![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
Miles to go before I sleep...
(২য় পর্ব)
সুবিধাবঞ্চিত গ্রামের যদি উদাহরণ দিতে বলে কেউ তবে আশাপাশের সব গ্রাম দেখিয়ে দিবে হাসুর তেলিপাড়া‘কে। বিদ্যুৎ তো দূরে থাক আশাপাশে ৬ মাইল জুড়ে কোন ইস্কুল নাই।
হাটে লালন ফকিরের সাথে গল্প করতে করতে ফকির কইলো "তোর পোয়াতি' ক এইবার ফতে দাইয়ানি এর হাতে বাচ্চা খালাশ করাইন না হাসু। আমি তোর চাচা হই, যা কই মন দিয়া শুন। নয়া যে স্যাটেলাইট ক্লিনিক হইছে বোর্ড অফিসের পিছনত, আমি শুনছি এক আপা আছে নাকি। সরকারি দাই, পশিক্ষন দেওয়া। তুই আগের বারের মত এইবার তোর সোহাগের বৌ টাক কষ্ট দিস না কইলাম কিন্তু হাসু।"
সোহাগের বৌ শব্দটা শুনে হাসুর বুকটা কেপে ওঠে। রাহেলা হওয়ার সময় অনেক কষ্ট পাইছিল রমিজা। মনে মনে তখনই চিন্তা করে এবার আর ভুল করবে না হাসু।
অভাবের সংসারে ঘর আলো করে এলো আরও কন্যা। হাসুর মন খারাপ করা উচিত নাকি ভালো করে থাকা উচিত কিছুই বুঝে না।
মমিনের মাও রমিজার দোষ দেয়। পরপর দুইটা বেটি। রমিজার মায়েরও তো পরপর ৫ টা বেটি জন্ম দিছে, তারপর একটা বেটা। বিয়া দিতে হাসুর কপালোত ভিক্ষার চাউল জুড়িবে "। এভাবে বলাবলি করছিল পাড়ার মহিলারা।
কিন্তু হাসুর মনের এক কোণে অজানা খুশি খেলা করছিল। চাঁদের মত ফুঁটফুঁটে হয়েছে বেটিটা। ধবধবে ফর্সা ঠিক রমিজার মতন। বিয়ার সময় রমিজাও এমন সুন্দর ছিল, এই বাড়িত আসার পর গতর খাটতে খাটতে গায়ের রঙ আর শরীর দুটোরই শ্রী হারাইছে সেই কবে।
হাসু এবার নিজে ছোট মেয়ের নাম রাখে। বাউলের হাটে একদিন বুটমুড়ি খাইতে খাইতে ভিসিআর ত একখান ছবি হছিলো, নায়িকার চেয়ারার মতই হইছে যেন হয়েছে তার ছোট মেয়েটা। তাই মনে মনে নায়িকা "তানিয়া"র নামে রাখে মেয়ের নাম। কিন্তু পাছে লজ্জা পায় তাই নাম রাখার পিছনের কাহিনী কাউকে জানায় না হাসু।
রমিজা পোয়াতি হওয়ার আগে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়া একটা গরুর বাছুর কিনছিল। তানিয়া হওয়ার সময় গরুটা অনেক বড় হয়েছে। এদিকে রাহেলা ছোট বোন পেয়ে সে গককি খুশি। সারাক্ষণ মায়ের পিছ পিছ ঘোরে তানিয়াকে কোলে নিয়ে আদর করার জন্য। তানিয়া এত বড় নাম ধরে যেন মন মত আদর করে ডাকতে পারে না, তাই সে তাকে তনু মণি, কখনো শুধু তনু বলে।
ও দিকে রমিজা, রাহেলাকে দিয়ে ছোট খাটো সব কাজ করায়। শুধু রান্নাটা রাহেলার দাদী করে।
আর গরু চরা যেন রাহেলার নিত্য দিনের বিরক্তিকর কাজ। সকালে একটু জলপান করে, স্যান্ডো গেঞ্জি গায়ে দিয়েই রাহেলা গরু নিয়ে বেরিয়ে যায়। মাঠে বেশি ঘাস নাই, তাই রমিজা বার বার করে শাসিয়ে বলে, "গরুর যদি পেট না ওঠে তোর পিঠির চামড়া থাকিবে না কিন্তু রাহেলা, দরকার হইলে ক্ষেতের আইলত গরু চরাবু"
রাহেলার অনেক কষ্ট হয়, আগে ছোট ছিল গরুটা এখন সামলানো যায় না। আইলগুলাত ঘাস বেশি কিন্তু গরুটা ঘাস খাইতে খাইতে এক গাস ধান গাছ টানি নিয়া খাওয়া শুরু করে। তখন প্রাণপণ চেষ্টা করে গরুটাকে টানতে থাকে কিন্তু পেরে ওঠে না রাহেলা। ঐদিকে দূর থেকে জানোয়ারের মত দৌড়ে আসে মতিনের বেটা। আসিয়াই কোন কথা নাই সোজা ঘাড় ধরি, গাওটার মেলা জায়গায় হাত দেয়, আর কটমট করে তাকায়, মুখটার দিয়ে তাকালে ভয়ে কুকড়ে যায় রাহেলা, কিছুক্ষণ পর গালগুলো জোরে জোরে টানে চলে যায় মতিনের বেটাটা।
রাহেলার দুনিয়া যেন অন্ধকার হয়ে আসে, প্রায় প্রতিদিন এই কাজ করে মতিনের বেটা। সেই সময়ে মায়ের উপর খুব রাগ হয় রাহেলার। কিনতু কিছুই কইতে পারে না মাকে। পাছে কাম চুন্নি অপবাদ দেয় এই ভয়ে।
এদিকে তানিয়াও বড় হচ্ছে। হাসুর চিন্তা বেড়ে যাচ্ছে। অভাব পিছু ছাড়ে না তার। তবে যেকরেই হোক তানিয়াকে সে পড়াবেই।
স্কুলে যাওয়ার প্রথম দিন তানিয়াকে মা নতুন স্কুল ড্রেস পরায়, ঝুটি বেঁধে দেয়, চোখে কাজল লাগায় দেয় আর দেখায় দেয় কিভাবে ২ টা বই আর শ্লেট বুকের সাথে লাগিয়ে ধরে স্কুল যাইতে হয়। হাসু তানিয়াকে নিয়ে বাড়ি থেকে হয়ে যাওয়ার সময় রাহেলা পান্তা খাচ্ছিলো। মা শিকিয়া থাকি একটা মাছের টুকরা আনে রাহেলার পাতে দেয়। তানিয়া স্কুলে যাইবে দেখে হাসু গতরাতে একটা পাংগাস মাছ আনছিল তেলির হাট থাকি।
তানিয়াকে আজ পরীর মত লাগছিল। কতদিন পর মাছ খাইলো মনে নাই রাহেলার। মনটা ভালো তার। প্রতিদিনের মতই আজও গরু নিয়ে বের হয়ে গেলো রাহেলা। গল্প করার বান্ধবী নাই বললেই চলে, রাহেলা তাই রাইস মিলের ময়দানে গরুটাকে বাঁধে ঘাস কাটতে থাকে আর গরুকে মনের দুক্ষ শোনায়, তানিয়াকে মা বাপ সবাই বেশি আদর করে, মতিনের বেটার খারাপ আচরণ সবকিছু বিড়বিড় করে বলে।রাহেলার গরুটাও ঘাস চিবাতে চিবাতে মশা তাড়ানোর জন্য মাথা ঝাকি দিলে রাহেলা বুঝে যে, কেউ তার দুক্ষ না বুঝলেও এই অবলা গরু বুঝে।
রাহেলা বড় হচ্ছে। স্যান্ডো গেঞ্জি পরে আর বাইরে দেয়া যায় না তাকে। রমিজা তার শাশুড়িকে জানায়। সেই দিন রাহেলার দাদী হাসুর ঘরের পুরানা চান্দোয়াটা কেটে রাহেলার জন্য বুকের উপর ঝারলওয়ালা একটা ফ্রক বানায় দেয়। পুরানা কাপড়ের হলেও রাহেলার খুশি লাগে তাতে।
জামা পরে গরু চরাতে গেলে মতিনের বেটা এইদিন দূর থেকে আজগুবি ভঙ্গিতে থাকায়। সাথে আরও একজন আছে।
চলবে...
২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:৫৫
হাবিব লাবু বলেছেন: ঠিক বলেছেন ভাই।বাচ্চাদের স্কুলে ধরে রাখা আরেক চ্যালেঞ্জ
২| ২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:২০
নেওয়াজ আলি বলেছেন: মন ছুঁয়ে গেল লেখা। ভালোবাসা ও শুভ কামনা আপনার জন্য।
২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ ভোর ৫:৫৩
হাবিব লাবু বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার শব্দগুলো অনেক বড় অনুপ্রেরণা।
৩| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:৫৩
মা.হাসান বলেছেন: সনাতন গ্রাম বাংলার দুঃখি মানুষের হৃদয়গ্রাহী চালচিত্র।
২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ ভোর ৫:৫৪
হাবিব লাবু বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ। আশাকরি শেষ পর্যন্ত পড়বেন।
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৩৭
রাজীব নুর বলেছেন: এই আধুনিক যুগে এসেও বাংলাদেশে বহু গ্রামে স্কুল নেই। পাকা রাস্তা নেই, এখন ৌকা দিয়ে খাল পার হতে হয়ে। ছোট ছোট বাচ্চারা বাশের দিয়ে খাল পার হয়।