![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দূর ঐ নীল আকাশে, তারা-নক্ষত্রের মতই হাজার হাজার গল্প ঝুলে রয়েছে, আমি সেই গল্পগুলোই বলতে চাই।
আমি ঠিক করলাম যে বুড়িগঙ্গা নদীই আমার জন্য একমাত্র বসবাসের যোগ্য। কারণ নিজের জন্য অন্য কোন আবাস এখন কল্পনা করতে পারছি না। প্রচন্ড বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে গেছি। পথে কাদার আন্তরণে কতবার যে নিজেকে সপে দিতে হয়েছে বলা মুশকিল। ভয়ে বুক দূরদূর করছে। কিন্তু কিছু করার নেই। এই পৃথিবীতে আমার আর এক দন্ডও থাকতে ইচ্ছে করছে না। ওপারে গিয়ে কি হবে জানার জন্য উদ্বিগ্ন নই। হয়ত বীভৎস জীবন আমার জন্য অপেক্ষা করছে। এই সব ভাবতে ভাবতে আমি জলে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্মত হলাম। যখন ভাবলাম আহা কি করলাম দেখি আমি পিচঢালা ব্রিজেই দাড়িয়ে আছি। কেউ আমার ঘাড় চেপে ধরে।
এটার কি কোন দরকার আছে-- লোকটি গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠল।
আমি খুবই বিস্মিত পিছন দিকে ঘুরে তাকাই। মনে মনে খানিকটা খুশিই হয়েছিলাম। দেখতে পেলাম, আমার সামনে দারিয়ে আছে এক ছোটখাট মধ্যবয়সী লোক। তাকে দেখে যে কেউ বিদেশী বলে ভুল করবে নিশ্চিত। তার শরীরে মলিন কাপড়। মুখে একগুচ্ছ দাড়ি। মুখে গাম্ভীর্য।
-তুমি কি করতে যাচ্ছিলে ধারণা আছে? কোন এক মহাপুরুষের মত বলে আমার চোখের দিকে তাকালেন। তোমার কি সমস্যা, আমাকে বল। আমি সমাধান করার চেষ্টা করব। আমি চুপ করে সব শুনলাম কিছু বলতে পারছি না। সে আমাকে তার সাথে যেতে বলল। কোন কিছু না ভেবে তার পিছু নিলাম। একটা সরু পথে ধরে হেটে চলেছি। রাস্তাটির আশে-পাশে থুপথুপে কাদা যা আমার জুতাতে লেগে যাচ্ছিল। ইটের রাস্তা। জায়গায় জায়গায় ইট উঠে গেছে। আলগা ইটে পা পরলেই কাদা-মাখা পানি এসে আমার দামী প্যান্টটা ময়লা করে দিয়ে হাসছে, যেন উপহাস করছে। আশে-পাশের দালানগুলো পুরানো। তাদের দেয়ালে শেওলা পরে সবুজ রঙ ধারণ করেছে। দেয়ালের জায়গায় জায়গায় খাওয়া খাওয়া যেন বাচ্চারা খামছে উঠিয়ে ফেলেছে কারও চামড়া।
এমন সংকীর্ণ পথে চলতে চলতে এক সময় আমরা দুজনে একটা মাঝারি আকৃতির প্রাচীরের সামনে এসে থামলাম। সে আমার দিকে তাকিয়ে বলে, চল এটা আমার বাড়ি। জানি ভাল লাগবে না। কিন্তু তোমার জন্য এর চেয়ে ভাল ব্যবস্থা করতে পারব না।
সমস্যা নেই। জীবনে এমন অভিজ্ঞতা দরকার আছে। চলুন চলুন। ভিতরে যাই। আমি চাচ্ছি ভিতরে ঢুকে আগে কিছু গলদকরণ করি।
ভাঙাচুরা দরজা দিয়ে ঢুকতে গিয়ে আমার টি-শার্টের একটা অংশ ছিরে গেল। কিন্তু আমলে নিলাম না। এগিয়ে চললাম। ছোট বাড়ি। এ বাড়িতেও শেওলার অভাব নেই। অসচেতন ভাবে চলতে গেলে হোচট খাওয়া অস্বাভাবিক নয়। দেয়ালের অবস্থা একেবারে করুণ। ভাঙন লেগে গেছে তার প্রত্যেকটা অংশে। ভূমিকম্পের মাত্রা যদি ১-২ হয় তাতেই এই দেয়ালগুলো ভেঙে পরে যাবে নিশ্চিত।
খানিকটা হেটেই রুমে প্রবেশ করলাম। একটা সুন্দর গন্ধে ভরে উঠল চারদিক। একটু আগে কেউ হয়ত কোন ব্র্যান্ডের এয়ার ফ্রেসনার স্প্রে করেছে এই ঘরে। আমার মনটা ভরে গেল। এই সুগন্ধী এমনই পাগল করা যে আমি একটু আগে কি করতে যাচ্ছিলাম বা কি হয়েছিল ভুলে গেলাম। লোকটা আমাকে একটি কাঠের চেয়ারে বসতে বলে ভিতরে চলে গেল।
আমি রুমটাকে পর্যবেক্ষণ করে যা দেখতে পেলাম। প্রথমত এই ঘরটা খুব ছোট বড়জোর পাঁচ জন বসতে পারবেন। ডানে জানালার পাশে একটি টেবিল। টেবিলটিতে কোন অলক্লথ নেই। কাল রং দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। চকচক করছে পূর্নিমার আলোতে।
টেবিল থেকে দূরে দুইটি চেয়ার একটি ঠিক আমার সামনাসামনি ও অন্যটিতে নিজে বসে আছি। ঘরের প্রত্যেক কোনায় কেন যেন লাল রঙ মেখে দেওয়া হয়েছে। পশ্চিম কোনা থেকে দুইটি তেলাপোকা হরহর করে বের হয়েই আমার দিকে আসতে থাকল। তখন লোকটা এসে হাজির হল। সে তেলাপোকাদের দেখে বলে উঠল, যা যা। শয়তানগুলো ভাগ বলছি। তাহলে কিন্তু খবর আছে। তার কথা শুনে যেন তেলাপোকাগুলো ভয় পেল। সঙ্গে সঙ্গে অন্যদিকে গিয়ে অদৃশ্য হয়।
লোকটা আমার মুখোমুখি হয়ে বলে, তোমার নাম কি? আমি ডাক নামটি বললাম।
এখন লোকটা একটা চাদর গায়ে জড়িয়ে এসেছে। বৃষ্টিতে হালকা শীত শীত করছে। আমার শরীরও শীতে আড়ষ্ট। সে আমার গায়ে হাত ভুলিয়ে ভুলিয়ে বলে, দেখো তুমি এখন ছোট মানুষ যা করতে গিয়েছিলে তা কিন্তু জঘন্য রকম খারাপ কাজ। তবে বীরের কাজ।
তার ঠান্ডা হাতের স্পর্শে আমার শরীর কেঁপে উঠল। সে খুব দ্রুত নিঃশ্বাস নিয়ে কথা বলছে।
শোনো, ফাতাউর। সুন্দর তার উচ্চারণ ভঙ্গি।
তোমার সমস্যাটা বল এবার। তারপর দেখি কিছু করতে পারি কিনা।
আমি ধীর সুরে শুরু করলাম, আমার বাবা একজন বিশাল ব্যবসী। আমাদের পূর্বপুরুষদের আভিজাত্য থাকা সত্ত্বেও সে শুধু অর্থের লোভে একের পর এক খারাপ কাজ করে যাচ্ছিল। আমি তাকে বাধা দেই কিন্তু সে আমাকে গ্রাহ্য করে না। আমার মা ছোট থাকতেই মারা গিয়েছিলেন। তাই মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত এক শিশু আমি। ভেবেছিলাম বাবা যেহেতু আবার বিয়ে করেন নি, নিশ্চয় আমাকে সৎ মায়ের কাছে যাতে হেস্ত নেস্ত হতে না হয় সে জন্য। অনতিবিলম্বে আমি আবিষ্কার করলাম যে এইসব তার লোকদেখানো ভালবাসা।
তাকে বিভিন্ন সময় একেক ধরণের মহিলার সাথে দেখতে পেয়ে আমার সন্দেহ জাগল। বাবাকে জিজ্ঞাসা করায় সে উত্তর দিল, ব্যবসার কাজে তাদের সাথে সম্পর্ক রাখতে হয়। কিন্তু কিছুদিন পর যখন এক কাকার সাহায্যে জানতে পারলাম বাবার কুকৃর্তির কথা। সবচেয়ে যে বিষয়টা আমাকে ব্যথিত করল..। বলে থেমে গেলাম।
থামলে কেন? বলে যাও।
জানতে পারলাম আমার বাবাই মাকে খুন করেছে। মা যখন জানতে পারে তার সব কুকৃর্তির কথা। তারপর বাবাকে তো আর খুন করা যায় না। তাই নিজেকেই শেষ করতে বুড়িগঙ্গায় ছুটি যাই।
আমি যখন কথাগুলো শেষ করে করুণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলি, এমন অবস্থায় আমার কিই বা করার ছিল বলুন।
হ্যা, আমি তোমার হতাশার কারণ বুঝতে পারছি। জানো তো কাজে ডুবে থাকলে তোমাকে আজ এখানে বসে থাকতে হত না।
তাহলে এখন কি করব আমি।
সমাধান একটাই তুমি আমার সাথে কাজে লেগে পরো দেখো সব হতাশা কেটে যাবে।
কি কাজ?
আমি যা করি।
কি কাজ করেন?
আমার সখ হল আত্মাদের ধরে ধরে তেলাপোকায় পরিণত করা। শুনেই একটা ঝাকি খেলাম। কি বলছে লোকটা পাগল নাকি।
তোমাকে শিখিয়ে দেওয়া হবে কিভাবে আত্মা ধরা যায়।
আমি কি পারব? এবার রেহাই পাওয়ার জন্য বললাম।
আরেহ, পারবে পারবে। তোমাকে দিয়ে হবে। আজ রাতটা বিশ্রাম কর। কাল রাত থেকে শুরু হবে তোমার কাজ।
এইসব কথা শুনে আমার বমি বমি ভাব হল। এর চেয়ে বরং মরণ যেন ভাল ছিল। আত্মা নিয়ে কারবার করতে হবে। ভুতে শুনলেও হাসবে। আবার ঝপঝপ করে বৃষ্টি নামতে শুরু করল। বৃষ্টির শব্দগুলোও আমার কাছে দুর্বোধ্য। যেখানে বৃষ্টি নামলে মনে কবি কবি ভাব চলে আসত। মাঝে মাঝে বৃষ্টির দিনে দুই-চার লাইন কবিতা লিখেছিলাম মনে পরে।
শোনো, আজ এমনিতেই বৃষ্টির দিন আত্মারা বের হবে না। কিছু কি খেয়েছো। প্রচন্ড ক্ষুধা থাকা সত্ত্বেও বললাম, আমার ক্ষিধে নেই। আসলে এইসব পাগলাটে কথা শোনার পর ক্ষুধাও মরে ভুত হয়ে গেছে।
সে তার রুমে চলে গেল, আমাকে একটা কাথা আর বালিশ এনে দিয়ে বলে, তুমি এখানেই শুয়ে পর। কাল দেখা হবে। আমি সুবোধ ছেলেটির মত চুপচাপ শুয়ে পরলাম।
ভাঙা দেয়ালের ফাক দিয়ে দুধেল আলো আমার শরীরে এসে খোঁচাতে আড়ম্ভ করল। বিরক্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত না উঠে থাকতে পারলাম না। কিন্তু উঠতে গিয়ে হোচট খেলাম। চেষ্টা করেও উঠতে পারছি না। নিজের দিকে তাকানোর চেষ্টা করে সফল না হয়ে চিত হয়েই শুয়ে চিন্তাকে তারাতে চাইছি। কি হচ্ছে আমার সাথে?
একটু পর একটা দৈত্যকার একজোড়া পা আমার দিকে আসতে দেখলাম। পায়ের নখগুলো বিশাল বিশাল কোদালের মত। স্বপ্ন! না স্বপ্ন না।
লোকটার মুখ ঠিক মত ঠাওর করতে পারছি না। অস্পষ্ঠ। তবু কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে। মৃত্যর কাছাকাছি পৌছে যখন বেঁচে ফিরে এসে কি আবার সেই মৃত্যুপুরীতে ঢুকে পরলাম।
আগের মতই শুয়ে আছি। একটু ঘুরবার চেষ্টা করছি। কিন্তু সম্ভব হচ্ছে না। সামনের দিকে যতদূর দেখতে পাচ্ছি তেলাপোকার ৭-৮টি পা। ঠিক আমার বুকের উপর।
দৈত্যটির হাত এবার আমার দিকে আসছে। বিশাল লোমশ হাত। আঙুল গুলোও কেমন যেন ফ্যাকাসে। গতকাল যেমন লোকটির ফ্যাকাসে আঙুল ছিল।
আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই সে তার দুই আঙুল দিয়ে আমাকে তুলে বলল, হ্যালো ছোট বন্ধু রাতে ভাল ঘুম হয়েছে তো। আমি কথা বলার জন্য মুখ খুললাম কিন্তু কিছু বলতে পারলাম না। আমাকে সে বোতল বন্ধী করে রেখে চলে গেল। যাওয়ার আগে বলে গেল, তোমাকে ভাল মত প্রশিক্ষণ দিতে হবে। যাতে করে আত্মাদের তেলাপোকায় পরিণত করতে পার।
০৩ রা জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:১৫
সন্যাসী পিপড়া বলেছেন: কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ< ভাই।
পরামশের জন্য ধন্যবাদ।আজব গল্প লেখার চেষ্টা করলাম। হয়ত সফল হতে পারি নি।
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:৪৪
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: কি বোঝাতে চেয়েছেন না বুঝলেও এটুকু বুঝলাম, লেখাটা আরও ভালো হতে পারত| ছোট হতে পারত হয়ত আরেকটু| কিন্তু আপনার বাক্যগুলো দারুন| উপমার চমৎকার উপস্থাপনা দেখা যায়