![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হারানোর ভয়ে পাওয়ার বেদনায় আমি আর মরিতে চাইনা।
তারেক খুবি দ্বিধায় পরে গেছে। আবার কিছুটা উত্তেজিতও। সে ঠিক বুঝতে পারছে না কি করবে।
গত রাতে ওর বন্ধু কে কল দিতে গিয়ে ভুল ডিজিট প্রেস করায় এক মেয়ের ফোনে কল চলে যায়। কিছু বুঝে উঠার আগেই মেয়ে টা ওর সাথে বাজে ব্যাবহার করে। কিন্তু তারপরেও কি জন্য জানি মেয়েটার কণ্ঠ ওর খুব ভালো লেগে যায়। এবং মেয়ে টার সেই ভদ্র ভাষার ইংরেজি গালি গুলো ওর কানে সারাক্ষণ ঝুন ঝুনির মত বাজতে থাকে।
তারেক খুব সাধারন একটা ছেলে। ক্লাসে সে খুব নির্লিপ্ত থাকে। মেয়ে বন্ধু তো দুরের কথা, ওর খুব বেশি ছেলে বন্ধুও নেই। একটা মাত্র বন্ধু রানা। কিন্তু পড়াশোনা ছাড়া ওর সাথে আর কোন বিষয়ে খুব বেশি কথা হয় না। তাই মেয়েদের সাথে ওর কথা বলার অভিজ্ঞতা নাই বললেই চলে।যদিও তারেক দেখতে সুদর্শন। কিন্তু সারাজীবনই কোন এক অজানা কারনে মেয়েরা সবসময় ওকে এড়িয়ে চলতো। তবে এটা নিয়ে তারেকের কোনদিনও কোন রকম আফসোস ছিলোনা। কারন মেয়েদের ব্যাপারে ওর অসস্থির সীমা ছিলোনা।
কিন্তু কোন এক কারনে মেয়েটার সাথে ওই খনিকের ফোন আলাপ সে কোন ভাবেই ভুলতে পারছিল না। কিভাবে যেন ওর মাথায় ব্যাপার টা ঢুকে গেছে। এবং এই প্রথম কোন এক মেয়ের ব্যাপারে সে খুব কৌতূহল অনুভব করলো। এবং তার ভিতর খুব বড় ধরনের একটা পরিবর্তন আসলো। সে তার এই পরিবর্তনে নিজেও খুব অবাক হল।
যাইহোক, সে মনে মনে খুব চাইছিল আবার সে ওই মেয়ে টার সাথে কথা বলতে। আবার সেই কিন্নর কণ্ঠের ঝুন ঝুনানি শুনতে। কিন্তু সাহস পাচ্ছেনা। এভাবে দুটানার ভিতর সে দুইদিন পাড় করলো। অবশেষে বিকাল বেলা তারেক ছাদে উঠলো। বুকের ভিতর অনেক সাহস সঞ্চয় করে অনেক বড় একটা নিঃশ্বাস নিয়ে মেয়ে টাকে কল দিলো। রিং বেজেই চলেছে… কিন্তু ফোন ধরতেছেনা। তারেকের কানে ফোন… কিন্তু উত্তেজনায় বুক ধক ধক করছে, চোখের পাতা ভারী হয়ে আসছে। কেমন জানি একটা নেশা লাগা ঘোরের মধ্যে সে ডুবে গেছে। তার কাছে মনে হচ্ছে অনন্ত কাল ধরে রিং হচ্ছে।তার খুব টেনশন হচ্ছে। আহ এই রিং যদি এভাবে সারা জীবন বেজেই যেতো! কিছু কিছু অপেক্ষা সত্যিই খুব মধুর হয়!
তারেক এই কথা ভাবতে ভাবতেই ফোনে নো আনসার সঙ্কেত বেজে উঠলো। যাক ধরেনি, তারেক যেন হাফ ছেড়ে বাচল। তাই সস্থির নিঃশ্বাস ফেলল। কিন্তু একটু পরেই সেই নাম্বার থেকে কল আসলো। এইবার তারেক আরও উত্তেজিত হয়ে পড়লো। কি করবে সে ভেবে পাচ্ছিলনা। ধরবে কি ধরবে না এই করতে করতেই ফোন কেটে গেলো। মানুষ এতো টা নার্ভাস হয় কি করে? সে যেন নিজেই নিজেকে ধিক্কার দিলো। ইস ! ধরলে কি এমন হতো? না হয় আর কয়টা বকা দিত! কিন্তু কণ্ঠ টা তো আর একবার শুনতে পারতাম? সে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। সে যেন হঠাৎ করেই আবার নিজেকে ফিরে পেল। এবং ভাবতে লাগলো সে কেন এমন করছে? কেন সে মেয়েটার কণ্ঠ শোনার জন্য এতো টা বেকুল হচ্ছে? সে তো কোনদিন মেয়ে টাকে দেখে নি, দেখার সম্ভাবনাও নাই। সে নিজেও বুঝতে পারলো, এটা নিছক একটা হঠাৎ আসা ভালো লাগা। এবং এই ভালো লাগার ঘোর কেটে গেলেই সব আগের মত ঠিক হয়ে যাবে।
সন্ধ্যা হয়ে আসছে। সে ছাদ থেকে নামতে যাচ্ছে ঠিক সেই মুহূর্তে ওই মেয়েটার ফোন থেকে একটা এসএমএস আসলো। তারেকের স্বাভাবিকতা আবার যেন কোথায় উরে গেলো। অনেক উত্তেজনা নিয়ে এসএমএস টা ওপেন করলো। আপনি কোন ধরনের মানুষ, আপনার কি লজ্জা নাই? মেয়েদের নাম্বার পাইলেই কল দিতে মন চায়? এতো সাহসী পুরুষ তাহলে কল ধরেন না কেন? আর কখনো কল দিবেন না।
এইবার তারেকের খুব মন খারাপ হল। ঠিকই তো? সে কেন আবার কল দিতে গেলো? তারেকের খুব অভিমান হল। যদিও এই অভিমানের কোন মূল্য নেই। সেও মেয়ে টাকে একটা এসএমএস লিখল। বলল, ভুল করে এসএমএস চলে গিয়েছিল। কিন্তু আপনি না বুঝেই আমাকে বকা দিয়েছেন। এবং পরে সরি বলার জন্য আপনাকে ফোন দিয়েছিলাম ।
যদিও মনের মাঝে কিছুটা হলেও এক অজানা অভিমান কাজ করতেছিল, তবুও দুইদিন পর তারেক স্বাভাবিক হল। ওইদিন বিকেল বেলা তারেক ছাদে বসে বই পড়ছিল। ঠিক সেই সময়ে ফোনে একটা এসএমএস আসলো। তারেক স্বাভাবিক ভাবেই এসএমএস টা ওপেন করলো। এবং দেখল সেই মেয়ের এসএমএস! এবং সেখানে শুধু একটা শব্দই লেখা, ‘সরি!’
তারেক এইবার সত্যি সত্যি ভাবনায় পরে গেলো। তার সরল মনটা ওই একটা শব্দের উত্তাপেই মোমের মত গলে গেলো। এবং সে প্রচণ্ড আত্ম তৃপ্তিতে এবং খুশি তে মনে মনে লাফাতে লাগলো। কন্তু সে নিজেই অবাক হল তার এই খুশি দেখে! সেও একটা এসএমএস করলো। ধিরে ধিরে ঠিক এইভাবেই এসএমএস বিনিময়ের মধ্য দিয়ে তাদের মধ্যে পরিচয় হল। এবং এক সময় ফোনে কোথাও শুরু হল। এইভাবে বেশ কিছুদিন কেটে গেলো।
প্রায় দুই মাস তাদের মধ্যে ফোনে কথা হল। যার ফলে ওদের দুই জনের মধ্যে একটা অদৃশ্য সু সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো।
মেয়েটা তারেকের সারল্য, সাধারন জীবন যাপন, এবং ভদ্রতা সবকিছুতেই মুগ্ধ হল। এবং মনের অজান্তেই সে তারেক কে সে খুব বিশ্বাস করে ফেলল। সে তারেকের কথা বার্তায় বুঝতে পেরেছে যে তারেক নিজ থেকে কোনদিন দেখা করার কথা বলার সাহস পাবে না। কিন্তু তারেক কে দেখার কৌতূহল সে কোন ভাবেই আর চেপে ধরে রাখতে পারছিল না।
তাই সে মুখ ফোটে তারেক কে একদিন দেখা করার কথা বলল। এতদিনে তারেকেও মেয়েটার প্রতি খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিল। সেও দেখা করার জন্য উন্মুক হয়ে বসে ছিল। মনে মনে চাইতেছিল যেন অর্পি যেন ওকে দেখা করতে বলে। অবশেষে তারেকের সেই অপেক্ষার পালা শেষ হয়েছে। সে আজ মহা খুশি। সে মনে মনে ঠিক করে রেখেছে। প্রথম দিনেই সে তার মনের কথা টা অর্পি কে বলবে। আগামীকাল বিকেল ৪ টায় এক রেস্টুরেন্টে ওদের দেখা হবে। উত্তেজনায় দুই জনেই সারারাত ঘুমায়নি। তারেক সারারাত শুধু ওকে ভেবেই রাত পাড় করেছে। মনের মধ্যে যে রাজ কন্যার ছবি সে একে রেখেছে, অর্পি কি দেখতে তার সেই কল্পনার রাজ কন্যার মতই হবে, নাকি দেখতে আরও সুন্দর হবে? আচ্ছা যদি সে দেখতে কুৎসিত হয়, তাহলে কি সে ওকে ফিরিয়ে দিবে? সে কি ফিরিয়ে দিতে পারবে? সে কি পারবে মেয়ে টি কে তখন এই ভাবে হতাশ করতে? ভালোবাসা মানেই কি সৌন্দর্য? এই একি ভাবনা ছিল অর্পির মনেও।
পরের দিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই তারেক ভাবতে লাগলো, প্রথম দিন দেখা করতে যাচ্ছে। কিছু একটা গিফট দেওয়া দরকার। কিন্তু কি দেবে? তাই সে গিফট কিনার জন্য তার প্রিয় বাইক টা তে করে বেরিয়ে পড়লো। এক গিফট এর দোকানে ঢুকে খুব সুন্দর দেখে একটা ‘শো পিজ’ কিনল।
দুপুর দুইটা বাজে রেস্টুরেন্টে যেতে লাগবে এক ঘণ্টা। তাই সে চিন্তা করলো এই ফাকে তার এক মাত্র বন্ধু রানা কে সব জানাবে। তাই সে রানা কে ফোন দিলো।বলল দোস্ত দারুন একটা খবর আছে।তারাতারি আমার বাসায় আয়। এই বলে সে ফোন রেখে দিলো। এবং বাসায় যাবার জন্য বাইক স্টার্ট দিলো। যেই সে মোড় টা ঘুরতে নিল ঠিক সেই মুহূর্তে একটা ট্রাক এসে পিছন থেকে একটা ধাক্কা দিলো। তারেক শুধু একটা ধাক্কা অনুভব করলো। এবং এটাই ওর জীবনের শেষ অনুভূতি! ওর থেতলে যাওয়া দেহ টা রাস্তায় পরে আছে। আর উৎসুক জনতা ওকে ঘিরে দাড়িয়ে আছে। গিফট এর প্যাকেট টা ছিন্ন ভিন্ন হয়ে রাস্তার একপাশে পরে আছে। রানা এই রাস্তা দিয়েই তারেকের বাসায় যাচ্ছিলো। হঠাৎ রাস্তায় জটলা দেখে কাছে গিয়ে যেন স্তব্দ হয়ে গেলো। রানা কি করবে ভেবে পাচ্ছে না! পাশেই পরে থাকা তারেকের ভাঙ্গা ফোন টা পকেটে রেখেই যেন নিজেকে ফিরে পেল। ওর গলা দিয়ে গোঙানির মত একটা চাপা আওয়াজ বের হল। দারুন খবর টা আর শুনা হল না! রানার দু চোখ বেয়ে জল আসছে। এই দেহ টা সে কিভাবে বয়ে নিয়ে যাবে? সেই মানসিক শক্তি কি রানার আছে?
চার টা বাজে। অর্পি রেস্টুরেন্টে এসে মাত্র বসলো। ভেবেছিলো তারেক মনে হয় ওর জন্য আগেই এসে বসে থাকবে। কিন্তু নাহ! ওর ভাবনা গুলো কেন জানি কোন সময়েই মিলে না। অর্পি অপেক্ষা করতে লাগলো। কিন্তু নাহ! দশ মিনিট হয়ে গেলো, ওর তো দেরি করার কথা না? মনে মনে ভাবতে লাগলো। সে এবার কল দিলো। কিন্তু একি! ফোন বন্ধ। এখন অর্পি একটু ভাবনায় পরে গেলো। ফোন বন্ধ রাখার মানে কি? সে তারেকের উপর খুব অভিমান করলো। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল, তারেক আসলে সে একটা কোথাও বলবে না! সে মনে মনে তারেক কে খুব করে বকতে থাকল। আর অপেক্ষা করতে লাগলো। তার এই অপেক্ষার পালা কখন শেষ হবে?
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৫৫
বাদল দিনের গান বলেছেন: