নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সময় সীমাহীন

হুমায়রা হারুন

মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব শুধু প্রযুক্তিতে নয়, বরং মননের বিনিময়ে। ব্লগে যোগাযোগের মধ্যে সেই শ্রেষ্ঠত্বেরই প্রকাশ ঘটে। আপনি যখন লেখেন, মন্তব্য করেন, কিংবা অন্যের ভাবনা পড়েন — আপনি তখন মানব প্রজাতির মননে অংশ গ্রহন করেন।

হুমায়রা হারুন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বৈদিক জ্যোতিষশাস্ত্রীয় নক্ষত্র - চন্দ্রনিবাস

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:২৩

চন্দ্রনিবাস
ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান ও বৈদিকদের জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে নক্ষত্র হল চন্দ্রপথের ২৮টি ভাগ যেগুলো চন্দ্রনিবাস হিসাবে পরিচিত। সূর্যের গতিপথকে যেমন ১২ ভাগে ভাগ করে, প্রতি ভাগের নাম রাখা হয়েছে রাশি। তেমনি চন্দ্রপথকে ২৮ ভাগে ভাগ করে প্রতি ভাগের নাম রাখা হয়েছে নক্ষত্র।
বিভিন্ন দেশে চন্দ্রনিবাস -এর নাম বিভিন্ন। ভূমধ্যঞ্চলীয় আরবে ও পূর্বাঞ্চলীয় চীনে সময় পরিমাপের এ প্রাকৃতিক ঘড়িটিকে ২৮ ভাগেই ভাগ করে নিয়েছে। আরবরা একে বলে 'মঞ্জিল'। চীনাদের কাছে 'সিউ' নামে পরিচিত। মিশরেও এমন এক আকাশ বিভাজন পাওয়া যায়, যা ৩৬ ভাগে বিভক্ত। প্রতিটি বিভাগ 'দোকান' নামে পরিচিত।

যোগতারা ভোগ
চাঁদ প্রত্যেক তিথিতে একেকটি নক্ষত্রের সীমানায় অবস্থান করে। পূর্ণিমার দিন চাঁদ যে নক্ষত্র অবস্থান করে, তদানুসারে মাসের নাম বৈশাখ, জৈষ্ঠ্য, আষাঢ় ইত্যাদি রাখা হয়েছে। প্রত্যেক নক্ষত্রের আকাশস্থানের পরিমাণ (৩৬০/২৮=১২ ডিগ্রী ৮৬ মিনিট)। প্রতিটি নক্ষত্রের একটি বিশেষ তারাকে (সাধারণত উজ্জ্বলতম নক্ষত্রকে) নির্দিষ্ট করা হয় যাকে যোগতারা বলে। কোন নক্ষত্রের আদিবিন্দু থেকে ঐ নক্ষত্রের যোগতারা পর্যন্ত ভূকক্ষের অংশকে উক্ত নক্ষত্রের ভোগ বলে।
শাস্ত্রে নক্ষত্রের অবস্থান এবং যোগতারা নির্দিষ্ট করা আছে। তাই প্রত্যেক নক্ষত্রের ভোগ নির্দিষ্ট। এর কোন পরিবর্তন হয় না।

Western Astrology
পাশ্চাত্য জ্যোতিষে constellation বা fixed star এর আলাদা নাম আছে, কিন্তু সেগুলো ভারতীয় ২৭টি নক্ষত্রের একে অপরের সাথে mapping নয়। অর্থাৎ পাশাত্য জ্যোতিষশাস্ত্রে ভারতীয় বৈদিক ২৭টি নক্ষত্রের কোন সমতুল্য নেই। বৈদিক জ্যোতিষে যেখানে চন্দ্রপথ ভিত্তিক ২৭টি নক্ষত্র ব্যবহৃত হয়, পাশাত্য জ্যোতিষে মূলত ১২টি রাশি (Zodiac Signs) এবং ৮৮টি আধুনিক নক্ষত্রপুঞ্জ
(Constellation) ব্যবহৃত হয়, যা একেবারে আলাদা একটি গণনা।

বৈদিক নক্ষত্র (Indian Astrology) অনুযায়ী প্রচলিত (উদাহরণঃ Ashwini, Bharani ইত্যাদি) এবং পাশ্চাত্যেও সেভাবেই ব্যবহৃত হয়।পাশ্চাত্যে মূলত ১২টি Zodiac sign যেমন, (Aries, Taurus, Gemini, Cancer, Leo, Virgo, Libra, Scorpio, Sagittarius, Capricorn, Aquarius, Pisces)

প্রতিটি নক্ষত্রের নিজস্ব পাত্র, শক্তি, চরিত্র ও প্রভাব রয়েছে, যা বৈদিক জন্মকুন্ডলীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এগুলো চন্দ্রের গতিপথ অনুসারে বিভক্ত এবং প্রতিটি নক্ষত্র প্রায় ১৩ ডিগ্রী ২০ মিনিট করে অবস্থান করে। এ নক্ষত্রগুলোর প্রতিটি নিজস্ব বৈশিষ্ট্য, শক্তি, প্রতীক ও দেবতা দ্বারা চিহ্নিত। ২৭টি নক্ষত্রের তালিকাঃ
১. অশ্বিনী
২. ভরণী
৩. কৃত্তিকা
৪.রোহিণী
৫. মৃগশিরা
৬.আর্দ্রা
৭.পুনর্বসু
৮.পুষ্য
৯.আশ্লেষা
১০.মঘা
১১. পূর্ব ফল্গুনী
১২. উত্তর ফল্গুনী
১৩. হস্ত
১৪.চিত্রা
১৫. স্বাতি
১৬. বিশাখা
১৭. অনুরাধা
১৮. জ্যেষ্ঠা
১৯. মূলা
২০. পূর্বাষাঢ়া
২১. উত্তরাষাঢ়া
২২. শ্রবণা
২৩.ধনিষ্ঠা
২৪. শতভিষা
২৫.পূর্বভাদ্রপদ
২৬. উত্তরভাদ্রপদ
২৭. রেবতী

১. অশ্বিনী
দেবতাঃ অশ্বিনী কুমার
প্রতীকঃ ঘোড়ার মাথা
বৈশিষ্ট্যঃ চটপটে, দ্রুত কর্মক্ষম

অশ্বিনীকুমার - স্বর্গের চিকিৎসিক
অশ্বিনীকুমারদ্বয় মূলত বৈদিক দেবতা। তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সবিত (সূর্যদেব) ও শরণ্যু , নামান্তরে সংজ্ঞা, দেবীর যমজ পুত্রদ্বয় হিসাবে উল্লিখিত ও পরিচিত। ঋগবেদে এই যমজ দেবতাদের ভিষক ও চিকিৎসক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

জন্মকাহিনী
সূর্য ও সংজ্ঞা অশ্বরূপে সংগম করার ফলে এই যমজ পুত্রের জন্ম হয়েছিল। সূর্যের প্রচন্ড উত্তাপ সহ্য করতে না পেরে সংজ্ঞা পিত্রালয়ে পলায়ন করে এবং ঘোটকীর রূপ ধারণ করে ভ্রমন করতে থাকে। পরে সূর্য যোগবলে সকল কথা জানতে পেরে অশ্বের রূপ ধারণ করে সেই স্থানে আসেন। এবং তার গর্ভে সূর্যের ঔরসে অশ্বরূপী যমজ দুই পুত্রসন্তানের জন্ম।
বহু মূর্তিতেই অশ্বিনী কুমারদের তাই অশ্বমুখ দেখা যায়। এঁদের ভেতর যিনি অগ্রজ, তার নাম নাসত্য। যিনি অনুজ তার নাম দস্র।

বিশেষত্ব
তারা চিকিৎসাবিদ্যায় সুপণ্ডিত হয়ে স্বর্গে চিকিৎসা করায় "স্বর্গবৈদ্য" উপাধি পান। তারা মাদ্রীসুত নকুল ও সহদেবের জনক।
বেদ অনুসারে দেবতাগণ মোট ৩৩ প্রকার - ৮ প্রকার বসু, ১১ প্রকার রুদ্র, ১২ প্রকার আদিত্য এবং ২ জন অশ্বিনীকুমার।
অশ্বিনীকুমারদ্বয় হলেন চিরযৌবন ও চিরায়ুর প্রতীক এবং সকল চিকিৎসকের আরাধ্য দেবতা।

২. ভরণী (Bharani)
দেবতাঃ যম
প্রতীকঃ যোনি
বৈশিষ্ট্যঃ শক্তি, সহনশীলতা
ভরণী নক্ষত্রঃ ভরণী ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান অনুসারে ২৮টি নক্ষত্রের দ্বিতীয় সদস্যা। প্রাচীন ঋগ্বেদের ঋষিরা একে ডাকতো 'যম', 'সংযম', 'সংবরন বা 'বিবস্বান নামে।
ভরণী নাক্ষত্রের দেবতা "যম", মৃত্যুর দেবতা, নিঃস্বাস, প্রশ্বাসের দেবতা। যম স্বার্থ ত্যাগ, নিয়মানুবর্তিতা, এবং সততার দেবতা।
ভরণী শব্দের অর্থ যা ভরণযোগ্য, পোষ্য, চাকর আশ্রিত বা যাহা দ্বারা ভরণ করা যায় অর্থাৎ জীবিকা অর্জন করা যায়। এই নক্ষত্র একদিকে ঐশ্বর্য্য, ভোগ, সাহস, উৎসাহ, বলবীর্যের কারক আর একদিকে যা কিছু শুভ, শুদ্ধ, সাধু, সত্যতার কারক।

যমদেব - মৃত্যু ও ন্যায়বিচারের দেবতা
যম বা যমরাজ বা কাল বা ধর্মরাজ হলেন মৃত্যু ও ন্যায়বিচারের হিন্দু দেবতা, এবং তাঁর বাসস্থান যমলোক বা যমপুরী।

জন্ম ও পরিচয়
বিভিন্ন পুরাণ তাঁকে সূর্য দেবতা (বা বিবস্বান) এবং সংজ্ঞার পুত্র এবং যমী (যমুনার) যমজ ভ্রাতা বলে বর্ণনা করে। বৈদিক মতবাদ অনুযায়ী ধারনা করা হয় যে, যম হচ্ছেন প্রথম নশ্বর ব্যক্তি যিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন এবং স্বর্গীয় আবাসে গমন করেছিলেন; যার ফলে তিনি মৃত্যুর দেবতায় উত্তীর্ণ হন।

রূপ ও বাহন
যম দশ দিকপালের অন্যতম ও দক্ষিণ দিকের রক্ষক হিসেবে নিযুক্ত, তাঁর নামানুসারেই দক্ষিণদিক যাম্য নামে পরিচিত। যম কৃষ্ণবর্ণ, খর্বকায়, খঞ্জ, মহিষবাহন এবং তিনি আত্মাকে দেহ হতে নিষ্কাশন করার জন্য একটি পাশ ও একটি দণ্ড (কালদণ্ড) বহন করেন।

ঋগ্বেদে যম
ঋগ্বেদ-এর ১০ম মন্ডলস্থ ১০ম সূক্তে যমকে ঋষি হিসেবে পাওয়া যায়। এ সূক্তে সহঋষিকা ও সহোদরা যমীর সাথে যম এক-থেকে-বহু মানব/মানবী সৃজনের প্রাথমিক সমস্যা নিয়ে তর্কান্তে সহোদরার সন্তানার্থে সহবাস প্রার্থণা প্রত্যাখ্যান করে।

সহকারী ও কাজ
তাঁর সহকারী চিত্রগুপ্ত, পাপ-পুণ্যের হিসাব রক্ষক দেবতা। ঋগ্বেদে তার সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিনি মানবজাতিকে বাস করার জন্য একটি জায়গা খুঁজে বের করতে সাহায্য করেছেন, এবং প্রত্যেক ব্যক্তিকে তাদের পছন্দমত পথ বেছে নেবার বা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা প্রদান করেছেন।
যম শুধুমাত্র মৃত্যুর দেবতা নন, তিনি ন্যায়বিচার, নিয়মানুবর্তিতা এবং ধর্মের প্রতীক হিসেবেও পূজিত।

৩. কৃত্তিকা (Krittika)
দেবতাঃ অগ্নি
প্রতীকঃ ছুরি
বৈশিষ্ট্যঃ তেজস্বী, কঠোর
কৃত্তিকা নক্ষত্র
নীলাম্বরী কৃত্তিকা (Pleiades) গুচ্ছনক্ষত্র। আন্তর্জাতিকভাবে এর পরিচিতি Pleiades নামে। ঋগ্বেদের ঋষিরা চিনতেন অগ্নি (দিক) বলে আর সিদ্ধান্তজ্যোতিষ-এ এটি কৃত্তিকা নামে পরিচিত।

কৃত্তিকা দেবতা অগ্নি।
ভগবান অগ্নি নিজেকে পুড়িয়ে খাবার, আলো, উত্তাপ সৃষ্টি করে অপরের সেবায় ব্যবহার হয়।
কৃত্তিকা নক্ষত্র নেতিবাচকতাকে পুড়িয়ে দেয়, যা মিশ্রিত হয় তা শুদ্ধ করে, এবং যা এখনও পাকা হয়নি তা রান্না বা প্রস্তুত করে। এই নক্ষত্র যুদ্ধ, যুদ্ধ এবং বিবাদের নিয়ম করে।

ঋগ্বেদে অগ্নি
পুরো ঋগ্বেদ জুড়েই ছড়িয়ে রয়েছে অগ্নি নামধারী কৃত্তিকার প্রতি অজস্র প্রার্থনা। পৃথিবী থেকে খালি চোখে অগ্নিকুণ্ডলীর মত দেখায় তাই ঋষিদের মননে এ অগ্নি বহু নামে অভিহিত।

অগ্নির বিভিন্ন নাম
জাতবেদা (জীবনশক্তি বিদিত/জ্ঞাত), হুতাশন (যজ্ঞাহুতি ভক্ষক), বহ্নি (যজ্ঞের হবি বাহক), তনুনপাৎ (জীবদেহের উত্তাপরূপী অগ্নি), নরাশংস (মানব প্রশংসিত), দাবানল (বনের আগুন), শম্পাৎ (বিদ্যুতাগ্নি), বারবানল বা বড়বা (সমুদ্র-বারিতে প্রজ্বলিত অগ্নি), শমী (বনস্পতির দহন), জমদগ্নি (ক্রোধাগ্নি), চিত্রভানু (সূর্যরশ্মি)।

অগ্নিদেব - আগুনের দেবতা
অগ্নি হলো একটি সংস্কৃত শব্দ যার অর্থ হলো আগুন । তিনি দশদিকপাল দেবতার অন্যতম অগ্নিকোণস্থ দেবতা।
অগ্নি আগুনের দেবতা এবং যজ্ঞের গ্রহীতা। অগ্নিকে দেবতাদের বার্তাবহ মনে করা হয়। তাই হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, যজ্ঞকালে অগ্নির উদ্দেশ্যে আহুতি প্রদান করলে সেই আহুতি দেবতাদের কাছে পৌঁছে যায়।
অগ্নি চিরতরুণ, কারণ আগুন প্রতিদিন নতুন করে জ্বালানো হয় এবং তিনি অমর। তার দুই বা তিনটি মুখ। তার চার হাত। তার অস্ত্রের নাম আগ্নেয়াস্ত্র।

বৈদিক গুরুত্ব
ঋগ্বেদের ৩৩ জন দেবতার মধ্যে দেবতাদের রাজা 'ইন্দ্র'-কে শক্র বলা হয়। তিনি এই ৩৩ দেবতার সর্বপ্রথম জন। তাঁর পরেই রয়েছেন অগ্নি। পৌরাণিক যুগে দেবতাদের বৈশিষ্ট্যে বিবর্তন দেখা যায়। সে যুগে ইন্দ্র, অগ্নির প্রাধান্য হ্রাস পেয়ে অপ্রধান দেবতা যেমন বিষ্ণু, শিব প্রভৃতির প্রাধান্য বৃদ্ধি পায়।

পৌরাণিক বর্ণনা
মার্কণ্ডেয় পুরাণে বলা হয়েছে: "হে পাবক, তোমার দ্বারাই সব কিছু সৃষ্ট হয়, তোমার দ্বারাই বর্ধিত হয়, তোমাতেই সকলের উদ্ভব, অন্তকালে তোমাতেই লীন হয়"।
অগ্নি শুধুমাত্র আগুনের দেবতা নন। তিনি পবিত্রতা, শুদ্ধিকরণ –এর দেবতা। অগ্নি যজ্ঞের মাধ্যমে দেবতা ও মানুষের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী হিসেবে বৈদিক ধর্মে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করেন।

৪. রোহিণী (Rohini)
দেবতাঃ ব্রহ্মা
প্রতীকঃ গরু
বৈশিষ্ট্যঃ সৃষ্টিশীল, আকর্ষণীয়

রোহিণী নক্ষত্র
ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান অনুসারে ২৮ নক্ষত্রের ৪র্থ এ সদস্যার প্রাচীন তথা ঋগ্বেদের ঋষিদের দেয়া নাম বিধাতা, প্রজাপতি, ব্রহ্মা, স্বপস্যমান বা স্বয়ম্ভূ, সূনুর্দ্দাধার (সূনু=সৃষ্টি+দায়+আধার) ইত্যাদি, সৈন্ধান্তিকরা যাকে রোহিণী নামে চিহ্নিত করছে।

ধারণা করা হয় রোহিণী নক্ষত্র প্রজাপতি ব্রহ্মার বাসস্থান। রোহ শব্দের অর্থ বৃদ্ধি, বিকাশ, উচ্চ তাপমাত্রা অর্জন। রোহিণীর আভিধানিক অর্থ লাল গরু এবং এই নক্ষত্রের দেবতা হলেন ভগবান ব্রহ্মা।
রোহণ শব্দ থেকে রোহিনী। রোহণ অর্থ উত্থান, উঠা, সৃষ্টি। কাজেই সৃষ্টির জন্য যা কিছু দরকার সব বস্তু ও জীব এই নক্ষত্রের কারক। যেমন পশু, পাখি, মানুষ।
রোহিণী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম নক্ষত্র। এই নক্ষত্রের দেবতা হলেন ভগবান ব্রহ্মা, যিনি প্রকৃতির স্রষ্টা। রোহিণী নক্ষত্রের সম্পর্ক কৃষি ও সভ্যতার বিকাশের সঙ্গেও জড়িত।

ব্রহ্মা - সৃষ্টিকর্তা দেবতা
ব্রহ্মা সাধারণত চতুর্মুখ ও চতুর্বাহু বিশিষ্ট, শ্মশ্রুমণ্ডিত, রক্তাভ বা স্বর্ণাভ দেহধারী হিসেবে বর্ণিত হন। তার চার হাত চারবেদ এবং চার দিককে প্রকাশ করে। তিনি রক্তপদ্মে অবস্থান করেন এবং হংস (হাঁস, রাজহাঁস বা সারস) তার বাহন।
সাধারণত, দেবী সাবিত্রী ব্রহ্মার স্ত্রী হিসেবে উল্লেখিত হন এবং ব্রহ্মার সৃজন শক্তি ও ব্রহ্মার জ্ঞান-এর নারীরূপ তিনি।

ত্রিমূর্তিতে ব্রহ্মার স্থান
ব্রহ্মা হিন্দুধর্মের প্রধান তিন দেবতার একজন; অন্য দুজন বিষ্ণু ও শিব। বিশ্বের সৃষ্টিকর্তা 'প্রজাপতি' নামেই তিনি সমধিক পরিচিত।
তার প্রতিটি মুখ চারটি দিককে নির্দেশ করে। তার চারমুখ থেকে চার বেদের সৃষ্টি। তার হাতে কোনো অস্ত্র নেই, বরং তিনি জ্ঞান মুদ্রা এবং সৃষ্টি মুদ্রা ধারণ করেন।

সৃষ্টিতত্ত্ব
প্রাচীন পুরাণগুলো বর্ণনা করে যে, তখন কিছুই ছিল না, কিন্তু কারণ সমুদ্র ছিল। যেখান থেকে হিরণ্যগর্ভ নামে স্বর্ণডিম্ব নির্গত হয়। ডিম্বটি ভেঙে উন্মুক্ত হলো ব্রহ্মা, যিনি নিজেকে এর মধ্যে সৃষ্টি করেছেন, প্রকাশিত হয়েছেন (স্বয়ম্ভু নাম লাভ করেছেন)।
ভাগবত পুরাণে উক্ত হয়েছে যে, ব্রহ্মা "হরি" (বিষ্ণু) এর নাভিকমল হতে কাল এবং মহাবিশ্বের জন্ম মুহূর্তে আবির্ভূত হন।

বর্তমান অবস্থা
বর্তমান যুগে হিন্দুধর্মে, ব্রহ্মা তেমন জনপ্রিয় দেবতা নন। ত্রিমূর্তির অন্য দেবতা থেকে তার গুরুত্ব কম। প্রাচীন শাস্ত্রসমূহে ব্রহ্মার উল্লেখ থাকলেও, ভারতবর্ষে ব্রহ্মা প্রধান দেবতা হিসেবে খুব কমই পূজিত হন। ভারতে খুব কমই দেবতা ব্রহ্মার মন্দির রয়েছে, তবে রাজস্থানের পুষ্করের ব্রহ্মা মন্দির খুব প্রসিদ্ধ।

রোহিণী নক্ষত্রে জন্মগ্রহণকারীদের বৈশিষ্ট্য
রোহিণী নক্ষত্রে জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তি প্রকৃতি প্রেমী এবং প্রকৃতির উপাসক। এই নক্ষত্রের মানুষের চোখ খুব সুন্দর হয়। সুন্দর হওয়া ছাড়াও রোহিণী নক্ষত্রে জন্মগ্রহণকারীরা মুখে মাধুর্য মিশিয়ে কথা বলেন। রোহিণী নক্ষত্রের মানুষ কল্পনাপ্রবণ ও সৃজনশীল প্রকৃতির হয়।
ব্রহ্মা সৃষ্টিকর্তা হিসেবে রোহিণী নক্ষত্রের সাথে গভীরভাবে যুক্ত । এই নক্ষত্র সৃষ্টি, বৃদ্ধি, উন্নতি ও নেতৃত্বের প্রতীক।


৫. মৃগশিরা - মৃত্যু (Mrigashira)
দেবতাঃ সোম (চন্দ্র)
প্রতীকঃ হরিণের মাথা
বৈশিষ্ট্যঃ অনুসন্ধানী, কৌতূহলী

মৃগশিরা নক্ষত্র
পরস্পর একান্ত কাছাকাছি ক্ষীণপ্রভ ৩টি তারকা মিলে গঠন করেছে ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানের ২৮ নক্ষত্রের ৫ম এ সদস্যাকে। ঋগ্বেদের ঋষিদের দেয়া নাম যজ্ঞসোম,সৈন্ধান্তিকরা যাকে মৃগশিরা নামে চিহ্নিত করছে।

ঋগ্বেদীয় দেবদেবী ইন্দ্র, অগ্নি, সোম, বিশ্বদেব, অশ্বিদ্বি, মরুৎগণ, বরুণ প্রমুখ দেবতা সূক্ত-দ্রষ্টা ঋষিদের মননে যথাক্রমে জ্যেষ্ঠা, কৃত্তিকা, মৃগশিরা, উত্তরাষাঢ়া, অশ্বিণী, শতভিষা, স্বাতী প্রভৃতি।

সোম বা চন্দ্র দেবতা
চন্দ্র হলেন একজন দেবতা যিনি চাঁদের অধিপতি। তিনি সুদর্শন, সুপুরুষ, দ্বি-বাহুযুক্ত । তার এক হাতে অস্ত্র ও অন্য হাতে পদ্ম রয়েছে। তিনি তার দশটি শ্বেত ঘোড়ার রথে চড়ে রাত্রে আকাশে উদিত হন।
তিনি আরও অনেক নামে পরিচিত, যেমনঃ সোম, ইন্দু (উজ্জ্বল বিন্দু), অত্রিসুত (অত্রির পুত্র), শচীন, তারাধিপতি (নক্ষত্রের প্রভু), বজ্রজ্বালাপতি (অরুণাসূরের অসুরা বোনের স্বামী) ও নিশাকর (রাত নির্মাণকারী)। তার নামানুসারে সপ্তাহের একটি দিন হল সোমবার।

পৌরাণিক কাহিনী
হিন্দু পুরাণ অনুসারে চন্দ্র অত্রির পুত্র ও সপ্তবিংশতী নক্ষত্রের ও বজ্রজ্বালা নামক অসুরার স্বামী। দক্ষের ২৭টি কন্যা ও অরুণাসূরের অসুরা বোনকে ইনি বিবাহ করেন। এর মধ্যে রোহিণী ছিলেন তাঁর প্রিয়তমা পত্নী। এই কারণে দক্ষের অন্যান্য কন্যারা দক্ষের কাছে স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। দক্ষ প্রথমে চন্দ্রকে এরূপ পক্ষপাতিত্ব থেকে বিরত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু পরে ব্যর্থ হয়ে চন্দ্রকে পুত্রকন্যাহীন ও যক্ষ্মারোগাগ্রস্ত হওয়ার অভিশাপ দেন। এই অভিশাপে ভীত হয়ে কন্যারা পিতাকে অভিশাপ ফিরিয়ে নিতে অনুরোধ করলে দক্ষ বলেন যে, চন্দ্র একপক্ষে ক্ষয়প্রাপ্ত হবেন এবং অন্য পক্ষে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে আগের রূপ পাবেন। চাঁদের এই দুই পক্ষ কৃষ্ণ ও শুক্ল নামে পরিচিত।

বৈদিক গুরুত্ব
দেবতাদের রাজা 'ইন্দ্র'-কে শক্র বলা হয়, তিনি এই ৩৩ দেবতার সর্বপ্রথম জন। তাঁর পরেই রয়েছেন অগ্নি। এই দুই দেবভ্রাতার জোড়কে সাধারণত ইন্দ্র-অগ্নি, মিত্র-বরুণ ও সোম-রুদ্র বলা হয়।
চন্দ্র বা সোম (চাঁদের দেবতা) হিসেবে তিনি বৈদিক দেবমণ্ডলীতে বিশেষ স্থান অধিকার করেন।

জ্যোতিষশাস্ত্রে সোম
হিন্দু ক্যালেন্ডারে সোমবার শব্দের মূল হল সোম। সোম হল রাশিচক্র ব্যবস্থার নবগ্রহের অংশ। চাঁদের দেবতা এবং এর জ্যোতিষশাস্ত্রীয় তাত্পর্য বৈদিক যুগের প্রথম দিকে ঘটেছিল এবং বেদে লিপিবদ্ধ হয়েছিল।

সোমনাথ মন্দির
সোমনাথ শব্দটির অর্থ "চন্দ্র দেবতার রক্ষাকর্তা"। চন্দ্র তাঁর স্ত্রী রোহিণীর প্রতি অত্যধিক আসক্তি বশত তাঁর অন্য ছাব্বিশ স্ত্রীকে উপেক্ষা করতে থাকেন। এই কারণে দক্ষ তাঁকে ক্ষয়িত হওয়ার অভিশাপ দেন। প্রভাস তীর্থে চন্দ্র, শিবের আরাধনা করলে শিব তাঁর অভিশাপ অংশত নির্মূল করেন। এরপর ব্রহ্মার উপদেশে কৃতজ্ঞতাবশত চন্দ্র সোমনাথে একটি স্বর্ণ শিবমন্দির নির্মাণ করেন।

সোম বা চন্দ্র দেবতা শুধুমাত্র চাঁদের অধিপতি নন, তিনি সময়, জোয়ার-ভাটা, কৃষি এবং মানুষের মনের উপরও প্রভাব বিস্তারকারী হিসেবে বৈদিক ও পৌরাণিক সাহিত্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করেন।

Note:
সূক্ত-দ্রষ্টা ঋষি
সূক্ত-দ্রষ্টা ঋষি হলেন সেই মহান ঋষিগণ যাঁরা বৈদিক মন্ত্র বা সূক্তগুলি "দর্শন" বা উপলব্ধি করেছিলেন।

মূল অর্থ:
সূক্ত = বৈদিক স্তোত্র বা মন্ত্র
দ্রষ্টা = যিনি দেখেন, উপলব্ধি করেন
ঋষি = জ্ঞানী মুনি

বৈশিষ্ট্য:
১. রচয়িতা নন, দ্রষ্টা:
হিন্দু দর্শন অনুসারে বেদের মন্ত্রগুলি কোনো মানুষের রচনা নয়
এগুলি অনাদি, শাশ্বত সত্য ঋষিগণ এই মন্ত্রগুলি গভীর ধ্যানে "দেখেছেন" বা উপলব্ধি করেছেন
২. দিব্যদৃষ্টি:

তাঁরা তপস্যা ও ধ্যানের মাধ্যমে দিব্যজ্ঞান লাভ করেছিলেন আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বৈদিক সত্য উপলব্ধি করেছিলেন
৩. বেদের সংরক্ষক:
তাঁরা এই মন্ত্রগুলি মুখে মুখে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে প্রচার করেছেন। শ্রুতি পরম্পরায় বেদ সংরক্ষিত হয়েছে

প্রধান সূক্ত-দ্রষ্টা ঋষিগণঃ
সপ্তর্ষি (সাত মহান ঋষি)ঃ বশিষ্ঠ, বিশ্বামিত্র, জমদগ্নি, ভরদ্বাজ, গৌতম, কশ্যপ, অত্রি, অঙ্গিরা, ভৃগু, কণ্ব, গৃৎসমদ প্রমুখ ঋগ্বেদের বিভিন্ন মণ্ডল বিভিন্ন ঋষি পরিবার দ্বারা দৃষ্ট।

গুরুত্ব:
এই ঋষিগণ শুধুমাত্র মন্ত্রদ্রষ্টাই নন, তাঁরা:
ভারতীয় আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের ভিত্তি স্থাপন করেছেন
দেবতাদের সাথে মানুষের সংযোগ স্থাপন করেছেন
জ্ঞান, ধর্ম ও নৈতিকতার পথ প্রদর্শক
অর্থাৎ সূক্ত-দ্রষ্টা ঋষিরা হলেন সেই মহান আত্মাগণ যাঁরা দিব্যদৃষ্টির মাধ্যমে বৈদিক জ্ঞান উপলব্ধি করে মানবজাতির কাছে তা প্রচার করেছেন।


৬. আর্দ্রা (Ardra)
দেবতা: রুদ্র
প্রতীক: জলবিন্দু বা অশ্রুবিন্দু, কখনও হীরক
বৈশিষ্ট্য: আবেগপ্রবণ, পরিবর্তনশীল
অধিপতি গ্রহ: রাহু
রাশি: মিথুন রাশি
যোগতারা: বেটেলজিউস
"আর্দ্রা" শব্দের অর্থ "ভেজা" বা "আর্দ্র" - যা বৃষ্টি, অশ্রু এবং পরিশুদ্ধির প্রতীক। এই নক্ষত্র জীবনের ঝড়-ঝঞ্ঝার মধ্য দিয়ে পরিশুদ্ধি ও বৃদ্ধির প্রতীক।
মূল তথ্য: রুদ্র (ঝড়ের দেবতা, শিবের বৈদিক রূপ)।রুদ্র হলেন একজন ঋগ্বৈদিক দেবতা, যিনি বায়ু বা ঝঞ্ঝার দেবতার সাথে সংযুক্ত, এবং শিকারের দেবতা। 'রুদ্র' নামটিকে অনুবাদ করলে দাঁড়ায় 'গর্জনকারী'। ঋগ্বেদে, রুদ্রকে "অমিত ক্ষমতাশালী" হিসাবে অর্চনা করা হয়েছে।
একাদশ রুদ্র
একাদশ রুদ্র দ্বারা হিন্দু দেবতা রুদ্রের (শিব) অনুসারী এগারো দেবতাকে বোঝায়। তাদেরকে কখনও কখনও মরুত (শিবের পুত্রগণ) বলে উল্লেখ করা হয়ে থাকে এবং কখনও কখনও সম্পূর্ণ আলাদা রূপে উপস্থাপন করা হয়।

বৈশিষ্ট্য:
১. আবেগপ্রবণতা: গভীর অনুভূতিশীল।
• তীব্র আবেগ প্রকাশ করে
• সহানুভূতিশীল প্রকৃতির
২. পরিবর্তনশীলতা:
• জীবনে আকস্মিক পরিবর্তন
• ঝড়ের মতো উত্থান-পতন
• রূপান্তরের ক্ষমতা
৩. অন্যান্য গুণাবলী:
• বুদ্ধিমান ও চিন্তাশীল
• গবেষণা ও অনুসন্ধানী মনোভাব
• কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা
• নতুন শুরু করার সাহস
রুদ্রের প্রভাব:
রুদ্র হলেন ধ্বংস ও পুনর্নির্মাণের দেবতা। তাই আর্দ্রা নক্ষত্রে জন্মগ্রহণকারীরা পুরাতনকে ভেঙে নতুন সৃষ্টি করতে পারে। সংকটের মধ্যেও শক্তি খুঁজে পায়। গভীরভাবে আধ্যাত্মিক অনুসন্ধানী।

৭. পুনর্বসু (Punarvasu)
• দেবতা: অদিতি (দেবমাতা, অসীমতার দেবী)
• প্রতীক: ধনুক বা তীর-তূণীর, কখনও ঘর/বাসস্থান
• অধিপতি গ্রহ: বৃহস্পতি (গুরু)
• রাশি: মিথুন ও কর্কট রাশি
• যোগতারা: পোলাক্স ও ক্যাস্টর (Pollux & Castor)
"পুনর্বসু" = পুনঃ + বসু = "পুনরায় ভালো হওয়া" বা "আবার আলো ফিরে আসা"
বৈশিষ্ট্য:
১. পুনর্জন্ম ও পুনরুদ্ধার:
• হারানো জিনিস ফিরে পাওয়ার ক্ষমতা
• ব্যর্থতার পর পুনরায় উঠে দাঁড়ানো
• জীবনে নতুন শুরু করার শক্তি
• রোগ থেকে সুস্থতা লাভ
২. আশাবাদী প্রকৃতি:
• সর্বদা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি
• কঠিন পরিস্থিতিতেও আশা হারায় না
• অন্যদের উৎসাহিত করার ক্ষমতা
• জীবনে আলোর সন্ধান করে
৩. অন্যান্য গুণাবলী:
• উদার ও দয়ালু হৃদয়
• পরিবার ও গৃহের প্রতি আসক্তি
• সন্তুষ্ট ও শান্তিপ্রিয়
• ধৈর্যশীল ও ক্ষমাশীল
• বন্ধুত্বপূর্ণ ও সামাজিক
অদিতির প্রভাব: অদিতি সকল দেবতার মাতা (১২ আদিত্যের জননী)। অদিতি অসীমতা ও মুক্তির প্রতীক। মাতৃত্ব, পরিচর্যা ও সুরক্ষার দেবী। সীমাহীন করুণা ও ক্ষমার প্রতীক।
তাই পুনর্বসু নক্ষত্রে জন্মগ্রহণকারীরা মাতৃসুলভ স্নেহশীল, রক্ষণশীল ও যত্নশীল। তারা মুক্তি ও স্বাধীনতা পছন্দ করেন। অন্যদের সাহায্য করতে আগ্রহী করেন।
বিশেষ উল্লেখ: শ্রীরাম ও শ্রীকৃষ্ণ উভয়েই পুনর্বসু নক্ষত্রে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে কিছু মত অনুসারে জানা যায়, যা এই নক্ষত্রের শুভত্ব ও পবিত্রতার প্রমাণ।
প্রতীকের তাৎপর্য:
• ধনুক: লক্ষ্যে পৌঁছানোর ক্ষমতা, পুনরায় চেষ্টা করার শক্তি
• ঘর: নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা, পরিবারে ফিরে আসা
এই নক্ষত্র আশা, পুনর্জীবন এবং অন্ধকারের পর আলো ফিরে আসার প্রতীক।

৮. পুষ্য (Pushya)
• দেবতা: বৃহস্পতি (দেবগুরু, জ্ঞান ও ধর্মের দেবতা)
• প্রতীক: ফুল, গোধন (গরুর স্তন), বা তীরের ফলা
• অধিপতি গ্রহ: শনি
• রাশি: কর্কট রাশি
• যোগতারা: ডেল্টা ক্যান্সারি (Delta Cancri)
পুষ্য" = "পুষ্টি দেওয়া", "লালন-পালন করা", "বৃদ্ধি করা"
বৈশিষ্ট্য:
১. পুষ্টিদাতা ও পালনকারী:
• অন্যদের বৃদ্ধি ও উন্নতিতে সহায়তা করে
• লালন-পালনের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি
• পরিচর্যা ও যত্নশীল প্রকৃতি
• খাদ্য, শিক্ষা ও জ্ঞান প্রদান করে
২. শুভত্ব ও পবিত্রতা:
• সর্বাধিক শুভ নক্ষত্রগুলির একটি
• শুভ কাজের জন্য অত্যন্ত উপযুক্ত
• আধ্যাত্মিক বৃদ্ধির জন্য আদর্শ
• ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য পবিত্র
৩. অন্যান্য গুণাবলী:
• ধৈর্যশীল ও সহনশীল
• দায়িত্বশীল ও নির্ভরযোগ্য
• ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধে বিশ্বাসী
• বিনয়ী ও শান্তিপ্রিয়
• জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান
• সমাজসেবী মনোভাব
বৃহস্পতির প্রভাব:
বৃহস্পতি (গুরু) হলেন দেবতাদের গুরু ও পুরোহিত। জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও ধর্মের দেবতা। তিনি শিক্ষক ও পথপ্রদর্শক। তিনি ন্যায়বিচার ও নৈতিকতার প্রতীক।
তাই পুষ্য নক্ষত্রে জন্মগ্রহণকারীরা শিক্ষক, পরামর্শদাতা বা গুরু হিসেবে উৎকৃষ্ট। ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক বিষয়ে আগ্রহী হয়ে থাকেন । এদের নৈতিক মূল্যবোধে দৃঢ়। এরা জ্ঞান বিতরণে আগ্রহী ।
শুভত্বের কারণ:
পুষ্য নক্ষত্রকে "সর্বশ্রেষ্ঠ শুভ নক্ষত্র" বলা হয় কারণ:
• এই নক্ষত্রে শুরু করা কাজ সফল হয়
• বিবাহ, গৃহপ্রবেশ, নতুন ব্যবসা শুরুর জন্য আদর্শ
• আধ্যাত্মিক সাধনার জন্য অত্যন্ত উপযুক্ত
• এই দিনে দান-ধর্ম করলে বিশেষ ফল পাওয়া যায়
প্রতীকের তাৎপর্য:
• ফুল: সৌন্দর্য, পবিত্রতা, ভক্তি
• গোধন/স্তন: পুষ্টি, মাতৃত্ব, লালন-পালন, সমৃদ্ধি
• তীরের ফলা: লক্ষ্যভেদ, সুরক্ষা
বিশেষত্ব:
পুষ্য যোগ: যখন বৃহস্পতি কর্কট রাশিতে থাকে এবং চন্দ্র পুষ্য নক্ষত্রে থাকে, তখন এটি অত্যন্ত শুভ সময় বলে বিবেচিত হয়।

৯. আশ্লেষা (Ashlesha)
• দেবতা: নাগ বা সর্পদেবতা (সর্পরাজ)
• প্রতীক: কুণ্ডলী পাকানো সাপ, চক্র
• অধিপতি গ্রহ: বুধ
• বৈশিষ্ট্য: রহস্যময়, বুদ্ধিমান
• রাশি: কর্কট রাশি
আশ্লেষা = "আলিঙ্গন", "জড়িয়ে ধরা", "সাপের কুণ্ডলী"।এটি সবচেয়ে জটিল ও শক্তিশালী নক্ষত্রগুলির মধ্যে একটি।
আধ্যাত্মিক তাৎপর্যঃ আশ্লেষা নক্ষত্র কুণ্ডলিনী শক্তির সাথে যুক্ত। মানব দেহের মেরুদণ্ডের গোড়ায় সুপ্ত শক্তি নির্দেশ থাকে। আধ্যাত্মিক জাগরণের প্রতীক, যা গভীর ধ্যান ও তপস্যার মাধ্যমে জাগরিত হয়।
বৈশিষ্ট্যঃ ১. রহস্যময় প্রকৃতি:
• গভীর ও জটিল ব্যক্তিত্ব
• গোপনীয়তা পছন্দ করে
• অন্তর্মুখী ও সংরক্ষিত
• মনের গভীর রহস্য বুঝতে পারে
• তান্ত্রিক ও গুহ্য বিদ্যায় আগ্রহ
২. তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তা:
• অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও চতুর
• মনোবিজ্ঞান বুঝতে পারদর্শী
• কৌশলী ও পরিকল্পনাকারী
• বিশ্লেষণী ক্ষমতা প্রখর
• দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম
৩. অন্যান্য গুণাবলী:
• তীব্র অন্তর্দৃষ্টি
• প্রতিরক্ষামূলক প্রবৃত্তি
• আত্মনির্ভর ও স্বাধীনচেতা
• সন্দেহপ্রবণ কিন্তু সতর্ক
• প্রতিশোধপরায়ণ হতে পারে
• গভীর আবেগ লুকিয়ে রাখে
নাগ দেবতার প্রভাব:
• নাগ বা সর্পদেবতা কুণ্ডলিনী শক্তি ও আধ্যাত্মিক জাগরণ প্রতিনিধিত্ব করে। কুণ্ডলিনী শক্তি ও আধ্যাত্মিক জাগরণ ঘটে।
• জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও রহস্য
• পুনর্জন্ম ও রূপান্তর (খোলস ত্যাগ)
• বিষ ও ঔষধ উভয়ই
• সুরক্ষা ও ধ্বংস উভয় ক্ষমতা
তাই আশ্লেষা নক্ষত্রে জন্মগ্রহণকারীরাঃ শক্তিশালী অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন, আধ্যাত্মিক শক্তির প্রতি আকৃষ্ট হয়। নিজেকে রূপান্তরিত করার ক্ষমতা রাখে। এরা সুরক্ষামূলক কিন্তু বিপদে আক্রমণাত্মক।
দ্বৈত প্রকৃতিঃ
আশ্লেষা নক্ষত্রের দুটি দিকঃ
ইতিবাচক দিক:
• গভীর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা
• নিরাময় ও চিকিৎসার ক্ষমতা
• সুরক্ষা প্রদান করে
• আধ্যাত্মিক শক্তি
• মনস্তাত্ত্বিক অন্তর্দৃষ্টি
নেতিবাচক দিক:
• অতিরিক্ত সন্দেহপ্রবণতা
• প্রতিশোধপরায়ণতা
• ম্যানিপুলেটিভ হতে পারে
• অতিরিক্ত গোপনীয়তা
• বিশ্বাস করতে অসুবিধা
প্রতীকের তাৎপর্য:
• কুণ্ডলী পাকানো সাপ: শক্তি সঞ্চয়, সতর্কতা, সুরক্ষা
• সাপের খোলস ত্যাগ: পুনর্জন্ম, রূপান্তর, পুরাতন ত্যাগ করা
• বিষ: ক্ষতি করার ক্ষমতা কিন্তু ঔষধও হতে পারে

১০. মঘা (Magha)
দেবতাঃ পিতর
প্রতীকঃ সিংহাসন
বৈশিষ্ট্যঃ নেতৃত্ব, ঐতিহ্য

১১. পূর্ব ফল্গুনী (Purva Phalguni)
দেবতাঃ ভগ
প্রতীকঃ দোলা
বৈশিষ্ট্যঃ আনন্দপ্রিয়, সৃজনশীল

১২. উত্তর ফল্গুনী (Uttara Phalguni)
দেবতাঃ অর্যামান
প্রতীকঃ বিছানা
বৈশিষ্ট্যঃ সহানুভূতিশীল, বন্ধুত্বপূর্ণ

১৩. হস্ত (Hasta)
দেবতাঃ সাভিতৃ
প্রতীকঃ হাত
বৈশিষ্ট্যঃ দক্ষ, চতুর

১৪. চিত্রা (Chitra)
দেবতাঃ বিশ্বকর্মা
প্রতীকঃ মুক্তা
বৈশিষ্ট্যঃ রূপসজ্জা, নান্দনিকতা

১৫. স্বাতি (Swati)
দেবতাঃ বায়ু
প্রতীকঃ অঙ্কুর
বৈশিষ্ট্যঃ স্বাধীন, নমনীয়.

১৬. বিশাখা (Vishakha)
দেবতাঃ ইন্দ্র-অগ্নি
প্রতীকঃ ধনুক
বৈশিষ্ট্যঃ উচ্চাকাঙ্ক্ষী, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ

১৭. অনুরাধা (Anuradha)
দেবতাঃ মিত্র
প্রতীকঃ পদ্মফুল
বৈশিষ্ট্যঃ বন্ধুত্বপূর্ণ, আনুগত্য

১৮. জ্যেষ্ঠা (Jyeshtha)
দেবতাঃ ইন্দ্র
প্রতীকঃ কানঝুমকা
বৈশিষ্ট্যঃ কর্তৃত্ব, অভিজ্ঞ

১৯. মূলা (Mula)
দেবতাঃ নিরৃতি, প্রতীক: গিঁট
বৈশিষ্ট্যঃ গভীর, অনুসন্ধানী

২০. পূর্বাষাঢ়া (Purva Ashadha)
দেবতাঃ অপ্সরা
প্রতীকঃ হাতির দাঁত
বৈশিষ্ট্যঃ নির্ভীক, আশাবাদী

২১. উত্তরাষাঢ়া (Uttara Ashadha)
দেবতাঃ বিশ্বদেব
প্রতীকঃ হাতি
বৈশিষ্ট্যঃ বিজয়ী, স্থিতিশীল

২২. অভিজিৎ (Abhijit)
(অনেক তালিকায় ২৮তম, অনেক সময় বাদ দেওয়া হয়)

২৩. শ্রবণা (Shravana)
দেবতাঃ বিষ্ণু, প্রতীক: কান
বৈশিষ্ট্যঃ মনোযোগী, শ্রবণক্ষম

২৪. ধনিষ্ঠা (Dhanishta)
দেবতাঃ অষ্টবসু
প্রতীকঃ ড্রাম
বৈশিষ্ট্যঃ সংগীতপ্রেমী, সামাজিক

২৫. শতভিষা (Shatabhisha)
দেবতাঃ বরুণ, প্রতীক: বৃত্ত
বৈশিষ্ট্যঃ নিরাময়কারী, রহস্যময়

২৬. পূর্ণাভাদ্র (Purva Bhadrapada)
দেবতাঃ অজ একপাদ, প্রতীক: তরবারি
বৈশিষ্ট্যঃ আদর্শবাদী, গভীর

২৭. উত্তরাভাদ্র (Uttara Bhadrapada)
দেবতাঃ অহিভৃৎ, প্রতীক: যমজ বিছানা
বৈশিষ্ট্যঃ স্থিতিশীল, সহানুভূতিশীল

২৮. রেবতী (Revati)
দেবতাঃ পুষান
প্রতীকঃ মাছ
বৈশিষ্ট্যঃ সুরক্ষাদাতা, কোমল

* কখনও কখনও অভিজিৎ নক্ষত্রকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তখন মোট নক্ষত্র হয় ২৮টি।

ভারতীয় নক্ষত্রসমূহের অবস্থান কোন zodiac sign অনুসারেঃ

বৈদিক নক্ষত্র ----প্রধানত যে রাশিতে অবস্থিত (Western Zodiac Sign)
অশ্বিনী (Ashwini) মেষ (Aries)
ভরণী (Bharani) মেষ (Aries)
কৃত্তিকা (Krittika) মেষ (Aries) ও বৃষ (Taurus)
রোহিণী (Rohini) বৃষ (Taurus)
মৃগশিরা (Mrigashira) বৃষ (Taurus) ও মিথুন (Gemini)
আর্দ্রা (Ardra) মিথুন (Gemini)
পুনর্বসু (Punarvasu) মিথুন (Gemini) ও কর্কট (Cancer)
পুষ্য (Pushya) কর্কট (Cancer)
আশ্লেষা (Ashlesha) কর্কট (Cancer)
মঘা (Magha) সিংহ (Leo)
পূর্ব ফল্গুনী (Purva Phalguni) সিংহ (Leo)
উত্তর ফল্গুনী (Uttara Phalguni) সিংহ (Leo) ও কন্যা (Virgo)
হস্ত (Hasta) কন্যা (Virgo)
চিত্রা (Chitra) কন্যা (Virgo) ও তুলা (Libra)
স্বাতি (Swati) তুলা (Libra)
বিশাখা (Vishakha) তুলা (Libra) ও বৃশ্চিক (Scorpio)
অনুরাধা (Anuradha) বৃশ্চিক (Scorpio)
জ্যেষ্ঠা (Jyeshtha) বৃশ্চিক (Scorpio)
মূলা (Mula) ধনু (Sagittarius)
পূর্বাষাঢ়া (Purva Ashadha) ধনু (Sagittarius)
উত্তরাষাঢ়া (Uttara Ashadha) ধনু (Sagittarius) ও মকর (Capricorn)
শ্রবণা (Shravana) মকর (Capricorn)
ধনিষ্ঠা (Dhanishta) মকর (Capricorn) ও কুম্ভ (Aquarius)
শতভিষা (Shatabhisha) কুম্ভ (Aquarius)
পূর্বভাদ্রপদ (Purva Bhadrapada) কুম্ভ (Aquarius) ও মীন (Pisces)
উত্তরভাদ্রপদ (Uttara Bhadrapada) মীন (Pisces)
রেবতী (Revati) মীন (Pisces)

Note:
রোহিণী
রোহিণী আকাশের ১৪তম উজ্জ্বল প্রভার নক্ষত্র। এটি সূর্য থেকে ৬৫ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত বৃষরাশির উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান অনুসারে ২৮ নক্ষত্রের ৪র্থ এ সদস্যার প্রাচীন তথা ঋগ্বেদের ঋষিদের দেয়া নাম বিধাতা, প্রজাপতি, ব্রহ্মা, স্বপস্যমান বা স্বয়ম্ভূ, সূনুর্দ্দাধার(সূনু=সৃষ্টি+দায়+আধার) ইত্যাদি, সৈন্ধান্তিকরা যাকে রোহিণী নামে চিহ্নিত করছে। আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান অনুসারে এই নক্ষত্রের নাম Aldebaran (আলফা টাউরি)।

রোহিণী একটি লোহিত দানব, যা সূর্যের থেকেও ঠান্ডা। রোহিণীপৃষ্ঠের উষ্ণতা ৩৯০০K। এটির আয়তন সূর্র্যের প্রায় ৪৪ গুন্। নিজের অক্ষের চারদিকে একবার পাক খেতে রোহিণী ৫২০ দিন সময় নেয়।
স্পেস প্রোব পায়োনীয়ার ১০ রোহিণীর দিকে ধাবমান, যা আনুমানিক ২০ লক্ষ বছর পর রোহিণীর কাছাকাছি আসতে পারে।

আকাশে অবস্থান
বৃষ রাশি নক্ষত্রমন্ডলভুক্ত রোহিণী পৃথিবী থেকে উজ্জ্বল দেখালেও দূরত্ব ১৩০ আলোকবর্ষ আর দীপ্তি সূর্যের ৯০ গুণ। আকাশমন্ডলের ৩৬০ অংশের ৪০ থেকে ৫৩ অংশ ২০ কলা(কোণ পরিমাপ একক) পর্যন্ত এর বিস্তৃতি।

তথ্যসূত্রঃ উইকিপডিয়া

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:০০

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



পোস্টে সুন্দরভাবে বৈদিক জ্যোতিষশাস্ত্রে নক্ষত্র বা চন্দ্রনিবাস যা রাশিচক্রের ২৮টি ভাগ তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে
চাঁদ প্রায় এক দিন করে অবস্থান করে এবং প্রতিটি নক্ষত্র ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব ও ভাগ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। চন্দ্রই এই
নক্ষত্রগুলির অধিপতি, যা ব্যক্তির মানসিকতা ও মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক নির্দেশ করে। ব্যক্তির জন্মসময়কালে চাঁদ যে
নক্ষত্রে থাকে, তা তার ভাবনা, মা, এবং সামাজিক অবস্থানকে প্রভাবিত করে।
২৮টি নক্ষত্রের গুণ অনুযায়ি নামগুলিও বেশ সুন্দর যথা :-
অশ্বিনী , ভরণী, কৃত্তিকা, রোহিণী, মৃগশিরা, আর্দ্রা, পুনর্বসু, পুষ্যা, অশ্লেষা, মঘা, পূর্ব-ফাল্গুনী, উত্তর-ফাল্গুনী, হস্তা,
চিত্রা, স্বাতী, বিশাখা, অনুরাধা, জ্যেষ্ঠা, মূলা, পূর্বাষাঢ়া, উত্তরাষাঢ়া, শ্রবণা, ধনিষ্ঠা, শতভিষা, পূর্বভাদ্রপদ,
উত্তরভাদ্রপদ, রেবতী।

সূর্য রাশিচক্রের অধিপতি কিন্তু চন্দ্র নক্ষত্রমণ্ডলীর অধিপতি, বুঝাই যাচ্ছে চন্দ্রকেও যথাযোগ্য মর্যাদায় উদ্দিপ্ত
করেছেন মহামতি জ্যোতিষগন, জ্যোতিষশাস্ত্রে দেবতারা চন্দ্রকে এই সম্মান দিয়েছেন। বৈদিক জ্যোতিষশাস্ত্রের
মন্ত্রিসভায় যিনি রাণীর পদও ধারণ করে।জ্যোতিষিগন চন্দ্রের অবস্থানকে ব্যক্তির মানসিক অবস্থা এবং মায়ের
সঙ্গে সম্পর্ক বোঝার জন্য অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ছেন ।

প্রাগেতিহাসিক কাল থেকে সময়ের হিসেব রাখার প্রয়োজনেই চাঁদ-পৃথিবী-সূর্য-তারামন্ডল দিয়ে পরমকরুণাময়
সৃষ্টিকর্তা নির্মিত বিশাল পরিসরের এ প্রাকৃতিক ঘড়িটিকে মানুষ ব্যবহার ক'রে আসছে ।
সময়ের হিসেব রাখার প্রয়োজনে নিশাসঙ্গী চাঁদের গতিপথকে মানুষ বুঝতে চেয়ে আসছে কত আগে থেকে তা
এখনও অজানা । উল্লেখ্য, সম্প্রতি স্কটল্যান্ডের আবডীনশায়ারে এভারডীনশায়ারে অন্তত ১০,০০০ বছরের প্রাচীন
এক চন্দ্রনিবাসের সন্ধান পেয়েছে একদল প্রত্নতাত্ত্বিক যা প্রচলিত চন্দ্রনিবাসগুলোর প্রাচীনতমটির থেকেও ৫,০০০
বছর আগের ।

মানব সমাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্জনের মধ্যে সময়কে ধারণা করা এবং পরিমাপ করার ক্ষমতা বিশেষভাবে
উল্লেখযোগ্য, এবং মানুষের দ্বারা সময় কখন “সৃষ্টি” করা হয়েছে এই প্রশ্নটি সমাজের বিকাশ বোঝার জন্য অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। স্কটল্যান্ডের অ্যাবারডিনশায়ারে খনন কাজে প্রাপ্ত এই পিট-সাজানো কাঠামোটি এই আলোচনায়
চিত্তাকর্ষক ভূমিকা রাখে।

খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম সহস্রাব্দে নির্মিত এই কাঠামোটি বিজ্ঞানীগন পুনরায় বিশ্লেষণ করে দেখতে পেয়েছেন যে এতে
প্রাথমিক ক্যালেন্ডারি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। তাই এই স্থানটি সম্ভবত বর্তমানে জানা সবচেয়ে প্রাচীন ‘সময় গণনা’র
প্রমাণ সরবরাহ করে, কারণ এই পিট-সারিটি চাঁদের বিভিন্ন পর্যায়কে অনুকরণ করছে এবং চন্দ্রমাস অনুসরণ
করার মতোভাবে বিন্যস্ত। এটি দক্ষিণ-পূর্ব দিগন্তের দিকে এবং মধ্যশীতের অয়নকালে সূর্যোদয়ের সাথে যুক্ত
একটি সুস্পষ্ট ভূ-আকৃতিগত বিন্দুর সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।

এভাবে এই স্মৃতিস্তম্ভটি সরল চন্দ্র ক্যালেন্ডারের সাথে যুক্ত সমস্যাগুলোকে পূর্বানুমান করে এবং বছরে একবার
জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক সংশোধনের ব্যবস্থা রাখে, যাতে চাঁদ দ্বারা নির্দেশিত সময়ের ধারা, অসামঞ্জস্যপূর্ণ সৌর বছর
এবং তার সাথে সম্পর্কিত ঋতুগুলোর মধ্যে সঙ্গতি বজায় থাকে। প্রমাণ থেকে ধারণা করা যায় যে স্কটল্যান্ডের
শিকারি-সংগ্রাহক ( Hunter-Gather) সমাজগুলোর বছরে এমনকি সম্ভবত মাসের মধ্যেও সময় গণনার
প্রয়োজন এবং ক্ষমতা দুই-ই ছিল, এবং এটি ঘটেছিল এমন এক যুগে যখন মেসোপটেমিয়ায় প্রথম আনুষ্ঠানিক
ক্যালেন্ডার তৈরি হওয়ার প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগেই তেরী ।

অপনার মুল্যবান তথ্য সমৃদ্ধ পোস্টটির জন্য ধন্যবাদ

শুভেচ্ছা রইল

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৬:৩৭

হুমায়রা হারুন বলেছেন: আপনার এই সুচিন্তিত ও বিস্তারিত মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা।

আপনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় তুলে ধরেছেন - স্কটল্যান্ডের আবারডিনশায়ারে প্রাপ্ত ১০,০০০ বছরের প্রাচীন চন্দ্রনিবাসের প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার। এটি প্রমাণ করে যে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই মানবসভ্যতা চন্দ্রের গতিপথ পর্যবেক্ষণ করে সময় গণনা করে আসছে।

আপনার মন্তব্য থেকে এটি স্পষ্ট যে বৈদিক জ্যোতিষশাস্ত্রের ২৮ নক্ষত্র ব্যবস্থা কোনো বিচ্ছিন্ন ধারণা নয়, বরং এটি মানবসভ্যতার সর্বজনীন জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের একটি অংশ। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে - ভারতে, চীনে, আরবে, এবং এমনকি প্রাচীন ইউরোপেও - মানুষ চন্দ্রের গতিপথকে ভাগ করে সময় নির্ণয় করেছে।

আপনি যথার্থই উল্লেখ করেছেন যে চন্দ্র শুধুমাত্র জ্যোতিষশাস্ত্রে নয়, বরং মানব সভ্যতার বিকাশে সময় পরিমাপের প্রাচীনতম মাধ্যম। মেসোপটেমিয়ার আনুষ্ঠানিক ক্যালেন্ডারের ৫,০০০ বছর আগেই মানুষ চন্দ্র-সৌর সমন্বয়ে সময় গণনা করতে সক্ষম হয়েছিল - এটি সত্যিই বিস্ময়কর।

আপনার এই মূল্যবান সংযোজন পোস্টটিকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। এই ধরনের তথ্যপূর্ণ আলোচনা আমাদের প্রাচীন জ্ঞান ও আধুনিক আবিষ্কারের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে।

আপনার সময় ও মনোযোগের জন্য পুনরায় ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.