নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দূর ঐ নীল আকাশে, তারা-নক্ষত্রের মতই হাজার হাজার গল্প ঝুলে রয়েছে, আমি সেই গল্পগুলোই বলতে চাই।

সন্যাসী পিপড়া

দূর ঐ নীল আকাশে, তারা-নক্ষত্রের মতই হাজার হাজার গল্প ঝুলে রয়েছে, আমি সেই গল্পগুলোই বলতে চাই।

সন্যাসী পিপড়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্প: গোপাল

২২ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১১:৩০

লোকটির নাম গোপাল। কিন্তু তার ভাল নামও আছে। সেই নামটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সে তার নাম নিয়ে সন্তুষ্ট। তার গল্প বলব বলেই লিখতে বসা। সে নিজেই আমার কাছে এসে একদিন তার জীবনের ঘটনাগুলো বলে গেছে। আমাকে দেখলেই সে কিছু বলবে বলবে করেও বলত না যেন। কিন্তু সেদিন আমিই তাকে চেপে ধরলাম, একেবারে মোক্ষম চাপ। বললম, আজ আমাকে বলতেই হবে কি বলতে চাও?
আপনি বড় মানুষ, আপনার সামনে বলতে লজ্জা করে।
তাহলে আমার পিছু নেওয়া ছেড়ে দাও। এইভাবে প্রতিদিন আমার পিছু পিছু আর হাঁটবে না। প্রথম প্রথম ভয় পেয়েছিলাম, জানো।
মাফ করবেন, স্যার। আপনার বাসায় কি একদিন আসতে পারি?
ঠিক আছে, যেদিন খুশি আসবে।
আমাকে ধন্য করলেন স্যার, পরিচিত কেউ আমাকে কোনদিন তার বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে না। আমি আপনার বাড়িতে এসে, আমার জীবনের ঘটনাগুলো খুলে বলব।
আমি তাকে রাস্তায় চা-সিগারেট খাওয়ালাম। সে আরো খুশি হল।
আমি বাসায় যখন গোপালের কথা বললাম, সবাই বিস্ময় প্রকাশ করল। আমি শুধু হাসলাম। রহস্য ফাঁস করলাম না।
কয়েকদিন বাদে গোপাল আমাদের বাসার দরজায় কড়া নাড়ল। আমার স্ত্রী বাসায় ছিলেন না, ছেলেকে তার অংক দেখাচ্ছিলাম আমি, শব্দ শুনে গেট খুললাম, দেখি গোপাল দাঁড়িয়ে আছে আমার সামনে।
ফোন করে আসো নি তো, চিনলে কিভাবে?
আপনার বাসা সবাই চিনে, পথে একজনকে বললাম, সেই রাস্তা বাতলে দিল।
তাকে ঘরে এনে বসালাম। কি খাবে জিজ্ঞাসা করলাম? সে কিছু বলল না। কাজের মেয়েটিকে নাস্তা দিতে বলে, আমি তার সামনে বসলাম।
তাহলে এবার বল, তোমার গল্প।
ঠিক আছে। বাসায় আর কেউ আছে?
না, ছেলেটা পড়ছে। ওর মা একটু বাইরে গেছে।
ও। মনে হয় সে হতাশ হল।
বল, বল। এই সময় কাজের মেয়েটি খাবার নিয়ে আসল।
তাকে খেতে বললাম। সে চায়ের কাপ হাতে নিল। সঙ্গে সঙ্গে চুমুক দিল না যেন ভদ্রতা দেখাচ্ছে।
দুপুরে তোমার জন্যে কি কি করব?
স্যার, তেমন কিছু না করলেও চলবে।
কেন?
আমি গল্প বলেই চলে যাব।
না।
আপনি বললে.....ঠিক আছে আপনার যা খুশি করতে পারেন।
এবার তাহলে শুরু করা যাক।
হ্যা, হ্যা।
সে যেভাবে বলেছে, ঠিক সেইভাবেই তুলে দিচ্ছি। তবে গল্পটা আজব। শুরু করা যাক...
স্যার, তখন আমি মাত্র বি.এ পাশ করেছি। ১৯৯৮ সাল।বন্যায় আমাদের গ্রামে সব ভেসে গেছে। আমাদের বাড়িটাও। আমি তখন ঢাকায় থাকি। বন্যা তাই আমাকে গ্রামে যেতে নিষেধ করে দিয়েছে। আমিও আগ্রহ পাই নি। তবে সবার জন্যে খারাপ লাগছিল খুব।
চায়ের কাপটা রেখে দিয়ে একটা বিস্কুট হাতে নিল।
আমি তখন টিউশনি করাই। তিনটা টিউশনি। বেশ টাকা ইনকাম। তবে বি.এ পাশ করেছি, এখন তো চাকরি দরকার। তাই বিভিন্ন বিজ্ঞাপণ দেখে আবেদন শুরু করি। কয়েক জায়গা থেকে ডাকও পরে কিন্তু চাকরি হয় না। শেষ পর্যন্ত আমি ঠিক করি, দূর চাকরিই করব না। এমন কিছু করব, যেটা অন্য কেউ এর আগে করে নি। তাই মনে মনে ঠিক করলাম, কোন টেকনিক্যাল কাজ শিখে সেই লাইনে থিতু হব। কারণ বি.এ পাশ করে ঘুষ ছাড়া চাকরির উপায় নাই।
গেলাম ইলেকট্রিক্যাল কাজ শিখতে। সেখানে যেদিন ভর্তি হব, দেখি আমাদের কয়েকজন বন্ধুও ভর্তি হতে এসেছে। খানিক হতাশ হলাম। এখানেও দেখি কত লোক। সেখানে আর ভর্তি হলাম না।
বাড়িতে ঘুরতে গেলাম। বাবা বললেন, বাবা চাকরি পেয়েছো?
না, বাবা। তবে হয়ে যাবে।
বাবা আর কিছু না বলে চুপ করেছিলেন। তার হাতে আমার কিছু জমানো টাকা দিয়ে বললাম,চিন্তা কইরেন না। আমার চাকরি হয়ে গেলেই আর অভাব থাকবে না।
সে অলরেডি প্লেটের সব বিস্কুট শেষ করে ফেলেছে।
আমি বললাম, চাকরি কি হল?
মশাই ঘুষ ছাড়া আবার চাকরি, পাগল হয়েছেন?
কিন্তু ঘুষ ছাড়াতো অনেকেই চাকরি করছেন।
হাতে-গোনা দুই-এক জন। যাই হোক, আমি আবার ঢাকায় আসলাম। এবার অন্য চিন্তা মাথায় আসল, সে চিন্তা মাথাতেই কবর দিয়ে দিলাম।
কি ছিল?
মদের ব্যবসা।
কি বল?
হ্যা, তখন আর ভাল চিন্তা মাথায় আসে নি। পরে ভেবে দেখলাম, মদের ব্যবসা করতে হলে অনেক টাকার দরকার।
আমি টিউশনি করানো বাড়িয়ে দিলাম। তখন সারাদিন টিউশনি করাই আর টই টই করে ঘুরে বেড়াই রাজপথে। বেশ টাকা ইনকামও হচ্ছে। ভালই তো।
তাকে বললাম, অনেক গল্প হয়েছে, আবার কিছু খেতে দিব?
সে নিষেধ করল না।
আমি ফল-মূল আনতে বলে, তার সামনে বসলাম। যদিও তার গল্পগুলো আমাকে বেশি টানছে না। তবু ভদ্রতার খাতিরে শুনতে হচ্ছে।
একদিন একটা চাকরির ডাক পড়ল। গেলাম সেখানে। তারা আমাকে ৫০০০০ টাকা দিতে বলল। আমি তাদের বললাম, আমার কাছে এত টাকা নাই, ১০০০০ হলে নিতে পারেন।
সেখানেও আর কিছু হল না। তখন আবার মাস্টার হিসিবে আমার বেশ প্রসার হতে শুরু করেছে। অনেকে গুরুও বলেন।
সে বেশ কিছুক্ষণ একই কথা বারবার ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বলতে লাগল। আমার মনে হচ্ছে তার গল্প শেষ। কিন্তু সে উঠল না। আমিই উঠতে দিলাম না।
দুপুর ২টা। অনেক গল্প বলেছে সে। কিন্তু তেমন ভাল লাগে নি। তবু তাকে খাবার টেবিলে ডেকে আনলাম। তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব খুশি।
দুইজনেই খেতে-খেতে দেশের বিভিন্ন দিক দিয়ে আলোচনা করলাম। এক সময় তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার গল্প কি শেষ?
সে মুখ ভর্তি পোলাও নিয়ে মাথা ডান-বাম করল। আমি কিছু বললাম না। শুধু হাসলাম, সেও হাসল।
সেদিন খাওয়া-দাওয়া শেষ করে সে বিদায় নিয়ে চলে গেল।
আজ তাহলে আসি, আসলে আমার গল্প এখনও অনেক বাকি, অন্য একদিন আপনাকে পুরো গল্প শুনাবো।
আচ্ছা। আবার আসবেন। আপনার গল্প আমি আগ্রহ নিয়ে শুনবো।

কয়েকদিন পর আমি যখন অফিস থেকে বাড়ি ফিরছিলাম, দূরে দেখলাম গোপালকে। তাকে ডাকতে যাব, দেখি সে দ্রুত হাঁটছে। ভাবলাম কোন কাজ আছে, তাই এভাবে হেঁটে যাচ্ছে সে। কিন্তু ভাল মত লক্ষ্য করে দেখলাম, না তার কোন কাজ আছে বলে মনে হয় না, সে কোন এক ভদ্রলোকের পিছু নিয়েছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.