![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তোমরা কখনো হীনমন্যতায় ভুগবেনা ও দুঃখিতও হবেনা বরং তোমরাই হবে বিজয়ী যদি তোমরা ইমানদার হও। ( সুরা আল ইমরান, আয়াত ১৩৯)
দিঘা আমার দিকে ঘার ঘুড়িয়ে তাকিয়ে আছে, সে গভির আগ্রহ নিয়ে আমাকে দেখছে। আমি তার দেখার ধরন দেখে বেশি কিছু আচ করতে পারছিনা, পারার কথাও না। এই মেয়ে আমার দিকে এত আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে! ভাবতেই মন খারাপ হয়ে যায় আমার। বোধ করি এই মেয়ে আমাকে পছন্দ করে, ভালোটালোও বাসে, কিন্তু আমার কাছে এর ভালোবাসা নেবার মতন পাত্র নেই। বা একে ভালো বাসাতে রাখার সম্বল নেই, ও আমার দিকে অনেক খন তাকিয়ে থেকে বলে - কবিতা শোনাও, কবি।
আমি বলি-
"হাজার বছর আমি পথ হাটিতেছি পৃথিবীর পথে,,,,,"
ও আমাকে হাতের ইসারায় থামিয়ে দিয়ে বলে- তোমার লেখা কবিতা বলো।
-"আমি গড়েছি তালপাতার নৌকো বা ইটের দালান,
ঠেউয়ের তালে দোলো তুমি, দোলে স্বপ্ন, সাম্পান।
বুনোলতা ভাসে ঢেউয়ের দোলে দোলে,
মরে যাবো আমি নিরবে একা, মাথা রেখে তোমার কোলে....।"
ও গভির আগ্রহ নিয়ে কবিতা সোনে, আমাকে অবাক করে দিয়ে ওর চোখের কোনে জ্বল জমে।
আমি জানতে চাই, কি চাও তুমি আমার কাছে? ক্যাম্পাসের এতো এতো ছেলেরা থাকতে আমার মতন এক বাউন্ডুলের কাছে কেনো আসো?
- ও ছোট করে বলে কিচ্ছু চাইনা আমি তোমার কাছে। কবি তুমি কি বসন্তের বাতাসের ফুলের দোলা দেখেছো? যে বাতাসে দোলে ককিল, আমি তোমার কাছে আমার সেই বসন্ত দিতে চাই, তুমি নেবে কবি? যদি নাও তাহলে দুহাত বাড়াও, ছলকে পড়া বসন্তের উজ্জল আভা আমি তোমাকে দেবো অথবা চৈত্রের শেষের কৃষ্নচুড়ার মুকুলে- লালা লাল কৃষ্নচুড়ার তোরার মাঝে লালিত আমার স্বপ্ন, তুমি নেবে কবি? বলো একবার বলো....। দিঘার চোখে আবার জ্বল দেখা যায়।
"কাট" শব্দে সেটের সব গুলো আলো জ্বলে ওঠে- "গুড সট" বলে ডিরেক্টর রকিব ভাই এগিয়ে আসে। আমার পিঠে হাত বুলিয়ে, রুপার দিকে তাকিয়ে বলে- "ফাটিয়ে দিবি তোরা, ভালোবাসা দিবসে তোদের নাটক হিট।"
আমি গিয়ে দুরের চেয়ারটায় বসি। রুপা অভিনয় করছে দিঘার চরিত্রে, আমার কোন নামনেই গল্পে। আমি "কবি" কবিতার "ক" ও চিনিনা তবুও আমি কবি। রুপা মায়েটাকে আমার ভালোই লাগে, কিন্তু ওর কাছে বোধকরি আমার জন্য কোন "ফিলিংস" নেই। আমার আবেগ বা অনুভুতির কোন মুল্য নেই এই নাটকের সেটে এবং ওর কাছে। এখানে কেবল চরিত্রের প্রয়জনে ভালোবাসতে হয়, কাদতে হয়, চোখ মুছে দিতে হয়, নাইকার হাত স্পর্স করতে হয়, সেই স্পর্সে কোন মমতা বা প্রেম নেই অথচ দর্শক সেই মোহনস্পর্সে অবিভুত হয়। আমি রুপার দিকে তাকিয়ে থাকি। নিরব নিস্চুপ এক স্বপন কোন্যা, মেকাপম্যান ওর চেহারার এদিক ওদিক ঠিক করে দিচ্ছে। আমার কাছে মেকাপ ছারাই এই মেয়েকে মনে হয়, পরীর মতন। পরীর মতন এই মেয়ের- পরীর মতনই একটা মেয়ে আছে। ওর স্বামি সুভ্র। ওর সাথে সুভ্রর ছারা ছাড়ি হয়ে গেছে ছ-মাস। সেটের বাইরে রুপার সাথে আমার খুব একটা কথা হয়না। তবুও একবার জানতে চেয়ে ছিলাম, কেনো ছেড়ে দিলে সুভ্রকে?
ও আলতো করে বলে ছিলো- ভাই ভাব আবেগ দিয়ে জীবন চলেনা, জীবনে টাকা ছাড়া কিছুই হয় না।
আমি সামান্য ইতস্ততা নিয়ে, বলেছিলাম তোমার মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে..।
ও আমার দিকে অপলক তাকিয়ে থেকে বলেছিলো- ঐ মেয়ে শুভ্রর না।
আমি অবাক বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে ছিলাম ওর দিকে। ও সত্যিই খুব বড় মাপের অভিনেত্রী, নাহলে "দীঘা" চরিত্রের মতন এমন একটা ভাব আবেগের চরিত্র- এই কাটখোট্টা মেয়েটা অবলিলায় করে দিচ্ছে।
মেকাপম্যান মিজান এসে আমার পাসে দ্বাড়ায়, বলে- আপনাকে বস ডাকছে,
-কে রকিব ভাই। ও মাথা নাড়ে।
রকিব ভাই আমার ইুনিভার্সিটির বড় ভাই, আমার লেখা লিখির ঝোক দেখেই, উনি আমাকে এই নাটকটা লেখার অনুমতি দিলেন। গল্পটা পড়ার পরে উনি বললেন নায়ক কাকে করা যায়? আমি কিছু না বলে চুপ করে ছিলাম, উনি বললেন তুই করে ফেলনা চরিত্রটা, তোকে মানাবে। আমি রাজি হয়ে গেলাম, কারন আমিও জানি- ভাব আবেগ দিয়ে জীবন চলেনা, পেটে ক্ষুধা থাকলে ভাব আবেগ বের হয় না।
আমি রকিব ভাইএর কাছে যাই- ডেকেছেন?
হ্যা, আয় বোস। বলে রকিব ভাই সিগারেট ধরান।
-ভাই সিগারেটটা ছেড়ে দিলে হয়না?
উনি হাসেন, আমি বুঝিনা তুই গাজা-টাজা কিচ্ছু খাসনা তাও গপ্প লেখোস ক্যামনে?
-ভাই সিগারেটটা ছারেন। ইদানিং সুনতেছি সিগারটেও ফরমালিন দেয়।
আরে ব্যাটা, কয়দিন পর দেখবি মানুষ রন্নাবান্না করার জন্য তেলের বদলে ফরমালিন কিনতাছে। কারন হইলো- ফরমালিন খাইতে খাইতে এমন অভ্যাস হইবো যে ফরমালিন ছারা খাবারে স্বাধই লাগবনা।
সোন তোকে যে জন্য ডাকলাম, গল্পটায় একটু চেইন্জ দরকার।
-কেমন চেইন্জ?
ধর নায়কের সাথে নাইকার দুই একটা বেড সিন।
আমি কিছু বলিনা, কিছু বলারও নেই আমার। আমি গল্প লিখি টাকার জন্য, রকিব ভাই ডিরেক্টর। উনার সাথে আমার এগ্রিমেন্ট হয়েছে, উনি যেভাবে চাইবে সেভাবেই আমাকে পাল্টাতে হবে গল্পের লাইন।
-ভাই, ঐসব সিনতো সিনেমায় যায়। নাটকে কি পাব্লিকের হজম হইবো।
আরে ব্যাটা কিসের কি? এখন আর ঐসব নিয়া কেউ মাথা ঘামায় না, আগের মুভি গুলায় দেখাইতো- নায়ক নাইকারে প্রেমের প্রস্তাব দিলো, এরপর নায়ক-নাইকা বাগানে, সাগরে, পাহাড়ে, কিছুখন নাচা-নাচি কইরা বাড়ী যাইতো। তারপর বিয়া লইয়া ঝামেলা। একে বারে শেষ সিনের আগের সিনে তাগোর বিয়া হইতো, আর শেষ সিনে দেখা যাইতো দুইটা গোলাপ ফুল বাইরাবাইরি করতাছে। আর এখনকার সিনেমায় "আই লাভ" পর্যন্ত কইতে পারে, তার আগেই জড়াইয়া ধইরা কিস, আর তার পরের সিনেই "মশারি'।
-ভাই মানুষ কিন্তু সিনেমা থেইকা মুখ ফিরাইয়া নিছে।
তাতে কি! মানুষ সিনেমা দেখানা ঠিকি, কিন্তু আইটেম সং বাপবেটা এক লগে বইসা দেখে, "চিক্নি চামেলী" বলে রকিব ভাই সিস দেন। আরে ব্যাটা কি কমু- আমার ছোট পোলাতো "পানি পানি" একটা গান আইছে না, ঐটা না দেখলে ভাতই খাইতে চায়না। হা হা।
আমি জানি রাকিব ভাইকে বোঝাতে পারবোনা, আমি পরাজিত মধ্যবিত্য ঘরের ছেলে, আমার ওনাকে বোঝানোর দরকার নেই, তেমনি দরকার নেই আধুনিক হাবার। এই শহর বা এর চাওয়া পাওয়া আমি বুঝিনা, বলা যায় বুঝতেই চাইনা, গেলো মাসের মেসের ভাড়া এখনো দেয়া হয়নি। মায়ের ওষুধ কিনতে হবে, মোড়ের দোকনদার টাকা পাবে। "আরতো মাত্র কটাদিন" বলে আটকে রেখেছি বোনের বিয়ে। কম্প্রমাইজ করে চলতে হয় আমাদের মতন চিরো নিডি ছেলেদের। অভিমান বা মুল্যবোধ থাকতে নেই আমাদের। আমার একটু খারাপ লাগে রুপার জন্য, রকিব ভাই মেয়েটাকে নিয়ে খেলার প্লান করছে।
আমি বলি ভাই বেডসিনের তো লেখা লেখিরকিচ্ছু নাই, আপনের যেমনে মন চায় স্যুট করেন। আরে যা বেটা তুই হইলি লেখক কাম নায়ক, তুই কবিনা কোন যায়গায় ঢুকামু সিন গুলা। ভাই আপনের মন মতন ঢুকান। আমার আজকে শরিরটা ভালো না, একটু আগে চলে যাবো
যা আর যাবার সময় সুমনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে যাস। নায়কের যায়গায় তো তোর নাম থাকবেই গল্পটা আমার নামেই থাকুক। আমি মাথা নেরে বলি, ভাই বেডসিনটা আমি করতে পারবো না, আপনে অন্য কাউরে দিয়া করান। উনি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন- সে আমি জানি, ওই কম্মটি আমিই করে দেবো, তুই যা।
আমি চলে আসি, আমার নিজেকে ধর্ষিত মনে হতে থাকে। ধর্ষন যখন অনিবার্য কি আর করা। আর তাছারা আফটার অল পাবলিক ডিম্যান্ড, এদের তো ফরোমালিনই প্রিয়।
আমার হাতে মায়ের ওষুধ। আমি বসে আছে ধানমন্ডি লেকের একটা ইটের বেন্চে, সুমন টাকা দিয়েছে, ও রকিব ভাইয়ের ক্যাশিয়ার। রুপা ফোন করেছিলো আমাকে, -কিছুটা কড়া কথাই শোনালো। কিভাবে? আমার মতন এক লেখক এই ধরনের বাজে দৃশ্যের কথা কল্পনা করতে পারি। নাটকের সে স্কিপট ছিলো তাতে তো বেড সিন ছিলোনা। এখন কেনো আমি এই সিন ঢোকালাম। তার অসহায়ত্বের সুযগ নিয়ে আমি নাকি তার শরির.... আরো নানান অভিযোগ। আমি কেবল শুনে গেছি কিছু বলিনি কিছু বলারও নেই আমার। ধর্ষিতাকে যখন পুলিশ জেরা করে তখন তার কি অনুভুতি হয়? সেটা আমি হাড়ে হাড়ে টের পয়েছি, রুপার ফোন পাবার পর। ফোনটা কাটার আগে আমি জানতে চেয়েছিলাম- তুমি কি সিন গুলো দিতে রাজি হয়েছো? ও কিছুখন চুপ থেকে বলে একটা সিন নেয়া হয়ে গেছে। এর পর ফোন কেটে যাবার টুত টুত শব্দ আমার কানে বাজে, আর মনের ভেতের বাজে কিছু ভোতা অনুভুতি। সালার টাকাই কি সব? ভাব আবাগ টাবেক আসলেই কিচ্ছু না।
আমার নিজেকে এতিম এতিম লাগে- এই ধানমন্ডি লেক, লেকের পাশে ডাস্ট বিনে কুড়িয়ে খাওয়া শিশু, আর ডায়েটে থাকা দৌড়াতে আসা মানুষেরা এরা কি কখোনো একে অপর কে নিয়ে ভাবে? বোধ করি না। ভাবার সময় কোথায়? মানুষ গুলতো আছেই দৌড়ের উপ্র।
ছবিঃ গুগোল।
ফেইস বুকে আমার পেইজ দেখতে চাইলে নিচের লিংকে যানঃ
view this link
আমার রিসেন্ট একটি লেখাঃ
নেই কিচ্ছু নেই।
২৬ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:২৭
মেংগো পিপোল বলেছেন: ধন্যবাদ নিঃশব্দ গাঙচিল। স্বশব্দে এগিয়ে যান।
২| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:১৭
রাজীব নুর বলেছেন: বৃষ্টির দিনে আজ সব ব্লগ পড়ব। আর মন্তব্য করবো।
আরও লিখুন।
২৬ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:২৮
মেংগো পিপোল বলেছেন: কাম নাই তাই সব কোমেন্টসের জবাব দিবো। আরও কমেন্টস করুন।
৩| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৪
জাহিদ অনিক বলেছেন:
শিরোনাম ধুতে দিয়ে ভাল করেছেন তবে যা বৃষ্টি; রোদ নেই। সহজে শুকাবে বলে মনে হয় না
২৬ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:৩০
মেংগো পিপোল বলেছেন: হুম, সুকইতে একটু দেরীই করল, তাই জবাব দিতে শীত নেমে গেলো বোধহয়।
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৩:১৪
নিঃশব্দ গাঙচিল বলেছেন: আমি নতুন। ভেবেছিলাম কোন কাম কাজ নাই দু চার লাইন লিখতে শেষ্টা করি। বোধহয় ফেসবুক গ্রুপ গুলোর মত অখাদ্য কিখাদ্য কিছু লিখে দিলেই লাইকের বন্যা বয়ে যাবে। কিন্তু এখন অন্যদের লিখা পড়ে মনে হচ্ছে শ্রাবন্তি আর রিয়াজের সেই রোমান্স ভরা রং নম্বর না, একেবারে আমার ডায়াল টা আন্ডারগ্রাউন্ডের বসের গার্লফ্রেণ্ডের ফোনে পড়েছে । এখানে সকলে লেখে,,,,,,, লেখা শিখতে আসেনা।
আচ্ছা যাই হোক। আপনার লিখা পড়ে রুপার মত আমিও অভিভুত হয়ে গেয়েছিলাম। যখন চোখ টলমল করেরে উঠবে এর ঠিক আগ মুহুর্তে কাট! শব্দটা শুনে আবেগ সামলে উঠি। পরের টুকু তো মনে হলো চোখের সামনে নাট্যমঞ্চে দেশসেরা অভীনয় শিল্পিরা তাদের পার্ফের্মেন্স করলো। অনেক ভালো লেগেছে।