নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পূর্বকথা-
এটি একটি দীর্ঘ লেখা। পর্যাপ্ত ধৈর্য ও সময় না থাকলে লেখাটি না পড়াই ভালো। প্রথমেই বিনয়ের সাথে স্বীকার করে নিচ্ছি কাউকে ‘উপদেশ’ দেবার মত যথেষ্ট “জ্ঞান” আমার নেই। দীর্ঘ ছাত্রজীবনে আমার রেজাল্ট কখনই “আহামরি” টাইপের ছিলো না (কারণ, লেখাপড়ার থেকে বহুগুনে আনন্দময় ও গুরুত্বপূর্ণ কাজের অভাব, অন্ততঃ, আমার কখনও হয়নি ।
ডিপার্টমেন্টের জুনিয়র এবং আমার ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে যে প্রশ্নটা প্রায়ই শুনতে হয় তা হলো- “এমএ করবো না এমবিএ? কোনটা পড়বো? লিটারেচার না ইএলটি? কোনটা ভালো? কোনটা খারাপ?”। আমি যখন স্টুডেন্ট ছিলাম, তখন আমার মনেও এই প্রশ্নগুলোর উদয় হোতো যেগুলোর উত্তর পাবার মত কোনো লেখা আমার চোখে পড়েনি।
ইংরেজি বিভাগে সাড়ে ৬ বছর (জ্বী, দেড় বছর সেশন জ্যাম ছিলো) নিজে পড়া এবং দুটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরখানেকের মত পড়ানোর ফলে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে যে ধারণা পেয়েছি তা শেয়ার করার উদ্দেশ্যেই এই লেখা।
এটি কোনো “আসমানী কিতাব” নয়, তাই আমার সব কথাই “একমাত্র” সত্য বলে মেনে নেবারও কোনো দরকার নেই।
বি.দ্র.- যেহেতু ছোট ভাইবোনদের জন্য লিখছি তাই সম্বোধনটা ‘তুমি’। কেউ অফেন্ডেড ফিল করলে দুঃখিত।
এম.এ. ক্যানো?
তোমরা যারা অলরেডি মনস্থির করে ফেলেছো যে এম.এ. করবে তারা একবার নিজেকে প্রশ্ন কর তো কেন এই এম.এ.টা তুমি করতে চাচ্ছো? তোমার উত্তর যদি হয়-
>এত সস্তায় বাংলাদেশে আর কেউ এম.এ. করাবে না
>এত কম পরিশ্রমে (শুধুমাত্র পরীক্ষার আগের রাত পড়ে) আর কোথাও এম.এ. পাশ করা সম্ভব না
>চার বছর একটা সাবজেক্টে পড়লাম, এম.এ. ছাড়া জ্ঞান অপূর্ণ থেকে যাবে
>আমার ইংরেজী বিভাগে পড়তে খুব ভালো লাগে, শুধু এম.এ. কেনো? এম.ফিল., পিএইচডি করারও ইচ্ছা আছে
তাহলে তুমি চোখ বন্ধ করে এম.এ. তে ঢুকে যাও। পরবর্তী কয়েক প্যারা তোমার জন্যে না। সোজা চলে যাও নিচের- “এম.এ. করলে কোনটাতে”।
কিন্তু যদি তোমার কারণ হয়-
>একটা চাকরি দরকার
>হলে কিছুদিন আরও থাকতে চাই
>ব্যাংকগুলোতে এমএ ছাড়া অ্যাপ্লাই করা যায় না
>আরও কিছুদিন স্টুডেন্ট আইডি কার্ডটা ইউস করতে চাই
তাহলে তোমার জন্যে আমার কিছু কথা আছে।
প্রথমেই একটা বেসিক কথা শুনে রাখো- যদি তুমি টিচিং কে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে না চাও তাহলে ইংরেজিতে এম.এ. করার কোনো মানে নেই। এটা শ্রেফ সময়+পরিশ্রম এর অপচয়।
এখানে অনেকেই বলবে শুধু টিচিংই কি আমাদের একমাত্র সুযোগ? না ভাইয়া। টিচিং ছাড়া অন্য যে অপশান গুলোর কথা তুমি বলবে (সাংবাদিকতা, রিসার্চ, বিভিন্ন ডেভলাপমেন্ট অর্গানাইজেশান ইত্যাদি) সেগুলোতে পোস্ট কয়টা একটু খেয়াল করবে? বছরে কতজন রিক্রুটেড হয়? আর তার অধিকাংশগুলোতে ঢুকতে যে পরিমান রেকমেন্ডেশান+লবিং+লিংক লাগে সেটা কি তোমার আছে?
যদি তোমার টার্গেট বিসিএস না হয়, (বিসিএস টার্গেট হলেও ব্যাক আপ অপশান রাখা ভালো কারণ বিসিএস বাংলাদেশের সবচেয়ে আনসার্টেন টার্গেট) তাহলে ব্যাংক+ অন্যান্য প্রাইভেট অর্গানাইজেশানগুলা (এক কথায় কর্পোরেট ওয়ার্ল্ড) টার্গেট করা ভালো (বেতন+গ্ল্যামার+অন্যান্য সুযোগ সুবিধা)। এখন আমাদের দেশে সরকারের পর সবচেয়ে বেশি রিক্রুটমেন্ট হয় ব্যাংকিং সেক্টরে। কোন না কোন ব্যাংক প্রায় প্রতি মাসেই সার্কুলার দিয়ে থাকে। এখন একটু কষ্ট করে বিডিজবস বা অন্য কোনো জবস ওয়েবসাইট বা নিদেনপক্ষে আজকের পেপারটা একটু দেখো- চাকরির বিজ্ঞাপনগুলো কি চাচ্ছে? ইংরেজিতে এমএ নাকি বিবিএ/এমবিএ?
ইংরেজি বিভাগের ভেতরের খবর না জেনে যারা চলে এসেছো (এবং চার বছর ধরে ফ্রাস্ট্রেটেড হয়েছো) এখনই সুযোগ সেটা শোধরানোর। এম.এ. না করে এমবিএ করে ফেলো। দেখবে তোমার জব অপরচুনিটি কয়েকগুন বেড়ে গেছে। বিশ্বাস করো, যদি তুমি অনার্সের সাথে সাখেই এমবিএতে ঢুকতে পারো তাহলে দেখবে তুমি আর ইংরেজিতে এমএ করা তোমার বন্ধু প্রায় একসাথেই বের হচ্ছো। আমাদের এমএ’র প্রথম সেমিস্টার ছিলো ৮ মাসের আর ২য়টা ছিলো ১০ মাসের (সো বুঝতেই পারছো!)। আর স্কুল-কলেজগুলো টিচার হিসেবে অনার্স পাস চায়। সো এমবিএ করলেও তোমার শিক্ষকতার দরজাটাও খোলা থাকছে কিন্তু! পাশাপাশি খুলে যাচ্ছে আরও নতুন কিছু দরজা।
এম.এ. করলে কোনটাতে?
সকল সমস্যা মেনে সুশীলদা’র টানে ইংরেজি বিভাগে এমএ করতে চাও। এখন প্রশ্ন হলো কোনটাতে করবে? লিটারেচার না ইএলটি?
একটাই উত্তর- যেটা তোমার ভালো লাগে, যেটা পড়ে আরাম পাও, যেটাতে কষ্ট কম লাগে সেটাতে করবে।
কিন্তু যাদের কাছে দুটোই একই রকম লাগে তারা কি করবে? তাদের জন্যে কিছু টিপস-
> প্রথমেই তোমার অনার্সের ট্রান্সক্রিপ্টটা ভালো করে দেখো- কোন কোন কোর্সে তুমি ভালো নম্বর পেয়েছো? সেগুলো কি লিটারেচারের কোর্স না ইএলটির? যে স্ট্রিম এর বেশি সংখ্যক কোর্সে ভালো নম্বর পেয়েছো চোখ বন্ধ করে সেটা নাও।
> তোমাদের এমএর কোর্স ডিস্ট্রিবিউশানটা দেখো- কারা কারা কোর্স নিচ্ছেন? তারা খাতা দেখলে তুমি কেমন পেতে পারো? তারা কি বেশি নম্বর দেন নাকি কম? তাদের পড়ানোর স্টাইল তোমার ভালো লাগে? নেক্সট দেড় বছর (এর আগে শেষ হবে না ) তাদের সহ্য করতে পারবে? ভেবে দেখো!
> ঠান্ডা মাথায় চিন্তা কর- অনার্সে যে সব টিচারের সাথে তোমার ভালো সম্পর্ক (!) ছিলো তারা কোন স্ট্রিমের? তুমি যদি হেল্প চাও কারা কারা তোমাকে হেল্প করবে? এটা খুবই ইম্পর্টেন্ট। কারণ, টিচিং যদি ক্যারিয়ার হিসেবে নাও তাহলে বাইরে পড়তে যেতে হবে, পেপার লিখতে হবে, রেকমেন্ডেশান লেটার লাগবে, নানা সময় নানা বই/আর্টিকেল লাগবে। এগুলো তুমি পাবে তোমার সেই টিচারের কাছ থেকে যিনি তোমাকে পছন্দ করেন। এখন তুমি যদি তার স্ট্রিম-এ না থাকো তাহলে তিনি চাইলেও তোমাকে খুব বেশি হেল্প করতে পারবেন না। তুমিই একটু চিন্তা করে দেখো- লিটারেচারের একজনের কাছে ফনেটিক্স নিয়ে কি সাহায্য তুমি পাবে অথবা ইএলটির একজনের কাছে পোস্ট-মর্ডানিজম নিয়ে কতটুকু বা আর জানতে পারবে?
আমার ইএলটি নেবার পেছনে এটা একটা বড় কারণ ছিলো। আমি জানতাম ইএলটিতে এমএ করতে ঝামেলা বেশি কিন্তু ডিপার্টমেন্টে যে কয়জনকে আমি গুরু মানি তাদের মধ্যে দুজন ছাড়া বাকিরা ছিলেন ইএলটির এবং লিটারেচারের দুজনের মধ্যে একজন তখন দেশের বাইরে ছিলেন। অন্যদিকে আমার ইএলটির গুরুরা সবাই এমএ ফার্স্ট সেমিস্টারে কোর্স নিচ্ছিলেন তাই বিনা দ্বিধায় আমি ইএলটি নিয়ে নেই।(অবশ্য যারা শিক্ষক নির্বিশেষে সবাইকেই “গুরু” মানে তাদের জন্যে এ পয়েন্ট ভ্যালিড না। তারা যেটা ইচ্ছা সেটাই নিতে পারে। )
তুমি একটু চিন্তা করে দেখো এমএ থেকে তুমি কি চাও? তুমি কি ফার্স্ট হতে চাও নাকি (আমার মত) সর্বোচ্চ কম পরিশ্রমে একটা মোটামুটি ভালো রেজাল্ট চাও? ফার্স্ট হতে চাইলে এই লেখা তোমার জন্যে না। কিন্তু যদি তুমি চাও মোটামুটি একটা রেজাল্ট (অবশ্যই সিজিপিএ ৩.৫০+) কিন্তু একদম কম সময় দিবে ডিপার্টমেন্টে এবং বেঁচে যাওয়া সময়টায় বিসিএস/জব এর প্রিপারেশান নিবে বা ধুমায়া পার্ট টাইম জব/ টিউশান করবে বা অন্য ক্রিয়েটিভ কিছু করবে তাহলে নির্দ্বিধায় লিটারেচার নাও।
সপ্তাহে ২/৩ টা ক্লাস করে (যারা নাম ডেকে অ্যাটেনডেন্স নেয় শুধু তাদেরটা)+ বাকিদের ক্লাসে প্রক্সি দিয়ে+ পরীক্ষার ৪/৫ দিন আগে থেকে রামজি/ সেন/ নেট থেকে নেয়া সামারি/ সিনিয়রদের ঝাপসা হয়ে যাওয়া চোথা পড়ে এবং অবশ্যই নিজের ভাষায় শুদ্ধ ইংলিশে পেজ ভরিয়ে লিখে আরামসে সিজিপিএ ৩.৫০+ পাবে। কয়েকজন বন্ধু মিলে একটা গ্রুপ কর। একেকজন একেকদিন ক্লাসে যাবে। যে যাবে সে সেদিন সবার সাইন করে দিয়ে আসবে। এভাবে সবাই প্রতি কোর্সে ১০ মার্কস (দুটো গ্রেড) করে একস্ট্রা পাবে। সিজিপিএ ফল করার প্রশ্নই আসে না।
ইএলটি নেবার আগে চিন্তা কর-
>ইএলটিতে মুখস্ত করার পরিমান লিটারেচার থেকে বেশি (বিশেষ করে ফনেটিক্স এর মত কোর্সে)। কম বেশি সব কোর্সেই নানা পয়েন্ট/চার্ট/মডেল ইত্যাদি মুখস্ত করতে হবে। তোমার মুখস্ত বিদ্যা খারাপ হলে ইএলটি নেবার আগে সাবধান।
>ইএলটিতে রামজি/সেন এর মত কোনো বই নেই। সামারি পড়ে পরীক্ষা দেবার সুযোগ নেই যেটা লিটারেচারে সম্ভব। ইএলটি খুবই ফ্যাকচুয়াল। যদি তুমি কিছু না জানো তাহলে লিটারেচারের মত বানিয়ে লেখার সুযোগ কম। আর বানিয়ে লিখলেও লিটারেচারের মত অ্যাভারেজ মার্কের বদলে জিরো পাবার সম্ভাবনা বেশি।
>ইএলটিতে কনসেপ্ট অনেক বেশি। বেশ কিছু কোর্স আছে যেখানে কনসেপ্ট না বুঝলে মুখস্ত করে লাভ নেই। তোমার যদি কনসেপচুয়াল পড়ালেখা কঠিন লাগে তাহলে সাবধান।
>ইএলটিতে ক্লাস লিটারেচারের থেকে বেশি হয়। ক্লাস এর টাইমিংও সাধারনত বেশি হয়ে থাকে। আরেকটা বিরক্তিকর জিনিস হলো লিটারেচারের তুলনায় ইএলটির ক্লাস বিকালে বেশি হয় (আমরা ৪ টার সময়ও ক্লাস করেছিলাম!) তার উপর আছে আরেক যন্ত্রনা- একটা ক্লাস হবে সকাল আটটায়, তো আরেকটা হবে তিনটায়! মাত্র দুই ঘন্টা ক্লাস করার জন্যে সকাল আটটা থেকে বিকাল চারটা/পাঁচটা পর্যন্ত বসে থাকতে হবে। যারা হলে থাকে এবং যাদের করার কিছু নেই এবং যারা ক্লাস করাটাকেই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হিসেবে নিয়েছে তাদের কোনো সমস্যা নেই কিন্তু যারা নানা কাজে যুক্ত থাকো এবং বাসায় থাকো তাদের জীবন হেল হয়ে যাবে! প্রতিদিন দুই ক্লাসের মধ্যবর্তী ৪/৫ ঘন্টা ভ্যারেন্ডা ভাজা কি সহজ কাজ?
>ইএলটিতে স্টুডেন্ট কম ছিলো আামদের সময়ে (ব্যাচ ২ তে ছিলাম ৩৫ জন, ব্যাচ ৩ এ আরও কম)। এত কম স্টুডেন্টের মধ্যে প্রক্সি দেয়া অসম্ভব। ভুলে যেও না অ্যাটেনডেন্সে প্রতি কোর্সে ১০ মার্কস। ১০ মার্কস মানে দুটো গ্রেড! ৪ কোর্সে ৮ গ্রেড। সো, অ্যাটেনডেন্স মিস হলে রেজাল্ট এর কি দশা হবে বুঝতেই পারছো।
>ইএলটিতে তোমাকে অরিজিনাল বই+ নানা ধরনের রিসার্চ আর্টিকেল পড়তেই হবে (আমাদের অনেকগুলো কোর্সে কোনো টেক্সট বই ছিলো না, শুধু রিসার্চ আর্টিকেল পড়ে পরীক্ষা দিতে হয়েছিলো!)। যাদের রিসার্চ আর্টিকেল/কঠিন অ্যাকাডেমিক ইংলিশ পড়তে সমস্যা তারা এটা চিন্তা করে এসো-যদি আর্টিকেল পড়তে পড়তে সব সময় চলে যায় তখন অন্য কাজ কখন করবে?
>ইএলটিতে কোনো নির্দিষ্ট রুটিন নেই। তোমরা যারা চাকরি/অন্য কোনো কাজ করছো তারা বারবার স্কেজিউল নিয়ে সমস্যায় পড়বে। আমি যে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়াতাম সেখানে একটা কোর্স আমাকে ৬ বার রিস্কেজিউল করতে হয়েছিলো শুধুমাত্র এম.এ-এর বারবার রুটিন চেইঞ্জ এর জন্যে
>ইএলটির আরেক ঝামেলা হলো প্রাকটিকাম। প্রতি সপ্তাহে একবার করে প্রাকটিকাম গ্রুপ মিট করতে হবে। এক লেসন প্ল্যানের ড্রাফট এতবার চেইঞ্জ করতে হবে যে তোমরা তো তোমরা, রবার্ট ব্রুস সাহেবও বিরক্ত হয়ে যাবেন।
>অথচ এত কষ্টের পরেও যখন দেখবে তোমার লিটারেচারের বন্ধুটি রাম-সেন পড়ে তোমার থেকে বেশি/একই গ্রেড পেয়েছে তখন মাথার চুল ছেড়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না!
>একটা কথা প্রচলিত আছে- “ইএলটিতে রেজাল্ট ভালো হয়” যেটা একটা ভুল ছাড়া আর কিছুই না। আমাদের ব্যাচে ফার্স্ট সেমিস্টারে ইএলটির ৩৫ জনের মধ্যে ৭ জন ৩ এর নিচে পায় যেখানে লিটারেচারের প্রায় ১২০ জনের মধ্যে মাত্র একজন ৩ এর নিচে পায়। লিটারেচারের অ্যাভারেজ সিজিপিএ ছিলো ৩.৩৮ যেটা ইএলটির ক্ষেত্রে ছিলো ৩.০৫! লিটারেচারে যেখানে মিডটার্মে ১৫ তে ১৪ উঠেছে সেখানে আমাদের ১২ দেয়া হয়েছে। সো লিটারেচার নিলেই যে রেজাল্ট খারাপ হবে এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। সবচেয়ে ভালো হয় তোমার আগের ব্যাচের রেজাল্ট টা একটু দেখো। কোন স্ট্রিমে বেশি নম্বর উঠছে?
>যে যত কথাই বলুক লিটারেচার হলো গল্প-কবিতা-নাটক। এগুলোর মধ্যে একটা মজা আছে। সে তুলনায় ইএলটি যথেষ্ট নীরস। নীরস একটা বিষয়ে মার্স্টাস করাটা কতটা কষ্টকর হবে ভেবে নিও। তবে অনেকেই ইএলটির বেশ কিছু কোর্সে মজা খুজে পায় (আমিও পেয়েছিলাম- এসএলএ, সোসিও, ডিসকোর্স, টেস্টিং …)-এটাও সমান সত্য।
>আরেকটা ভুল ধারনা হলো ইএলটিতে পড়লে জব মার্কেটে সুবিধা পাওয়া যায়। ভাইয়া, বাংলাদেশে যতগুলি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে+কলেজে ইংরেজিতে অনার্স পড়ানো হয় তার সবগুলারই মেজরিটি কোর্স লিটারেচারের। বিশ্বাস না হলে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সিলেবাসটা দেখে নাও (ফ্রেন্ডস বুক কর্নারে চাইলেই এটা ফ্রি পাবে)। এখন তুমিই বল তারা কি লিটারেচারের কোর্সগুলো ইএলটির টিচারকে দিয়ে পড়ায়? তাহলে লিটারেচারের জব অপরচুনিটি কম হলো কিভাবে? তুমি নিজেই ইউনিভার্সিটির জব সার্কুলারগুলো একটু দেখো- দেখবে লিটারেচারর আর ইএলটি দুটো স্ট্রিমেই আলাদা করে লোক নিচ্ছে।
>তোমরা যারা বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা দিবে তারা কষ্ট করে প্রিভিয়াস ইয়ারের প্রশ্নগুলো একটু দেখো- কোথাও ইএলটি থেকে এক নম্বরও আসে নাকি? (এমনকি বিসিএস এর রিটেনের ২০০ নম্বরের ইংরেজিতে বা প্রিলির ৩৫ নম্বরের ইংরেজিতে অথবা NTRCA এর নিবন্ধন পরীক্ষায় ১০০ নম্বরে ইএলটি থেকে এক নাম্বারও আসে না! পুরোটাই লিটারেচার (সাথে কিছু গ্রামার। বাই দ্যা ওয়ে, ইএলটিতে কিন্তু গ্রামার পড়ানো হয় না। যারা এই কনফিউশনে আছো তারা সাবধান! একই অবস্থা বিসিএস ভাইভাতেও!)। এখন তুমিই বল কোনটা পড়া নিরাপদ?
অনেক ভয় দেখালাম। এবার ইএলটির পজিটিভ দিকগুলো বলি-
>ইএলটি একটা প্র্যাকটিকাল, প্রায়োগিক বিষয়। তার মানে তুমি এখানে যা পড়বে সেটা বাস্তব জীবনে অ্যাপ্লাই করতে পারবে। ফনেটিক্স, এসএলএ, ডিসকোর্স, সোসিও এই কোর্সগুলো আমাদের প্রতিদিনের জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে। তুমি পড়বে আর “এতদিন কেনো এগুলো চিন্তা করনি” এই ভেবে অবাক হবে।
>যদি কেউ কারিকুলাম বা ল্যাংগুয়েজ ডেভলাপমেন্ট নিয়ে কাজ করতে চাও (যেমন ইংলিশ ইন অ্যাকশান বা বিবিসি জানালা) তাহলে ইএলটি অনেক বেশি প্রেফারেন্স পাবে। কে জানে হয়তো তোমার করা কোন রিসার্চই আমাদের স্কুল-কলেজ লেভেলের ইংরেজি শিক্ষার দুর্বলতার সমাধান বের করে লাখো স্টুডেন্টকে ইংরেজিতে দক্ষ করে তুলবে।
>যারা টিচিং এ যেতে চাও তাদের জন্য ইএলটির টেস্টিং অ্যান্ড ইভালুয়েশান, টিচার প্রাকটিকাম এই দুটো কোর্স খুবই হেল্প করবে। কিভাবে পড়াতে হয় এবং কিভাবে স্টুডেন্ট পড়া বুঝেছে কিনা সেটা বুঝতে হয় সেটা জানার জন্য এই কোর্সদুটো এক কথায় অসাধারন।
>ইএলটি তোমাকে ভাষা নিয়ে চিন্তা করার নতুন একটা চোখ দিবে। যেটা হয়তো আগে কখনও তুমি ভাবো নাই। আমি Beckett এর Waiting for Godot পড়ে যে আনন্দ পেয়েছিলাম Holmes এর Sociolinguistics, Hughes এর Testing for Language Teachers, Ellis এর Understanding SLA, Phillipson এর Linguistic Imperialism বা Howatt এর A History of ELT পড়ে তার থেকে কম আনন্দ পাই নি। আমি ইএলটি না নিলে হয়তো জীবনেও এই অসাধারণ বইগুলো পড়া হতো না। এ কারণে আমি সারাজীবন আমার ইএলটির টিচারদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো।
>ইএলটি তোমাকে বাধ্য করবে অরিজিনাল বই পড়তে, গাদা গাদা রিসার্চ আর্টিকেল পড়তে। যে কারণে পরবর্তীতে অ্যাকাডেমিক ইংলিশ আর তোমার কঠিন লাগবে না। আমি আমার অনার্সে চার বছরে যত ভালো ভালো অ্যাকাডেমিক রাইট-আপ পড়েছি, মাস্টার্স এর এক বছরে তারচে বেশি পড়েছি। একটা অ্যাকাডেমিক লেখা যে কত সুন্দর হতে পারে তা আমি ইএলটিতে এসে জেনেছি।
>ইএলটিতে যেহেতু ছাত্র-ছাত্রী কম আসছে ফলে ক্লাসগুলো অনেক বেশি ইন্টারঅ্যাকটিভ হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা তুমি তোমার টিচার এর সাথে ওয়ান টু ওয়ান কমিউনিকেশান করতে পারবে। তোমার টিচার বাই নেইম তোমাকে চিনবে এবং তোমার মনে হবে তুমি একটা ফ্যামিলির ভেতর আছো। আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অসাধারন স্মৃতিগুলোর একটা বড় অংশ জুড়ে আছে মাস্টার্সের ইএলটির ক্লাসগুলো।
ভালো-মন্দ দুটোই তো জানলে। এবার তুমিই ঠিক কর কি পড়বে।
তবে মনে রেখো সেই রুল অফ থাম্ব- “সেটাই পড় যেটা পড়তে তোমার ভালো লাগে”!
কোনো প্রশ্ন/কারেকশান/দ্বিমত থাকলে নির্দ্বিধায় আমাকে জানাও।
ভাইয়ার তরফ থেকে বেস্ট অফ লাক!
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১:০১
রাজীব নুর বলেছেন: অযথাই লেখাটা টেনে হিচড়ে লম্বা করেছেন।
মানুষের এত সময় কই? আপনার চেষ্টা করা উচিৎ ছিলো- অল্প কথায় কি করে অনেকখানি বলা যায়।