নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তোমার চোখের তারায় আমার হাজার মৃত্যু!

অতন্দ্র সাখাওয়াত

তন্দ্রাকুমারী একটি কাল্পনিক চরিত্র যার সন্ধানে আছি নিশিদিন!!

অতন্দ্র সাখাওয়াত › বিস্তারিত পোস্টঃ

অপেক্ষা (অণুগল্প)

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ৮:১৯



হার্ট,

তুই কেমন আছিস? সেদিন তোর সাথে দেখা হলো। তারপর গুণে গুণে দুই দিন দুই ঘন্টা চল্লিশ মিনিট তোকে দেখিনি। মনটা খুব খারাপ হচ্ছে রে। আমার জানামতে এখন তুই কলেজে আছিস। আমি তোর কলেজ-এর গেটের সামনে দাঁড়ানো। মাথায় তোর দেওয়া সাদা ক্যাপ। তুই কি করছিস এখন, খুব জানতে ইচ্ছা করছে। তোর বায়োলজি প্র্যাকটিক্যাল খাতার ছবি এঁকে আনছি। তোর কলেজ ছুটি হলে আমরা একসাথে রেললাইন ধরে হাঁটবো। বেশি দেরি করিস না৷

ইতি তোর
কলিজা

চিরকুটটা রেশমীর এক বান্ধবীর হাতে দিলাম। ওর নাম বর্ণা। ও কলেজ-এর গেটের কাছেই ছিল। আমার সাথে রেশমীর প্রেম চলছে, সেটা বর্ণা জানে। আমার পরিচয়টা আগে দিয়ে নেই। আমার নাম রঞ্জু। আমি রেশমীর প্রেমিক। বয়স ৩০ বছর। বিএসসি (অনার্স), এমএসসি (প্রাণী বিজ্ঞান)। সরকারি চাকরির বয়স পার হয়ে গেছে বলে জীবিকার তাগিদে আজ আমি একটা ফাস্ট ফুডের দোকানের সামান্য কর্মচারী। দোকানে আমার কাজ সকাল ৮:০০ টা থেকে রাত ১০:০০ টা পর্যন্ত। আমার কোন সাপ্তাহিক ছুটি নাই। আমাদের মালিকের ফাস্ট ফুডের পাশাপাশি রেস্টুরেন্ট, বেকারী আর মিষ্টির দোকান আছে। সেসব দোকানেও আমাকে মাঝে মাঝে কাজ করতে হয়। রেশমী আমাদের দোকানের পাশের কলেজে পড়ে। ঢাকা শহরের অন্যতম সেরা একটি কলেজ। বিশাল বড়লোকের মেয়ে রেশমী। দামী পাজেরো গাড়িতে করে কলেজে আসে। একদিন আমাদের দোকানে এসে হট ডগ অর্ডার করে। আমি তাকে খাবার সার্ভ করি। তারপর সে আমার দিকে তাকিয়ে সস আনতে বলে। আমি তার দিকে তাকিয়ে দেখি চোখ বড় বড় হয়ে আছে তার। সম্ভবত নেশার টান উঠেছে! এমন মনে হবার কারণ হলো আমি আমার ১ম প্রেমিকার ক্ষেত্রে এমনটা হুবহু দেখেছি। দোকানের মিউজিক চেঞ্জ করে দিলাম, ধ্বাক ধ্বাক কারনে লাগা....

রেশমী আমাকে একটি জন্মদিনের কেক গাড়িতে তুলে দিতে বলে। কেকের উপর লেখা "শুভ জন্মদিন রেশমী"। আমি কেকটা গাড়িতে তুলে দিতেই আমাকে ১০০০ টাকা বকশিস দেয় রেশমী। আমি চলে যেতে থাকি। কিছুক্ষণ পর রেশমীর ড্রাইভার এসে জানায়, 'ম্যাডাম আপনাকে ডাকছে।' আমি অপ্রস্তুত হই। রেশমী আমাকে গাড়িতে উঠতে বলে। সে জানায় আজ তার জন্মদিন এবং আমাকে তার বাসায় যেতে হবে। তার জন্মদিনে আমাকে পাশে চায় সে! আমি গাড়িতে উঠি। উঠার আগে ম্যানেজারের কাছে ছুটি নেই। আমি তাকে বকশিশ দেওয়া টাকা ফেরত দেই। বলি আজ থেকে আমরা বন্ধু। রেশমী বলে তার এক্স বয়ফ্রেন্ড হলো তার হাউজ টিউটর। তার সাথে রেশমীর সম্প্রতি ব্রেক আপ হয়েছে। সে তাকে আমার কথা বলেছে। আমি চিনতে পারি। রেশিমী আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু মুন্নার কথা বলছে। আমিই নাকি মুন্নার দেখা নেশা ছেড়ে দেওয়া প্রথম লোক। আমাদের নাম পরিচয় হবার পর আহাজারি করতে করতে রেশমী আমাকে জানায় তার কিছু ইয়াবা ট্যাবলেট দরকার। আমি তাকে নেশা ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দেই। সে আমার উপর জোর খাটায়। আমি তাকে বলি, নেশার কারণে তার কি কি ক্ষতি হচ্ছে এবং হবে। আমার জীবনের ব্যর্থতার কথা তাকে বলি। ক্লাসের ফাস্ট বয় থেকে কিভাবে লাস্ট বয় হয়ে যাই। আমার জীবনের প্রথম প্রেম কিভাবে নেশার ভয়াল ছোবলে বিনাশ হয়। কিভাবে আমার প্রথম প্রেমিকা দেহ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে তার কাহিনী শোনাই। আসলে রেশমী আমার কথায় কোন গুরুত্ব দেয় না। সে কান্না করতে থাকে। আমি তাকে বলি, তুমি একটানা গোসল করতে থাকো। ঠান্ডা শীতল পানি তোমাকে কিছুটা ভাল অনুভূতি দেবে।

তার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে কেউ আসেনি। শুধু আমিই এসেছি। আমাকে সাথে নিয়ে জন্মদিনের কেক কাটে রেশমী। রেশমীর বাবা-মায়ের মধ্যে ডিভোর্স হয়েছে গত সপ্তাহে। কেউ বাসায় নেই। রেশমীর মা তার ২য় স্বামী বাসায় চলে গেছে আর বাবা ব্যবসার কাজে থাইল্যান্ডে গেছে- রেশমী জানায়। সে রাতে রেশমীদের বাড়িতে থাকলাম আমি। দীর্ঘ ২ ঘন্টা গোসল করে রেশমী। সে জানায়, এখন তার কিছুটা ভাল লাগছে। তাকে নেশা ছেড়ে দেওয়ার জন্য নানাভাবে মোটিভেট করতে থাকি। সে আমাক নেশায় জড়িয়ে পড়ার ঘটনাট জানায়। আমি তাকে আশ্বাস দেই, আমি তার পাশে আছি, সে যেন এই অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসে। তার বয়ফ্রেন্ড তাকে এই পথে এনেছে। সে এখন অন্য কাউকে পেয়েছে। রেশমীকে তার নাকি আর প্রয়োজন নেই। কথা বলতে বলতে রেশমী কিছুটা স্বাভাবিক হয়।

অন্তরে যে কি ভীষণ কষ্ট, যদি বলি তবে জিহ্বা পুড়ে যাবে, আর যদি না বলি তবে কলিজা ছাই হয়ে যাবে। মির্জা গালিব বলেছিল কথাটা। সত্যিই তো। মানুষকে দেখে চেনা যায় না, তার সাথে কথা বললে এর চেয়ে অনেক বেশি চেনা যায়। মানুষ মূলত খুবই দুর্বল প্রাণী। পৃথিবীর পদে পদে তার জন্য রয়েছে নিষেধের মহাপ্রাচীর। কিন্তু কথা তাকে শক্তিশালী করে। দেয়াল ভাঙ্গার সাহস এনে দেয় তার বুকের মধ্যে। আমি রেশমীর গৃহ শিক্ষক হয়ে যাই। পড়াশোনায় সে খুবই ভাল। দেখতেও ঠিক প্রতিমার মতো। আমি তাকে 'তুই' বলে সম্বোধন করি। রেশমী জানায় এটাই তার ভাল লাগে। সেদিন সন্ধ্যায় সে আমায় বলে বর্ণার সাথে বাজি ধরে সে আমার সাথে প্রেমের অভিনয় করেছে। আমাকে বাজিয়ে দেখাই ছিল তার আসল উদ্দেশ্য। তার কোন বয়ফ্রেন্ড ছিল না। মুন্না আসলে বর্ণার টিউটর ছিল। আমি কলেজের গেটে অপেক্ষা করছি। এ অপেক্ষা শেষ হবার নয়! বর্ণাকে আবার ডাক দিলাম। চিরকুটটা হাতে নিয়ে ছিঁড়ে ফেললাম। থাক এসবের আর কোন দরকার নেই!


মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:১৮

রাজীব নুর বলেছেন: মির্জা গালিবের কথাটা অনেক সুন্দর।
রেশমী চরিত্রটা কি বাস্তব?
ফাস্টফুডের দোকানে কাজ করা অন্যায় না। বরং কাজ না করাটাই অন্যায়। হাত পা নিয়ে বসে থাকা যাবে না। কাজ করতেই হবে।

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:২৫

অতন্দ্র সাখাওয়াত বলেছেন: রেশমী সরাসরি বাস্তব না। বাস্তব থেকে সামান্য কিছু অনুষঙ্গ গ্রহণ করা হয়েছে।

২| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:২২

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: ভালো লাগলো

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:২৫

অতন্দ্র সাখাওয়াত বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ

৩| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ৯:৫৮

বাকপ্রবাস বলেছেন: এটা একটা গল্প। ছোট গল্প কিন্তু অণুগল্প নয়, অণুগল্পের কিছু বৈশিষ্ট আছে সেসব এখানে নেই, আকারে ছোট হলেই অণুগল্প বলা যাবেনা, যে গল্প সরলপথে বয়ে যায় সেটা গল্প।

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:১৮

অতন্দ্র সাখাওয়াত বলেছেন: দুঃখিত। আমি লিখার চেষ্টা চালিয়ে যাব। একদিন হয়ে যাবে ঠিক। ভালো থাকুন।

৪| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৩৯

বাকপ্রবাস বলেছেন: আপনি অবশ্যই পারবেন, তবে অণুগল্প লিখার জন্য তার ধরণটা একটু জানা আবশ্যক। অণুগল্পের কিছু গ্রুপ আছে ফেইসবুকে, সেখানে গিয়েও পড়তে পারেন, একটা গ্রুপ আছে সেটার উচ্চতা অনেক বড়, বাংলাদেশ ভারত মিলে যাচাই করলে এমন উচ্চতা আর নাই, তারা রীতিমত গবেষণা করে অণুগল্প নিয়ে, সার্চ দিলে হয়তো পেয়ে যাবেন, তাদের লেখাগুলো পড়লে নিয়মটা জানা হয়ে যাবে, তারা লিখে এবং কমেন্ট এর আলোচনাও চলে আসে।

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৬

অতন্দ্র সাখাওয়াত বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। আমি অণুগল্প নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী। দেখি গ্রুপে জয়েন হওয়া যায় কিনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.