নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নশ্বর পৃথিবীতে থাকবোইবা আর কতদিন,মনের কথাগুলো তাই লিখে চলি অন্তহীন...

হাবিব লাবু

Miles to go before I sleep...

হাবিব লাবু › বিস্তারিত পোস্টঃ

লাল ফ্রক

২১ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:১১

১ম পর্ব

বাড়ির প্রথম মেয়ে হয়েছে। জন্ম দেয়ার পর হাসুর বৌ চোখ খুলে শুকনো মুখে হাসি দেয়। পানি গেছে অনেক, ঠোঁটগুলো শুকিয়ে জোড়া লেগে থাকায় চওড়া হাসি হয়না, আঠার মত লেগে আছে ঠোঁট দুটো। ফ্যালফ্যাল করে তাকায় সবার দিকে। সবাই বড় মুখে না হাসলেও সে বুঝে গেছে ছেলে না হওয়ায় মুখ ভরা হাসি নাই ঘর জুড়ে। হাসু বৌয়ের দিকে এক নজর দেখে কোলের কাছে মেয়ের হাতের তালুতে একটু ধরেই ঘর থেকে বের হয়ে যায়।

ক্ষেতে তেমন কাম কাজ নাই। মনটা ভালো আজ। মেয়েটা দেখতে কালো হয়েছে কিন্তু মমিজের মা চিল্লায় চিল্লায় কচ্ছিলো যে, " কায় কইছে বেটি কালা হইছে? শ্যামা হইছে। কি সুন্দর গোলগাল হইছে হাসুর বেটি, আর কায় কছে কালা কালা, অর চউখ না চুলা চুলা"।

হাসুরও তাই মনে হয়। মেয়েটা তার দিকে একবার চোখ খুলে দেখছে। কি যে শান্তি লাগছে এখন। যাই জুম্মার হুজুরের কাছে যেয়ে মেয়ের একটা ভালো নাম শুনে আসি।

রাহেলা। হুজুর বলছে রাহেলা নামের মানে হইলো "ভাগ্যবতী"। নামটা মনে ধরেছে হাসুর। হাসুর মা কইছিল বেটি হইলে প্রথম "হ" অক্ষরের নাম রাখতে আর বেটা হইলে রমিজার নামের "র" অক্ষর দিয়ে কোন নাম রাখতে। হাসুর বৌয়ের নাম রমিজা। কিন্তু হাসু তার বৌকে খুব ভালোবাসে তাই হুজুরকে বলছে "র" অক্ষর দিয়ে নাম রাখতে। রমিজা যখন এই বাড়িতে আসে তার আগে খুব অভাবে দিন যাইতো তাদের। কোন দিনও তিন বেলা ভাত জুটে না। সকালে ছাতু, কাউনের ভাত নাইলে ক্ষুদি ভাত খেয়ে দিন যাইতো। কিন্তু রমিজা বৌ হয়ে আসার পর সে প্রথমবারেই বাপের বাড়ি থেকে একটা হাঁসা আর একটা হাঁসি আনছিল। পাশের বাড়ির সলেমানের পুকুরে হাঁস দুইটা সারাদিন থাকতো। কয়দিন পর হাঁসিটা ডিম পাড়া শুরু করলে রমিজা ৩ টা ডিম রান্না করে বাড়ির সবাইকে খাওয়াইছে। আর ৬ টা ডিম বাচ্চা ফুটার জন্য দিয়েছিল।সেই যে শুরু। এরপর অল্প অল্প করে রমিজা সংসারটা শক্ত হাতে কষ্টে চালাচ্ছে

হাসু বর্গা চাষী। বাপের জমি ছিল না। ছোট থেকে কি কষ্ট করেই না জীবন কাটাইছে। হাসু এখন আর এইসব চিন্তা করতে চায় না। বুকটা ডুকরে ওঠে। রমিজা আসার পর থেকে পাড়ার সবাই বলাবলি করে হাসুর কপাল, এমন একটা বউ পাইছে, রমিজার জন্যই তিন বেলা হাড়িত ভাত ওঠে এই বাড়িতে। হাসু শুনে মনে মনে খুব খুশি হয়। রমিজা কাজ করতে করতে মাঝে মাঝে রাগ দেখায় হাসুকে, খোটা দেয়। নতুন শাড়ি চাওয়ার কথা সরাসরি না বললেও হাসু বুঝে। কিন্তু কিছু করতে পারে না। ৩ বছরের তবন পরেই দিন যায়, সেখানে ইচ্ছা থাকলেও বৌকে একটা শাড়ি কিনে দিতে পারে না হাসু।

রাহেলা বড় হচ্ছে। রমিজা স্কুলে পড়া বৌ। মাঝে মাঝে বলে যে, রাহেলার জন্য বাজার থেকে মাছ কিনে আনতে। এই সময়ে কিছু খাইলে ভালো ভাবে বেড়ে উঠবে রাহেলা।

প্রতিদিন সন্ধ্যায় বাজারে যায়। একটা সিলভার কাপ মাছ কেনার খুব ইচ্ছা করে, একদিন বাকীতে মাছ চাইছিলো নদীর পাড়ের নন্দ মাছুয়া' র কাছে। নন্দ মাছুয়া সেদিন যে চোখে তাকাইছিল নিজের উপর রাগ করে আর কোনদিন মাছ হাটিতে যায় নাই হাসু। সেদিন বাড়িতে এসে রমিজাকে রাগ দেখাইছে সে "ইরি ধান উঠার আগত যদি আর মাছ কিনিবার কথা কইস রমিজা, তাইলে খুব খারাপ হইবে কিন্তু, ছইলোক নুন ভাত খিলি মানুষ কর"।

নিজের প্রবল ইচ্ছা থাকলেও অভাবের করাল গ্রাস হাসুকে বন্দী করে রেখেছে। টানপোড়েন সংসারের খেয়ে না খেয়ে চারটা মানুষের সংসার চলে কোন রকম।এভাবেই খেয়ে না খ রাহেলা বড় হচ্ছিল।
রান্না করার সময় রমিজা, রাহেলাকে ১ ২ ৩ শেখায়। হাসু ঘরে বসে শুনে। রমিজা একদিন কইছিল আশরাফিয়া লাইব্রেরী থাকি একটা শ্লেট, চক আর শিশু শিক্ষা বই আনতে। আর টাকা থাকলে একটা আরবী কায়দা বই আনতে।
সেদিন মনে মনে ভাবছিল, আলীম ব্যাপারীর কাছে এইবার চাষের জন্য বেশি টাকা নিবে। সুদ লাগুক, ধান উঠলেই দিয়ে দিবে।
কিন্তু অভাব পিছু ছাড়ে না। পরিবারের ৬ মাস হয়ে গেলো কিছুই কিনতে পারে না হাসু। ব্যাপারী কইছে এবার সুদ শ প্রতি দুই টাকা বাড়াবে। ভাবনা থেকে বের হতে পারে না হাসিনুর রহমান হাসু। বাবা নাকি নাম রেখেছিলেন। এতদিন ভুলেই গেছে এই নাম। মাঝে মাঝে হাসুর মা তার বাবার গল্প করলে এই নাম মুখে আনে, না হলে সে নিজেই ভুলে যায়। গরীবের আবার ভালো নাম আছে নাকি?

ভোর হইতে না হইতে হাসুর ঘুম ভাঙে রমিজা বমি করার শব্দ শুনে। এতো সকালে আবার কি হইলো রমিজার। একে তো চিন্তায় রাতে ঘুম হয় না। আর এই বিহান রাইতেও ঘুমাতে দিবে না নাকি?

বাইরে আসে দেখে হাসুর মা পানি নিয়ে রমিজার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। হাসু এগিয়ে গেলে মা কইলো, "হাসু তুই আবার বাপ হবার যাছিস"। হাসু কিছু না বলে ঘরে চলে গেলো। যাওয়ার সময় দেখে রমিজা বমি করার মাঝেও মাথা ঘুরে হাসুর দিকে তাকালো। হয়তো হাসু খুশি হইছে কি না তা দেখার জন্যই। ঘরে এসে হাসু চিৎ হয়ে ঘরের টিনের দিকে তাকায় আছে। বিয়ের সময় রমিজার খালা হলুদ চান্দোয়া উপহার দিছিলো। সেটাই আছে আজ ৭ বছর হইল। রঙ টা ধুলায় অনেকটা মলিন হয়ে গেছে। চার জনের খাবার দিতে পারি না আবার একজন আসবে চিন্তা করলেই মাথাটা ঘুরে উঠে হাসুর। আবার ভালো লাগে নতুন অতিথি আসবে ঘরে। ছেলে হলে দুইটা খাসি জবাই দিয়ে খাওয়াবে পাড়ার মানুষকে যত কষ্টই হোক। রাহেলাকে পড়াতে পারে নাই.... (চলবে)

(দিনাজপুর অঞ্চলের এক সুবিধাবঞ্চিত গ্রামের কাহিনী নিয়ে ছোটগল্পটি)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:৩৯

রাজীব নুর বলেছেন: এই গল্প শুধু দিনাজপুর অঞ্চলের না। বাংলার প্রতিটা অঞ্চলের কাহিনি এই রকমই।

ভালো লিখেছেন।

২| ২১ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:১৬

হাবিব লাবু বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব নুর ভাই। দিনাজপুরের আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করেছি তাই উল্লেখ করলাম ☺

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.