নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দূর ঐ নীল আকাশে, তারা-নক্ষত্রের মতই হাজার হাজার গল্প ঝুলে রয়েছে, আমি সেই গল্পগুলোই বলতে চাই।

সন্যাসী পিপড়া

দূর ঐ নীল আকাশে, তারা-নক্ষত্রের মতই হাজার হাজার গল্প ঝুলে রয়েছে, আমি সেই গল্পগুলোই বলতে চাই।

সন্যাসী পিপড়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্প: ডানাওয়ালা মানুষ

০১ লা মে, ২০১৫ রাত ১১:১৪

###########
রাত তিনটার দিকে এলোমেলো স্বপ্নগুলো জাবিরকে জ্বালিয়ে অস্থির করে তুলছে। সে দেখল তার পিঠে ধীরে ধীরে ডানা গজাচ্ছে। যে কারণে সে ঠিক মত শুয়ে থাকতে পারছে না। তার ডানা দুটি ধীরে ধীরে ঈগল পাখির ডানার মত বড় হতে থাকল। তার পিঠ থেকে কে যেন টেনে টেনে ডানাগুলো বের করছে। তার প্রচুর যন্ত্রনা হচ্ছে। তার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ ভয়ে কাঁপছে। সে খুব দুর্বল অনুভব করছিল। তার শরীর যেন অসাড় হয়ে গেছে। তার পিঠ দিয়ে রক্ত পড়ছিল গড়িয়ে গড়িয়ে। সে রক্তের ছোয়া পাচ্ছিল। কিন্তু গন্ধ পাচ্ছিল না। সে তার ত্রিভুজাকৃতির ছোট ঘরটায় চিত হয়ে শুয়ে ছিল। এখন সে বাধ্য হল ডান কাত হয়ে শুতে। স্বপ্ন আর বাস্তবের মাঝামাঝি সে ঝুলে রয়েছে। সে দু'তলা বাড়ির চিলেকোঠায় ভাড়া থাকে। একটি বুক সেলফ উপহার পেয়েছে তার বান্ধবীর কাছ থেকে। সেটি এখনও খালি পড়ে আছে। রাতের আকাশে কালো মেঘের খেলা চলছে। সে স্বপ্ন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য জেগে উঠল। জেগেছে বলেই মনে হয় আকাশ কাঁপানো বজ্রপাত শুরু হল। সে তার জানালা খোলার সাথে সাথে একরাশ বৃষ্টি এসে তার শরীরের কিছু অংশ ভিজিয়ে দিল। ঘরের আলো জ্বালিয়ে দেয়। আস্তে করে খাটের উপর বসে তার স্বপ্নের কথা ভাবতে থাকে। আনমনেই তার পিঠে হাত দেয়। অনুভব করে পিঠের দুই দিকে দু'জায়গা ফুলে গেছে। কিছূটা ভয় পেয়ে যায়। তাহলে কি সত্যি সত্যি তার ডানা গজাচ্ছে।

দরজায় প্রচন্ড জোরে কেউ আঘাত করতে থাকে। লাফিয়ে উঠে সে। আবার সঙ্গে সঙ্গে ঘড়িতে সকাল আটটার অ্যালার্ম বাজতে থাকে। জাবির বুঝতে পারে কে এসেছে। সে তারাতারি উঠে দরজা খুলে দেয়। তার চোখের সামনে দুনিয়ার সবচেয়ে সন্দুরী মেয়ে দাড়িয়ে। তার মুখে মিষ্টি হাসি ফুটে আছে। সে আজ শাড়ি পড়েছে। সবুজ রংয়ের শাড়ি। সবুজ রংয়ের শাড়িতে আজ তাকে টিয়া পাখির মত লাগছে। কাঁধে ভ্যানিটি ব্যাগ ঝুলানো। চোখ দুটো যেন বলতে চাইছে এত দেরি করলে কেন?
'' তোমার দেখি এখনও ঘুম ভাঙ্গে নি।'' জাবির যেন আবার স্বপ্নের জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরে এল।
খানিকটা আমতা আমতা করে বলল,'' না মানে নননন, রাতে ভাল ঘুম হয়নি।''
'' কাল রাতে না তুমি ১১টার দিকে শুয়ে পড়লে। এখন বলছ ভাল ঘুম হয়নি। আচ্ছা আমি এখানেই দাড়িয়ে থাকব।''
'' ওহ! সরি, ভিতরে এসে বস। আমি ফ্রেস হয়ে নেই ।''
মেয়েটি ভিতরে ঢুকে বসল। জাবির ওয়াশরুমে ঢুকল। মেয়েটি কিছুক্ষন পর পানি ফ্লাশ করার শব্দ শুনল। তারপর শুনল ঝরনার শব্দ।
জাবির ঝরনার পানিতে গোসল করতে করতে আবার পিঠে হাত দিল। সে চমকে উঠল তার পিঠের ফোলা আগের চেয়ে বেড়েছে। রাতে ভেবেছিল হয়ত পুরাটাই স্বপ্ন। আমার কি কোন রোগ হল , ভাবল।
সে ঘরে ঢুকে নিঃশব্দে তার কাপড় পড়ল।মেয়েটি সংকচিত ভাবে তার দিকে তাকাল। তার খোলা দেহের দিকে।
‘‘ কি হয়েছে, নিশি? এভাবে তাকিয়ে কি ভাবছ।’’
নিশি তাকে দেখে মিষ্টি হাসল।
‘‘ কি না, আমি কিছু ভাবছি না। আচ্ছা তুমি আমাকে কোনদিনই বিয়ে করবে না।’’
‘‘ এটা কেমন প্রশ্ন হমম? আমি তো বলেছি ভাল একটা চাকরি পেলেই করব।’’ বলতে বলতে সাদা-লাল চেকের শার্ট টা পড়ল সে।
‘‘ তাছাড়া আমার অনেক ঋণ আছে যেগুলো শোধ করতে না পারলে হয়ত একদিন আমি মরেই যাবো।’’
‘‘ এমন কথা বলবে না।’’ সে তার মুখে হাত রাখল। দুই জন একে-অন্যের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকল। সে ভিজে ঠোট দু’টো ফাক করল। দুই জন খুবই কাছাকাছি। এক জনের নিঃশ্বাস অন্য জনের গায়ে পড়ছে।
‘‘ক্রিং ক্রিং’’ শব্দ করে জাবিরের ফোনটা বেজে উঠল। দুই জন সচেতন হল।
‘‘ হ্যালো”
ওপাশ থেকে কে কি বলল। সে শুধু জ্বি জ্বি টাইপের কথা বলে মাথা নাড়তে লাগল।
‘‘ আজ আমাকে বের হতে হবে। তোমর সাথে বিকালে দেখা করব। রমনার সামনে থেকো।’’
নিশি তাকে জরিয়ে ধরল। পিঠের ফোলা অংশে হাত দিতেই চমকে উঠল।
‘‘ এই তোমার পিঠের ওখানে কি হয়েছে।’’ ছেড়ে দিয়ে বলল সে।
‘‘ ও কিছু না। এমনি সেরে যাবে।’’
সে কিছু বলল না। জাবির তাকে নিয়ে বের হল। দরজায় তালা ঝুলিয়ে সিরি বেয়ে নেমে গেল। তাকে একটা রিক্সায় উঠিয়ে দিয়ে সে উল্টা পথে হাটা শুরু করল।
পথে হাটতে হাটতে তার অনেক মধুর মধুর স্মৃতি মনে পড়তে লাগল। নিশি নিয়ে বাইকে করে সারা শহর চষে বেড়ানো। রাস্তার পাশে বসে বসে ফুসকা খাওয়া। সিনেমা হলে গিয়ে নতুন নতুন ছবি উপভোগ করা। মাঝে মাঝে মিথ্যা বলে এক সাথে রাত্রি যাপন। এমনকি স্টেডিয়াম এক সাথে খেলা দেখা। কিন্তু হঠাৎ করেই তার বাবা মারা যাওয়ার পর দৈন্যদশা অবস্থা। এখন আর রাস্তার আগের মত ঘোরাঘুরি হয় না। এখন ঘুরতে হয় শুধু একটা চাকরির খোজে। যদিও তিনটি প্রাইভেট টিউশনে করে। কিন্তু টিউশনি করে আর কতদিন।
একটা দশতলা বাড়ির সামনে দাড়াল সে। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত। সেই মিরপুর থেকে ধানমন্ডি হেটে আসা চাট্টি খানি কথা নয়। তার শরীর ঘামে ভিজে গেছে। সে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে দারোয়ানকে জিজ্ঞাসা করল,'' ভাই, হাসিব সাহেবের বাসা কোন ফ্লোরে।''
'' আপনার নাম''
'' জাবির''
'' ওহ, আইচ্ছা লিফ্টের নয়ে যান। নেমে বাম দিকে করিডর পার হয়ে ডানে মোড় নিলে দেখবেন ১০০৫ নম্বর ফ্লাট সেটাই।''
'' ধন্যবাদ'' এত কথা না বললেই হত, মনে মনে বলল সে।
দারোয়ানের কথা মত সে ১০০৫ নম্বর ফ্লাটের কলিং বেলের সুইচ চাপল। একজন সুন্দরী মহিলা গেট খুলে দিয়ে দারাল।
'' কাকে চান।''
সরাসরি নিজের নাম বলে বলল, '' হাসিব ভাই আমাকে আসতে বলেছিলেন।''
মহিলা তারাতারি তাকে ভেতরে বসতে দিলেন। রুমটা খুব সুন্দর করে সাজানো-গোছানো। পায়ের নিচে নরম কার্পেট। দামি সোফা।সে যেখানে বসেছে তার বাম পাশে বিশাল এক আকুয়ারিয়াম। সেখানে নাম না জানা বিদেশী মাছগুলো ছটফট করছে মুক্তির আশায়। হয়ত বলছে, এভাবে আমাদের আটকে রেখে কি মজা দেখছ?
ভিতরে কিছুক্ষন বসেই তার শরীর ঠান্ডায় জমে যায় যায় অবস্থা। নিজের ঘরে ফ্যানের বাতাসই ভাল। ভাবল।
কিছুক্ষন পর হাসিব ভাই উদয় হলেন। তাকে একটা আস্ত হাতির মত লাগছে। তার কান দু’টো হাতির মত বড় বড়। নাক নেই বললেই চলে। চোখ দু’টো দেহের তুলনায় অনেক ছোট। আমি তাকে দেখে উঠে দাড়ালাম। তিনি মুখে হাসি নিয়ে আমার সাথে হাত মিলালেন। ‘‘ তোমাকে আজ বেশ উৎফুল্ল লাগছে।’’
জাবির হাসল।দুই জনেই সোফায় বসল।
‘‘ ভাই যে কাজের জন্য ডেকেছেন। সেটা বলুন একটু তাড়া আছে।’’
‘‘ আরেহ ভাই কাজের কথা কি তারাহুরো করে বলা যায়। তুমি ওয়াইন পছন্দ কর?’’ সোজা তার দিকে তাকাল। যেন না করলে মেরে ফেলবে।কিন্তু না উত্তরটাই দিল সে। হাসি মুখে আবার বলল,'' তাহলে চা-কফি কিছু একটা নাও।''
'' ঠিক আছে । কফি দিতে বলতে পারেন।''
সে বেল টিপতেই এক বৃদ্ধা সামনে এসে দাড়াল।
'' দু'কাপ কফি নিয়ে এস। কড়া করে।''
বৃদ্ধাটি তারাতারি প্রস্থান করল। তার পায়ের আওয়াজ চলে গেল অন্য ঘরে। '' আচ্ছা তোমার কাছে কি রিয়াদ টাকা পায়?''
''জ্বি, ভাই।''
''কত দিন"
‘‘ প্রায় ২ বছর হবে।’’
‘‘ এতদিন কারো টাকা কেউ রাখে।’’
‘‘ তুমি জানো ও খুবই ক্ষেপে আছে।’’
‘‘ কি করব বলেন। আমার কাছে এত টাকা নেই। একটা চাকরি পেলেও কিছুটা শোধ দিতে পারতাম।’’
কফি চলে এল। দুই জনে ঠোটে কাপ লাগিয়ে কফিতে চুমুক দিল।
‘‘ তোমার জন্য রিয়াদ ছাদের উপর অপেক্ষা করছে।’’
জাবির কিছু বলল না। শুধু মাথা ঘোরালো। হাসিব ভাইকে সালাম দিয়ে বের হয়ে পড়ল ছাদের উদ্দেশ্যে।
ছাদে উঠে জাবির দেখল রিয়াদের সাথে আরো তিন জন এক কোনে দাড়িয়ে হাসাহাসি করছে। তাকে দেখে সবাই আচমকা হাসি বন্ধ করে দিল। সে হাসিবের সামনাসামনি দাড়াল। '' দেখ হাসিব আমি অনেক বিপদের মধ্যে আছি তোর টাকা দিতে পারছি না বলে তুই কি রাগ করেছিস।'' '' না বন্ধু, রাগ করব কেন। আরো টাকা লাগলে আমার কাছে চাইতে লজ্জা করিছ না।'' অন্যান্যরা এই কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠল। জাবির একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেল। সে অপমান অনুভব করছে। তখন তার ভাবনাগুলোও কাজ করছিল না। সে চুপচাপ দাড়িয়ে রইল। অন্যদের দৃষ্টি তার কাছে খুবই কষ্টের মনে হতে লাগল। সে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এরকম দীর্ঘশ্বাস মানুষ প্রেমে ব্যর্থ হলে ফেলে।
তারা সবাই রেলিং এর কাছাকাছি দাড়িয়ে। একজন বলে উঠল, শালাকে ফেলে দে এখান থেকে। জাবির এই কথা শুনে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল। একজন একটা চড় বসিয়ে দিল তার গালে। সে অপমানে নিচের দিকে চোখ নামিয়ে নিল। হঠাৎ করেই তার পিঠে আবার স্বপ্নের মত যন্ত্রনা শুরু হল। পিঠে হাত দিয়ে দেখল অনেকটা ফুলে গেছে। রক্তও ঝরছে। তার বন্ধু হাসিব এই সবের কিছুই লক্ষ্য করল না। সে সবাইকে চোখের ইশারায় কি বলতেই দুইজন এসে তার দুই হাত চেপে ধরল। জাবির যন্ত্রনায় আর ভয়ে চিৎকার করে উঠল।
সে এখন দশতলা দালান থেকে নিচের দিকে ধাবিত হচ্ছে। তার পিঠে অনেক বড় এক ডানা গজিয়ে গেছে। সে ডানা ঝাপ্টাচ্ছে। কিন্তু উড়তে পারছে না। এক সময় সে একজন থেকে দুইজনে পরিনত হল। একজন ডানায় ভর করে আকাশে উড়ে গেল। অন্যজন মাটিয়ে পড়ে গেল।
পরের দিন পত্রিকায় টিভিতে প্রকাশ হতে থাকল তার মরার খবর। '' এক ডানাওয়ালা মানুষের মৃত্যুর সংবাদ।''

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা মে, ২০১৫ রাত ১২:১০

শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: Nice one bhai.

০২ রা মে, ২০১৫ রাত ১২:২৫

সন্যাসী পিপড়া বলেছেন: ধন্যবাদ। ভাই শতদ্রু একটি নদী।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.