![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দূর ঐ নীল আকাশে, তারা-নক্ষত্রের মতই হাজার হাজার গল্প ঝুলে রয়েছে, আমি সেই গল্পগুলোই বলতে চাই।
বসন্তের এক বিকেলে সুবীর কুমার যখন তার স্নান সেরে পুকুর ঘাট থেকে উঠছিল, ঠিক তখন ঘটনাটি ঘটে গেল এক নিমিষে। সে হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল পুকুর ঘাটায়। ঘটনাটি বিশেষভাবে তাকে নজর কাড়ে নি, কিন্তু তার হৃদপিন্ডকে ধসিয়ে দিয়ে গেছে।
দুপুরবেলা ঘন্টা খানেক ঘুমিয়ে উঠে স্ত্রীকে ভাত আনতে বলে সে বারান্দায় একটা পাটি বিছিয়ে বসে পড়ে। সেখান থেকে পুকুরের স্বচ্ছ জল দেখতে পায় সে। তখনই তার স্নান করার ইচ্ছে জাগে। সে অপেক্ষা করে কখন তার স্ত্রী ভাত নিয়ে আসবে।
তাদের বাড়ি ভরা গাছ-গাছালিতে ভর-পুর। সারাদিন পাখির কিচির-মিচিরের শব্দ শুনে তারা। বিশেষ করে কোকিল গান গেয়ে তাদের মন ভরিয়ে রাখে। বাতাসে গাছের পাতা-গুলো নড়তে দেখা যায়। টিনের উপর বাঁশ এসে ঘষ ঘষ আওয়াজ করে।
কিছুক্ষণ পর তার স্ত্রী ভাত নিয়ে আসে। তার সামনে দিয়ে বলে, নাও খাও। সেই কখন বেলা পড়ে গেছে আর এখন খাচ্ছ। দাড়াও জল এনে দেই। বলে সে জল আনতে টিউবওয়েলে যায়। বারান্দায় বসে সে টিউবওয়েলের শব্দ শুনতে পায়। কিছুক্ষণ একটানা শব্দ হতে থাকে। তারপর এক সময় থেমে যায়। জল এনে একটা গ্লাসে ঢেলে দেয় সে। ততক্ষণে সুবীর কুমার খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। ভাতের লোকমা মুখে পুড়ে সে বলল, বউ তুমি খাইছো নাকি?
হু। বলে সে তার প্রিয়তম স্বামীকে বাতাস করতে যায়, কিন্তু সুবীর নিষেধ করে বলে, তুমি সামনে বইস্যা থাক, এমনিতেই শরীর জুড়াইয়া যাইব। তার স্ত্রী হাসে, কিছু বলে না।
সে খাওয়া শেষ করে প্লেটে হাত ধুয়ে তার গলার গামছা দিয়ে হাত-মুখ মুছে। তার স্ত্রী এঠো প্লেট নিয়ে টিউবওয়েল পাড়ে যায় ধুতে।
খাওয়ার পর তার শরীরে আলস্য এসে যায়। সে একটা উড়া-মুড়ি দিয়ে পুকুর পাড়ে যায়। একটা প্রকান্ড আমগাছের গোড়ায় বসে। পড়ন্ত বিকালের রোদে পুকুরের পানি চিকচিক করে। তার চোখে আসে সেই রোদের প্রতিফলন। সাদা চকচকে দৃশ্য দেখে তার চোখ জুড়ায়। পুকুর পাড়ে এমনিতেই ঠান্ডা আবহাওয়া। তার উপর এখন বাতাস বইতে শুরু করেছে। তার অর্ধ-নগ্ন শরীর এখন জলের মত ঠান্ডা হয়ে গেছে।
অতঃপর সে পুকুরের দিকে যায়; ঘাট একটি মোটা গাছের কান্ড দিয়ে বেধে দেওয়া। সেখানে সে বসে পা দুলিয়ে দেয় পানিতে। আহ! কি আরাম? সে বলে উঠে মনের অজান্তে।
সে ঝাঁপ দিয়ে নামে, এক ডুবে ছেল্লৎ করে পুকুরের মাঝে চলে যায়। ফস করে মাথায় তোলে। স্বচ্ছ পানিতে তার দেহ দেখা যায়। শীতল পানিতে তার শরীরে আলস্য কেটে যায়। তার আর পানি ছেড়ে উঠতে মনে চায় না।
কিন্তু তার স্ত্রী তাকে ডাকে, হুনছো, ত্যাল নাই। বাজারে যাও।
সে চিৎকার বলে, যাইতেছি।
সে ধীরে ধীরে ঘাটলার দিকে যায়, সাতরে সাতরে। পা দিয়ে পানিতে আঘাত করে। জোরে জোরে করে। ইচ্ছে করেই করে। তার ভাল লাগে। ঘাটে এসে আরো কয়েকটা ডুব দেয়।
ঘাটে মাত্র উঠেছে, এমন সময় পুকুরের পানি খলখল করে উঠে। পায়ের নিচের মাটি কাঁপতে থাকে। সে ভয় পেয়ে যায়, হচ্ছে কি? কয়েকটা মাছ পুকুরপাড়ের লাফ দিয়ে উঠে ছট-ফট করে।
তার বুক ফাঁকা হয়ে যায়। ফাঁকা বলতে একেবারে ফাঁকা। তার যে বুকের ভিতর কিছু থাকতে পারে, এই অনুভূতি সে হারিয়ে ফেলে। তার শরীরও মাটির সঙ্গে সঙ্গে কাঁপে। প্রায় ত্রিশ সেকেন্ড এইরকম ভাবে পুকুরের পানি আর পায়ের নিচের মাটিতে প্রবল ঝড় বয়ে যায়, সঙ্গে সঙ্গে তার হৃদয়ে। যেন কেউ হাতুড়ি দিয়ে বাড়ি মারছে।
সবকিছু ঠিক-ঠাক। কিন্তু তার ভিতরের ফাঁকা ফাঁকা ভাবটা যায় না। তার মনে হয়, সে যদি পুকুরে তখন থাকত বা কোন উচু দালানে, তাহলে হয়ত মরেই যেত। সে ঘাটেই বসে পড়ে।
দূর থেকে চিৎকার করে তার স্ত্রী বলে, ভূমিকম্প হয়ে গেল।
সে বুঝে কিন্তু কিছু বলে না। তার শরীর তখনও কাঁপছে।
১০ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:২২
সন্যাসী পিপড়া বলেছেন: ধন্যবাদ, কয়েস সামী।
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৩৮
কয়েস সামী বলেছেন: লেখার হাত ভাল লাগল। লিখতে থাকুন।