নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সময় সীমাহীন

হুমায়রা হারুন

এ নিরন্তর সংশয়ে হায় পারি নে যুঝিতে / আমি তোমারেই শুধু পেরেছি বুঝিতে

হুমায়রা হারুন › বিস্তারিত পোস্টঃ

শ্বশুর যার খালু

০২ রা নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৫৪


শ্রাবণী তো তার খালু বলতে অজ্ঞান। গোলগোল চোখে কালো মতন মোটা সোটা, ছোটখাটো একটু পার্ভার্ট টাইপের বিকৃত মানসিকতার ওই লোকটি শ্রাবণীর খালু । ছোট থেকেই এই কুৎসিত লোকটির সান্নিধ্য তাকে ভীষণ আনন্দ দেয়। দেবেই না কেন? পাঁচখালার সবচেয়ে বড় খালা আর খালু যে তার সব থেকে প্রিয় । দ্বিতীয় প্রিয়তে আছে তার বাবা, মা। শ্রাবণীর বাবা অত্যন্ত সুদর্শন ব্যক্তিত্বের অধিকারী অমায়িক ভদ্রলোক। এককালে নয়, এখন ৭০ -এর কাছে এসেও তিনি যথেষ্ট ফিট এবং স্মার্ট । শ্রাবণীর খালু একেবারেই উল্টো। দুই ভদ্রলোকের নামও আবার কাকতালীয় ভাবে এক। শ্রাবণীর মা সুন্দরী, রূপসী তাই ভালো দেখতে লোকটিকে পেয়েছে আর শ্রাবণীর খালা একটু উদ্ভট চেহারার বলেই হয়তোবা খারাপ দেখতে লোকটিকে পেয়েছে।

জীবন সুন্দরভাবে কাটাতে পেরেছে শ্রাবণীর মা তার সুন্দর স্বামীর সাথে। শাশুড়ির ঝান্ডা মাথার উপর বরাবরই ছিল। কিন্তু নিয়তি এমন হলে কিছু তো করার নেই। শ্রাবণীর তো প্রিয় দাদী তিনি। ফ্রেঞ্চ চেহারার শত বৎসরের বর্ষীয়ান এক মহিলা তিনি। অসম্ভব সুন্দরী। সেদিক থেকেই কি না কে জানে, শ্রাবণীকেও বাঙালি না বলে ফ্রেঞ্চ বললে যেন বেশি ঠিক হবে। মুখের বানরমুখো চোয়ালটুকু ছাড়া আর বাকি সবকিছুই শ্রাবণীর অসম্ভব সুন্দর। ফিগার থেকে শুরু করে গায়ের রং, স্মার্টনেস। সাথে বুদ্ধি, মনের শিশু সুলভ সরলতা তো আছেই।
তার মায়ের বড় বোনের যেহেতু বিবাহ হয়েছে কুৎসিত চেহারার খালুটার সাথে, বাড়িতে সেই লোকটার ধমকে সকলকে সে সবসময় তটস্থ করে রাখে। দাবড়ানি দিতে দিতে সেই খালু যখন পুরো বাড়ির সকলের মধ্যে এক ভীতির সঞ্চার করে ফেলে, তখন শ্রাবণীই শুধু পারে তার সাথে ঠাট্টা মশকরায় মেতে উঠতে। শ্রাবণীর ভীষণ সাহস বলতে হবে।

এ বাড়িতে রত্না এসেছে বিয়ে হয়ে। শ্রাবণীর সরলতা দেখে রত্না খুব মুগ্ধ হয়েছিল। এত সুন্দর, সহজ সরল মনের মেয়েটি কেন যে এমন পাগলাটে সেটা সে বুঝতে পারতো না। মেয়েটির বয়স ৩০ এর কোঠায় তখন। রত্নার থেকে অন্তত বয়স ছয়েকের বড় হবে। বাবা-মায়ের সাথে থাকে। আদরে আহ্লাদে আটখানা হয়ে যায় খালুর কাছে এলে। কি অদ্ভুত এক টিউনিং তার, এই খালা খালুর সাথে। হয়তোবা আত্মারও যোগাযোগ আছে এবং সেটা খুব পোক্ত। কিন্তু তার পাগলাটে আচরণের কারণ রত্না এখনো উদ্ধার করতে পারেনি। বিদেশেও গিয়েছিল উচ্চ শিক্ষা অর্জনে। তাই বিদেশের আদব কায়দায়ও শ্রাবণী পারদর্শী। কি গুণ নাই তার!
সেই বিয়ের প্রথম রাতেই শ্রাবণী রত্নার কাছে এসে তাকে প্রশংসা করে বলছিল, ‘কি ন্যাচারালি সুন্দর তুমি!’
হাতে একটা গিফট গুঁজে দিয়ে শ্রাবণী রত্নাকে বলেছিল, ‘তোমার হাতে আমার খুব প্রিয় একটা জিনিস আজ দিলাম।' হাতে ছিল বিদেশী পারফিউম।
শ্রাবণীকে দেখে কি জানি কেন রত্নার শুধু মনে হয়েছিল তার নামের সাথে মিল রেখে শ্রাবণ ধারার জলে এই মেয়েটির জীবন কেটে যাবে না তো?
এমন নাম কেন ওর?
আসলে তার জীবন জুড়ে যে রয়েছে শ্রাবণের ধারা, চোখের জলের বন্যা -এসব কিছুই তখনো রত্না জানতো না। কিন্তু ওর নামটা শুনে রত্না আঁতকে উঠেছিল! কেন এমন মনে হয়েছিল রত্না জানে না। স্বামী সংসার সন্তান নিয়ে যখন জীবনের এই সময়টাতে মেয়েরা ব্যস্ত থাকে তখন শ্রাবণীর কোন কাজ ছিল না কোন দায়িত্ব ছিল না। শুধু বাসা থেকে স্কুলে যাওয়া, সেই স্কুলের নার্সারির বাচ্চাদেরকে পড়ানো, তারপর বাড়ি ফেরা। আর বড় জোর খালাখালুর বাড়িতে বেড়াতে আসা । এখানে এসে খালার সাথে আড্ডায় বসা আর খালুর সাথে ঠাট্টা মশকরায় মশগুল হওয়া।
ওই যে বললাম না কুৎসিত বেটে কালো লোকটার কথা। সে কিন্তু রত্নার শ্বশুর মশায়। লোকটিকে রত্নার কেমন জানি বিকৃত রুচির মনে হতো। কিন্তু শ্রাবণীর সেসব ভাবনা মনের মাঝে মোটেই নেই। ঘরের মেয়ে কেনই বা এভাবে বাইরের মানুষের মত করে তার খালুকে নিয়ে ভাববে? রত্না তো এসেছে অন্য বাড়ি থেকে। এখানে সে আগুন্তক।

একদিন শ্রাবণীর খালু মানে রত্নার ওই বিকৃত রুচির শ্বশুরটি যখন শ্রাবণীকে খাবার টেবিলের সামনে, যেখানে সকলেই জড়ো হয়ে বসে আছে সেখানে, ঠাট্টা করতে করতে বলল, ‘বিয়ে করিস না কেন? তোর বন্ধুরা তো বিয়ে করে সবাই মজা করছে।'
শ্রাবণী কিছু একটা বলতে যাবার আগেই খালু তার আঙ্গুলটা লম্বা করে শ্রাবণীর কোমরে একটা খোঁচা দিল। তারপর শরীরের দিকে তাকিয়ে শরীরকে ইঙ্গিত করে বলল, ‘এত কাঠি হলে চলবে? খাবার দাবার খা। শরীরে একটু মাংস বানা।‘
উত্তরে শ্রাবণীর সে কি হাসি! বলল, ‘আপনি খান।‘
শ্রাবণীর গায়ে তার খালুর আঙ্গুল দিয়ে খোঁচাখুঁচি করার মত বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ দেখে রত্নার ভীষণ রকমের বিশ্রী লেগেছিল। কারণ সে তো এসব দেখে অভ্যস্ত না বা শ্রাবণীর মতো ওই লোকটির সাথে ছোটকাল থেকে থেকে বড়ও হয়নি। শ্রাবণীর নিশ্চয়ই বাল্যকাল খুব আনন্দে কেটেছে ওই লোকটির সাথে। আফটারঅল পরিবারের বড় খালু, মায়ের বড় বোনের স্বামী।

কিন্তু আসলেই শ্রাবণী কেন তার বান্ধবীদের মত বিয়ে করে মজা করছে না? রত্না পরে একদিন জানতে পারল, কোন সময়ে শ্রাবণীরও সংসার জীবন শুরু হয়েছিল ‘ব্যাট’ নামের একটি অভিজাত শ্রেণীর বয়ে যাওয়া, ধনির দুলালের সাথে। যেহেতু ইংরেজি মিডিয়ামে তারা পড়াশোনা করে আর অত্যন্ত হাই-ফাই, ধনী শ্রেণীর লোক, তাই তাদের নামগুলো তো এরকমই হবে। ক্রিকেট খেলার ব্যাট অথবা আরো কত ধরনের ইংরেজি নামই না আছে এ রকম। হাই -ফাই রা জানে সেসব নামের কথা। কিন্তু সেই ‘ব্যাট’-ই শ্রাবণীর জীবনকে ব্যাটের বাড়ি দিয়ে বাঁশময় করে তুলেছিল। শ্রাবণী তখন আরো কম বয়সের মেয়ে। সংসারের কাজ তেমন পারে না, বুঝেও না। বিয়ের প্রথম রাতেই এক গাদা ক্রেডিট কার্ড উপহার দিয়েছিল সেই ধনীর দুলাল স্বামীটি তাকে। কত না স্বপ্ন, কত না আনন্দে ভরে জীবনের শুরু করেছিল । এই ভাবনাই ভেবেছিল তখন শ্রাবণী যে, সারাটা জীবন তার সুখের হবে। অথচ সংসারে একটু ছোটখাট ভুল যদি ধরা পড়তো, এই যেমন টেবিলে একটু ময়লা পড়ে আছে বা একটু চিনি পড়ে আছে, সাথে সাথে ব্যাট তাকে ব্যাটের বাড়ি দেয়া শুরু করে দিত। শ্রাবণীর বাবা তার বেয়াইকে একবার বলেছিলেন, ‘আপনার ছেলে যে আমার মেয়েকে মারে, এটা তো ভালো না।‘
শুনে বেয়াই বলেছিলেন, ‘আমিও তো মারি আমার স্ত্রীকে। এর মধ্যে অসুবিধা কোথায়?’

আজকাল তো বস্তির মেয়েরাও স্বামীর ব্যাটের বাড়ি খেতে চায় না। আর ধনীর দুলালী শ্রাবণী? তার তো প্রশ্নই উঠে না। ভেঙে গেল তার সাজানো সংসার। শুরু হলো শ্রাবণধারায় চোখের পানির স্রোত। অশ্রুর বন্যা। জীবনটা তার কান্নায় ভরে উঠল।
বারবার ভেবে অবাক হয়, তার এত সুন্দর নাম শুনে রত্না প্রথম দিনই কেন যে আঁতকে উঠেছিল? সে জানে না।
শ্রাবণীর সাথে তো রত্নার পরিচয় ঘটতো না এই খালা খালুর বাড়িতে শ্রাবণী বেড়াতে না এলে; অথবা তার খালুর সাথে প্রাণ খোলা হাসিতে, গল্পে আর ঠাট্টা মশকরায় মশগুল হয়ে মেতে না উঠলে। কুৎসিত মনের, শ্বশুর সম্পর্কের লোকটি দ্বারা সরল মনের এই মেয়েটিকে (মানে শ্রাবণীকে,) তার পেটের মধ্যে টুকটাক খোঁচামার যে দৃশ্য, রত্না দেখেছে –তা থেকেও রত্না বঞ্চিত হতো। রত্না পরে আরোও জেনেছে, তার শ্বশুর বাড়িতে কাজের জন্য সবসময় কাজের ছেলে রাখা হয়। কাজের মেয়ে রাখা হয়না। তাতে শ্বশুর মশায়ের কি যেন অসুবিধা হয়।
বাড়ির ভেতরেই যদি বিকৃত চিন্তায় পারদর্শী এই লোকটি, শ্রাবণীর মতো বয়স্ক এক মেয়ের পেটের মধ্যে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিতে পারে, ঠাট্টা করে খোঁচা মারতে পারে, সে নিশ্চয়ই অন্য মেয়ে পেলে তাদেরকে আরো অনেক কিছু করার বুদ্ধি রাখে, তার ৭২ বছরের এই জীবনে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৮

dupur১২৩ বলেছেন: বুজলাম না , সুন্দর লেখা কিন্তু পঠিত মাত্র ২। লেখা তা ভালো হয়েছে। ভালো থাকবেন

০৩ রা নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৩২

হুমায়রা হারুন বলেছেন: প্রথম পাতাইয় দিই নাই। তাই কেউ পোস্ট দেখতে পায় না।

২| ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০৪

dupur১২৩ বলেছেন: প্রথম পাতায় না দেয়ার কারণ টা কি জানতে পারি ? যদি বেশি বেক্তিগত হয় তাহলে বাদ দেন।
ভালো লেখা সবার মাঝে দেয়া উচিৎ , কে পড়লো কে না পড়লো , এই টা লেখকের দেখার বিষয় না।
ভালো থাকবেন

০৩ রা নভেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৮

হুমায়রা হারুন বলেছেন: আলসেমি বলতে পারেন ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.