![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেশব্যাপী সরকারের উন্নয়নের বিষয়টিকে ইস্যু করে আলোচনার টেবিলে স্থান দেয়ার জন্যই ‘আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র’ কিংবা ‘সীমিত গণতন্ত্রের’ কথা রাজনীতির মাঠে ছাড়া হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে শাসক দল তিনটি সুবিধা নিতে চায়Ñ সরকারের উন্নয়ন প্রচারণা, বিগত জাতীয় নির্বাচন ও সিটি নির্বাচনের সমালোচনা থেকে নিজেদের দূরে রাখা এবং উন্নয়নের জন্য স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখতে বর্তমান পরিস্থিতিকে মানিয়ে নেয়া।
গত ১৬ মে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ‘উন্নয়নের স্বার্থে সরকারের সীমিত গণতন্ত্রে বিশ্বাসের’ কথা বলেন। এর আগেও বিভিন্ন আলোচনায় আওয়ামী লীগ নেতারা উন্নয়নের কথা বার বার সামনে নিয়ে এসেছেন। ২০ দলীয় জোটের টানা তিন মাসের অবরোধের সময়ে এক এমপি ঢাকার রাস্তায় পোস্টারে পোস্টারে জুড়ে দিয়েছিলেন ‘আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র’।
আওয়ামী লীগের দলীয় ফোরামের বৃহৎ পরিসরে আলোচনা সভায় ‘আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, তবে বেশি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি না’ মোহাম্মদ নাসিমের এমন বক্তব্য আলোচনার ঝড় তোলে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাদের সঙ্গে মানবকণ্ঠের কথা হয়। তারা বলছেন, বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন নেতা এ বিতর্ক মাঠে ছড়ালেও দলের পক্ষ থেকে এর কোনো বিরোধিতা করা হয়নি। কিংবা ভিন্ন মত পোষণ করা হয়নি। তাই এটি দলেরই মনোভাব।
শাসক দলের নেতারা বলছেন, দেশের উন্নয়নের স্বার্থে সরকারের ধারাবাহিকতা দরকার। সরকারবিরোধীরা অনেকে সরকারের উন্নয়নকে স্বীকার করতে চাচ্ছে না। বিভিন্ন খাতে সরকারের অভাবনীয় উন্নয়নের বিষয়টিকে সামনে নিয়ে আসার জন্যই এমন আলোচনা মাঠে ছাড়া হচ্ছে। এখন সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন দৃশ্যমান হচ্ছে। পদ্মা সেতুর মতো বড় বড় প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। এ আলোচনা সবার মুখে মুখে আসছে। বিভিন্ন আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়টি জনগণের আরো কাছে পৌঁছবে। বিএনপিও এখন বলছে সরকার উন্নয়নের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে আড়াল করছে। আর এ জন্যই এমন বক্তব্য রাজনীতির মাঠে নিয়ে আসা হচ্ছে। এ ছাড়া আরো একটি কারণের কথাও শাসক দলের নেতারা বলেছেন। তা হলোÑ উন্নয়নের এ আলোচনার মাধ্যমে বিএনপিবিহীন বিগত জাতীয় সংসদ এবং তিন সিটি নির্বাচনের বিতর্ক ঢাকা পড়ে যাবে।
সূত্র জানায়, সরকার চাচ্ছে সংঘাত ও সহিংসতাহীন বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বজায় থাকুক, এটা উন্নয়ন নিশ্চিত করবে এবং ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলার কিছু নেই। এর সহজ অর্থ দাঁড়াচ্ছে, উন্নয়নের জন্য যে ‘স্থিতিশীলতা’ প্রয়োজন, তার স্বার্থে এ ধরনের পরিস্থিতি মেনে নেয়া।
আওয়ামী লীগের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মানবকণ্ঠকে বলেন, গণতন্ত্র দিয়ে দেশে উন্নয়ন হয় না। পৃথিবীর কোনো দেশ আজ পর্যন্ত গণতন্ত্র দিয়ে উন্নতি লাভ করতে পারেনি। এজন্য আওয়ামী লীগ আগে দেশের উন্নয়ন করছে পরে গণতন্ত্র। তিনি বলেন, সিঙ্গাপুর উন্নত হয়েছে কারণ সে দেশে একজন লি কুয়ান ইউ ছিলেন। যিনি টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। মালয়েশিয়ায় মাহাথির মোহাম্মদ ২৩ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০২১ সালের মধ্যে আমরাও উন্নত দেশের দিকে এগিয়ে যাব।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী মানবকণ্ঠকে বলেন, সরকারের উন্নয়নের কথা দেশ-বিদেশে এখন সবাই স্বীকার করছে। এমনকি বিএনপিও তাদের অফিসিয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়টি স্বীকার করেছে যে, সরকার দেশের উন্নয়ন সাধন করছে। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের ওপরে। মাথাপিছু আয় বেড়ে হয়েছে ১৩১৪ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। দারিদ্র্যের মাত্রা কমে এসেছে অর্ধেকে। সমুদ্র বিজয়, স্থল সীমান্ত চুক্তি, নারীর ক্ষমতায়ন, কৃষি ও তথ্যপ্রযুক্তিতে যে অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে তার মূল দাবিদার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করে বাংলাদেশ এখন সারা পৃথিবীর কাছে বিস্ময়। আর উন্নয়নের কারিগর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়ন অধ্যয়নের গবেষণার বিষয়ে পরিণত হচ্ছেন। বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধসহ বিভিন্ন ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। খালিদ বলেন, বর্তমান সরকার সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত সরকার। আর সরকারের কাজই হলো দেশের জনগণের উন্নয়ন করা। তাই উন্নয়নের সঙ্গে গণতন্ত্রের কোনো দ্বন্দ্ব নেই। তবে গণতন্ত্র কখনো মানুষ পোড়ায় না, গণতন্ত্র তার জাতির জনকের খুনিদের আশ্রয় দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আনতে পারে না। গণতন্ত্র জাতির জনকের কন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে গ্রেনেড মারতে পারে না। আমরা চাই জনগণের ভাগ্য উন্নয়নের গণতন্ত্র।
তবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর এমন আলোচনার জš§ হয়নি। উন্নয়ন আর গণতন্ত্রের এ আলোচনা মূলত সামনে আসে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপিবিহীন জাতীয় নির্বাচনের পর। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বলছেন, আইনগতভাবে এই নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা না গেলেও নির্বাচনটি অংশগ্রহণমূলক না হওয়ায় গণতন্ত্রের মূল একটি শর্তই পূরণ করতে পারেনি। অর্ধেকের বেশি আসনে নির্বাচন না হওয়ায় জনগণ তাদের প্রার্থী পছন্দের সুযোগ পাননি। এমন একটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত সরকার তাদের বছরপূর্তি করেছে। এরই মধ্যে সরকার সব ক্ষেত্রেই তাদের অবস্থান শক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। নির্বাচন হয়েছে, সংসদও আছে কিন্তু বিরোধী দল বলে কার্যত কিছু নেই। যারা এই নির্বাচন বর্জন করল, তাদের তরফ থেকে সরকারের বিরুদ্ধে কোনো জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ২০১৩ সালে দেশজুড়ে যে সংঘাত-সহিংসতা হয়েছে তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দেশবাসী মরিয়া হয়ে উঠেছিল। ফলে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে যতই বিতর্ক থাকুক, সেই নির্বাচন এবং এর পরবর্তী প্রায় এক বছর সময়ে পর্যায়ক্রমে বর্তমান সরকারকে জনগণ আপাতভাবে মেনেই নিয়েছে। বর্তমানে যে ‘রাজনৈতিক স্বস্তি’ বজায় রয়েছে, এর সূত্র ধরেই অনেকে গণতন্ত্রের বিষয়টিকে আপাতত সাইডলাইনে রাখতে চাইছেন। তারা এখন শুধু ‘উন্নয়নে’ মনোযোগী হতে আগ্রহী।
- See more at: Click This Link
©somewhere in net ltd.