| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হুমায়রা হারুন
মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব শুধু প্রযুক্তিতে নয়, বরং মননের বিনিময়ে। ব্লগে যোগাযোগের মধ্যে সেই শ্রেষ্ঠত্বেরই প্রকাশ ঘটে। আপনি যখন লেখেন, মন্তব্য করেন, কিংবা অন্যের ভাবনা পড়েন — আপনি তখন মানব প্রজাতির মননে অংশ গ্রহন করেন।
ষষ্ঠ স্তরঃ আধ্যাত্মিক জীবন — শরীরের সীমানা ভেদ করে আত্মার মহাজাগতিক উন্মেষ
পঞ্চম স্তরের সৃষ্টিশক্তির শিখর অতিক্রম করে আত্মা যখন দেহের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে, তখনই সে প্রবেশ করে ষষ্ঠ স্তরে। এটি এমন এক স্তর যেখানে "জীবন" শব্দটি দেহের সীমায় বাঁধা থাকে না; জীবন হয়ে ওঠে চেতনার স্পন্দন, অস্তিত্বের তরঙ্গ, নীরব মহাজাগতিক আলোর এক বিস্তৃত সাগর।
পঞ্চম স্তরে আত্মা যখন সৃষ্টিশৈলীর সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে যায়, তখন তার শরীরের সীমাবদ্ধতা থাকে না।মানুষ তখন শরীরবিহীন শুদ্ধ চেতনায় রূপান্তরিত হয়।
এই স্তর হলো — মানব আত্মার শরীরের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ অর্জন করা, সময়ের বাঁধন ছিন্ন করে উর্ধ্ব স্তরের দিকে ধাবিত হবার অবস্থা। এ স্তরে ভৌত অবস্থা অর্থাৎ ফিজিক্যাল রিয়্যালিটি থেকে মুক্ত হয়ে আত্মা নন - ফিজিক্যাল সত্তায় পরিণত হয়। এই অবস্থাকে বলা যায় আত্মার একপ্রকার 'বিশুদ্ধ আধ্যাত্মিক অস্তিত্ব।' এখানে আত্মা সবসময় একক অবস্থায় বিরাজমান। মৃত্যু বা জীবিত — এই দুটি ধারণা একই এবং বিভেদহীন।
আধ্যাত্মিক শক্তি — সময়ের হাজার বছর অতিক্রম করার ক্ষমতা
ষষ্ঠ স্তরে আত্মা শরীরের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ অর্জন করে। ফলে — জন্ম মৃত্যুর বিভেদ না থাকায় জীবন ও মৃত্যু তার নিয়ন্ত্রাধীন হয়। ভৌত জগতে মানে ফিজিক্যাল রিয়্যালিটিতে তার বয়স হাজার বছর হতে পারে । কারণ তার শরীর ক্ষয় হয় না,আত্মার শক্তি অবিনশ্বর থাকে ।মন থাকে ধীর স্থির। এইরূপ মানসিক অবস্থা সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বেদনাসহ সকল অনুভূতির উর্ধ্বে অবস্থান নেয়। আত্মা তখন স্থিত অবস্থা প্রাপ্ত হয়ে অটলএবং অনড় অবস্থান গ্রহন করে। ষষ্ঠ স্তরে এসে সে যেন অপরিবর্তনীয়।
ধর্ম–দর্শনের তুলনা
হিন্দু — সিদ্ধ/ঋষি/যোগীদের দেহলয়
হিন্দু দর্শনে আত্মার বিবর্তনের প্রথম স্তরকে 'তামসিক' স্তর বলে। এটা অন্ধকার, অজ্ঞতা, বিভ্রান্তির স্তর। জীব আত্মা তখনো মায়ার পর্দায় ঢাকা। নিজের স্বরূপ সম্পর্কে অচেতন। আর দ্বিতীয় স্তরটিকে 'রাজসিক' স্তর বলে। এ স্তরে মানুষের ভেতরের শক্তি, মানসিক চাহিদা ও চিন্তার জন্ম হয়। আধ্যাত্মিকতার প্রথম ধাপ শুরু হয়। তৃতীয় স্তরে এসে কুন্ডলিনী শক্তির প্রথম জাগরণ হয়।মানসিক ক্ষমতার বৃদ্ধি ঘটে। তারপর চতুর্থ স্তরে হলো “ব্রহ্ম” উপলব্ধি। যেখানে আত্মা ও ব্রহ্ম একাকার। তখন উপলব্ধি আসে “অহং ব্রহ্মাস্মি” — আমি ব্রহ্ম।
পঞ্চম স্তুরে যারা বসবাস করেন তাদের বলা হয় ঋষি। প্রাচীন ঋষিরা এ স্তুরে উন্নীত হয়ে প্রাণশক্তির উপর নিয়ন্ত্রণ করতেন। তারা প্রকৃতিকে প্রভাবিত করতে পারেন। ষষ্ঠ স্তরে চৈতন্যই সত্তা।
বৌদ্ধ দর্শন — অরূপ সমাধির স্তর
বৌদ্ধধর্মে প্রথম স্তরে আত্মার অবস্থাকে বলা হয় 'অবিদ্যা' অবস্থা, যেখানে মানুষ বাস্তবতার প্রকৃত স্বরূপ দেখতে পায় না। চক্রাকারে জন্ম-মৃত্যুর বন্ধনে আবদ্ধ থাকে। দ্বিতীয় স্তরে এসে এটি ‘স্মৃতি ও সচেতনতা’ জন্মানোর আদি ধাপে উন্নীত হয়। অবিদ্যা এখনো প্রবল, তবে জ্ঞানতৃষ্ণার জন্ম হয়। তৃতীয় স্তরে মনের ক্ষমতার বৃদ্ধির ফলে অন্তর্দৃষ্টির সূচনা হয়। বুদ্ধ বলেছেনঃ 'মনই সব কিছুর উৎস।' ধ্যানের মাধ্যমে অন্তর্দৃষ্টি তৈরি হয়। তবে চতুর্থ স্তরে উপনীত হওয়া হলো নির্বাণের প্রাথমিক স্তর/ আত্মা সম্পূর্ণরূপে কুসংস্কারমুক্ত হয়। অতঃপর পঞ্চম স্তরে আত্মা বোধিসত্ত্বা অর্জন করে। বোধিসত্ত্বারা জীবজগতের কল্যাণে শক্তি প্রয়োগ করেন। ষষ্ঠ স্তরে চেতনাই অস্তিত্ব। এ স্তরে শরীর বিলীন হয়ে যায় ।
তাওবাদ — Immortal Sage
তাওবাদ (Taoism বা Daoism) হলো চীনের এক প্রাচীন দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক মতবাদ, যার মূল ভিত্তি হলো প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জীবনযাপন করা। তাওবাদে প্রথম স্তরটি এমন একটি অবস্থা যেখানে এটি 'অচেতন দাও' অর্থাৎ যেখানে মানুষ প্রকৃতির স্রোত বুঝতে পারে না। দ্বিতীয় স্তর হলো 'দাও-এর প্রথম অনুভব'— 'তাও' সবকিছু বুঝতে না পারলেও সে তার অস্তিত্ব অনুভব করতে পারে।
পঞ্চম স্তরে উন্নীত হলে তাদের বলি Immortal Sage. এরা শক্তিকে সরাসরি প্রকৃতির প্রবাহে রূপ দিতে সক্ষম। সকল দর্শনে পঞ্চম স্তর “সৃষ্টি ও নিয়ন্ত্রণের” স্তর হিসেবে স্বীকৃত। ষষ্ঠ স্তরে উপনীত হলে আধ্যাত্মিক শক্তির দ্বারা শত শত বছর বেঁচে থাকার শক্তি অর্জিত হয়।
খ্রিস্টীয় মিস্টিক — Pure Spirit
ষষ্ঠ স্তরে দেহিক অস্তিত্ব বিলীন হয়। কারণ দেহ ক্ষয়শীল, কিন্তু আত্মা ঈশ্বরের আলোয় চিরজীবী।
সব দর্শনে এই স্তরকে অতিলৌকিক না বলে অতিবাস্তব আধ্যাত্মিক সত্তার স্তর বা অতিবাস্তব চৈতন্যের স্তর বলা শ্রেয়।
বিশুদ্ধ আধ্যাত্মিক অস্তিত্ব
ষষ্ঠ স্তরে উত্তীর্ণ হয়ে আত্মা দেহ ছাড়ে। সে হয়ে ওঠে স্বচ্ছ, আলোকিত, শক্তিরূপে সর্বদা বিরাজমান। আত্মার দেহের মত চোখ, কান নেই কিন্তু তার জ্ঞান আছে, অনুভূতি আছে। সে অতিবাস্তব জগতের অস্তিত্বশীল চেতনা। ষষ্ঠ স্তরে আত্মা এমন এক প্রশান্তি অনুভব করে, যা পৃথিবীর কোনো অনুভূতির সঙ্গে তুলনীয় নয়। এ শান্তি সীমাহীন এবং দুর্লভ। এর জন্ম হয় আত্মার স্বচ্ছতার ভেতর থেকে। তখন তার কোনো ভয় নেই, উদ্বেগ নেই, সময়ের তাড়া নেই। কারণ এ স্তরে আত্মা বুঝে যে সে 'সময়'-এর উর্ধ্বে।
আত্মা হাজার হাজার বছরের অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারে কোনো বিপর্যয় ছাড়াই, শুধু তার নিজস্ব শক্তির জোরে। শরীরের প্রয়োজন বিলীন হয়ে যায় ফলে এ স্তরে দেহ আর আত্মার কেন্দ্র এক নয়। শরীর যেন একটি পুরোনো পোশাক — ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে যায়, ম্লান হয়ে যায়, স্বচ্ছ হয়ে যায়। আত্মা বুঝতে পারেঃ “আমি দেহ নই। আমি দেহেরও ওপারে, আমি দেহের উর্ধ্বে।”
তার ইন্দ্রিয়-শক্তি তখন পার্থিব জগতে সীমাবদ্ধ নয়। তার চোখ দিয়ে দেখার প্রয়োজন পড়ে না, কানে শোনার প্রয়োজন পড়ে না,স্পর্শ করার প্রয়োজন পড়ে না। কারণ দেখতে পারা, বুঝতে পারা, উপলব্ধি করতে পারা সবই ঘটে তার চেতনার মাধ্যমে।
আধ্যাত্মিক সৃষ্টিকর্ম — শক্তির মাধ্যমে যার সৃষ্টি
এ স্তরে আত্মা অন্য আত্মাদের সঙ্গে সংযুক্ত হয়—তাদের শক্তি ভাগ করে, তাদের আলো ছড়িয়ে দেয় -কোনো কথার মাধ্যমে নয়, কোনো ভাষার মাধ্যমে নয়। এ যোগাযোগ হয় 'চেতনার কম্পন'-এর মাধ্যমে। এই যোগাযোগ বিশুদ্ধ, নিখাদ, অহংবর্জিত। এতে থাকে নির্দেশনা, স্নেহ, জ্ঞান। বিনিময় হয় চিন্তা ও ধারণার। এ স্তরে আত্মা আধ্যাত্মিকতা থেকে তৈরি করে নতুন ধারণা, নতুন দিক নির্দেশনা। কারণ ষষ্ঠ স্তরে আত্মা সূক্ষ্ম শক্তি দিয়ে সৃষ্টিকে রূপ দিতে পারে,পূর্বেলোব্ধ জ্ঞান দিয়ে নবজাত আত্মাকে তার চলার পথে সহায়তা করতে পারে। সে 'স্পিরিট ওয়ার্ল্ড' থেকে স্পিরিট গাইড (Spirit Guid) হিসেবে মনুষ্য সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করতে পারে। এঁরা 3D রিয়্যালিটিতে কাজ করেন বলে আমরা এঁদের দেবদূত, স্পিরিট গাইড বলি। এই ধারণাগুলোর জন্ম এভাবেই হয়ে এসেছে।
জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি
ষষ্ঠ স্তরে দেহ থেকে মুক্ত অবস্থায় আত্মা হয়ে ওঠে সম্পূর্ণ স্বাধীন, সম্পূর্ণ শক্তিশালী। কারন এখন আর তার কোন মৃত্যু নেই,জন্ম নেই। কারণ দেহই ছিল কষ্টের মূল উৎস; দেহই ছিল সীমাবদ্ধতা; দেহেরই মৃত্যু হতো। এই স্তরে আত্মা দেহের উর্ধ্বে, সম্পূর্ণ বন্ধনহীন এক সত্তা।
প্রকৃত মুক্তি
ষষ্ঠ স্তরের সবচেয়ে বিস্ময়কর সত্য—“দেহের মৃত্যু আর আত্মাকে স্পর্শ করতে পারে না।” এখানে দেহ নেই বলেই মৃত্যু নেই।
আত্মা পুরোপুরি স্বচ্ছ—দেহের রূপ একসময় ছায়ার মতো মিলিয়ে যায়। এটি প্রকৃত মুক্তি।
চেতনার সমষ্টিক অস্তিত্ব
এ স্তরে আত্মা প্রথমবার উপলব্ধি করে “আমি শরীরের মাঝে নেই। আমি চেতনা মাত্র। আমি রূপহীন, তরংগায়িত শক্তিমাত্র। এই অবস্থায় এক আত্মা অন্য আত্মার অস্তিত্ব অনুভব করতে পারে। এবং ষষ্ঠ স্তরের শেষ পর্যায়ে আত্মা বুঝতে পারে যে সে একা নয়। অসংখ্য আত্মা একসঙ্গে একটি বিশাল চেতনার মহাসাগরে একাত্ম হয়ে থাকে। ব্যক্তিগত পরিচয় ম্লান হয়ে আসে। আত্মা হয়ে ওঠে বৃহত্তর চেতনার অংশ। এটি “সামষ্টিক বুদ্ধি” বা “কলেক্টিভ কনশাসনেস”-এর রূপ। যেখানে আলাদা করে “আমি” বলে কিছু নেই। এ স্তরে আত্মা একাকী হয় না।
ধর্ম–দর্শনে এর প্রতিফলন
হিন্দু মতবাদ— পরমাত্মায় মিলন
ষষ্ঠ স্তরে জীবাত্মা মিলিত হয় পরমাত্মায়।
বৌদ্ধ দর্শন — নির্বাণ লাভ
ষষ্ঠ স্তরে নিজস্ব সত্তার বিলোপ ঘটে; নিঃস্বার্থ অস্তিত্ব বিরাজ করে।
খ্রিস্টীয় মতবাদ — union with God
ষষ্ঠ স্তরে আত্মা ও স্রষ্টার আলো মিলিত হয়।
সব দর্শনে এ স্তর হলো “আমি”– এর অবসান ও সর্বশক্তিমান আলোর সাথে মিলন।
ষষ্ঠ স্তরে ভৌত জগতের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আত্মা সৃষ্টিতে লীন হয়। আত্মা সৃষ্টি-প্রবাহের সাথে একত্রিত হয়। পার্থিব অবস্থার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে। এ সময় “বাস্তব” শব্দের অর্থ পাল্টে যায়। আর কোনো পৃথিবী নামের “জগত” নেই। আছে কেবল এক অসীম আলো, শক্তির আধারে সদা সঞ্চারণশীল প্রবাহ মাত্র ।
ষষ্ঠ স্তরের সারমর্ম
ষষ্ঠ স্তরে আত্মা দেহহীন, অমর, শক্তিশালী সমষ্টিগত চেতনার অংশ। সময়-স্থানাতীত অবস্থায় প্রোথিত। এ স্তরে মানুষের আর “মানব অস্তিত্ব থাকে না। শুদ্ধ শক্তি তে রূপান্তরিত হয়। এই স্তর তাকে ধীরে ধীরে নিয়ে যায় সপ্তম স্তরেঃ পরম সৃষ্টিমান চেতনার সঙ্গে একীভূত হওয়ার লক্ষ্যে।
এক কথায়ঃ
হিন্দু দর্শন ও উপনিষদীয় চিন্তা অনুসারে চেতনা নিজেকে প্রকাশ করে স্তর স্তরে।
উপনিষদীয় ৫টি কোষ (শরীর-চেতনার স্তর)ঃ
১. অন্নময় কোষ — শারীরিক দেহ
২. প্রাণময় কোষ — প্রাণশক্তি/শ্বাস/উদ্যম
৩.মনোময় কোষ — মানসিক জগৎ/কল্পনা/ভয়/বিশ্বাস
৪.বিজ্ঞানময় কোষ — বুদ্ধি/জ্ঞান/যুক্তি
৫.আনন্দময় কোষ — পরমানন্দ/সৃষ্টিশক্তি/ঈশ্বরের সঙ্গে সংযোগ
বৌদ্ধ দর্শন (তিব্বতী/মহাযান/থেরবাদ)
বৌদ্ধধর্মের মূল শিক্ষাঃ
অবিদ্যা/ অজ্ঞতা → যা দুঃখ আনয়ন করে → চেতনার জাগরণ হলে → আত্মা নির্বাণ লাভ করে।
এ ক্ষেত্রে চেতনাবিকাশের ধাপঃ
১ম স্তর. কুসংস্কার এবং অজ্ঞতা (অবিদ্যা)
২য় স্তর. ভ্রান্ত ধারণা
৩য় স্তর. জ্ঞান ও দৃষ্টির শুদ্ধি
৪র্থ স্তর. বীমল-চেতনা
৫ম স্তর. অহং বিলীন
৬ষ্ঠ স্তর. নির্বাণ
৭ম স্তর. মহাশূন্য/ধর্মকায় (বুদ্ধত্ব)
অর্থাৎ, ১ম – ২য় স্তর = অবিদ্যা, কুসংস্কার, উপাসনার প্রাথমিক যুগ।
৩য় স্তর = জ্ঞান/সম্যক দৃষ্টি
৪র্থ স্তর = বোধি
৫ম স্তর = বোধিসত্ত্বের পথ (সৃষ্টিশীল করুণার বিকাশ)
সুফিবাদ (ইসলামী আধ্যাত্মিকতা)
সুফিবাদে মূল লক্ষ্য হলো নফসকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা।
নফসের উন্নতির ৭টি স্তরঃ
১. নফস আম্মারা — প্রবৃত্তিনির্ভর, অজ্ঞতা
২. নফস লাওয়ামা — আত্মসমালোচনা
৩. নফস মুলহামা — জ্ঞান, অনুপ্রেরণা
৪. নফস মুতমাইন্না — প্রশান্তি
৫. নফস রাজিয়া — সন্তুষ্টি
৬. নফস মারজিয়া — আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন
৭. নফস কামিলা — পূর্ণতা, ঐক্য
সুতরাং এ আলোচনার সাথে মিল রেখে নিম্নোক্ত ভাবে ভাগ করা যায়ঃ
১ম - ২য় স্তরঃ প্রবৃত্তি/অজ্ঞতা
৩য় স্তরঃ আত্মার জাগরণ
৪র্থ স্তরঃ শান্তি ও নিষ্পাপতা
৫ম–৬ষ্ঠ স্তরঃ সৃষ্টিশক্তির দায়িত্ব, আধ্যাত্মিক ক্ষমতা
৭ম স্তরঃ একত্ববাদ—আল্লাহর সাথে চূড়ান্ত একাত্মতা
খ্রিষ্টীয় মিস্টিসিজম
তিনটি ধাপে আত্মার উত্তোরণ ঘটে। যেমনঃ
1. Purification — পাপ পরিশোধ
2. Illumination — অন্তর্জ্ঞান
3. Union — ঈশ্বরের সঙ্গে মিলন
অর্থাৎ আত্মা Individual Soul থেকে Holy Spirit-এ রূপান্তরিত হয় - শেষে God-consciousness-এ পরিণতি লাভ করে।
খ্রিষ্টীয় mystic দের মতে “When the soul sees no separation, creation flows through it.”
গ্রীক দর্শন (প্লেটো/প্লটিনাস/অ্যারিস্টটল)
প্লেটোর দর্শন অনুসারে আত্মার তিনটি ধরণের সমাহার। যেমনঃ
1. Appetitive — প্রবৃত্তি
2. Spirited — আবেগ
3. Rational — বুদ্ধি
পরবর্তীতে Neoplatonism-এ ধারণা করা হয়
1. Soul
2. Intellect
3. The One
যা তুলনা করলে বলা যায়ঃ
১ম–২য় স্তর = প্রবৃত্তি/আবেগ
৩য় স্তর = বুদ্ধি
৪র্থ স্তর = Intellect
৫ম–৭ম স্তর = The One (সৃষ্টির উৎস)
আধুনিক বিজ্ঞান (নিউরোসায়েন্স,কসমোলজি ও কোয়ান্টাম তত্ত্ব)চেতনাকে ব্যাখ্যা করে তিনটি স্তরে। যেমনঃ
1. Primitive brain (Reptilian)
2. Emotional brain (Limbic)
3. Rational brain (Neocortex)
তার সাথে যুক্ত হয়েছে নতুন তত্ত্বঃ
* Integrated information theory
* Quantum consciousness
* Unified field theory
যা এ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তুলনা করলে দাঁড়ায়ঃ
১ম–২য় স্তর = বেঁচে থাকার অনুভূতি/ভয়/প্রবৃত্তি
৩য় স্তর = যুক্তির সন্ধান
৪র্থ স্তর = উচ্চতর সংবেদনশীলতা
৫ম স্তর = সৃষ্টিশীলতা ও জিনগত ম্যানিপুলেশন (জ্ঞান,কৌশল খাটিয়ে কোন কিছুকে প্রভাবিত করা)
৬ষ্ঠ –৭ম স্তর = দেহহীন চেতনার ধারণা
নিউ এজ/মেটাফিজিক্স -এর মতে মহাবিশ্ব "কম্পন" বা vibration দিয়ে তৈরি।
ডাইমেনশন 3D–7D অনুযায়ী চেতনাস্তরঃ
3D: ভৌতিক জগত
4D: বিশ্বাস/এনার্জেটিক সংবেদন
5D: জ্ঞান-প্রজ্ঞা
6D: আধ্যাত্মিক সৃষ্টিশক্তি
7D: উৎস অর্থাৎ চেতনার মূল উৎস(Source consciousness)
ক্রমশঃ
সৃষ্টি, চেতনা ও আত্মার চিরন্তন যাত্রা— পঞ্চম স্তর
প্রথম স্তর
©somewhere in net ltd.