![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দূর ঐ নীল আকাশে, তারা-নক্ষত্রের মতই হাজার হাজার গল্প ঝুলে রয়েছে, আমি সেই গল্পগুলোই বলতে চাই।
আমি মরে গেছি। আমার আত্মা এখন ঘোরাফেরা করছে তোমাদের চারপাশে। এই কথা তোমরা মানো আর না মানো আমি এখন মরা। আমার দেহত্যাগ হয়ে গেছে অনেক আগেই। তাই তোমরা আমাকে দেখতে পাচ্ছো না। কিন্তু আমি তোমাদের ঠিকই দেখতে পাচ্ছি। তোমাদের সুখ-দুঃখ,হাসি-কান্না,আমোদ-ফুর্তি সব। আমি তোমাদের মতই ছিলাম। আমার সুখ-দুঃখ ছিল। আমিও অনেক ফুর্তি করেছি। অনেক জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছি। অনেক কুকর্মও করেছি। কিন্তু আমি আজ মরে গেছি।
আগে আমি আমার পরিচয় দিই।তানাহলে তোমরা আমাকে চিনবে না। কারণ বেঁচে আছে এমন কয়জনকেই তোমরা ভালমত চিনো। আর আমি তো মরা, আমি পরিচয় না দিলে কিভাবে চিনবে। আচ্ছা আমার নামটা বলেই দেই। আমি হলাম কায়েস চৌধুরী। আমার বয়স ছাপান্ন। তোমরা হয়তো ভাবতে পারো মরা মানুষের আবার বয়স দিয়ে কি হবে। কিন্তু তোমরা তো মরা মানুষেরও জন্মদিন পালন কর। আমি তো আর তোমাদের জন্মদিন পালন করতে বলছি না। শুধু বয়সটা বলে রাখলাম। আমার ঘর ছিল,সংসার ছিল। একটি ছেলেও ছিল। আমার বাবা-মা দুইজনই বেঁচে ছিলেন। আমার সুন্দরী স্ত্রীও ছিল। আমরা সবাই খুবই সুখেই ছিলাম।
তোমাদের এখন আমি কিভাবে মরলাম সে গল্পটাই বলব। তোমাদের কাছে মনে হতে পারে কি একজন মরার পাল্লায় পরলামরে বাবা। তবে এটা বলে রাখি আমি আর পাঁচজনের মত স্বাভাবিক মুত্যু আমার হয় নি। আবার অস্বাভাবিক ভাবেও মরি নি। তোমরা হয়তো ভাবছো কি বলছি পাগলের মত। তবে গল্পটাই শোনো। ছোট গল্প ,বেশী সময় নেব না,তাহলে তোমাদের ধৈর্য হারাবে জানি। তাই অতি সংক্ষেপে বলছি আমার মৃত্যুর গল্প।
আমি যেদিন মরেছিলাম সেই দিনটি ছিল শনিবার। লম্বাটে গরনের সুন্দরী স্ত্রী আমায় চুমো দিয়ে বলেছিল আজ তোমার অফিসে যাওয়ার দরকার নেই। কিন্তু আমি শুনিনি। শুনলে হয়তো আমাকে এমনভাবে মরতে হত না। সেদিন অফিসে বিশেষ কাজ ছিল না। আমি ভেবেছিলাম অফিস থেকে ফিরবার পথে ছেলেকে স্কুল থেকে নিয়ে এক সঙ্গে বাসায় যাবো। কিন্তু তা আর হয় নি। কারণটা তোমরা জানো। আমি আর ফিরতে পারিনি। আমার স্ত্রী যেমন সুন্দরী তেমনি বুদ্ধিমতি ছিল তাই হয়তো কিছু একটা আচ করতে পেরেছিল। আমি মাঝারি আকৃতির ছিলাম। আমার বাবা আর আমি একই রকম ছিলাম দেখতে। অনেকেই বলতো আরেহ! বাবা-ছেলের এত মিল মেন হয় জমজ ভাই। আমার মা এই সব শুনে হাসতেন। বাবা মাঝে মাঝে আমাকে ভাই বলেও সম্বোধন করতেন। মজা করে আমাকে শালার পু বলে গালিও দিতেন। আমি বাবার সাথে খুব মজা করতাম। বাবা ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। আমিও বাবার দেখাদেখি সরকারি কাজেই যোগ দেই। বাবা ছিলেন খুবই সৎ একজন লোক । কারো সাথেও থাকতেন না পাছেও থাকতেন না। একদম নির্ভেজাল প্রকৃতির।
তোমরা হয়তো ভাবছো বসলাম কিভাবে মরলাম সেই গল্প শুনতে আর আমি কি বলছি না বলছি। যাই হোক আমি এখন আসল গল্পে আসি। আমি সেইদিন অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। আমার সামনে মা এসে প্রতিদিনের মত আমাকে কিছু দোয়া কালাম পড়ে ফু দিয়ে দিলেন। কোন এক সিনেমা দেখে মার এমন অভ্যাস হয়েছিল। মা যেই ভাবে ধর্ম-কর্ম অনুসরণ করত,বাবা সেই ভাবেই এগুলো বর্জন করত।তাই বলে ভেবো না আমার বাবা নাস্তিক। তিনি আস্তিকই ছিলেন। তবে কিছু কিছু কুসংস্কার বিশ্বাস করতেন না। সেগুলো না হয় নাই বললাম। বাবা-মা দুই জনেই এখনও কিন্তু বেঁচে আছেন। আমার স্ত্রী-ছেলেটিও ভাল আছে।
আমার স্ত্রী স্বল্প শিক্ষিত হলেও সংসার কিভাবে গুছিয়ে রাখতে হয় সেটা খুব ভালমতই রপ্ত করেছিল। আমার মা-বাবা খুব ভালবাসত তাকে। আর ছেলেটি হয়েছিল ঠিক আমার মায়ের মত। সে ধর্ম-কর্ম খুব সতর্কতার সাথেই পালন করত। আমার মা তাকে এইসব শিক্ষা দিয়েছিল। আমার মায়ের ছেলে হয়ে আমি যা করতে পারি নি আমার ছেলে সেই কাজগুলো খুব দীঢ়তার সাথে করত। সত্যি কথা বলতে আমি নামায পড়ার জন্য যে সূরা গুলো দরকার সেগুলোই ঠিক মত জানতাম না।
দুঃখিত আমি বার বার গল্প ছেরে অন্য প্রসঙ্গে চলে যাচ্ছি। আমি তখন আমাদের দু’তলা বাড়ির গেট থেকে বের হয়ে বাগানের ফুলের গন্ধ শুকতে শুকতে রাস্তায় বের হলাম। বাগানটা কে করেছে বলার প্রয়োজন মনে করছি না। আমি রাস্তায় নেমেই গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। একটা ট্যাক্সি দেখে হাত নাড়ালাম। ট্যাক্সিটা আমার সামনে এসে ব্রেক কসল। আমি বললাম,এই পল্টন যাবে।
৬০০ টাকা।
এত বেশী কেন চাইছো ।
এই মিরপুর থেকে পল্টন এর কমে যদি কেউ যায় তাহলে যান আমি যাবো না।
আমি অবাক, বলছে কি ড্রাইবারটা। মনে মনে কয়েকটা চড় বসিয়ে দিলাম ওর গালে।
শেষ পযর্ন্ত ৪০০ টাকায় রাজি করানো গেল। আমি ট্যাক্সিটায় উঠে বসলাম।
ট্যাক্সিটা প্রথমে ফার্মগেটের দিকে প্রচন্ড গতিতে চলতে লাগল। তারপর যথারীতি প্রাচীন জ্যামে ট্যাক্সিটি একেবারে থেমে গেল। আমি তখন নভোথিয়েটারের সামনে জ্যামে আটকে আছি। ড্রাইভারটা এফ.এম রেডিও ছেরে দিল। বিরুক্তিকর লাগলেও শুনতে লাগলাম। কারণ তখন আর কিছু করার ছিল না। প্রায় আধা কিলোমিটার জুরে জ্যাম। সামনে দেখলাম এমন ভাবে সব গাড়িগুলো দারিয়ে আছে যেন কোন বাচ্চা এগুলো সাজিয়ে রেখেছে পরে খেলবে বলে। কিছুক্ষন পর একটা বাচ্চা মেয়ে হাতে পপকর্ন নিয়ে জানালায় টোকা দিতে লাগল। বলল, স্যার এক প্যাকেট নেন না ,ও স্যার নেন না। আমি দ্বিধায় পরে গেলাম। মানিব্যাগ থেকে পাঁচ টাকা বের করে হাতে ধরিয়ে দিলাম। প্যাকেট আর নিলাম না। আবার দেখলাম একটি যুবক ছেলে শসা বিক্রি করছে। অনেকে কিনছে। বাচ্চা মেয়েটিকে দেখলাম বিভিন্ন গাড়িতে ঘুরঘুর করছে। কেউ হয়তো নিচ্ছে আবার কেউ নিচ্ছে না।
ট্রাফিক পুলিশ বাসি দেওয়ার সাথে সাথে সব গুলো ইঞ্জিন একসাথে চালু হয়ে গেল। এক সাথে ধোয়া উড়াতে উড়াতে চলতে থাকল সবগুলো গাড়ি। ফার্মগেট পার হওয়ার পর কারওয়ান বাজারে আবার সেই একই জ্যাম। এদিকে আমি তো গরমে অস্থির হয়ে গেলাম।
হঠাৎ করেই সামনে থেকে চিৎকার চেচামেচির শব্দ শুনতে পেলাম। দেখলাম যারা আশে-পাশে হেঁটে হেঁটে গন্তব্যের দিকে যাচ্ছিল তারাও উল্টা দিকে দৌড় শুরু করল। ড্রাইবারকে জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে। কিছু বুঝতে পারলে। সে বলল মনে হয় বাসে পেট্রল মারছে। আমি ট্যাক্সি থেকে নামলাম। দেখলাম সত্যি সত্যি আকাশে মেঘের মত ধোয়া উড়ে যাচ্ছে। সামনে পুলিশের হুইসেলের আওয়াজ শুনতে পেলাম। এবার সাহস করে এগিয়ে গেলাম। এখন মানুষগুলো আর ভয়ে পালাচ্ছে না বুঝতে পেরেছে দুবৃত্তরা পালিয়েছে। তাই সবাই ঘটনাস্থলের দিকে যাচ্ছে। আমিও গেলাম। ফায়ার সার্ভিস থেকে লোক এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে।
কাছাকাছি যাওয়ার পর দেখতে পেলাম আহত লোকগুলো ব্যথায় কাতরাচ্ছে। প্রায় ছয় থেকে সাত জন আগনে ঝলসে গেছে। তাদের কারো চেহারা বোঝাতো দূরের কথা। মনে হচ্ছিল কেউ যেন তাদের উপরের ভাগ তুলে ফেলেছে। শুধু বাকি রয়েছে রক্ত ও মাংস। তাদের দলে একটি বাচ্চাও ছিল। বাচ্চাটিকে দেখে সৃষ্টিকর্তার প্রতি আমার প্রচন্ড রাগ হল। এই নিষ্পাপ শিশুটি কি এমন পাপ করেছিল যে তাকে এই নির্মম ভাবে মরতে হবে। সে না বুঝতো রাজনীতি। না বুঝতো পৃথিবীর সব মোহ। তার প্রতি কেন সৃষ্টিকর্তার এমন অবিচার। তাকে বাঁচাতে কেন তিনি আগুনকে ঠান্ডা করে দিলেন না। যারা যুবক বা বৃদ্ধ তারা না হয় পাপ করেছিল শাস্থি পেয়ে মরল। কিন্তু এই শিশুটি কেন? শিশুটির ঝলসে যাওয়া দেহটির দিকে কেউ ফিরেও তাকালো না। মনে হল তার সাথে যে ছিল সে মরেছে। নইলে কেউ তো তার খোজ করত।
মানুষগুলো লাশ গুলোর দিকে এমনভাবে তাকাচ্ছে যেন এরা কোন অপরাধ করে মরেছে। হয়তো তাদের আত্মীয়-স্বজনরা মেডিকেলের মর্গে তাদের দেহ সনাক্ত করতে এসে বিরক্ত হবে। অনেকে কান্নায় ভেঙ্গে পরবে। আবার অনেকে বোকা বোকা চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকবে ডাক্তারের দিকে তার স্বজনকে চিনতে না পেরে।
অনেকে আবার লাশ না পেয়ে ফিরে যাবে। অনেকে কয়েকদিন হাসপাতালের আশ-পাশে ঘুরঘুর করবে। দেখা যাবে কতিপয় মন্ত্রীরা তাদের ক্ষতিপূরন হিসিবে কিছু টাকা দান করবে। হাসপাতালে এসে কান্না জুরে দেবে। অনেকে আবার ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পরবে তার পত্রিকার জন্য। এই মরা ছবিগুলো দিয়েই সে তাজা তাজা টাকা ইনকাম করবে। টাকাগুলো হাতে পেয়ে আর কিছুর চিন্তা তার মাথায় থাকবে না হয়তো। অনেকে আবার আন্দোলন শুরু করবে। অনেকে ফেইসবুকে ছবি আপলোড করেই বার বার লগ ইন করবে কতগুলো লাইক, কতগুলো শেয়ার হল এইসব দেখবে। আবার অনেকেই চায়ের দোকানে বসে এ সবের বিরুদ্ধে কিভাবে কি করা যায় এইসব নিয়ে আলোচনা করবে। আবার অনেকেই টেলিবিশনে এই সব দৃশ্য দেখে ওয়াশরুমে ঢুকবে বমি করতে। কিছুদিন পর আবার আগের মত হয়ে যাবে। সবাই সব কিছু ভুলে যাবে।
আমি আবার ট্যাক্সিতে উঠলাম। খুব খারাপ লাগছিল। এই দৃশ্যগুলো দেখে। ওহ! আবার মনে হয় আমি অন্য কথায় চলে গিয়েছিলাম। আমি তো আমার মরার কথা বলব। অন্যদেরটা বলছি কেন। তারপর কি হল শুনুন আমি শেষ পর্যন্ত পল্টন পৌছালাম। অফিস গেট দিয়ে ঢুকে লিফ্টের জন্য অপেক্ষা করছি। কিভাবে যেন এক বৃদ্ধা গেটের ভিতরে ঢুকে পরেছে। আমার সামনে এসে বলছে, বাবা দুইটা টাকা দ্যান না ।
আমি ধমক দিয়ে তাকে তাড়িয়ে দিলাম। সে ছলছল চোখ নিয়ে চলে গেল গেটের বাইরে। সেখান দিয়ে স্কুলের এক ছাত্র যাচ্ছিল তার কাছেও মনে হয় বৃদ্ধাটি ভিক্ষা চেয়েছিল ,ছেলেটিকে দেখলাম একটি দশটাকার নোট বের করে তাকে দিল। মনে হল টিফিন না খেয়ে ছেলেটি কোন কাজের জন্য টাকাটি ফেরত এনেছিল।
আমি অফিসে ঢুকে টুকটাক যা কাজ ছিল সব সেরে আবার বের হলাম। এবার আমার ছেলেকে নিয়ে বাসায় ফিরতে হবে।কিন্তু আতঙ্গ। কারণ মাঝে মাঝে পেট্রলবোমা ফুটছে বাসে বাসে। টেলিভিশনে দেখে আসা ঘটনাটা দেখলাম। আমি অফিস থেকে সিড়ি বেয়ে নামলাম চার তলা থেকে। নেমে আবার পল্টন মোড়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করলাম। কয়েকটা ট্যাক্সিকে ইশারা করলাম কিন্তু অজানা কারনে থামলো না। শেষ পর্যন্ত একটা সি এন জি পেলাম।এবার আর দামাদামি করলাম না। ধানমন্ডি গভ.বয়েসে স্কুলের দিকে ছুটল সি এন জি টি।
আমার ছেলেটি ঔ স্কুলেই পড়ে,ক্লাস সেভেনে। ও প্রতিদিন নিজেই স্কুলে যায়। কিন্তু কয়দিন ধরে দেশের অবস্থা বেশী ভাল যাচ্ছে না। তাই আমি ওকে বাসায় নিয়ে যাই। এমন অবস্থায় কেন যে স্কুলগুলো কেন খোলা রাখে হয়তো কাল থেকে বন্ধ ঘোষনা করবে। আর বন্ধ ঘোষনা না করলেও ছেলে আর স্কলে আসতে দেওয়া যাবে না। রাস্তায় যেভাবে বাচ্চাটি পুড়ে মারা গেল এখনও সেই দৃশ্য আমি ভুলতে পারি নি।
আমি ধানমন্ডির স্কুলের সামনে পৌছালাম। সি এন জি থেকে নেমে গেটের সামনে গেলাম দেখলাম কাওছার গেটের সামনেই দাড়িয়ে আছে। ওকে ঢাক দিলাম। ও কাছে আসল।বললাম কিরে ক্ষুধা লাগছে।ও বলল না বাসায় গিয়েই খাবো। তারপর দুইজনে সি এন জি তে উঠলাম। সি এন জির ড্রাইভারটা মিরপুর রোড ধরে খুব জোরে চালাতে লাগল। আমি ড্রাইভারকে ধমক দিয়ে বললাম এত জোরে চালানো কি আছে।আস্তে চালাও বলতে বলতে ক্রসিং পার হতে গিয়ে একটা প্রাইভেট কারের সাথে ধাক্কা লাগিয়ে দিল। আমি আর আমার ছেলে উল্টা হয়ে পরে গেলাম। আমার হাত-পা ছিলে গেল। তেমন কিছুই হল না।কিন্তু কাওছার প্রচন্ড আঘাত পেল।তার অনেক রক্ত ক্ষরণ হতে লাগল। ড্রাইভারটার তেমন কিছু হয়নি। সে তার সি এন জি ঠিক করতে ব্যস্ত। আমি তারাতারি আর একটা গাড়ি ঠিক করে কাওছারকে স্কোয়ার হাসপাতালে নিয়ে গেলাম।
কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে ইমার্জিন্সিতে নিয়ে গেল। আমি তো সৃষ্টিকর্তার নাম নিচ্ছি। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার এসে বলল। প্রচুর রক্ত লাগবে। তারাতারি ও+ রক্তের ব্যবস্থা করুন।আমি তো স্তভিত। কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। তারাতারি ঢাকা মেডিকেলের বন্ধুকে ফোন দিলাম। ও বলল রক্ত আছে । সে এখনই পাঠিয়ে দিচ্ছে। আমি স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেললাম। যদিও জানি তাকে মোটা অংকের টাকা দিতে হবে। তবুই ছেলেটি তো বাঁচবে। আর কি চাই।
রক্ত আধঘন্টার মধ্যে চলে আসল। ডাক্তার পাঁচ ব্যাগের মত রক্ত নিয়ে অপারেশন থিয়েটারে চলে গেল। আমি তখনও বাসায় কিছু জানাই নি। জানি শুনলে কান্নাকাটি শুরু হয়ে যাবে।
ডাক্তার অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে আমাকে অভয় দিয়ে বললেন চিন্তার কোন কারণ নেই আপনার ছেলে এখন পুরোপুরি সঙ্কামুক্ত। আমি কিছু বলতে পারলাম না। মনে মনে আমার বন্ধুটিকে ধন্যবাদ জানালাম। তারপর বাসায় ফোন দিয়ে জানালাম। বাসায় কি অবস্থা জানি না। বন্ধুটি আবার ফোন দিলাম ধন্যবাদ জানানোর জন্য।
হ্যালো ,কায়েস বল তোর ছেলের কি অবস্থা।
আমি বললাম হুম এখন ঠিক আছে।তোকে কত দিতে হবে।
আরেহ! এত তারা কিসের পরে দিলেও চলবে।
আমি ওকে একটা প্রশ্ন না করে পারলাম না ।এত তারাতারি রক্ত কোথায় পেলি।
ও উত্তর দিল, পেট্রল বোমায় আজ একটা বাচ্চা মরেছিল তার রক্ত মরার পরও সচল ছিল। সেই রক্তই তোর ছেলের জীবন বাঁচালো।
এই কথা শুনে আমি চুপ হয়ে গেলাম।
আমি এবার কিভাবে মরলাম সেটা বলি। আমার ছেলে এখন বড় হয়ে গেছে। মাস্টার্স পাশ করল গত বছর। এখন ভাল একটা চাকরি করছে। তার জন্য মেয়ে দেখা হচ্ছে। হয়তো তারও বাচ্চা হবে। তার বাচ্চার ও বাচ্চা হবে।কিন্তু তাদের শরীরে সেই পেট্রল বোমায় পোড়া বাচ্চার রক্ত মিশে থাকবে সারাজীবন।
ওহ!দুঃখিত আমার স্ত্রী আমাকে ডাকছে।আচ্ছা গল্পটা না হয় আর একদিন বলবো। আমি কিভাবে মরলাম। আসলে আমরা তো প্রতিদিনই মরছি। আসলে দেখা যায় আমরা প্রায় প্রতি ঘন্টায় একবার করে মরি। কেন যে আমরা মরি এই তথ্যটাই সবার কাছে পরিষ্কার না।
ঔ যে আবার ডাকছে।
৩০ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১১:০৭
সন্যাসী পিপড়া বলেছেন: ধন্যবাদ।
২| ০১ লা মে, ২০১৫ রাত ১০:৩৩
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: কেমন যেন লাগল। ভাল বলব না
০১ লা মে, ২০১৫ রাত ১১:১০
সন্যাসী পিপড়া বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:২৫
জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন:
দ্রুত টেনেছেন তবে শেষে এসে পাঠক থমকে যাবেন ৷
সত্যি কথা আমরা তো প্রতিদিনই মরছি ৷ উপলব্দি হোক সকলের ৷