নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দূর ঐ নীল আকাশে, তারা-নক্ষত্রের মতই হাজার হাজার গল্প ঝুলে রয়েছে, আমি সেই গল্পগুলোই বলতে চাই।

সন্যাসী পিপড়া

দূর ঐ নীল আকাশে, তারা-নক্ষত্রের মতই হাজার হাজার গল্প ঝুলে রয়েছে, আমি সেই গল্পগুলোই বলতে চাই।

সন্যাসী পিপড়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্প:মধ্যরাতের ডাক্তার

১১ ই জুন, ২০১৫ বিকাল ৫:৩১


ভীতিবিহ্বল চোখের দিকে তাকিয়ে, ঠোটের উপর আঙুল চেপে বললাম,'' চিন্তা করার কিছু নেই। আমি কিছুক্ষণ পরই ফিরব।''
উঠানে চলে গেলাম। চিন্তায় আচ্ছন্ন মনকে শান্তনা দিতে পারছি না। এতরাতে কোন ডাক্তারকে পাবো কিনা। উঠান থেকে মৃদু গুঙানির শব্দ শুনতে পেলাম। মনকে শক্ত করে এই গাঢ় অন্ধকারে হারিকেন হাতে নিয়ে পথ চলতে শুরু করলাম। ওকে একা ফেলে আসতেও মন বাধা দিচ্ছিল। কে জানে যদি আমি ফেরার আগেই ওর কিছু হয়ে যায়। তখন নিজেকে কি বলে বোঝাবো।
হারিকেনের আশে-পাশে পোকামাকড় লাফালাফি করছে। ঝোপঝাড়ে জোনাকি পোকার ঝাক জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। দু’টো জ্বলজ্বল করা চোখ, চোখের সামনে ভেসে উঠল। একটু যেন ঘাবরে গেলাম। পরে বুঝতে পারলাম, আরেহ এতো বাঘের মাসি। ডাক্তারের বাড়ি মাইল খানেক দূর।
মূল রাস্তায় উঠার পর চিন্তা যেন বেড়ে গেল। ডাক্তারের বাড়ি একেবারে জঙ্গলের ভিতর। মূল রাস্তা থেকে নেমে খুব সাবধানে হাটতে হল। ছোট পথটাতে অনেক কাটা। ডাক্তারের বাড়ি ঘাটে পৌছে হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি দেড়টা বেজে গেছে। তার বাড়ির উঠানে পৌছে ডাক দিলাম।
'' ডাক্তারসাব বাড়ি আছেন নাকি, ও ডাক্তারসাব। ''
ভিতর থেকে ডাক্তার তখনও কেউ সারা দিল না। প্রায় দুই তিন বার ডাকার পর ভিতর থেকে আওয়াজ এল, '' ক্যারা, এত রাইতে।''
'' আমি মুজ্জাফর।''
ডাক্তার আমাকে চিনে। তাই কথা না বারিয়ে বাইরে আসলেন। তার শরীরে দরদর করে ঘাম ঝরছিল। মনে হয়েছে যেন একটু আগে ক্ষেতে কাজ করেছে। '' কি দরকার।'' একটু যেন রেগে গেছেন।
'' আমার বউটার অনেক ব্যাথা। ৭ মাস হইছে। একটু চলেন।''
'' এত রাইতে কেমনে যাই।''
'' দয়া করুন। আশে-পাশে তো ক্লিনিক নাই। ঢাকায় থাকলে তো সমস্যা হত না।''
'' হ বুঝছি। শহরের মানুষ অহন জঙ্গলে আইসা ফান্দে পরছ।''
'' কথা বারায়েন না। চলেন তারাতারি।''
সে ভিতরে ঢুকে গায়ে একটি ঢিলেঢালা জামা ও তার ডাক্তারি ব্যাগটা কাধে নিয়ে বের হলেন।
তার ইচ্ছা না থাকা সত্যেও আমার পিছু নিলেন। তার ব্যাগটা আমিই বহন করছি।
চলতে চলতে ডাক্তার আমাকে জিজ্ঞাসা করল।'' কি মিয়া তুমি নাকি আল্লাহরে বিশ্বাস কর না।''
আমি চুপ করে থাকলাম। এই মুহূর্তে এইসব বলার মানে কি খুজে পেলাম না।
'' হুনো মিয়া বিজ্ঞান পড়ছ তাতে কি, তাই বইল্যা সব কিছু উল্টায় ফেলাইবা।''
'' ভাই আমি আমার বিশ্বাস নিয়ে থাকি। কারো সাথেও নাই পাছেও নাই।''
‘‘ হেউডা তোমার খুশি। তবে মনে রাইখবা সব কিছু কিন্তু তিনিই নিয়ন্ত্রন করেন। তুমি দুই দিনের পোলা কি বুঝবা।
জানো তোমারে মারনের জন্যে কত মানুষ ঘুরতেছে। এমনও বলা আছে যে তোমারে পাইবো হেই যেন শ্যাষ কইরা দেয়।''
‘‘ তাই নাকি। আপনারা কি তাহলে বিজ্ঞান বিশ্বাস করেন না।’’
‘‘ করুম না ক্যান। কও দেহি। আল্লাহই তো বিজ্ঞানীদের যেই ভাবে সব কিছু বানাইতে কইছে তারা হেইভাবে বানাইছে।’’
‘‘ কে বলল? বিজ্ঞানী স্টেফিন হকিং বিগ ব্যাঙ আবিষ্কার করে বলছে, পৃথিবীর সৃষ্টি রহস্য। ডারউইন সাহেব বলেছেন কিভাবে বানর থেকে মানষের সৃষ্টি। এবং এগুলোর প্রমাণও আছে।’’
‘‘ তাইলে কি বল ধর্ম-কর্মের দরকার নাই।’’
‘‘ তা কেন হবে। যদি না সেখানে রক্তপাতের প্রয়োজন হয় তাহলে অবশ্যই ধর্ম পালর করা জরুরী।’’
আমরা কথা বলতে বলতে প্রায় বাড়ি কাছাকাছি পৌছে গেলাম। ডাক্তারকে একটু হতাশ মনে হল। আমি কথা বারালাম না। ঘাট দিয়ে উঠার সময় তাকে ধরে উঠালাম।
বাড়ি পৌছে দেখি মৌ আগের মতই ব্যাথায় কাতরাচ্ছে। ডাক্তার একটু হাতের পালস দেখেই বলল,'' ব্যাথার জন্যে একটা সুই দিয়োন লাগব।''
''কিসের ইনজেকশন। ''
'' ব্যাথার জন্যেই।''
আমি কিছু বললাম না। এতদিন ধরে ডাক্তারি করে একটু হলেও জ্ঞান আছে। সে ইনজেকশন রেডি করে মৌয়ের হাতে দিয়ে দিল। '' আমি যাই কিছুক্ষণের মদ্যেই ভালা হয়্যা যাইব।''
দেখলাম মৌয়ের একটু যেন ব্যাথা কমল। আমারও মন থেকে একটা আটকে থাকা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে বাতাসে মিশে গেল।
প্রায় আধঘন্টা পর লক্ষ্য করলাম। মৌ নিশ্বাস নিচ্ছে না। ওর গলায় হাত দিয়ে দেখলাম। বুকে মাথা রেখে দেখলাম। কিন্তু নিঃশ্বাস যেন আটকে গেছে ওর। আমি আর কিছু ভাবতে পারলাম না। চোখ টলটল করে পানি পড়তে লাগল।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৫

প্রামানিক বলেছেন: মর্মান্তিক ঘটনা। হাতুরে ডাক্তারদের

২| ১১ ই জুন, ২০১৫ রাত ১০:১৮

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: অনেক কিছু ঘটে গেল মুহূর্তেই যেন| কাটকাট গল্প| কিন্তু গ্রামের রাতের যে বর্ণনাটা দিলেন তা বিভূতিভূষণের লেখার সাথে তুলনীয়| সমাপ্তিটাই সবচেয়ে সুন্দর এই গল্পের যদিও মর্মান্তিক

৩| ১৮ ই জুন, ২০১৫ রাত ১২:০৬

নূর আলম হিরণ বলেছেন: মৌয়ের মৃত্যুর সাথ.. " আপনাকে মারার জন্য লোক ঘুরতেছে এই কথার যোগসুত্র আছে কি "?

০১ লা জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:৫৮

সন্যাসী পিপড়া বলেছেন: আপনি উত্তর খুজতে চান তাহলে আছে। আর যদি না চান তাহলে বাদ দিন। এইসব প্রশ্নের উত্তর না খুজাই ভাল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.