নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দূর ঐ নীল আকাশে, তারা-নক্ষত্রের মতই হাজার হাজার গল্প ঝুলে রয়েছে, আমি সেই গল্পগুলোই বলতে চাই।

সন্যাসী পিপড়া

দূর ঐ নীল আকাশে, তারা-নক্ষত্রের মতই হাজার হাজার গল্প ঝুলে রয়েছে, আমি সেই গল্পগুলোই বলতে চাই।

সন্যাসী পিপড়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

অণুগল্প: গ্রাম্য-পুলিশ

০৯ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:২৭

অন্ধকার রাস্তায় যখন লাল মিয়া তার হাতের টর্চ না জ্বালিয়ে অনেক দিনের পুরানা স্যান্ডেল পরে হাঁটছিল, তখন সহসা একটা গাছের গুড়ির সাথে হোঁচট খেয়ে পড়ার পর সে গোৎ জাতীয় শব্দ করে উঠে, হাতের টর্চ হাতছাড়া হয়ে গেলে সে হাতরে হাতরে তা ক্ষণিক পরেই খুজে পেয়ে সুইচ টিপে দেয়, তখন দিনের আলোর মত ফকফকে জোৎস্নায় চারপাশ থইথই করে উঠে। সে উঠে দাঁড়ায়। হাঁটতে গিয়ে খেয়াল করে তার স্যান্ডেলের ফিতা ছিড়ে গ্যাছে।
দূর বাল, জুতাই পরমু না। বলে সে লাথি মেরে স্যান্ডেল জোড়া ফেলে দেয়।
তার বাবা সোনা মিয়া, দাদা বড় মিয়া, পরদাদা কছুমদ্দি(পরদাদার নামের পরে মিয়া নাই। কারণ তার দাদাই মিয়া শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন।) সবাই গ্রাম-পুলিশ ছিলেন। তারা অন্ধকারে হেঁটে অভ্যস্থ।
দূর থেকে আলোক রশ্মি উড়ে আসে তার দিকে। সে দাঁড়ায়। সেই লোকটার হাঁটার ভাব-সাব দেখে সে ডাক দেয়, মেম্বার নিহি?
হ। তুই এইহানে করছ কি? যা চেয়ারম্যানের বাড়ি যা।
যাইতেছি ভাই।
হ, আন্ধারে যাবি কেমনে টর্চ নাই?
আছে।
তাইলে জ্বালাস না ক্যান, সাপের কামড় খাইতে মন চায়?
সে কিছু বলে না। একটু হাসে। মেম্বার চলে যায়। সে ধীরে ধীরে চেয়ারম্যানের বাড়ির দিকে যেতে থাকে। তার চোখ বিড়ালের মত, আলো ছাড়াও সে স্পষ্ট দেখতে পায়। অবশ্য কারণও আছে সে এই পথ দিয়ে হাজারবার হেঁটে গ্যাছে। তাই সে জানে রাস্তার কোন জায়গায় গর্ত, কোথায় ইট উঠে গ্যাছে, কোথায় বাক নিয়েছে।
আজ চেয়ারম্যান বাড়িতে শহর থেকে আত্মীয়-স্বজন এসেছে। তাই বিয়ে বাড়ির মত রমরমে অবস্থা। জেনারেটর ভাড়া করা হয়েছে, যদিও বিদ্যাৎ আছে। বিদ্যাৎ-এর কোন গ্যারান্টি নাই। তাই এই ব্যবস্থা। শহরের মানুষ গরম সহ্য করতে পারে না।
লাল মিয়া চেয়ারম্যানের বাড়ি উপস্থিত হয়। সে চেয়ারম্যানের সামনে যায়। চেয়ারম্যান তার দিকে বাঁকা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, এই এলেন সাহেব।
সে কিছু বলে না। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।
ঠিক আছে যা, আজকে একটু ভাল মত পাহাড়া দিস। চোর-ডাকাত তো অভাব নাই।
আইচ্ছা।
খাইছোস।
হ।
যা যা, কাজে লেগে পড়।
সে গেটের সামনে এসে দাঁড়ায়। জেনারেটর গেটের সামনেই বসানো হয়েছে।কানের দফা-রফা অবস্থা। সে পকেট থেকে নেভি সিগারেট বের করে ধরায়। তারপর তার ছেলেটার কথা মনে পড়ে। ছেলেটার জ্বর ১০১ ডিগ্রি। ডাক্তারের কাছে নিতে পারে নি। বিকালেই জ্বর আসল। তার বউ মাথায় পানি ঢালছে। সে বলেছে, তুমি যাও আজ যদি কিছু টাকা পাও, তবে কাইলকে পোলারে ডাকতারের কাছে নিয়ন যাইব, আইজ কিছু হইব না।
তবু তার চিন্তা কমে না। সে একমনে সিগারেটে টান দেয়। তারপর পাহাড়ায় মনোযোগ দেয়।
রাত-ভর পাহাড়া দিয়ে সকালে চেয়ারম্যানের নিকট যায়। চেয়ারম্যান হাসি মুখে বলে, নে। দুই'শ টাকা ধরিয়ে দেয়। সে কিছু বলে না। টাকা নিয়ে বাড়ির দিকে দৌড় দেয় সে। চেয়ারম্যান কিছু বুঝে উঠার আগে সে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়।
বাড়িতে পৌছে সে দেখে ছেলেটা বসে বসে ভাত খাচ্ছে। তার বউ বলে, এহন জ্বর ভাল। তাও দেখো ডাক্তারের কাছে নিলে ভালই অয়।
সে তার ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকে। ঝরঝর করে তার চোখ দিয়ে পানি পড়ে। তার বউ কিছু বলে না। ছেলেকে ভাত খাওয়াতে থাকে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৭

প্রামানিক বলেছেন: কষ্টের গল্প

২| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১১:০৫

সন্যাসী পিপড়া বলেছেন: ধন্যবাদ< প্রামানিক ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.