![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দূর ঐ নীল আকাশে, তারা-নক্ষত্রের মতই হাজার হাজার গল্প ঝুলে রয়েছে, আমি সেই গল্পগুলোই বলতে চাই।
“তুমি নিশ্চয় চাইবে না আমার কোন অঘটন ঘটুক?” প্রশ্নটি করে মীরা নয়নের চোখের দিকে চাইল। তার চোখে আগুনের ফুলকি যেন ছিটকে ছিটকে বেরিয়ে পড়ছে। সে আগুনে নয়ন পুড়তে চায় কিন্তু সে ক্ষমতা তার নেই।
“সেটা কেন হবে? তোমার অমঙ্গল কেন চাইবো?” বলে সে মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ এক ধ্যানে নিজের স্যান্ডেলের দিকে তাকিয়ে থেকে আবার বলল, “কিন্তু আমি তোমাকে ভালবাসি।”
আশেপাশের মৃদু আলোতে তাদের গায়ের রঙের পরিবর্তন হয়েছে অনেকটা। মীরাকে অপ্সরীর মতো লাগছে। যে কেউ এখন তাকে দেখলে ভালবাসার প্রোপোজ করতে বিন্দুমাত্র ভাববে না। নয়ন তাকে প্রথম দিন দেখেই এই কথা বলতে চেয়েছিল কিন্তু পারে নি।
“কিন্তু আমি নিজেকে অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে নিতে চাই। তোমার ভালবাসার জালে আবদ্ধ হতে চাই না। তুমি আমার ভাল বন্ধু সেটাই থাকো।”
থমথমে পরিবেশে এখন নয়ন কি বলবে ভেবে পেল না। মাত্র তিনদিনের সাক্ষাতে সে মীরাকে ভালবেসে ফেলেছে। প্রথম তাদের দেখা হয় কলেজের অডিটোরিয়ামে; সেখানে এক অনুষ্ঠানে দুইজনে পাশাপাশি বসেছিল। হঠাৎ নয়ন মীরাকে দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। মীরা তার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলে, “আপনি কি এই কলেজেরই?”
নয়ন কিছুক্ষণ কিছু বলতে পারে না, তারপর আমতা আমতা করে বলে, “হ্যা। আপনি?”
- আমিও তো। কবে জয়েন করেছেন?
- এই মাসেই।
- আমিও। যাক একজন আমার মত পাওয়া গেল।
তারপর দুইজনে অনেকক্ষণ গল্পগুজব করে যার যার সেল নাম্বার আদানপ্রদান করে ফিরে আসে।
- ঠিক আছে। আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করব। যতদিন না তুমি প্রতিষ্ঠিত হতে পারছো। কিন্তু একটা কথা দাও।
- কি কথা?
- আমার সাথে মাঝে মাঝে এইভাবে ঘুরতে বের হবে।
- ঠিক আছে। এটা তো কোন সমস্যাই না, বলে মীরা তার সেই মিষ্টি হাসি হেসে আবার বলে, ওকে আজ উঠি। আমাদের তো কলেজে রোজ দেখা হয়।
- কলেজের দেখা আর এখানে দেখা এক হল নাকি?
- ঠিক আছে চলো।
বিল মিটিয়ে দিয়ে দুইজনে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়। নয়ন একটা রিক্সা ডেকে মীরাকে উঠিয়ে দিয়ে নিজে হাঁটতে হাঁটতে চলে আসে রাস্তার মোড়ে। সেখানে একটি চায়ের স্টলে বসে চায়ের অর্ডার দিয়ে সিগারেট ধরায়। এই মুহূর্তে নিজেকে খুব একা মনে হয় তার। এমন একাকীত্ব সে অনুভব করছে যেদিন থেকে মীরাকে দেখেছে সেদিন থেকেই। কিন্তু কেন? সেটা তার জানা নেই। চায়ের কাপটা নিয়ে চুমুক দিয়ে ভাবতে থাকে মীরার কথা। ঢেউ খেলানো চুলের স্পর্শ পায় নিজের মুখে। হাসিমাখা ঠোঁট, নাকে চিক্চিক্ করে আলোর মত জ্বলতে থাকা ঘাম, কপালের সেই পরিচিত ভাজে সে নিজেকে খুঁজে পায়। এই একাকীত্ব সে কি করে ভুলে থাকবে সেটা নিয়ে কোন কুলকিনারা খুজে পায় না। চায়ের বিল দিয়ে বাসার দিকে চলে যায়।
রাত ১১টা। হঠাৎ দরজায় নক হয়। মৃদু আওয়াজ। নয়ন দরজা খুলে দেয়। জেরিন দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। জেরিন বলে, “জান তোমাকে ছাড়া আর থাকতে পারলাম না।”
দরজাটা লাগিয়ে দিয়েই নয়ন তার কপালে গভীর চুম্বন দিয়ে বেডরুমে নিয়ে যায়। আলো নিভিয়ে দেয়। তারপর শুধুই শব্দ। দুইজন সঙ্গমে মেতে উঠে। একজন আরেকজনকে জাপটে ধরে থাকে আঠার মত।
- তুমি আমাকে কতটুকু ভালবাসো?
- আকাশ সমান। তুমি?
- তার চেয়েও বেশী।
- আকাশের চেয়ে বেশি কি আছে. বল দেখি?
- সেটা আমার জানবার দরকার নেই।
নয়ন উঠে সিগারেট ধরানোর জন্য দেশলাই জ্বালায়; সেই আলোতে দুইজনে দুইজনের নগ্ন দেহের দিকে তাকায়। জেরিন লজ্জা পেয়ে বলে, আহা বন্ধ করোতো।
নয়নের এতক্ষণ মীরার কথা মনে পড়ে নি। জেরিন তাকে সবকিছু থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল কিছু সময়ের জন্য। কিন্তু এই আনন্দ খানিক সময়ের জন্য। তাকে আবার একাকীত্ব ভুতের মত তার ঘাড়ে ভর করে। মেয়েটি যদিও তার বুকের উপর মাথা গুজে শুয়ে আছে। তবুও তার কেমন যেন লাগে। যা ভাষায় বোঝানোর মত ক্ষমতা তার নেই। তার ভিতর থেকে শুধু একটা ছবিই এখন ভেসে উঠে, মীরার। এই মায়াজাল থেকে কিছুতেই বের হতে পারে না।
জেরিনের সাথে তার প্রায় দুই বছরের সম্পর্ক। প্রথম দেখা এক বিয়েবাড়িতে। জেরিন দেখতেও অনেক সুন্দর। একেবারে আধুনিক বলতে যা বোঝায় সেটাই হচ্ছে সে। একনজর দেখেই ভাল লেগে যায় এমন। নয়ন তাকে একদিন পরই প্রপোজ করে। জেরিনও রাজি হয়ে যায়। নয়নও অনেক স্মার্ট। যদিও তার কেউ বেঁচে নেই। তবু কেন যেন জেরিন তাকে ভালবেসে ফেলে।
জেরিন উঠে নিজের পোষাক পরতে পরতে বলে, “রাত একটা বেজে গেছে; তুমি ঘুমাও। আমি চলে যাই।”
নয়ন বাধা দিয়ে বলে, “এতরাতে না গেলে, থেকে যাও।”
- সমস্যা নেই। ড্রাইবারকে বলে রেখেছি যাতে ফোন দিলেই চলে আসে।
- ঠিক আছে, দেখো।
জেরিন ড্রাইভারকে ফোন দিয়ে চলে আসতে বলে। নয়ন উঠে রাতের পোষাক পরে নেয়। তারপর লাইট জ্বেলে দেয়। বিছানা এলোমেলো পড়ে আছে; এতক্ষণ তাদের দুইজনের কর্মের চিহ্নস্বরুপ বিছানার এই দশা।
নয়ন কেমিস্ট্রি'র শিক্ষক। ক্লাসে ছেলেমেয়েদের আজ পর্যায় সারণির অধ্যায়টা পড়িয়েছে। একই পড়া বারবার পড়ানো তার কাছে বিরুক্তিকর লাগে। কিন্তু কিছু করার নেই। যদিও জেরিন বলেছিল, চাকরি বাদ দাও। চলো বিয়ে করি। তারপর আমার বাবা'র সবকিছু তো আমারই।
কিন্তু সে নিজেই রাজি হয় নি।
আজ মীরাকে সে দেখতে পেল না। সেজন্য আরো বেশি বিরক্ত লাগছে। মীরাকে দুইবার কলও করেছিল কিন্তু কাজ হয় নি। এখন আরেকবার ট্রাই করে লাইব্রেরি চলে গেল।
মীরাকে শেষ পর্যন্ত লাইবেরি পাওয়া গেল; গভীর মনোযোগ দিয়ে কি যেন পড়ছে। পাশে গিয়ে বসতেই তার হুঁশ ফিরল।
- তোমাকে কয়েকবার কল দিলাম?
- সো সরি। ফোন সাইলেন্স। আজ একটু দেরি করে এসেছি। আমার কোন ক্লাস নেই। তবে কিছু বই দরকার ছিল তাই এলাম।
- ভাল করেছো। আমারও সব ক্লাস শেষ। চলো কোথাও ঘুরে আসি।
- কোথায়?
- কোন রেস্টুরেন্টে। লাঞ্চ করি।
- ঠিক আছে।
মীরা তার ব্যাগ গুছিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হল। নয়নের তেমন কিছু নেই। দুইজনে বের হয়ে লিফ্ট করে নিচে নেমে এল। একটা সিএনজি ভাড়া করে উঠে পড়ল।
তারপর থেকে মীরা ও নয়ন প্রায়ই শহরের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে বেড়ায়। তারা যেন মুক্তপাখির মত ডানা ঝাপটে উড়তে থাকে। কেউ কিছু বলার নাই। বাধা দেওয়ার নাই।
কিন্তু নয়নের অবস্থা দিনকে দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। সে এমনভাবে মীরার মায়াজালে আবদ্ধ হয়ে গেছে নিজেকে চাইলেও ছাড়িয়ে নিতে পারে না। রুমে একটার পর একটা সিগারেট টানতে টানতে মীরার কথা ভুলবার চেষ্টা করেছে কিন্তু সে আরো তার মস্তিস্কের শিরা-উপশিরার ভিতর ঢুকে অবাধ বিচরণ করছে। তার মস্তিস্কে এখন হাজার হাজার মীরার বসবাস করছে। এতদিনে অনেক বেড়ে গেছে তার। মীরার কাছ থেকে দূরে চলে আসলেই সে এখন আরো একাকীত্বে ডুবে যায়। তার সবসময় মনে হয় কি যেন নেই। যদিও প্রায় রাতেই জেরিন আসে। তার সাথে সে সঙ্গমে মেতে উঠে। দুইজনে নগ্ন হয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা শুয়ে থাকে। জেরিন তাকে অপার সুখে ভরিয়ে রাখে কিন্তু জেরিন চলে গেলেই তার সেই আগের মত অবস্থা হয়।
নয়ন আজ যে করেই হোক মীরাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিবে। আজিজ থেকে কেনা নতুন শার্ট ও প্যান্ট পরে; একটু সুগন্ধী লাগায়। তারপর জুতাটা পরে, গেটে তালা লাগিয়ে বের হয়ে যায় কলেজের উদ্দেশ্যে।
কলেজে পৌছে এক কলিগের সাথে দেখা। দুইজনেই কেমিস্ট্রি'র শিক্ষক। খুব ভাব একে অন্যের সাথে।
- কি ব্যাপার নয়ন সাহেব। আপনি এখনও যান নি।
নয়ন একটু অবাক হয়ে বলে, “কোথায়? আজ তো আমার ক্লাস নেই।”
একটু হেসে রহমান সাহেব বলে, “এয়ারপোর্টে।“
- সেখানে কেন যাবো?
- আরে এতদিন যার সাথে এত মেলা-মেশা, এত ভাব তাকে বিদায় দিবেন না। সবাই জানত মীরা ও নয়নের মধ্যের রসায়ন অনেক দূর এগিয়ে গেছে।
নয়ন কিছু বলতে পারল না। কিন্তু কি বোঝাতে চেয়েছে ঠিকই বুঝে গেল। কোন কথা না বলে এয়ারপোর্টের দিকে রওনা হয়ে গেল।
এয়ারপোর্টে পৌছে কাউকে দেখতে পেল না। তার অন্যান্য কলিগদের ফোন দিল। একজন বলল, মীরা এই দশ মিনিট আগে ভিতরে ঢুকেছে। প্লেন এখনই ছাড়বে। আমি তো বিদায় দিয়েই চলে এসেছি। তুমি আসো নি বলে সে খুব দুঃখ করল।
নয়ন ভাবল আমাকে এভাবে না জানিয়ে মিরা চলে গেল। আমি তাকে ভালবাসতাম। তাকে ছাড়া আমার এই জীবন ব্যর্থ।
অনেকক্ষণ অনেক কিছু চিন্তা করতে করতে সে একটা জায়গায় বসে পড়ল। ঠিক তখন তার মোবাইলের স্ক্রিনে ফুটে উঠল নিউ মেসেজ। সে মেসেজটি ওপেন করল তাতে লেখা,
গুড বাই। জানি তুমি আমাকে ভালবাস কিন্তু কিছু করার নেই। আমি তোমাকে শুধুই বন্ধু হিসাবে চেয়েছি। কিন্তু তুমি তা কখনও ভাবোনি। আমেরিকায় একটা ইউনিভার্সিটিতে স্কলারশিপ পেয়েছি। সেখানেই হয়ত বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিব। ভাল থেকো।
©somewhere in net ltd.