![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অষ্টাদশ পুরাণের এক পুরাণ মার্কন্ডেয় পুরাণ। সেই মার্কন্ডেয় পুরাণের অন্তর্গত সুপ্রসিদ্ধ শ্রী শ্রী চন্ডী মহাগ্রন্থে উল্লেক আছে-সারোচিষ মন্বন্তরে চৈত্র বংশের সুরথ সমগ্র পৃথিবীর রাজা হয়েছিলেন্ৎ রাজা সুরথের কাহিনী দিয়েই দেবী মাহাত্ন্য বা শ্রী শ্রী চন্ডী চরিতের জন্ব বা শুভারম্ভ হয়েছে।
রাজনৈতিক চক্রান্তে রাজা সুরথ রাজ্যহারা হলেন। স্বীয় মন্ত্রী সেনাপতি ও সৈন্যদল এবং আত্বীয়গণ কর্তৃক বিতাড়িত হয়ে তিনি বনে গমন করেন। বনের মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে তিনি অবশেষে উপস্থিত হলেন বেদজ্ঞ মেধস মুনির শান্ত তপোবনাশ্রমে। প্রশান্ত তপোবনাশ্রমও রাজাকে শান্তি দিতে পারল না। তিনি সবসময় পরিবার-পরিজন, পুত্রতুল্য প্রজা, সৈন্য আর রাজধানীর চিন্তায় মগ্ন থাকতেন। কিছুদিন পর সেখানে আরও এক তাপিত প্রাণপুরুষের আগমন ঘটে; যার নাম সমাধি বৈশ্য।তিনিও স্ত্রী,পুত্র, আত্বীয়স্বজন কর্তৃক বিতাড়িত। পরিবার পরিজন দ্বারা পরিত্যক্ত হওয়া সত্ত্বেও তিনি পরিজনদের মায়া-মমতা ভুলতে পারছিলেন না। রাজা সুরথের মতো তিনিও মমতাকাতর। এ মহাসমস্যা থেকে পরিত্রাণের আশায় দুজনেই গেলেন মুনিবর মেধসের কাছে।
বেদজ্ঞ পণ্ডিত মেধস উভয়ের মর্মবেদন বার্তা শ্রবণ করতঃ সানন্দে ঘোষনা করলেন-শুধু মানুষ নয়, ইতর প্রাণীরাও স্নেহ-মমতার মোহে বশীভূত হয় যে অলৌকিক শক্তির প্রভাবে, তিনিই মহামায়া, তিনিই পরমবিদ্যা আদ্যাশক্তি। "মহামায়া প্রভাবেন সংসারস্থিতি কারিনা"-এ মহামায়ার প্রভাবেই জীব তাঁকে বা পরম সত্যকে ভুরে পৃথিবীর মায়াময় ও অনিত্য বস্ত্তর প্রতি আকৃষ্ট হয়। সংসারের মায়াময় বন্ধনের কারণ একমাত্র তিনিই। তিনি একাধারে অবিদ্যা স্বরূপা ও ব্রহ্মবিদ্যা স্বরূপিনী। এ নিখিল বিশ্ব তাঁরই দিব্য রূপ। তিনি নিত্যা, সনাতনী ও পরমেশ্বরী। মেধস মুনি আরও জানালেন-"আরাধিতা সৈব নৃণাং ভোগস্বর্গাপবর্গদা"। আরাধনা করলেই তিনি উপাসককে ইহকালে সুখ ও পরকালে অশেষ শান্তি প্রদান করেন। তিনি সকল দেবতাদের ঈশ্বরী। জীবের মুক্তির ধাত্রী।
মুনিবর মেধস এর কাছে দেবী মাহাত্ন্য ও দেবীর সকল লীলা কাহিনী শ্রবণ করে তাঁর কৃপা লাভের আশায় রাজা সুরথ ও সমাধি বৈশ্য দুর্গাতহারিনী দেবী দুর্গার অর্চনা করেন। কঠোর মাতৃসাধনায় আবিষ্ট হলেন তাঁরা দুজনেই। সর্বশক্তি স্বরূপিনী, জগৎ পালিনী মহাদেবী তাঁদের স্তবে প্রীত হলেন এবং দুজনকে বর প্রদান করেন। রজা সুরথের হৃত রাজ্য পুনরুদ্ধার আর সমাধি বৈশ্যের মোক্ষ লাভ তথা সমাধি প্রাপ্তি- এ বর দান করলেন। এখানে রাজা সুরথ প্রবৃত্তির প্রতিনিধি আর সমাধি নিবৃত্তির প্রতীক স্বরূপ। দেবীবরে সমাধির হলো ব্রহ্মপ্রাপ্তি আর সুরথের হলো রাজ্যপ্রাপ্তি।
দেবী দুর্গা রাজাকে প্রবৃত্তি মার্গে রেখে শক্তির রাজত্বে রাখলেন আর সমাধি বৈশ্যকে নিবৃত্তি মার্গের সন্ধান দিয়ে ব্রহ্মের রাজত্বে পৌঁছে দিলেন। সুরথ ও সমাধি উভয়ে বসন্তকালে দেবীর পূজা করে কৃপা লাভ করেছিলেন বলে এই পূজাকে বাসন্তী পূজা বলা হয়।
কিন্তু ত্রেতা যুগের অবতার নারায়ণ শ্রীরামচন্দ্র রাবণ বধের নিমিত্তে দেবীর আরাধনায় মেতে উঠলেন শরৎকালে যাকে শারদীয়া দুর্গা পূজা বলা হয়। মূলতঃ দুটি পূজায় দেবী দুর্গঅরই আরাধনা করা হয়। রাবণ নিধনের জন্য ১০৮টি নীলপব্ম দিয়ে পূজা করলেন শ্রীরামচন্দ্র অকালে। তৎপূর্বে দেবীর অকাল বোধন করলেন তিনি। বোধন মানে- জাগানো। মহাশক্তির সুপ্তাবস্থাকে জাগ্রত করাটাই বোধন। সাধন জগতে এই অকাল বোধন মানে- মূলাধার চক্রে সদা অবস্থিতা। কুণ্ডলিনী শক্তিকে জাগ্রত করা। সাধন রাজ্যে প্রবেশের পূর্বে সাধককে ঐ মহাশক্তিকে জাগ্রত করতে হয়। তবেই তো তাঁর পূজা। এ যে সাধকের মহাযোগাবস্থা।
দুর্গাপূজা যদিও সাধারণভাবে আশ্বিন মাসের শুক্লা স্তমী তিথি থেকে দশমী পর্যন্ত চারদিন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আশ্বিন মাসের অমাবস্যা তিথিতেই দেবীর শুভ আবাহন ঘটে মর্ত্যলোকে। এ অমাবস্যা তিথিকে "মহালয়া" বলা হয়। মহালয়ার শুভক্ষণে শ্রী শ্রী চন্ডী পাঠ করে জগৎমাতা দেবী দুর্গাকে আমন্ত্রণ জানানো হয় ধরাধামে। তাই এ দিনটি অতীব পবিত্র। আলয় মানে গৃহ। আমাদের দেহটাই পবিত্র দেহগৃহ বা দেবালয়। দেবালয়ের "হৃদয় পব্মাসন" এ দেবীকে বসবার আমন্ত্রন জানানো হয় মহালয়ার দিনে মহামহিমায় মুহূর্তে।
অপূর্ব আলোক রাশি প্রতিভাত হয় যে হৃদয়পব্মাসনে সে পবিত্র আসনে দেবীকে প্রতিষ্ঠা করায় যে যোগক্রিয়া- তাই মহালয়া ক্রিয়া। দেহঘর আলোকিত হবার পর সাধক সেই অপূর্ব জ্যোর্তিময়ী জগৎ মাতৃকার সাধনায় চিত্তকে নিবিষ্ট করেন। দেবী পক্ষের শুভ সূচনা করা হয়- মহালয়ার পুণ্য তিথিতে। মহালয়া অনুষ্ঠান কিন্ত্ত বসন্তকালের দেবী পূজায় করা হয় না। অকালে দেবীকে জাগানোর আয়োজন ছিল বলেই শ্রী রামচন্দ্র শরৎকালে এ মহাপূজা করেছিলেন এবং এ জন্য মহালয়ার দিনে তাঁরই শুভাগমনী বার্তা জানানো হয়। সে থেকে অকালে দেবী পূজার প্রচলন শুরু । যা বর্তমানে চলছে ব্যাপকভাবে। চারদিনের এ মহাপূজার পূর্বদিন অর্থাৎ ষষ্ঠীর দিনে সায়াহ্নে দেবীর শুভ অধিবাস ক্রিয়া সমাপন করে একাধারে মহাস্তমী, মহাষ্টমী ও মহানবমী তিথিতে দেবীর পূজা করা হয় এবং মহাষ্টমী ও মহানবমীর সন্ধিক্ষণে "সন্ধিপূজা" সমাপন শেষে মহাদশমীর দিনে "অপরাজিতা" পূজা করতঃ দেবীর দশমী বিহিত পূজা করতে হয়। পরাক্রমশালী মহিষাসুরের সাথে যুদ্ধ করে দেবী অপরাজিত হয়েছিলেন বলেই তাঁর আর এক নাম "দেবী অপরাজিতা"। তাঁর আর এক নাম দেবীকে অপরাজিত হিসাবেও পূজা করতে হয়।
সাধন জগতে অশুভ শক্তির সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হয় সাধককে। সাধনার মহাযুদ্ধে জয়ী হতে পারলেই সাধক মহাশক্তি দুর্গার সন্ধান পান। সাধনার দশম স্তরে উন্নীত হতে পারলেই পরমবিদ্যা মহাশক্তির নাগাল পাওয়া যায়। সাধক এ স্তরে আসতে পারলেই অপরাজিত হন অন্তরাত্নার যুদ্ধে। এ যেন দশমীর মহাদশা যা সাধক কখনো ভুলতে পারেন না। পরাশক্তির অধিকারী অসুরকে বধ করার জন্য মা দুর্গা দশ হাতে দশ অস্ত্রে সুসজ্জিতা তাঁর দশ হাত দশ দিক রক্ষার প্রতীক। তাঁর পায়ের নীচে আছে উদ্ধত সিংহ আর উদ্যত অসুর। সিংহ রাজসিক আর অসুর তামসিক শক্তির প্রতীক। পশুরাজ সিংহ সাত্ত্বিক গুণাশ্রয়ী দেবীকে বহন করে অবলীলায় দেবী কাঠামোতে শোভা পায় দেব সেনাপতি ক্ষাত্র শক্তির প্রতীক কার্তিক, সিদ্ধিদাতা গণপতি গণেশ, বিদ্যাদায়িনী সর্বশুক্লা সরস্বতী ও প্রভূত ঐশ্বর্যময়ী শ্রী দেবী লক্ষ্মী। কিন্ত্ত সবার উপরের শোভা পায় মঙ্গলের বার্তাবাহী দেবাদিদেব মহাদেব। সকলেই দেবীর এক এক শক্তির প্রতীক। মুলে কিন্ত্ত তিনি এক পরমাবিদ্যা স্বরূপিনী যিনি সর্বভূতের প্রাণরূপী মহা দিব্য মুর্তি মা ও জগৎ মঙ্গলময়ী দুর্গা।
দেবসেনাপতির পাশে দাঁড়িয়ে আছেন নব পতিকা বা কলাবৌ। সর্বজীবের প্রাণরক্ষার উপযোগী শাক সমূহের দ্বারা পৃথিবীকে পালনকারিনী দেবীর নাম সার্থক করার মানসেই দুর্গাপূজার নবপত্রিকা রচনার বিধান রয়েছে। কারণ দেবীর আর এক নাম শাকম্ভরী।
দেবসেনাপতির যে হানাহানি চলছে, দুর্বলের ওপর সবলের যে অত্যাচার চলছে, তার মূলে রয়েছে আসুরিক শক্তির দাম্ভিকতা। যুগে যুগে আমাদের সমাজে অসুরের আগমন ঘটে। আর সে অশুভ শক্তির প্রতীক অসুরের হাত থেকে পরিত্রাণ পাবার আশায় শুভ শক্তির প্রতীক ক দুর্গাপূজা করতে হয়।
অশুভ শক্তি কারো কাম্য নয়, সবাই কিন্ত্ত শুভ শক্তির প্রার্থনা করে। তাই তো শুভ শক্তির উদ্বোধনের জন্যই অসুর বিনাশকারিনী মা দুর্গার। মহাপূজার পবিত্র আয়োজন তিনি জগতের সর্ব শান্তি ও মঙ্গলের বিধাত্রী স্বরূপান যুগে যুগে মানুষের মঙ্গল ও কল্যাণের জন্য তিনি দিব্য দেহ ধারণ করেন। শুধু তাই নয় দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনের জন্য ও দেবীর আগমন ঘটে মর্তালোকে। কারণ তিনি অশুভ দলনী দুর্গাপূজার মুলে রয়েছে সৌভ্রাতৃত্ববোধ। শরৎকালের মহা পূজায় ধনী-দরিদ্র, উচ্চ নীচ সবাই মিলিত হয় পরমানন্দে কারণ মায়ের কাছে সকল সন্তানের অধিকার সমান। তাই তিনি বিশ্বজননী। দুর্গাপূজায় সব ধরনের লোকের প্রয়োজন পড়ে। এক কথায় বলা যায় সব স্তরের জনগণের মিলিত প্রয়াসই দুর্গাপূজা, সকলের অবাধ মিলনই দুর্গা পূজার অন্যতম রূপ। তাই তো এটি সর্বজনীন মহা মিলনোৎসব। বিশ্বমৈত্রী স্থাপনের নিমিত্তেই দুর্গাপূজার প্রতি মন্ডপ হয়ে উঠে মানুষের মহামিলনতীর্থ। মানুষে মানুষে সব ধরনের হানাহানির অবসান ঘটাবার প্রত্যয়ে দুর্গাপূজার প্রতিটি আয়োজন মহা পবিত্রতা আনয়ন করুক, এবারের শারদবন্দনায় এ হোক অভাজনের দীন প্রার্থনা।
'বিশ্ব সাথে যোগে যেথায় বিহারো
সেই খানে যোগ তোমার সাথে আমারো।
২| ২৩ শে অক্টোবর, ২০০৮ সকাল ৭:৪৬
ক্যালী বলেছেন:
৩| ২৩ শে অক্টোবর, ২০০৮ সকাল ৮:৫৮
বেয়াকুফ বলেছেন: আরে পিলাস পিলাস। নগেইন্যা দেখি। বই পাগলার কথাও মনে পড়ে গেলো
৪| ২৩ শে অক্টোবর, ২০০৮ সকাল ১০:০৯
রাইডার বলেছেন: পিলাস
৫| ২৩ শে অক্টোবর, ২০০৮ সকাল ১০:১০
বিপ্লব কান্তি বলেছেন: প্লাস
৬| ১৭ ই মার্চ, ২০০৯ বিকাল ৫:০৩
সাহারা তুষার বলেছেন: লেখাটি লেখক নিজের ভাষাতে নিয়ে নিজের করে সাজাতে পারিনি।
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে অক্টোবর, ২০০৮ সকাল ৭:৪৪
জেনারেল বলেছেন: