![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দূর ঐ নীল আকাশে, তারা-নক্ষত্রের মতই হাজার হাজার গল্প ঝুলে রয়েছে, আমি সেই গল্পগুলোই বলতে চাই।
জীবনে বন্ধুরা অনেক বলেছে বিয়ে করে এখন থিতু হয়ে যা। কিন্তু শুনি নি। কেন বা শুনবো? আমি পৃথিবী ঘুরে-বেড়াতে পছন্দ করি। বিয়ে করলে কি আর স্বাধীনভাবে ঘুরতে পারতাম। বন্ধুদের আড্ডায় গেলেই একই কথা বারবার উচ্চারিত হত। আমি পাত্তা দিতাম না। ওদের কথা ওরা বলে যাক। আর আমি আমার কাজ করে যাবো।
জানুয়ারি মাস। সেদিন সবে-মাত্র আলাস্কা ঘুরে নিজ দেশে ফিরেছি। সেখানকার ঠান্ডা আবহাওয়া আর মনোরম দৃশ্য দেখে আমি অভিভূত হয়ে ভাষা প্রায় হারিয়ে ফেলেছিলাম। ছোট-দেশ আলাস্কা। জনসংখ্যাও কম মাত্র সাত লাখ ছত্রিশ হাজার সাত'শ বত্রিশ জন। আমাদের দেশের চেয়ে অনেক অনেক গুণ কম। সেদেশে ঘুরতে পেরে খুবই ভাল লাগছে। এখন পরবর্তিতে কোথায় যাবো সেই চিন্তাই করছি। ফটো তুলে সব জমা দিয়েছি। এখন তারা যা করার করুক।
সকালে মাত্র পত্রিকা হাতে নিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিয়েছি। দেখি কনক এসে হাজির। এসেই বলে উঠল, কি করছিস?
-দেখতেই পাচ্ছিস।
-তা তো পাচ্ছি। আমি তো ভেবেছিলাম এবার অন্তত জোড়ায় ফিরে আসবি।
- আবার শুরু করলি।
- না দোস্ত, তোর এই ভবঘুরে জীবন দেখে আমার হিংসে হয়। কতদেশ ঘুরে কাটালি। কতকিছু দেখলি। আর আমরা কি করলাম? ঘোড়ার ঘাস কাটা ছাড়া তো কিছু করতে পারলাম না।
- তা কেন হবে? তোরা তো ভাল আছিস। সংসার করছিস, ঘরে বাচ্চা আছে। যখন তোদের বাবা বাবা বলে ডাকে তখন কিন্তু আমারও হিংসে হয়।
কনক লাফিয়ে উঠে বলল, কাম টু দ্যা পয়েন্ট। চল চল আজই তোর বিয়ে দেবো। নিজে বলেছিস।
- কি সমস্যা? আমার পিছে কেন লেগেছিস।
-তুই নিজে বললি। বুঝলাম নিজে ইচ্ছে করেই ফাঁদে পা দিয়েছি।
মা কনককে চা-নাস্তা দিয়ে গেলেন। আর বললেন, বাবা কিছু মনে করো না দেরি হল।
- কি যে বলেন, আমি তো খেয়েই এসেছি। ওকে বিয়ে দিচ্ছেন না কেন?
আমার দিকে তাকিয়ে বলল সে। মা তখন অগ্নিমূর্তি ধারণ করে বলল, আমি কে? আমার কথা শুনবার কারো সময় আছে। সেবার যখন দেশে ফিরল কত করে বললাম, ঘোরা-ফেরা বাদ দিয়ে বাড়িতেই থাক। তুই একটা মাত্র ছেলে আমার, তোকে ছাড়া কি আমাদের ভাল লাগে। ওর বাবাও কত বুঝালো। কিন্তু ...
-দেখো মা, বিয়ে আমাকে দিয়ে হবে না। শুধু শুধু বকবক করে লাভ নাই।
-এখন তো আমার কথা তোর কানে বিধে। বলেই মা দ্রুত পা ফেলে চলে গেল।
কনককে বললাম, মাকে তো দিলি চেতিয়ে।
- শোন একা একা আর কতদিন। বয়স তো কম হল না।
-তাহলে শোন, তুই কি হুইটনি হসটনের ‘ The greatest love of all’ শুনেছিস। তোকে একটু শোনাই।
আমি সুর করে কয়েক লাইন ওকে শুনালাম।
I decided long ago, never to walk in anyone's shadows
If I fail, if I succeed
At least I'll live as I believe
No matter what they take from me
They can't take away my dignity.
কারো ছায়া’র সাথে হাঁটব না, এটি অনেক আগে থেকেই আমার সিদ্ধান্ত ছিল,
আমি হারি বা জিতি,
কমপক্ষে নিজের মত করে বাঁচতে পারব, যা আমি বিশ্বাস করি
তারা আমার সবকিছু লুট করে নিতে পারে, এটা কোন বিষয় নয়
কিন্তু তারা কখনও আমার সম্মান কেড়ে নিতে পারবে না।
কনক গানটা শুনে চুপ হয়ে খেতে লাগল। আর তেমন কিছু বলল না। আমি পেপার পড়তে পড়তে ওকে জিজ্ঞাসা করলাম, যাক মুখ থেমেছে।
-কিন্তু তোর বাবা-মা'র কথা চিন্তা করে হলেও কিছু করা দরকার।
-তাদের জন্য তো আমি আছিই। তাছাড়া বিয়ে করলেই কি সব সমাধান হয়ে যাবে। বউ তো ভাল নাও হতে পারে। তোর নিজের কথাই চিন্তা কর, বিয়ে করার দুই বছরের মাথায় বাবা-মাকে ছেড়ে ঢাকায় চলে আসলি। লাভ কি হল?
- লাভ-লস হিসেব করে কি লাভ? ঠিক আছে উঠি।
- আরে রাগ করলি নাকি?
কনক কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে গেল। দেখলাম টিসু দিয়ে হাত মুছতে মুছতে বের হচ্ছে।
- দোস্ত যাই রে, একটু কাজ আছে। এখন না গেলে দেরি হয়ে যাবে।
একটু থেমে আবার বলল, আর কথাটা ভেবে দেখিস।
আমি হাসলাম। ওর প্রস্থানের দিকে তাকিয়ে রইলাম। তারপর আবার পেপার পড়ায় মনোযোগ দিলাম।
দুপুরের দিকে কি এক বাংলা চ্যানেল একটি মিউজিকের প্রোগ্রাম হচ্ছে, ইংরেজি গানের। সেটাই দেখতে শুরু করলাম। ভালই লাগল। দুইটি গান শেষ হলে বিজ্ঞাপণ বিরতি দিল। এদেশে এই সমস্যা কতদিন থাকে কে জানে।
আবার শুরু হল, এবারের মিউজিক ভিডিও শুরু হল একটি সমুদ্রে'র দৃশ্য দিয়ে। তারপর একটি মেয়ে গেয়ে উঠল,
My soul will rest in
Your embrace, For I am
Yours, You are mine.
তুমি আমায় জড়িয়ে ধরলে আমার আত্মা শান্তি পায়,
সে জন্যে মনে হয় তুমি আমার, আমি তোমার।
শেষের এই তিনটি লাইন আমার কানে বারবার বাজতে থাকল।
আমার কাছে তখন মনে হল সত্যি তো আমি তার এবং সে আমার। গায়িকাকে এতটাই ভাল লাগল যা বলে বোঝানো যাবে না। এটা তো হিলশন ইউনাইটেডের গান। সেটা সমস্যা না। অনেকে একই গান গাইতে পারে।
আমি নিজেকে সেই সাগরের ঢেউয়ের উপর ভেসে থাকা অবস্থায় আবিষ্কার করলাম। ঢেউ যেন আমাকে বারবার ভাসিয়ে ঔ রমণী’র কাছে নিতে চায়। কিন্তু পিছন থেকে কে যেন বারবার বাধা দেয়। বড় বড় আকৃতির ঢেউগুলো সৈকতে আছড়ে পড়ছে কিন্তু আমি ঢেউয়ে বসে আছি সেটা কোনভাবেই সৈকতে পৌছায় না। শুধু দূর থেকেই তার চুল উড়ার দৃশ্য দেখে নিজেকে শান্তনা দিচ্ছি এখনই তো সৈকতে পৌছাব। সে পা দিয়ে সমুদ্রের পানির উপর হেঁটে বেড়াচ্ছে আর গান গেয়ে চলছে এক মনে। আমাকে লক্ষ্যই করছে না। তার লক্ষ্য আমি বুঝতে পারছি না। কিন্তু নিজেরটা ঠিক করে ফেলেছি তার কাছে যেন মূল্যেই হোক পৌছাতে হবে। তার হাত ধরে বলতে হবে। কিন্তু কি বলব? সেটা তো জানি না। ঢেউ আর তার শরীরের ঢেউয়ের সাথে গুলিয়ে ফেলছি। কোনটা আসল?
গানটা যখন শেষ হল। আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম, বিয়ে করব। মাকে ডেকে জানিয়ে দিলাম। কিন্তু পাত্রীর ব্যাপারে কিছু বললাম না। তাতেই মা খুশি।
মাকে তো বলে দিলাম বিয়ে করব। এখন যদি না করি তাহলে হইচই কান্ড হয়ে যাবে। তাই চুপ করে রইলাম। একটু পর লন্ডনের অফিস থেকে ফোন এল। আমাকে কালই যেতে হবে লন্ডনে।
পরের দিন সবকিছু রেডি করে বাড়ি থেকে বের হলাম। মা এবার হাসি-মুখেই বিদায় দিলেন। জানি না আবার ফিরে এলে কপালে কি আছে। কিন্তু সত্যি কথা হল আমি প্রেমে পড়েছি। কিভাবে পড়লাম জানি না। কিন্তু পড়েছি। কলেজে থাকতে একটি মেয়ে আমাকে প্রপোজ করেছিল কিন্তু বিয়ে করব না বলে অনেক আগেই ঠিক করে রেখেছি তাই তার থেকে দূরেই ছিলাম।
যাকে দেখার পর আমার বুকটা ধুকপুক শুরু করেছে তার কি আর দেখা পাবো? মেয়েটির মুখটি এখনও স্পষ্ট আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। একটু ভুল হবে না তার বর্ণনা দিতে। গভীর চোখের দিকে তাকালে সমুদ্রের গভীরতাকে অনুভব করতে পারি। ঠোটে সব সময় হাসি লেগে ছিল যেন কোনভাবেই তাকে কাঁদানো যাবে এমন হাসি। কালো চুলের ঢেউয়ের কাছে সমুদ্রের ঢেউ কিছুই না। তার সামনে সারা সমুদ্রই হাসির পাত্র।
লন্ডনে পৌছে আমি সবকিছু অফিসে বুঝিয়ে দিয়ে লন্ডনের ব্যস্ত রাস্তায় হাঁটতে লাগলাম অন্যমনস্ক হয়ে। কিছুদূর এগোতেই দেখি সমুদ্রের পাড়ের সেই মেয়েটি। একই পোষাক, একই চাহনী, একই রকমভাবে মুখে হাসি ফুটে রয়েছে। কি তার দেহের গড়ন। দেখে প্রথমটা বিশ্বাস করতে পারলাম না। কিন্তু সত্যি আমি তাকে দেখলাম। কোন এক বন্ধুর সাথে কথা বলতে বলতে যাচ্ছে। আমি তার স্বর চিনি। তার কথাগুলোও সুর হয়ে বের হচ্ছে। গায়িকাদের কথাও গান আমার কাছে মনে হল।
একটু পর দেখি সে আমার দিকে আসছে। এসে সরাসরি আমার চোখের দিকে তাকালে আমি হিপ্টোনাইজ হয়ে গেলাম। সে বলল, তুমি কি সেদিন ঢেউয়ের উপরে বসে বসে লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে দেখছিলে।
- হ্যা, মানে। আমি ভাবলাম সে আমার মনের খবরও জানে। কি সাংঘাতিক!
-কেন?
- তোমাকে চাই।
- চাইলেই কি সব পাওয়া যায়।
- আমি জানি, তুমি কে?
সে হেসে বলল, কে?
- তুমি হচ্ছ সে যে আমার জন্য এতটা বছর অপেক্ষা করে বসে আছো, আর আমি তোমার জন্য। তোমার সেই গানের একটি লাইন মনে পড়ল, ইউ আর মাইন এ্যান্ড আই অ্যাম ইউর।
সে হাসল। হাসতেই থাকল। সে হাসির যেন শেষ হবে না। সারা শহর তার হাসি শুনে থমকে দাড়াল। কিন্তু কেউ কিছু বলতে সাহস পেল না। সবাই সেই হাসি উপভোগ করল। কেউ এসে তাকে অভিবাদন জানাল। কিন্তু কেন বুঝতে পারলাম না।
দেখলাম রাস্তায় ছোট-খাট একটা ভিড়। অনেকেই চিৎকার করছে। কেউ কেউ বলে উঠছে তাড়াতাড়ি নিয়ে আসো। আমি বোকা-বনে গেলাম। কোথায় সে? দেখলাম সেই ভিড়ের মাঝে সবাইকে হাসি মুখে হাতে, ডাইরিতে, নোটবুকে সে কি যেন লিখে দিচ্ছে। বুঝলাম অটোগ্রাফে দিচ্ছে।
আমিও সেদিকে গেলাম। কিন্তু দেরি হয়ে গেছে। ততক্ষণে সে গাড়িতে করে কোথায় যেন মিলিয়ে গেল।
বাড়িতে ফিরে মাকে বলে দিলাম আমার সিদ্ধান্তের কথা। মায়ের মন আবার খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু কিছু করার নাই। যাকে দূর থেকে এতটা ভালবাসি; কাছে গেলে কি ততটা ভালবাসতে পারব? হয়তো কোনদিন সে জানতেই পারবে না কেউ তাকে এতটা ভালবেসেছিল।
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৪:০৯
চাঁদগাজী বলেছেন:
কথার কথা, গল্প নয়