নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দূর ঐ নীল আকাশে, তারা-নক্ষত্রের মতই হাজার হাজার গল্প ঝুলে রয়েছে, আমি সেই গল্পগুলোই বলতে চাই।

সন্যাসী পিপড়া

দূর ঐ নীল আকাশে, তারা-নক্ষত্রের মতই হাজার হাজার গল্প ঝুলে রয়েছে, আমি সেই গল্পগুলোই বলতে চাই।

সন্যাসী পিপড়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন মায়ের সুইসাইড-নোট

০৯ ই জুন, ২০১৬ রাত ১১:২৪

প্রিয় সাইদ,
এই লেখাটা যখন পড়বি, তখন হয়ত আমি বহু দূরে থাকব। যেখান থেকে ফিরে আসা দুরহ ব্যাপার। সূর্য মাত্র লাল হয়ে এসেছে। আমার জীবনের সূর্যও লাল হয়ে গেছে। বেশি সময় লাল থাকবে না; বর্ণহীন হয়ে যাবে অচিরেই।
তোর স্মৃতিগুলো বার বার মনে পড়ছে। বারবার সেগুলো আমার হৃদয়কে ক্ষত-বিক্ষত করে গেছে। যেমন-তুই আর আমি মিলে বারান্দায় বসে যখন চা খেতাম; তুই প্রতিদিন তোর ইউনিভার্সিটিতে কি ঘটেছে-না ঘটেছে সে সব বলতি। মাঝে মাঝে এমন ঘটনা শুনাতি যে না হেসে থাকতে পারতাম না।
তোর বাবা তোর জন্মের আগেই মারা গেছেন। কিন্তু একমাত্র তোর মুখের দিকে তাকিয়েই আমি বেঁচে ছিলাম এতদিন। তোর নানা বলেছিল সেখানে থাকতে; কিন্তু থাকি নি। পাছে তুই বড় হয়ে অন্য কিছু ভাবতে পারিস। তাই নিজেই স্কুলের চাকরির ব্যবস্থা করেছিলাম। সেখান থেকে যা পেতাম তা দিয়ে দুইজনের বেশ ভালই চলছিল।
আসলে কি যে লিখব সেটাই জানি না। আমি তো লেখক নই, তাহলে হয়ত গুছিয়ে লিখতে পারতাম। এখন আমার লেখা এলামেলো হয়ে যাচ্ছে। তা যাক। যে কথাগুলো তোকে বলতে চাই সেগুলো না বলে চলে যাওয়া কি উচিত হবে? কিন্তু সব কি আর বলতে পারব? এত সময় কি আমার আছে?
তুই চাইলে এই নোটটি আমার লাশের সাথে দিয়ে আসতি পারিস। এখানে তো আর কেউ আপনজন নেই। তাই হয়ত এখানকার লোকজন তোকেই খবর দিবে। তুই হয়ত মনে মনে বলবি, মরেও শান্তিতে থাকতে দিল না।
সত্যি কথা বলতে তোর বাবা-মারা যাবার সময় কিছুই রেখে যান নি। যা ছিল তা খুবই সামান্য। তাই আমাকে হাড়-ভাঙা কষ্ট করতে হয়েছে, তোকে মানুষ করতে।
সেবার তোর টাইফয়েড হল; আমি তো ভয়ে কুকড়ে গেলাম। কি করব না করব? ভেবে বাঁচি না। শেষে হাসপাতালে নিলাম, কিন্তু সেখানে তো অনেক খরচ। তাই তোর নানার কাছে হাত-পাততে হল। যদিও সে টাকা এখনও ফেরত দিতে পারি নি। তোকে বলিও নি এতদিন। তুই আবার কি মনে করবি?
তুই চাকরি শুরু করলি, ভেবেছিলাম এবার একটু সুখে-থাকা যাবে। কিন্তু তোর যেন কি হয়ে গেল। আমাকে এখানে রেখে কোথায় যেন চলে গেলি। মাঝে মাঝে দেখতে আসলে অনেক কিছু আনিস। কিন্তু বিশ্বাস কর, তোর মুখ-খানা দেখার জন্যেই আমি সব সময় ব্যাকুল হয়ে থাকি। অন্য কিছু আমার দরকার নেই রে।
দেখলাম তুই গাড়ি কিনেছিস। খুব ভাল। মাঝে মাঝে তুই গল্প করতি, মা তোমার জন্যে বড় হয়ে একটা গাড়ি কিনব। আমরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাব। আমিও বোকার মত বলতাম, ঠিক আছে বাবা।
আসল কথা কিছুই বলা হচ্ছে না। সবকিছু কেমন যেন গোলাটে লাগছে। আমার মাথা চক্কর দিচ্ছে। তুই পাশে থাকলে বলতাম হাসপাতালে নিয়ে যেতে, কিন্তু তুই তো পাশে নেই। আর যারা আছে তারাও আমার মত পঙ্গু।
তোকে নিয়ে কতই না স্বপ্ন দেখতাম। তুই বড় হবি বিয়ে করবি, নাতি-নাতনির সাথে খেলব। আর ও কত কি? একজন মা হিসিবে আমি আর কি চাইব তোর কাছে? কিন্তু তুই কোন কিছু না জানিয়ে আমাকে ফেলে গেলি। এখানে মাঝে মাঝে আমার দম আটকে আসে। তখন মনে হয় আমি বেঁচে নেই। আসলে নিজের প্রতি কোন ফিলিংস কাজ করে না তখন।
এখানকার বাতাসে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। তোর ছোট বেলায় একবার শ্বাস-কষ্টে কি একটা সমস্যা হয়েছিল, তখন সারা দিন-রাত তোর পাশে থাকতে হত। তখন তো তুই ছোট ছিলি তাই ছিলাম।
আমি কি তোর জন্যে এর চেয়ে বেশি কিছু করতে পারতাম। পারতাম না। আমি যে অসহায় ছিলাম। একজন স্ত্রী, স্বামী ছাড়া কিভাবে সারা জীবন পাড় করে দেয় সেটা আমি ছাড়া বা যে ভুক্তভোগী সে ছাড়া অন্য কেউ বুঝবে না।
তুই তো ভাল আসিছ। দেখে আমার খুব ভাল লাগে। তোর গাড়িটাতে আমার চড়তে ইচ্ছে করে কিন্তু বলতে সাহস পাই না। তুই কি বিয়ে করেছিস, জানতে মন চায়। কিন্তু প্রশ্ন করতে পারি না।
যাক অনেক আজে-বাজে কথা লিখে ফেলেছি। আসলে লেখার অনেক কিছুই ছিল কিন্তু কি করব বল, আমার যে সময় ফুরিয়ে আসছে। আর কলম চলবে না। ভাল থাকিসরে।

তোর মা

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জুন, ২০১৬ রাত ১১:৪২

সৈয়দ আবুল ফারাহ্‌ বলেছেন: মা আমি তোমার সাথে আছি, থাকব।

২| ০৯ ই জুন, ২০১৬ রাত ১১:৪৪

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: ডিজলাইক...ঠিক জমেনি...

০৯ ই জুন, ২০১৬ রাত ১১:৫০

সন্যাসী পিপড়া বলেছেন: ধন্যবাদ, জানবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.