![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
Miles to go before I sleep...
নদীর গল্প বলে যাই- (পর্ব ২)
দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার স্বতন্ত্র নদীঃ কাঁকড়া
চিরিরবন্দরের 'স্বতন্ত্র' শব্দটি ব্যবহার করেছি এজন্য যে, কাঁকড়া নদীটি দিনাজপুর জেলার অন্তর্গত চিরিরবন্দর উপজেলায় আত্রাই নদী থেকে শাখা নদী হয়ে বের হয়ে প্রায় পুরো চিরিরবন্দরের বুক চিরে সগর্বে ভারত সীমান্তের আগে আবার আত্রাই নদীর উপনদীতে পরিণত হয়। এটি শুধুমাত্র চিরিরবন্দর উপজেলায় সীমাবদ্ধ। আমরা কাঁকড়ার ভাগ কাউকে দিবো না। কারণ আত্রাই নদীর ভাগ চায় পশ্চিম বঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও। উনি তিস্তার পানি দেয় না, আবার আত্রাইয়ের পানি কোন মুখে চায় বুঝি না। সেদিকে আর না যাই।
একটু জেনে নেই, শাখা নদী ও উপ-নদী সম্পর্কে। এদের মধ্যে পার্থক্য আসলে কি?
শাখা নদীঃ যখন একটি নদীর প্রবাহ থেকে কোন কারণে ভিন্ন দিকে অন্য কোন নদী ভিন্ন নাম নিয়ে বের হয় তখন নতুন প্রবাহের নদীকে আমরা শাখা নদী বলবো। গাছের যেমন শাখা থাকে তেমনি বিষয়টি। অন্যদিকে,
উপ নদীঃ যখন কোন ভিন্ন ধারার নদী প্রবাহিত হতে হতে আর একটি নদীতে গিয়ে পতিত হয়, তখন নতুন পতিত বা সংযুক্ত হওয়া নদীকে, যার উপর পতিত হয়েছে বা মিশেছে তার উপনদী বলবো।
যেমনঃ কাঁকড়া যখন সাইতাড়া কাছারিবাড়ি নামক জায়গায় আত্রাইএর মূলপ্রবাহ থেকে বের হয়, তখন এটি আত্রাইয়ের শাখা নদী। আর মোহনপুর রাবার ড্যামের কাছে যখন আবার আত্রাইয়ের সাথে মিলিত হয় তখন এটিই আবার আত্রাইয়ের উপনদী হয়ে যায়৷
এবার শুনি আমাদের প্রাণের কাঁকড়া কিভাবে আসলোঃ
ভুষিরবন্দর নামক স্থানে আত্রাই বেশ প্রশস্ত এবং খরস্রোতা। যখন সাইতাড়ার কাছারিবাড়ি এলাকায় আসে তখন এই জায়গায় আগে থেকে জলের ঘূর্ণনে অনেক গভীর জলাশয়ের সৃষ্টি হয়। এখানে আত্রাই নদী সবচেয়ে প্রশস্ত এবং গত পর্বে দেখেছিলাম এখানেই আত্রাই নদী ভাগ হয়ে অনেকটা বেঁকে পশ্চিমদিকে চলে যায়। কিন্তু নদীর দক্ষিণমূখী প্রবাহ প্রবণতার দরূন প্রবল স্রোতের ধাক্কা এবং অতীতে ঘন ঘন বন্যার ফলে নদীর জল উছলিয়ে দক্ষিণ দিকে যেতে যেতে মাটি খুঁড়ে একটি খাড়ির সৃষ্টি হয়। বন্যা শেষে মানুষ আবার সেই খাড়ির পাড় কেটে গর্ত করতে থাকলে এক সময় প্রশস্ত নালা বা দোলার জন্ম হয়। এভাবে দীর্ঘকালের পরিক্রমায় ঐ নালা সাইতাড়া গ্রামকে বিভক্ত করে ক্রমে নদীরূপে প্রকাশ পায়। শাখামুখে এঁটেল মাটির জলাশয়ে জলের সাথে গড়িয়ে গড়িয়ে কিছু কাকর জমা হলে সেখানে প্রচুর কাঁকড়া বাসা বাধে। লোকমুখে প্রচলিত সেই, কাকর আর কাঁকড়া প্রাধান্য,মিলিমিশি থাকায় নদীর নাম হয় কাঁকড়া।
এবার শুনি পূর্ণযৌবনা কাঁকড়া অতীত ঐতিহ্যঃ
দক্ষিণমূখী প্রবাহ হওয়ায় আত্রাইয়ের মূলধারার চেয়ে কাঁকড়ার প্রবাহই অনেক বেশি। যার ফলে কলকাতা থেকে নদীপথে বানিজ্যের জন্য বড় বড় জাহাজ ভিড়তো কাঁকড়া নদীর বন্দরে (মুলত চিরি নদী+কাঁকড়া নদীসঙ্গম বন্দরে। চিরি নদীর গল্প বলবো পরের পর্বে) ।
আর দুপাশে গড়ে উঠেছিল রিভার ভিউ রাইস মিল, শ্রীহরিশংকর রাইস মিলসহ বেশকিছু রাইসমিল। এ অঞ্চলে প্রচুর ধান হতো। ধানকেন্দ্রিক ব্যবসার প্রধান পথ ছিল কাঁকড়ার গভীরপ্রবাহ। দুধারে বিঘা কি বিঘা আম আর লিচু বাগান ছিল কাঁকড়া নদীর অলংকারস্বরূপ। কথিত আছে যে, কাঁকড়া নদীতে এক সময় মাছ ধরতে নামলে ব্যাগ যে কখন ভর্তি হতো, তা জেলেরা বুঝতেই পারতো না। এই সময়ে যা অভাবনীয়।
হতাশার গল্প শুনিয়ে শেষ করিঃ
কাঁকড়ার বিষফোড়া এখন ২টি রাবারড্যাম। পুরো নদীর এককোণ দিয়ে অল্প পানি বয়ে যায়। আমরা যা হোক কিছু দেখছি, কিন্তু আমাদের পরের প্রজন্ম বিরাণ কাঁকড়ার উদরে দাঁড়িয়ে একজন আরেকজনকে বলবে- "আমার দাদা গল্প বলেছিল আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেখানে নাকি একটা বড় নদী ছিল...
২২ শে মে, ২০২০ রাত ৮:০২
হাবিব লাবু বলেছেন: আসলেই। আমি দিনাজপুর জেলার সব নদী নিয়ে লিখতে থাকবো। আশাকরি সাথে থাকবেন। ধন্যবাদ।
২| ২১ শে মে, ২০২০ রাত ২:০৬
নেওয়াজ আলি বলেছেন: যথার্থ বলেছেন। ভালো লাগলো ।
২২ শে মে, ২০২০ রাত ৮:০৩
হাবিব লাবু বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে মে, ২০২০ রাত ১০:০৪
রাজীব নুর বলেছেন: আমাদের দেশের নদীর গুলোর নাম খুব সুন্দর।