নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দূর ঐ নীল আকাশে, তারা-নক্ষত্রের মতই হাজার হাজার গল্প ঝুলে রয়েছে, আমি সেই গল্পগুলোই বলতে চাই।

সন্যাসী পিপড়া

দূর ঐ নীল আকাশে, তারা-নক্ষত্রের মতই হাজার হাজার গল্প ঝুলে রয়েছে, আমি সেই গল্পগুলোই বলতে চাই।

সন্যাসী পিপড়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্প: অন্ধদের শহর

০২ রা মে, ২০১৫ বিকাল ৩:০১

#########

রাত প্রায় বারটা। আমি বাস থেকে নামলেন। রাস্তায় গাড়ি-ঘোড়ার সংখ্যা কমে গেছে।শুধু বড় বড় মালবাহী ট্রাকগুলো চলে যাচ্ছে শা-শা করে। আর মিটমিট করে জ্বলছে রাস্তার দু’ধারের বাতিগুলো। কিছু বাতি জ্বলছে আর নিভছে। আলো-ছায়ার খেলা যেন। আমি শর্টকার্ট রাস্তাই বেছে নিলাম। আজিজ মার্কেটের সামনে নেমেছিলাম। নেমে হাতের ডান দিকে হাটা দিলাম। আবার ডানের ছোট গলিতেই ঢুকলাম। এই গলিতে যে আমার জন্য ওৎ পেতে আছে মাকড়শার জাল তা আমি ঘুনাক্ষরেও টের পাই নি।

আমি কিছু দূর আগানোর পর হঠাৎ করেই আমাকে ঘিরে ধরল পাঁচ জন যুবক। তাদের প্রত্যেকের হাতে চাপাতি ও মোটা মোটা বেতের লাঠি। আমি আচমকা তাদের দেখে ভয় পেয়ে গেলাম। চারপাশের বিল্ডিং গুলোতে আলো নিভে গেছে। কয়েকটা ফ্লাটে দেখা যাচ্ছে মৃদু আলো জ্বলছে। রাস্তাটা অন্ধকারই তবে আবছাভাবে সবই দেখা যাচ্ছে।

যুবকদের দলনেতা বলে উঠল,আপনার হাতের ল্যাপটপটি আমাদের চাই, ঝটপট দিয়ে বাসায় চলে যান, আমরা কিছুই বলব না।

‘দেখো আমার ছেলে এইচ.এস.সি তে অনেক ভালো রেজাল্ট করেছে, তাকে কথা দিয়েছিলাম ভালো করলে ল্যাপটপ উপহার দিব, তোমরা যদি নিয়ে যাও তাহলে……

বাধা দিল দলনেতাটি- অতসত জানি না, প্রানে বাঁচতে চাইলে দিয়ে দ্যান।

আমি আমার মানিব্যাগের প্রায় দশ হাজার টাকা দিয়ে দিতে চাইলাম। অনেক মিনতিও করলাম। কিন্তু তারা তাদের কথায় অটুট।

যুবকটা এবার ক্ষেপে গিয়ে বলল,ঔ শালাকে ধর তো। সঙ্গে সঙ্গে তিন জন এসে আমাকে এমনভাবে ধরল যেন কোরবানির গরুকে ধরেছে। কেউ একজন পিছন দিক থেকে আঘাত করতে লাগলে আমার মেরুদন্ডে,কয়েকটা আঘাত মাথার পিছনেও লাগল। আমি আঘাত সহ্য করতে পারলাম না। অল্প সময়ের মধ্যেই অজ্ঞান হয়ে পরলাম।

আমি যখন চোখ খুলে তাকালান দেখলান যুবকগুলো আমাকে খাটিয়ার মত কিছু একটায় উঠিয়ে কাঁধে করে হেটে চলছে ধু ধু করা বালু প্রান্তরে। খুবই অবাক হয়ে পড়লাম। যুবকেরা হাঁটছে তো হাঁটছে। তাদের যেন ক্লান্তি নেই ,তৃষ্ণা নেই। একটানা রোবটের মত হেটে চলছে। এদিকে আমার শরীর যেন অসার হয়ে পরেছে ,না পারছি কথা বলতে না পারছি নরাচরা করতে। আমি শুধু চারপাশে তাকিয়ে বালি আর মাঝে মাঝে কয়েকটা পাতাবিহীন গাছ দেখতে পাচ্ছি। আমার খাটিয়া থেকে এর চেয়ে বেশী কিছু দেখা যাচ্ছে না।

হঠাৎ করে যুবকরা হাঁটা থামিয়ে দিল। আমার খাটিয়াটা নিচে নামানো হল । দেখতে পেলাম সামনে একটা কূপ ।যুবকরা আমাকে আবার আগের মত করে ধরে নিচে নামালো। তারপর দার করাল অজানা কূপের সামনে। পিছন থেকে কে যেন ধাক্কা দিল আমার পিঠে। আমি সঙ্গে সঙ্গে পাতালের দিকে নেমে যাচ্ছি। আর কিছু ভাবতে পারলাম না চোখ বন্ধ করে রাখলাম। মিটমিট চোখে দেখলাম যুবকরা অট্টহাসিতে ফেটে পরেছেন । কান্না আটকে রাখতে পারছি না । আর ওরা পৈশাচিক হাসি হাসছে।

কিছুক্ষন পর চোখ খুলে দেখলাম আমি এখন মেঘের রাজ্যে ভাসছি। কোন এক অদৃশ্য শক্তিবলে ধীরে ধীরে নিচের দিকে নামছি। যেন প্যারাস্যুট বাধা আছে আমার শরীরে। চারপাশে সাদা সাদা আব ভেসে বেড়াচ্ছে। পাখিরা হাসি হাসি মুখ নিয়ে উড়ে চলছে দিগন্তের পথে। যে পথের শেষ নেই। হালকা বাতাশে শরীরটা দুলছে। নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলাম বিশাল এক অপরুপ দৃশ্য। ঢাকা শহরকে যেন চেনাই যাচ্ছে না। ঢাকার দালান-কোঠা আজ যেন অন্য রকম হয়ে গেছে।

প্রায় কতক্ষন পর নিচে নামলাম বলতে পারবো না। দেখলাম একটি দু’তলা বিল্ডিং এর সামনে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিল্ডিংটি যেন রুপকথার রাজ্য থেকে এখানে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। সামনের অংশ সুন্দর কারুকার্যে বেষ্টিত। বাড়ির সামনে সুন্দর গোছানো বাগান। বাগানের মাঝখান বরাবর চলে গেছে সাপের মত পাচানো পাকা রাস্তা, যা একদম গেটের সামনে গিয়ে থেমেছে।

আকাশের চাঁদ এখন পশ্চিম দিকে হেলে পড়েছে। তার হালকা আলোয় আমি রুপকথা থেকে উঠে আসা এই বাড়িটি দেখতে পাচ্ছি। চারদিকে মিষ্টি বাতাস বইতে শুরু করেছে। এত সুন্দর পরিবেশ আমি আগে কখনও উপভোগ করি নি। বাড়িটি থেকে বের হলাম। দেখলাম ডান পাশে এক অরন্য আর বাম পাশে ঢাকা শহর। কিন্তু ঢাকা শহর আমি ছোট বেলা থেকে যেমন দেখেছি এটা তেমন নয়। তাই ভাবতে কষ্ট হল এটা আমার প্রিয় সেই ঢাকা। যেখানে আমার স্ত্রী আমাকে আশ্বিক বলে ডাকত। আমার আসল নাম আসলে আসিফ। আমার স্ত্রীর নাম প্রিয়া বলে সে আমাকে ঐ নামে ডাকত। এমন পরিবেশে আমি আমার স্ত্রীকে অনুভব করলাম। সে থাকলে কতই না ভাল হত। দুই জন মিলে অরণ্যের পথে হাটা শুরু করতাম। রাস্তা শেষ হলে তবেই বিশ্রামের জন্য বসতাম।

আমার স্বপ্ন হঠাৎ করে ভেঙ্গে গেল এক জনের তীব্র চিৎকারে। আমি যে বাড়িটির সামনে দাড়ানো তার ভিতর থেকে চিৎকারটি এল। আমি দেখার জন্য সাপের মত পথে পা বাড়ালাম। গেটের সামনে গিয়ে দরজায় কড়া নারলাম। এক জন বৃদ্ধা এসে ঘর খুলে দিল বেশ খানিকটা সময় পর। সে আমাকে প্রশ্ন করল না কেন আমি তার বাসায় এলাম। মনে হল আমার এখানেই আসার কথা। সে মনে হয় আমাকে চিনে। তার অভিব্যক্তি দেখে তাই মনে হল। মৃদু হেসে আমাকে ঘরে ঢুকতে বলল। যে বাড়িটাকে এতক্ষন নীরব মনে হয়েছিল। ভিতরে ঢুকে ঠিক তার উল্টা ধারনা হল। অনেক মানুষ বিশাল এক হল রুমে বসে আছে। সবাই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। মনে হল কোন পার্টি চলছে। তেমনই আয়োজন। এবার বৃদ্ধাটির দিকে সোজা তাকালাম। দেখে মনে হল সে অন্ধ। তবে অনেক দিনের অভিজ্ঞতার জন্য বোধ হয় এই বাড়ির আনাচে-কানাচে তার চেনা হয়ে গেছে। তাই তার চলতে অসুবিধা হয় না। কিন্তু তাকে দেখে মনে হল সে আমাকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে।

''এই বাড়িতে কি কোন অনুষ্ঠান?''

বৃদ্ধা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকানোর ভাব করে বলল, সে কি, তুমি জানো না।

''না, মানে একটা চিৎকার শুনে মনে হল কেউ বিপদে পড়েছে। তাই আসলাম।''

বৃদ্ধা কিছু না বলে আমাকে এক কোনে বসিয়ে উধাও হয়ে গেল। ধীরে ধীরে চারপাশটা ভাল মত লক্ষ্য করলাম। আমার থেকে দূরে এক জনের সাথে চোখা-চোখি হওয়াতে বুঝতে পারলাম এই লোকটিও অন্ধ। দৃষ্টিশক্তিহীন একজন লোক এমন পার্টিতে এসে কিভাবে ইনজয় করে।

ছোট একটা স্টেজে একটা মেয়ে হঠাৎ করে উঠে গান গাওয়া শুরু করল। মেয়েটির চেহারায় যেমন মাধুর্য তেমনি তার গলার স্বরও মিষ্টি। তবে এই মেয়েটিও অন্ধ। মনে মনে কষ্ট পেলাম। এত সুন্দর যৌবনাময় একটি মেয়ে চোখে দেখতে পারে না। কয়েকজন গানের তালে তালে নাচ শুরু করল। যাদের নাচতে দেখলাম তারাও চোখে দেখে না। আমি এবার একটু অপ্রস্তুত হলাম। এত সুন্দর সুন্দর মানুষ তারা কি কেউ চোখে দেখে না। না তাদের সব কিছু দেখা বাড়ন। মনে হল অন্ধদের বাড়িতে চলে এসেছি।

কিছুক্ষন পর বৃদ্ধাটি কোথায় থেকে এসে আমাকে বলল,'' চলুন, আপনাকে আমাদের মালিক ডাকছে।''

'' কেন?''

'' সেটা গেলেই বুঝতে পারবেন।''

আমি উঠে পড়লাম। তার পিছু পিছু হাঁটতে শুরু করলাম। হলরুমটা পাড় হয়ে ছোট করিডর হয়ে খোলা দরজার সামনে দাড়ালাম। বৃদ্ধা আমাকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে ভিতরে ঢুকতে বলল।

আমি ভিতরে প্রবেশ করলাম। দেখলাম এক বৃদ্ধ একটি সিংহাসনের মত চেয়ারে বসে আছে। রুমটা যতটা ছোট ভেবেছিলাম ততটা নয়। মোটামুটি বড়ই বলা চলে। বৃদ্ধটি চারপাশে আগের দিনে রাজাদের মন্ত্রী সেনাপতির মত অনেকেই বসে আছে। আমি ঢুকে একটা সালাম দিলাম।

'' তুমি নাকি চোখে দেখতে পাও?''

সরাসরি প্রশ্ন করলেন তিনি। এমন প্রশ্নের উত্তরে কি বলব ভেবে পেলাম না।

'' কথা বলছ না কেন?''

'' জ্বি, জনাব। কিন্তু এমন প্রশ্নের মানে কি? আপনিও তো চোখে দেখেন। তাই নয় কি?''

যুবক টাইপের এক লোক রেগে গিয়ে বলল,'' কি রাজার মুখের উপর কথা''

আরেকজন,'' আমাদের এই শহরে কোন লোকেরই চোখের অধিকার নাই।''

''কি বলতে চান''

'' হ্যা ও ঠিকই বলেছে। আমি আর আমার রাজসভার লোকজন ছাড়া আর কেউ চোখে দেখার অধিকার রাখে না। এর জন্যই এই শহরের নাম অন্ধদের শহর।''

মনে মনে বললাম এ কোথায় আসলাম। যুবকরা কি আমাকে ফাদে ফেলার জন্যই এমন এক আজব শহরে ফেলে গেছে।

'' কিন্তু আপনি কত বড় খারাপ কাজ করছেন সেটা কি ভেবে দেখেছেন।''

'' আমার কাজ আমি ভাল ভাবেই বুঝি। তোমাকে বোঝাতে হবে না বেয়াদব।''

'' সবাইকে আপনি অন্ধ বানিয়ে একা একা সৌন্দর্য উপভোগ করবেন এটা তো ঠিক না। একটু আগে মনে হয় কারো সর্বনাশ করেছেন।''

রাজা হো হো করে হেসে উঠল। তারপর সবাই। রুমটা কেঁপে উঠল হাসিরে বেগে। হাসি থামিয়েই রাজা আমাকে আটক করার জন্য নির্দেশ দিল। আমি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হলাম। তারা আমাকে এক বন্ধীখানায় নিয়ে গেল। সেখানে আমার মত আরো কয়েকজন ছিল।

সারারাত আমার ঘুম হল না। সকালে আবার সেনাবাহিনীর সদস্যরা আমাকে নিয়ে অন্য ঘরে চলল। আমার হাত-পা বেধে ফেলা হল। আমি চিৎকার করছি। কিন্তু কেউ আমার স্বর শুনল না। এক জল্লাদ এসে আমার সামনে দাড়ালো। ভয়ে আমার দম বন্ধ হয়ে গেল। তার হাতের দিকে তাকিয়ে আমি আরো ভয় পেয়ে গেলাম। তার হাতে চকচক করছে একটি ছুরি। কিছুক্ষন পর রাজা আসল। আমাকে বলল তুমি এখন থেকে অন্ধদের শহরের বাসিন্দা হয়ে যাবে সারা জীবনের জন্য। জল্লাদ ধীরে ধীরে আমার দিকে আসছে। ততই আমার হৃদপিন্ড দ্রুত থেকে দ্রুততর হচ্ছে। সে এক সময় আমার চোখের ভিতর তার ছুরি ঢুকিয়ে দিল।

আমার জ্ঞান ফিরার সাথে সাথে অনেক লোকের শব্দ শুনতে পেলাম। উঠে বসলাম। কেউ একজন বলে উঠল। দেখ দেখ জ্ঞান ফিরেছে। ডাক্তারকে খবর দাও। ডাক্তার এসে আমার চোখ থেকে ব্যান্ডেজ খুলতে লাগল। খোলা শেষে বলল ধীরে ধীরে তাকানোর চেষ্টা করুন। আমি চেষ্টা করলাম কিনা জানি না। তবে সামনে কালো রং ছাড়া কিছু দেখতে পেলাম না। আমার ছেলে আমাকে প্রশ্ন করল বাবা আমাকে দেখতে পাচ্ছো তো। আমি উত্তর দিলাম না। মনে মনে বললাম অন্ধদের শহরের রাজাই ঠিক বলেছে আমি এখন থেকে তাদের শহরের বাসিন্দা।



মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা মে, ২০১৫ বিকাল ৩:০৯

নতুন অভিনেতা বলেছেন: খুব ভালো লাগল ..বিষয়টি খুবই সুন্দর.. তবে গল্পটি আরেকবার রি-রাইট করলে আরো ভালো লাগবে....

০২ রা মে, ২০১৫ বিকাল ৩:১৯

সন্যাসী পিপড়া বলেছেন: আপনার কথা মাথায় থাকবে। ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

২| ০২ রা মে, ২০১৫ বিকাল ৩:১৭

হাসান মাহবুব বলেছেন: দারুণ!

০২ রা মে, ২০১৫ বিকাল ৩:১৯

সন্যাসী পিপড়া বলেছেন: ধন্যবাদ> হাসান ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.