| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হুমায়রা হারুন
মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব শুধু প্রযুক্তিতে নয়, বরং মননের বিনিময়ে। ব্লগে যোগাযোগের মধ্যে সেই শ্রেষ্ঠত্বেরই প্রকাশ ঘটে। আপনি যখন লেখেন, মন্তব্য করেন, কিংবা অন্যের ভাবনা পড়েন — আপনি তখন মানব প্রজাতির মননে অংশ গ্রহন করেন।
'জানি আমি জানি সখি
যদি আমাদের দোঁহে হয় চোখাচোখি...'
কে,কে বলে উঠলো অমন করে?
আজও শুনতে পেলাম? কন্ঠস্বর অবিকল তার মত।
কিন্তু এ কি সম্ভব?
সুমন আসবেই বা কোত্থেকে আর কথাই বা বলবে কিভাবে?
ও যে কোথাও নেই। ঘরের দুয়ার ছাড়িয়ে দূরের ঐ মাঠটা পেরিয়ে চেরি ফুলের বাগানে ঘেরা যে সমাধিস্থল সেখানেই তো সুমনকে রেখে আসা হয়েছে। সুমন এ ঘর ছেড়ে চলে গেল,আর আমার কি রইল? স্মৃতি। ওর কথা,ওর লেখা,ওর আঁকা ছবি,ওর কন্ঠে আবৃত্তি। রবিঠাকুরের মানসসুন্দরী পুরোটা কখনো পড়েনি। শুধু ঐ দুটো লাইন, তারপর একটু থেমে হেসে হেসে বাকী দুটো লাইন।
'জানি আমি জানি সখি
যদি আমাদের দোঁহে হয় চোখাচোখি
সেই পরজন্ম পথে দাঁড়াবো থমকি
নিভৃত অতীত কাঁপি উঠিবে চমকি...'
আমায় চিনবে তো ঠিক ঠিক,আমায় প্রশ্ন করতো অবাক করে তাকিয়ে। সেই প্রশ্ন মনে মনে ঘুরে ফিরতো বার বার। আমার হৃদয়ে আমার অন্তরে যদি থাকে তোমার জন্য খোঁজ তা জানার জন্যই বুঝি কবির এই চরণ দুখানির সৃষ্টি। তাই বলতাম পরজন্ম পথে আমি যে খুঁজে ফিরব তোমায়।
সুমন কি তাতেই আত্মহারা? তাই আমায় ছেড়ে যেতে ওর বুঝি আর কষ্টই রইলো না। কেন যে বলেছিলাম, ওকে আমি খুঁজে নেব। এখন যে আর কিছুই বলার নেই। ওর কন্ঠস্বর বারবার ধ্বনিত হয়ে আমার মন ভরিয়ে দিতে আসে, যেন ওকে খুঁজে নিই।
প্রতি বিকেলে বারান্দা বসি। খোলা মাঠের ওপারেই তো সুমন সমাহিত। সুমন নয়,ওর দেহটা। ও যে আমার কাছে কাছেই আছে সব সময়। আমায় ঘিরে তার আসা যাওয়া,আমার অনুভবে। বারোটি বছর কেটে গেছে ওর চলে যাওয়ার। একটু বারের জন্য তো টের পায়নি। একবারের জন্য মনে হয়নি আমার সুমন সশরীরে আমার কাছে আর আসবে না। এত ভালবাসায় ঘেরা আমি। ওর মায়াজালে আচ্ছন্ন আমি। আমার প্রশান্তি, পূর্ণতা সব দিয়ে যেন ও আমায় ঘিরে রেখেছে। দুষ্টুমি করে মনে করিয়ে দেয়,
'জানি, মনে হবে মম,
চিরজীবনের মোর ধ্রুবতারা- সম
চির পরিচয়- ভরা ওর কালো চোখ।
আমার নয়ন হতে লইয়া আলোক,
আমার অন্তর হতে লইয়া বাসনা
আমার গোপন প্রেম করেছে রচনা
এই মুখখানি। তুমিও কি মনে মনে
চিনিবে আমারে?'
আমি না চিনলে আর কে চিনবে তোমায় সুমন? সেই বারোটি বছর আগে, তোমায় কি দেখেছিলেম তখনো? শুধু তো চিঠি লিখে উত্তর দেয়া,পেন ফ্রেন্ড হিসেবে পরিচয়। তারপর কত কথা। তুমি ছিলে ছায়া সুনিবিড় ইয়র্কশ্যায়ারের একটি গ্রামে। আর আমি,মন্ট্রিয়লের জনবহুল একটি অ্যাপার্টমেন্টে। আমার সমস্ত দিন,সমস্ত সন্ধ্যা কেটে যেত ভাবতে ভাবতে তুমি কেমন ভাবে ভালবাসো এত নির্জনতা। সারাদিনে তোমার ওখানে একটি পথিকের দেখা পাওয়া ভার। আর আমার এখানে জনাকীর্ণ পরিবেশে তোমার দেখা পাওয়া ভার। কথা যতই বলি না কেন কখনো ভাবিনি আমি তোমার প্রতি অনুরক্ত হব। এ আমার ভাবনারও অতীত ছিল যে! মন দেয়া কাকে বলে জেনেছি গল্প পড়ে। গল্পের নায়িকারাই পারে ও কাজটি করতে। আমার দ্বারা হবে না কখনোই। আর সেই আমিই কিনা তোমায় অবশেষে। আর তখনই তোমার জীবনের ঘন্টা বেজে উঠল। এমন ভাবেই কি ঠিক করে রেখেছিল নিয়তি? নিয়তি কি জানতো যে তোমার সময় হয়ে এসেছে? তাই চলে যাবার আগ দিয়ে নিয়তি তোমার জীবনের সকল পূর্ণতাকে একত্র করে তোমায় দিতে চেয়েছে। আর সেজন্য নির্বাচিত হয়েছিলাম আমি। আমি নির্দিষ্ট হলাম সেই মেয়েটি হিসেবে যে হবে তোমার মানসসুন্দরী।
আমার এতো সৌভাগ্য। তুমি বল,এ যেন তোমার সৌভাগ্য। তাই এত দূরত্বের বাধা না মেনে চলে এলে আমার কাছে। এলে তো এলে। একেবারেই বলে। আমায় ভরিয়ে দিয়ে শূন্য করে তারপর চলে গেলে।
সেই দিনটি এখনো এতো সুন্দর। তুমি আমার ঠিকানা চাইলে। আমি ঠিকই বুঝেছি তুমি আমায় দেখতে চাও। কিন্তু কবে আসবে তা বলতে চাওনি। আমিও জানতে চাই নি। একদিন বিকেলে দরজায় নক্। দরজা খুলে দেখি খুব সুন্দর একটি মানুষ আমার সামনে। আমি তো না জেনেই সেদিন নীল শাড়িটি পরেছিলাম। নাকি আমার মন জেনেছিল? তোমায় দেখতে দেখতে সবটুকু সময় আমার নিমেষেই যেন শেষ হয়ে গেল। সব কথা যেন বলা হয়ে গেল। বারবার তবুও তোমার অনুরোধ,মিত্রা কিছু বল।
দশটি দিন যেন স্বপ্নের মত। তোমার দু’সপ্তাহের ছুটি। আবার চলে যেতে হবে ফিরে। এত কম সময়ে আমার সব কথা অনুভবে নিয়েছিলে তুমি। আমি তো বলিনি কিছুই। সেই ক'দিনে শহরের আনাচে কানাচে ঘুরেছ আমায় নিয়ে কত সন্ধ্যায়। এখনো সন্ধ্যা নামে,আমি তো কোথাও যাই না ঘুরতে। সময়ের ভারে ক্ষয়ে গিয়েছি অনেক। নিজেকে বেশ জড় মনে হয়। আবার তুমি যখন আসবে তখন আমার প্রাণ সঞ্চার করে দিও সুমন। তোমার বিনিময়ে নয়,তাহলে যে আবার তোমায় হারাবো।
যাবার দিন হঠাতই দুর্বল বোধ করে অসুস্থ হয়ে পড়লে। ডাক্তার, অ্যাম্বুলেন্স,হাসপাতাল করতে করতে তুমি শেষ। আর তুমি নেই। এখানকার মাটিই কি তোমায় টেনে এনেছিল?
বড় ভাগ্যবতী মনে হয়েছিল আমার এইভেবে,আমার ভালবাসা তোমায় এনে দিয়েছে আমার কাছে।
কিন্তু এভাবে?
আমি প্রতি বিকেলেই বারান্দায় বসি। খোলা মাঠের ওপারে সবুজ গাছের সারি। চেরি ফুলে ছেয়ে আছে এখন। ওখানে তুমি রয়েছ। আকাশে বাতাসে তোমার সুবাস। জীবনের সমাপ্তিই কি অনুভবের সমাপ্তি?। মন বলে তুমি আমায় অনুভব করো আর তাই আমার বেঁচে থাকা। তোমায় না পাওয়ার মাঝে এ যেন আমার বেশী করে পাওয়া।
-অমিত্রা
২|
২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৩
সাইফুলসাইফসাই বলেছেন: সুন্দর লেখা
৩|
২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৪১
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: সুন্দর লেখা ।
৪|
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০২
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
অমিত্রার চিটিটি পড়লাম । টিঠিতে মিত্রা সুন্দর করে সুমনের সাথে তার যোগাযোগ কাহিনী থেকে মৃত্যুপর্যন্ত বিষয়াবলি
কল্পনার প্রতিমূর্তিতে সুস্দর করে এঁকেছে । চিত্রা তার সকল জাগতিক কাজ ফেলে রেখে শুধুমাত্র সুমনের কথা ভেবে
চিরন্তন আনন্দ ও প্রেমের সুধা পান করার ধ্যানে মগ্ন , যেখানে চেতনা বেদনাবন্ধন ভুলে গিয়ে শুধু প্রেম আর সৌন্দর্যে
মগ্ন থাকা যায়। জাগতিক বন্ধনমুক্তির চিন্তায় দেখা যায় মিত্রার যেন আজ কোনো কাজ নয়, ছন্দ, বন্ধ, গ্রন্থ, বা গান
সবকিছু ভুলে যেতে হবে।
কল্পনার মিলনে ব্যস্ত সে, সাধন ধন মন মানস সবকিছু দিয়েই অমিত্রা কল্পনায় শুধু সুমনকেই ভাবছে।
সে চায় শুধু একবার প্রিয়তমের কাছে বসতে, শুধু কূজন গুঞ্জন করতে, সন্ধ্যার সোনালি কিরণকে মদিরা হিসেবে
পান করতে।যতক্ষণ না অন্তরের শিরা উপশিরা লাবণ্যে ভরে উঠছে, যতক্ষণ না চেতনার বন্ধন টুটে যাচ্ছে, ততক্ষণ
এই নীরব আনন্দ উপভোগ করতে চাচ্ছে এ যেন তার চেতনার মুক্তি। লেখাটিতে সুন্দরভাবে প্রেম, সৌন্দর্য,
এবং সৃষ্টির এক গভীর আধ্যাত্মিক অনুভূতির প্রকাশ পেয়েছে যেখানে অমিত্রা তাঁর কল্পনার জগৎকে বাস্তবতার
ঊর্ধ্বে নিয়ে যেতে চেয়েছে।
এই পোস্টের লেখাটিতে অমিত্রার ভাবনা আর চিন্তা গুলিকে লেখকের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়কে চিহ্নিত
করে যাচ্ছে বলে অনুভুত হচ্ছে।
সোনার তরীতে থাকা রবিন্দ্র নাথের মানসসুন্দরী কবিতার চরণের উদ্ধৃতি লেখটিকে একটি উচ্চমাত্রা দিয়েছে ।
আমিতো ইয়র্কশায়ারের কাছিকাছিতেই থাকছি । আত্মীয় স্বজন থাকার কারণে মনট্রিয়ল এলাকায় মাঝে মধ্যে
যেতে হয় । খোদা না করুন সেখানে চেরীফল বাগানের কাছে যেন চিরনিবাস হয়ে না যায়, কেননা সেখানে
এমন কেও নেই যে চিত্রার মত করে চিঠি লিখবে
।
শুভেচ্ছা রইল
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:০৭
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: যদি আমাদের দোঁহে হয় চোখাচোখি
সেই পরজন্ম পথে দাঁড়াবো থমকি
নিভৃত অতীত কাঁপি উঠিবে চমকি...'
..................................................................
আহা কি দারুন কথা !
সময়টা পার করে এসেছি
নাহলে প্রানের মাঝে জাগিত ব্যথা !?