাকী মনে এদিক ওদিক হাঁটতে লাগল সে। মানুষ যে এতো আন্তরিক হতে পারে তার ধারণা ছিলা না। তার মনে হচ্ছে পরম শত্রুও এদের সাথে হাঁসি মুখে কথা বলবে।দুপুরে খাওয়ার পর মুনার ইচ্ছে করছিল আরও কিছুক্ষণ থেকে যেতে আবার লজ্জাও লাগছিল। সে চলে যায়।তবে মনে একটা সঙ্কা থেকে যায় আদৌ কি আরফান তাকে পছন্দ করে আর যদি করেও থাকে তবে না বললে সে বুঝবে কি করে।কিন্তু সে এই মানুষগুলো কে ভালোবেসে ফেলে।অল্পতে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলে। এদের সাথে আর দেখা না হলে তার আফসোস থেকে যাবে।
বিকাল নাগাদ আরফানের জ্বর ছেড়ে দেয়।সে জানালা দিয়ে বাহিরে মুখ করে খাটে বসে থাকে।সালেহীন আহমেদ বাজার থেকে এসে ছেলেকে দেখে বলল কি বাবা মুনা কি শেষ পর্যন্ত হাত ছেড়েছে? আরফান বেশ লজ্জা ফেল লজ্জায় তার মুখ লাল হয়ে গেল।সন্ধ্যা নাগাত তার আবার শরীর কাঁপুনি শুরু হয়। সে কাঁথা মুড়ে শুয়ে পড়ে।সালেহীন আহমেদ জ্বর মাপেন।ওয়ান হানড্রেড টু পয়েন্ট ফাইভ ডিগ্রি ফারেনহাইট।কন্সটেন্ট ফিগার।ছেলের কপালে হাত রেখে চিন্তিত কণ্ঠে বললেন প্রেমের জ্বর দেখি শক্ত জ্বর। কঠিন ব্যামো!!!
০১ লা আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:৫০
ভালো থেকো সবুজ পাতা বলেছেন: ধন্যবাদ। এডিট করে প্যারা করার চেষ্টা করলাম।
২| ৩১ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:৪৮
শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: ভালোই লাগলো। প্রামানিক ভাইয়ের কথায় সহমত। একটু ভাগ ভাগ কইরা দেন।
০১ লা আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:৫১
ভালো থেকো সবুজ পাতা বলেছেন: ধন্যবাদ। ভাগ ভাগ করে দিলাম।
©somewhere in net ltd.
১|
৩১ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:৩৭
প্রামানিক বলেছেন: সুন্দর গল্প। তবে এক প্যারাতে এত বড় গল্প পড়তে সমস্যা।