নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নশ্বর পৃথিবীতে থাকবোইবা আর কতদিন,মনের কথাগুলো তাই লিখে চলি অন্তহীন...

হাবিব লাবু

Miles to go before I sleep...

হাবিব লাবু › বিস্তারিত পোস্টঃ

লাল ফ্রক

২৬ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:৩৫

(শেষ পর্ব)

দুইজন বেশ দূরে দাঁড়িয়ে গল্প করছিল। বর্ষাকাল, কালো মেঘ জমতে শুরু করেছে আকাশে, প্রতিদিন রহিম বুড়া ওয়া ন্যালাতে (আগাছা পরিষ্কার) আসলেও আজ আশেপাশে দেখা যাচ্ছে না। রাহেলার আজ গরু চরাতে একদম মন চাচ্ছে না। বাড়ি যাবে মনস্থির করলো সে। কিন্তু বিপদ আসলে মানুষ যেন শক্তি হারিয়ে ফেলে।

শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে গরু টানছে কিন্তু গরুটা ঘাস খাওয়া থেকে মুখ তুলেই না যেন। ঐ দিকে মমিনের বেটা অল্প অল্প করে আগায় আসছে। ধু ধু পাথার, ধান ক্ষেত, কেউ নাই আশেপাশে। প্রাণপণ টানতে টানতে গরুটাকে নিয়ে রাহেলা পলান ফকিরের ভিটায় ওঠে। একবারও ফিরে তাকায় নাই সে।

বাড়ি ফিরে কাঁপতে থাকে রাহেলা। মা কে সব খুলে বলে। রমিজা বুকে জড়ায় ধরে স্বান্তনা দেয়। মনে মনে ভাবে, মেয়েটা আমার শ্যামা হইলেও গড়নে বেশ ভালো। কম বয়সে যেন সে একটু বেশিই পরিনত। ভয় হয় রমিজার।

এরই মধ্যে দুই দিনের বৃষ্টিতে বন্যা শুরু হয়। হাসুর মাটির ঘর। সবাই বলছিল যে ভারত নাকি পানি ছাড়ি দিছে তাই এমন বান হইছে। ৪ দিন পানি ছিল। হাসুর ঘরের পিছন দেওয়ালটা পড়ে গেলো। অভাবের সংসার তার উপর খরচ বেড়ে গেলো হাসুর। ধান ওঠার আগে দেওয়াল দেয়া সম্ভব না।

এদিকে তানিয়াটাও পড়া লেখায় বেশ ভালো। স্কুলের ফ্রকটা বাদে আর কোন জামা নাই তানিয়ার। রমিজা একদিন হাসুকে বলছিল,
" রাহেলার বাপ, এই বেলা ধান উঠিলে ছইলদুইটাক একখান করি জামা কিনি দেন কেনে?"। হাসু তৎক্ষনাত কিছু উত্তর দিতে পারে না।

বউকে শাড়ি কিনে দিতে চায় সে, ঘরের দেওয়াল ঠিক করতে হবে, ব্যাপারির সুদের টাকা, মায়ের ঘরের বাইরে যাওয়ার একটাও শাড়ি নাই, ব্লাউজ পেটিকোটের উপর বোরখা পরে যায় ভাইয়ের বাড়ি। দিনে যায় দিনে আসে। হাসু চিন্তা করতে পারে না কি করবে সে।

রাহেলা আর গরু চরাতে যায় না। তানিয়া স্কুল থেকে আসলে দুইজনে মিলে পুতুল খেলে। বাঁশ বাগানের নিচে আশেপাশের ছোট ছোট বাচ্চাগুলোকে দাওয়াত দিয়ে ছোট ছোট হাড়িতে অল্প চাউল আর বেগুন ভাজি দিয়ে পুতুলের বিয়ে উপলক্ষ্যে ভুরকা ভাত (পিকনিক) খায় তারা।

ধান ভালো হয়েছে এবার। বন্যা হওয়াতে জমি ভালো ফলন দিয়েছে। রাতে খাওয়ার পর হাসু রমিজাকে বলে " তুমি কইছিলা ছইলগুলার জন্য জামার কাপড় কিনিবার কিন্তু এইবার মনে দুইজনের হইবে না রমিজা, টানিটুনি একজনের হবার পারে।"
কথাগুলো বলার সময় গলা ধরে আসে হাসুর। চোখ ছলছল করে। রমিজা হাসুকে শান্ত করার চেষ্টা করে বলে "রাহেলা হামার বুঝে ভালো, অয় মন খারাপ করিবে না। "

বাবা মা যখন কথা বলছিল, তানিয়া খুটার (খাট) উপর বই পড়ছিল। বাবার কথা শুনে মন খারাপ হয় তার। রাহু বু কে সে নিজের থেকে বেশি ভালোবাসে।

কিছুক্ষণ পর বইয়ের ভিতর থেকে টাকা বের করে আনে বাবার হাতে দেয় সে। মাঝে মাঝে রমিজা তাকে স্কুল যাওয়ার সময় ডিম বেচে কিছু টাকা দিতো। তানিয়া আজ ৩ বছর এক টাকাও খরচ করে নাই। সেই টাকায় আজ সে বাবার হাতে তুলে দেয়।
হাসু কান্না আটকাতে পারে না তানিয়াকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। তানিয়া বলে
"আব্বা, রাহু বু কত কষ্ট করে, একটা জামায় অর, অনেক পুরান হইছে, রাহু বু রে ছাড়ি মুই নতুন জামা পরির পারিম না আব্বা, জামা ছোট হইক তারপরও দুই বইন একে মতনের জামা পরোমো"।

হাসু তেলির হাট থেকে কসকো সাবান, লাল ফিতা আর দুই বোতল কল্যাণী আলতা কিনে আনলো। আর মনির খলিফার দোকান থেকে দুই বোনের জন্য সেলাই করা দুইটা লাল ফ্রক।

দুবোনের সে কি খুশি। গলায় গলা ধরে সে কি হাসি। দূর থেকে হাসু আর রমিজা দেখে কখন যে চোখের কোণে পানি এসে যায় বুঝতে পারে না।

দুপুরে রাহেলার ছোট মামা আসে। রাহেলার খুব শখ রেলগাড়ি চড়বে। মামাকে ধরে দুইজনে। মামা বলে তানিয়া এবার ফাইভ পাশ করিলে গাড়ি চড়াববে। চল তোদের আজ রেলব্রীজে নিয়ে যাই। নয়া ব্রীজ দেখাবো।

লাল জামা পরে দুইবোন বেড়িয়ে পড়ে। শেষ বিকেলে বাড়ি ফিরে তারা। বাড়িতে নতুন চার পাঁচ জন মানুষ আসছে। দাদি বলে "রাহেলা মুখোত এনা পাউডার দে তো"। রাহেলা বুঝে না দাদি কেন হঠাৎ পাউডার মাখতে বলে।

স্টীলের দুইটা প্লেটে সুপার বিস্কুট আর অন্বেষা চানাচুর সাজানো হাতে দিয়ে দাদি মানুষগুলার সামনে যেতে বলে। রমিজা তার শাশুড়িকে বলে "আম্মা, ফ্রক পরি যাইবে নাকি মোর শাড়িটা পরি দিম? "

শাশুড়ি বেশ রমিজার মুখের দিকে তাকাতে পারে না, অন্যমুখো হয়ে বলে, " না রমিজা, আইজে ছইলটা নয়া লাল জামাটা পরিল, আর কোনদিন এই জামা পরা হইবে না ওর, সারাজীবন শাড়ি পরির লাগিবে, পরি থাকুক আইজ। লাল জামা খানত কি সুন্দর মানাইছে রাহেলাক, কি সুন্দর মানাইছে "।

রাহেলার মায়ের চোখ থেকে অঝোরে পানি পড়তে থাকে।

(সমাপ্ত)

(দিনাজপুর আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করত গল্পের কোন চরিত্রের নাম কারো সাথে মিলে গেলে বা কেউ মনে ব্যাথা পেলে লেখক করজোড় ক্ষমাপ্রার্থী)

হাবিব লাবু
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১১

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ভালোই হয়েছে।

২৭ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:০৩

হাবিব লাবু বলেছেন: ধন্যবাদ স্যার। আপনার মন্তব্য লিখতে উৎসাহ যোগাবে।

২| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল সুন্দর।

২৭ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:০৪

হাবিব লাবু বলেছেন: বিশেষ ধন্যবাদ। প্রতিটি পর্বের সাথে থেকে মুল্যবান মন্তব্যের জন্য। যা আমার লেখার রসদ যোগাবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.