![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দূর ঐ নীল আকাশে, তারা-নক্ষত্রের মতই হাজার হাজার গল্প ঝুলে রয়েছে, আমি সেই গল্পগুলোই বলতে চাই।
বর্ষাকাল। একটু পর পর বৃষ্টি হচ্ছে। দিনের বেশির ভাগ সময় আকাশে মেঘের আনাগোনা। বৃষ্টিশেষে আকাশে মাঝে মাঝে রংধনু দেখা যায়। আবার মাঝে মাঝে শুধুই নীল আকাশ। তবে আজকের দিনটি শুরু হয়েছিল অন্যভাবে। সকালে তাজা রৌদ্রতে সবাই ভেবেছিল আজকে বৃষ্টি ছুটি নিয়েছে। কিন্তু দুপুর হতেই আকাশে কোন এক আনারি শিশু তার পেন্সিল দিয়ে কালো কালো মেঘ এঁকে দিয়েছে।
আজ শুক্রবার। আমি বাসায় বসে বসে গ্রাবিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের অগাস্টের অপচ্ছায়া গল্পটি পড়ে মাত্র শেষ করেছি। ঠিক তখন বাইরে অনেক লোকের শব্দ শুনে আমি বারান্দায় গেলাম। বাইরে তখন অন্ধকার হয়ে গেছে। বাতাসের তোড়ে বালু, ছেড়া কাগজ পত্র সব ঘুরতে লাগল। অনেক মহিলারা চিৎকার করে বলছে ঝড় আসল। শুনেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। যদিও বর্ষায় ঝড় হওয়ার কথা না। ততক্ষনে তীব্র বাতাসের সাথে টপ টপ করে বৃষ্টির বড় বড় ফোটা পড়তে শুরু করেছে। রিক্সায়ালারা তাদের রিক্সা থামিয়ে মাথায় পলিথিন দিয়ে বসে পড়ল। অন্যান্যরা মুখে রুমাল বা হাত দিয়ে কোন দোকানের সামনে দৌড়ে আশ্রয় নিল। বৃষ্টি প্রবল থেকে প্রবলতর হতে লাগল। দোকানীরা তাদের দোকানের ঝাপি বন্ধ করে দিল। বৃষ্টি আর বাতাসে আমার ঠান্ডা লাগতে শুরু করল।
তবুও আমি বারান্দা থেকে রুমে ঢুকলাম না। হঠাৎ করে ঝড়ের বেগ বেড়ে গেল। আশে-পাশের গাছ গুলোকে যেন ভেঙ্গে তছনছ করে দিবে। মনে হল হঠাৎই কোন দানবের আবির্ভাব ঘটেছে শহরে। কালো আকাশে মাঝে মাঝে আলো ঝলকানি দিয়ে বিদ্যুৎ চমকাতে থাকল। আমার মা আমাকে ভিতরে যেতে বললেন। মাকে দেখে মনে হল কি যেন পাঠ করছেন মনে মনে।
রাত নেমে এল একটু পরেই। আর তখনই শুরু হল সত্যি দানবের আক্রমণ। আমি রুমে ঢুকে একটা মোটা পল শার্ট গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম। আর বৃষ্টির শব্দ শুনতে লাগলাম। নিচে আবার হৈচৈ শুরু হল। সবাই এই বৃষ্টির ভিতরও ছুটছে। আমি আবার বারান্দায় গেলাম। অনেকেই চিৎকার করে বলছে। ''দানব আসছে, দানব আসছে।'' আমি অবাক না হয়ে পাড়লাম না। একটু আগে ঝড়কে দানবের সাথে তুলনা করলাম। আর এখন এরা সত্যি সত্যি দানবের কথা বলে চিৎকার করছে।
এত মানুষ একসাথে দৌড়ে পালাচ্ছে যেন সমুদ্রের ঢেউ সৈকতে এসে আছড়ে পড়ছে। আমি নিজেও একটু ভয় পেয়ে গেলাম।
দূর থেকে গরুর হাম্বা হাম্বা ডাক শোনা যাচ্ছে। '' শহরে এত গরু কোথা থেকে আসল'' মনে মনে ভাবলাম। গরুর ডাক শুনে মনে হল হিংস্র বাঘ। গরুর ক্ষুরের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে স্পষ্ট। তবে মনে হচ্ছে একটা গরুর আওয়াজ। বৃষ্টির দাপটে আর গরুর ডাকে এক ভয়ানক পরিস্থিতির পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে।
আমি হঠাৎ করে গরুটাকে দেখতে পেলাম। দেখে যেন এক ধাক্কা খেলাম। এত বড় গরু আমি জীবনে দেখি নি। কম করে ২০ ফুট উচ্চতার গরুটি যখন এক পা সামনের দিকে এগোচ্ছিল, আশপাশের বিল্ডিং গুলো কেঁপে কেঁপে উঠছিল।
ঝড়ের ফলেই কি এই গরুর আবির্ভাব। সাদা রঙ্গের, শিং দুইটি চাঁদের মত বাকানো, স্বাস্থ্যবান গরু। বৃষ্টি আর ঝড়কে অপেক্ষা করেই সে হেঁটে চলছিল আর চারপাশের বিল্ডিং গুলোকে গুতা দিয়ে যাচ্ছিল। তার গুতার ফলে কিছু বিল্ডিং ভেঙ্গে যাচ্ছে আর কিছু শক্তপক্ত বলেই মনে হয় ভাঙ্গছিল না।
আমরা সবাই বাসা থেকে দৌড়ে নিচে নিরাপদে যাওয়ার জন্য ছুটলাম। আমার বাবা অফিসে ছিল তাকে ফোন দিয়ে জানতে পেরেছি সে নিরাপদ স্থানেই আছে। তাই আমি আর মা এক সাথে বের হয়ে সোজা গরু যে দিক থেকে আসছে তার উল্টা দিকে চলতে লাগলাম। এখন বৃষ্টির সাথে সাথে বড় বড় শিলাও পরছে।
মাকে দেখে খুব বিষন্ন মনে হল। মা আমার সাথে হেঁটে কুলাতে পারছে না তাই হাঁটার গতি কমিয়ে দিলাম।
পিছন থেকে একজন দৌড়ে এসে বলল,'' ভাই আপনারা কি স্কুলের দিকে যাচ্ছেন।''
'' হ্যা'' কথা বাড়ালাম না।‘’
'' তাহলে যাবেন না আমি শুনেছি গরুটি ঐ দিকেই যাচ্ছে।''
'' মাত্র তো আমাদের বাসার ঐদিকে দেখে আসলাম।''
'' গরুটি নাকি লাফিয়ে লাফিয়ে সব বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে স্কুলের দিকেই গেছে।''
'' বলেন কি তাহলে আবার বাসার দিকেই যাই।'' বলেই মাকে নিয়ে আবার বাসার পথে হাঁটা শুরু করলাম।
পথে হাঁটতে হাঁটতে মাকে আমাকে বলল,'' কি কোন পথে এলাম।''
'' ঠিক পথেই মা। সব ভেঙ্গে ফেলেছে তো তাই তুমি চিনতে পারছো না।''
আশে-পাশের শুধু ইট আর রডের ছড়াছড়ি, বাড়ি ঘর যা আছে সেগুলোর অবস্থাও করুন নড়বড়ে। কেউ একটু ঝাকি দিলেই পড়ে যাবে। সব মানুষ কান্না কাটি শুরু করে দিয়েছে। আমি স্বপ্ন দেখছি না বাস্তবে আছি সেই চিন্তা করতে করতে বাড়ির সামনে চলে এলাম।
ভাগ্নিস আমাদের বাড়ির তেমন ক্ষতি হয় নি। শুধু ছাদের দিকে একটা শিং এর আঘাত দেখতে পেলাম।
-------------------------------------------চলবে...।
©somewhere in net ltd.