নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি হুসাইন বিল্লাহ একজন ডিজিটাল মার্কেটিং স্পেশালিষ্ট এবং ব্লগার।

হুসাইন বিল্লাহ

হুসাইন বিল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জ্যাক ক্রিস্টোফ - ডিজিটাল বৈষম্য কমানোর অর্থনৈতিক মডেল

২৩ শে জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৮:২১

মানুষের কল্পনা শক্তি ভবিষ্যৎ নির্মাণের প্রথম ধাপ। আজকের কল্পনা হয়তো আগামীর বাস্তবতা। "ভবিষ্যতের সাক্ষাৎকার" সেই কল্পনাকে ভিত্তি করেই গড়ে তোলা একটি অনন্য সংগ্রহ, যেখানে পাঠক ১০০ কাল্পনিক মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এরা কেউ অর্থনীতির অগ্রপথিক, কেউ প্রযুক্তি বিপ্লবের রূপকার, আবার কেউ কৃষি ও মহাকাশ গবেষণায় বৈপ্লবিক পরিবর্তনের দূত। তাঁদের চিন্তা, জীবনযাপন এবং কাজের ধারা আপনাকে ভবিষ্যতের প্রতিটি দিগন্ত সম্পর্কে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করবে।

বইটির লেখক হুসাইন বিল্লাহ সোনিসিয়াম লি: এর সিইও, ডিজিটাল মার্কেটিং প্রশিক্ষক এবং "যুব উন্নয়ন ফ্রিল্যান্সিং একাডেমি"-এর প্রতিষ্ঠাতা। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং সৃজনশীল চিন্তার সমন্বয়ে তিনি এই বইটি লিখেছেন, যা শুধুমাত্র পাঠকদের অনুপ্রাণিত করবে না বরং তাঁদের কল্পনার শক্তিকে জাগিয়ে তুলবে।

"ভবিষ্যতের সাক্ষাৎকার" আপনাকে নিয়ে যাবে এমন এক জগতে, যেখানে সীমাবদ্ধতার কোনো জায়গা নেই। এটি কেবলমাত্র একটি বই নয়—এটি ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবার একটি নতুন উপায়। আপনার চিন্তা ও কল্পনাকে নতুনভাবে জাগিয়ে তুলতে, আপনাকে এক অবিশ্বাস্য যাত্রায় আমন্ত্রণ জানাচ্ছে "ভবিষ্যতের সাক্ষাৎকার"।

এখানে প্রকাশিত হলো প্রথম সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব:

প্রশ্ন: আপনার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আমাদের বলুন। আপনি কীভাবে ডিজিটাল বৈষম্য কমানোর মডেল তৈরির প্রক্রিয়ায় জড়িত হলেন?

উত্তর:
আমার নাম জ্যাক ক্রিস্টোফ, এবং আমি একজন অর্থনীতিবিদ ও প্রযুক্তি গবেষক হিসেবে কাজ করছি। আমার শিক্ষা ও গবেষণা জীবনের অধিকাংশ সময়ই আমি প্রযুক্তির অর্থনৈতিক প্রভাব, বিশেষত প্রযুক্তিগত উন্নতির সঙ্গে বৈষম্যের বিষয়টি নিয়ে কাজ করেছি। প্রাথমিকভাবে আমি একজন অর্থনীতির ছাত্র ছিলাম, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমি বুঝতে পারলাম, প্রযুক্তি কেবল উন্নতি আনে না, এটি বৈষম্যেরও সৃষ্টি করে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ডিজিটাল প্রযুক্তি সবার কাছে পৌঁছাতে পারছে না, এবং এই কারণে সমাজের একটি বড় অংশ প্রযুক্তির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

আমার গবেষণার সময় আমি লক্ষ্য করেছিলাম যে ডিজিটাল অবকাঠামোর অভাব এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য একসঙ্গে মিলে ডিজিটাল বিভক্তি তৈরি করছে। এই বৈষম্য কেবল উন্নয়নশীল দেশেই নয়, উন্নত দেশগুলোতেও বিদ্যমান। যারা প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারছে না, তারা শুধু প্রযুক্তিগতভাবে পিছিয়ে থাকছে না, বরং তাদের অর্থনৈতিক অবস্থাও দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এই বিষয়টি আমাকে উদ্বিগ্ন করেছিল, এবং আমি ডিজিটাল বৈষম্য কমানোর জন্য একটি কার্যকর অর্থনৈতিক মডেল তৈরির জন্য কাজ শুরু করি।

আমার কর্মজীবনের এক পর্যায়ে, আমি সিদ্ধান্ত নেই যে বৈষম্য কমানোর জন্য এমন একটি মডেল তৈরি করতে হবে, যা প্রযুক্তিগত উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নেও সাহায্য করবে। আমি সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ শুরু করি, যারা ডিজিটাল অবকাঠামো ও প্রযুক্তির সহজলভ্যতা নিয়ে কাজ করছে। এর ফলে, আমি একটি অর্থনৈতিক মডেল তৈরি করি যা প্রযুক্তি এবং অর্থনৈতিক সুবিধাগুলো সবার কাছে পৌঁছে দিতে পারে এবং ডিজিটাল বৈষম্য কমাতে সাহায্য করতে পারে।

এই কাজের মাধ্যমে আমি আরও জানতে পেরেছি যে ডিজিটাল বৈষম্য একটি বৈশ্বিক সমস্যা এবং এর সমাধান করতে হলে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। প্রযুক্তি কেবল উন্নয়নের একটি হাতিয়ার নয়, এটি মানবজাতির ভবিষ্যতকে নির্ধারণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এজন্য আমি ডিজিটাল বৈষম্য কমানোর দিকে মনোযোগ দিয়েছি এবং এই মডেলের উন্নয়ন চালিয়ে যাচ্ছি।



প্রশ্ন: ডিজিটাল বৈষম্য বলতে কী বোঝেন, এবং কেন এটি বর্তমানে একটি বড় সমস্যা?

উত্তর:

ডিজিটাল বৈষম্য বলতে বোঝানো হয় প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং ডিজিটাল সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে সমাজের বিভিন্ন অংশের মধ্যে যে অসমতা রয়েছে। সহজভাবে বললে, ডিজিটাল বৈষম্য হল এমন একটি অবস্থা যেখানে কিছু মানুষ উন্নত প্রযুক্তি, ইন্টারনেট, স্মার্ট ডিভাইস, এবং ডিজিটাল পরিষেবাগুলোতে প্রবেশাধিকার পায়, কিন্তু অনেকেই এসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকে। এটি শুধুমাত্র ইন্টারনেট সংযোগের অভাব নয়, বরং ডিজিটাল শিক্ষার, ডিজিটাল দক্ষতার এবং প্রযুক্তির প্রাপ্যতার অভাবের কারণেও হয়ে থাকে।

এই বৈষম্য সাধারণত উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়, যেখানে গ্রামের মানুষ কিংবা নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর অনেকেরই ইন্টারনেট বা প্রযুক্তিগত সেবা নেওয়ার সুযোগ নেই। এমনকি উন্নত দেশগুলোতেও ডিজিটাল বৈষম্য বিদ্যমান, বিশেষ করে যারা কম আয়ের মানুষ বা যাদের পর্যাপ্ত প্রযুক্তিগত জ্ঞান নেই তাদের ক্ষেত্রে। যারা প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারে না, তারা শিক্ষা, চাকরি, স্বাস্থ্যসেবা, এবং সামাজিক উন্নয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ে।

এখনকার যুগে প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো প্রতিটি সেক্টরের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে। কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা—সব জায়গায় প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। তাই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে না পারা মানে সমাজের মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া। ডিজিটাল বৈষম্য মানে হলো, যাদের কাছে প্রযুক্তিগত সুবিধা নেই, তারা আরও বেশি সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার হবে।

বর্তমানে এটি একটি বড় সমস্যা কারণ ডিজিটাল বৈষম্য আমাদের সমাজে আরও গভীর বিভাজন তৈরি করছে। প্রযুক্তির প্রসার যত বাড়ছে, ততই দেখা যাচ্ছে যে প্রযুক্তিগত সুবিধা কেবল ধনী এবং প্রভাবশালী গোষ্ঠীর কাছে সীমাবদ্ধ হয়ে থাকছে। এই বৈষম্য শুধু অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বাধা দিচ্ছে না, বরং শিক্ষার সুযোগ, কর্মসংস্থানের উন্নয়ন, এবং অন্যান্য সামাজিক সুবিধা থেকেও অনেককে বঞ্চিত করছে। ডিজিটাল বৈষম্য দূর না করতে পারলে ভবিষ্যতে সমাজে আরও বড় ধরনের অসাম্য তৈরি হতে পারে, যা পুরো অর্থনীতিকে পিছিয়ে দিতে পারে।

প্রযুক্তি হলো আধুনিক অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নের মূল ভিত্তি। যারা ডিজিটাল বৈষম্যের কারণে পিছিয়ে রয়েছে, তারা অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হতে পারছে না, এবং ভবিষ্যতে তাদের আরও বড় ধরনের বৈষম্যের মুখোমুখি হতে হবে। এজন্য এটি বর্তমানে একটি বড় সমস্যা, এবং এর সমাধান করা অত্যন্ত জরুরি।


প্রশ্ন: আপনার মতে, ডিজিটাল বৈষম্য কমানোর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী কী এবং কীভাবে তা সমাধান করা যেতে পারে?

উত্তর:

ডিজিটাল বৈষম্য কমানোর পথে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলো হলো প্রযুক্তির প্রাপ্যতা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অভাব, এবং নীতিগত সমর্থনের ঘাটতি। এগুলো বিভিন্নভাবে ডিজিটাল বৈষম্যকে গভীর করে তোলে এবং সমাজের একটি অংশকে উন্নয়নের মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে।

প্রথম এবং প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো প্রযুক্তির প্রাপ্যতা ও অবকাঠামো। উন্নত দেশের অনেক জায়গায় সহজেই ইন্টারনেট, স্মার্টফোন এবং কম্পিউটার পাওয়া গেলেও, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কিংবা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এসব প্রযুক্তি অনেকের জন্য এখনও সুলভ নয়। ইন্টারনেট সংযোগের অনুপস্থিতি এবং ইলেকট্রনিক ডিভাইসের উচ্চমূল্য মানুষকে ডিজিটাল বিশ্ব থেকে দূরে রাখছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর কাছে প্রযুক্তি পৌঁছানোই এখানে সবচেয়ে বড় বাধা।

এই চ্যালেঞ্জের সমাধানে প্রযুক্তির সহজলভ্যতা বাড়ানোর জন্য সরকার এবং বেসরকারি খাতকে একযোগে কাজ করতে হবে। সরকার ডিজিটাল অবকাঠামো গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে পারে, যেমন—উন্নত ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক তৈরি করা এবং ইন্টারনেট সুবিধা সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া। একই সঙ্গে, বেসরকারি খাত তাদের পণ্য ও সেবা এমনভাবে তৈরি করতে পারে যাতে সেগুলো সবার জন্য সহজলভ্য ও সুলভ হয়। উন্নত প্রযুক্তির খরচ কমিয়ে আনলে বেশি সংখ্যক মানুষ সেটির সুবিধা নিতে পারবে।

দ্বিতীয় বড় চ্যালেঞ্জ হলো শিক্ষা এবং ডিজিটাল দক্ষতার অভাব। শুধু ইন্টারনেট সংযোগ বা ডিভাইস থাকা ডিজিটাল বৈষম্য দূর করার জন্য যথেষ্ট নয়। এর পাশাপাশি প্রয়োজন ডিজিটাল সাক্ষরতা, যাতে মানুষ এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে উন্নতি করতে পারে। অনেকেই ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তির জগৎ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান বা দক্ষতা না থাকায় পিছিয়ে রয়েছে। বিশেষ করে বয়স্ক মানুষ কিংবা যারা প্রযুক্তির সঙ্গে খুব বেশি পরিচিত নয়, তাদের ক্ষেত্রে এটি একটি বড় বাধা।

এই চ্যালেঞ্জের সমাধান করা যেতে পারে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে। সরকার এবং বিভিন্ন এনজিও শিক্ষামূলক কার্যক্রম চালু করতে পারে, যেখানে মানুষের প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এই ধরনের কর্মসূচি বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে। ডিজিটাল সাক্ষরতা ছাড়া মানুষ প্রযুক্তির সুবিধা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারবে না, তাই প্রযুক্তি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করাও অত্যন্ত জরুরি।

তৃতীয় চ্যালেঞ্জ হলো নীতিগত সমর্থনের অভাব। ডিজিটাল বৈষম্য কমাতে কার্যকর নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক দেশই ডিজিটাল বৈষম্যের সমস্যাকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে না, এবং সেই কারণে এটি নিয়ে তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় না। নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই ডিজিটাল বৈষম্য কমানোর বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

এই সমস্যা সমাধানের জন্য নীতি প্রণয়ন এবং আর্থিক প্রণোদনার প্রয়োজন। সরকারের পক্ষ থেকে সঠিক নীতি ও আর্থিক প্রণোদনা থাকলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রযুক্তির প্রসারে আরও আগ্রহী হবে। একই সঙ্গে, যারা ডিজিটাল সেবা নিতে সক্ষম নয় তাদের জন্য ভর্তুকি বা বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। নীতিনির্ধারকদের এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং বৈষম্য কমানোর জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে কাজ করতে হবে।

সংক্ষেপে, ডিজিটাল বৈষম্য কমানোর বড় চ্যালেঞ্জগুলো হলো প্রযুক্তির প্রাপ্যতা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অভাব, এবং নীতিগত সহায়তার ঘাটতি। এগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকার, বেসরকারি খাত এবং সামাজিক সংস্থাগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। প্রযুক্তি সহজলভ্য করা, শিক্ষার প্রসার ঘটানো এবং কার্যকর নীতি বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে আমরা ডিজিটাল বৈষম্য কমাতে পারি এবং একটি সমান সুযোগপূর্ণ সমাজ গড়ে তুলতে পারি।


প্রশ্ন: আপনার প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক মডেলটি কীভাবে ডিজিটাল বৈষম্য কমাতে সাহায্য করবে?

উত্তর:

আমার প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক মডেলটি মূলত তিনটি স্তরের উপর ভিত্তি করে তৈরি, যা ডিজিটাল বৈষম্য কমাতে এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের কাছে ডিজিটাল সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দিতে সাহায্য করবে। এই মডেলটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে এটি ডিজিটাল অবকাঠামোর উন্নয়ন, ডিজিটাল শিক্ষার প্রসার, এবং আর্থিক প্রণোদনার মাধ্যমে প্রযুক্তিগত সুবিধা সব শ্রেণির মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়। নিচে এই মডেলের মূল উপাদানগুলো আলোচনা করা হলো:

১. প্রযুক্তির সহজলভ্যতা এবং অবকাঠামো উন্নয়ন

এই মডেলের প্রথম স্তরটি হলো প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল পরিষেবার সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা। আমরা দেখেছি, অনেক দেশ এবং সমাজে ডিজিটাল বৈষম্য তৈরি হচ্ছে মূলত প্রযুক্তির প্রাপ্যতার অভাবে। শহরাঞ্চলে উন্নত ইন্টারনেট সংযোগ এবং স্মার্ট ডিভাইস পাওয়া গেলেও, গ্রামাঞ্চলে কিংবা নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর কাছে এই প্রযুক্তি পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ছে। আমার মডেলটি এই সমস্যার সমাধান করতে চায় প্রযুক্তির সহজলভ্যতা বাড়ানোর মাধ্যমে।

এই মডেলের অধীনে সরকার এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে একটি সমন্বয় তৈরি করা হবে, যেখানে তারা একযোগে কাজ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট অবকাঠামো তৈরি করবে এবং উন্নত প্রযুক্তি সহজলভ্য করবে। উদাহরণস্বরূপ, সরকার বিনিয়োগ করবে ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কের প্রসারে, এবং বেসরকারি সংস্থাগুলো প্রযুক্তি এবং ডিভাইসের খরচ কমিয়ে মানুষের কাছে সুলভ করে তুলবে। একই সঙ্গে, স্থানীয় পর্যায়ে প্রযুক্তির উন্নয়নকে উৎসাহিত করতে অর্থনৈতিক প্রণোদনা এবং ভর্তুকি দেওয়া হবে।

২. ডিজিটাল শিক্ষা এবং দক্ষতা উন্নয়ন

ডিজিটাল বৈষম্যের একটি বড় কারণ হলো প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাব। শুধু ইন্টারনেট সংযোগ কিংবা ডিভাইস থাকার পরও অনেক মানুষ তা ব্যবহার করতে পারছে না কারণ তাদের ডিজিটাল সাক্ষরতা বা প্রযুক্তি ব্যবহারের দক্ষতা নেই। আমার প্রস্তাবিত মডেলের দ্বিতীয় স্তরটি হলো ডিজিটাল শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের প্রসার।

এই মডেলের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করা হবে যেখানে ডিজিটাল দক্ষতা শেখানো হবে। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হবে, যাতে তরুণ প্রজন্ম প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারে। পাশাপাশি বয়স্ক মানুষ এবং যারা প্রযুক্তি সম্পর্কে বেশি জানেন না তাদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে মানুষকে ডিজিটাল দক্ষ করে তোলা হবে, যা ডিজিটাল বৈষম্য কমাতে সহায়ক হবে।

৩. আর্থিক সহায়তা এবং ভর্তুকি ব্যবস্থা

আমার মডেলের তৃতীয় স্তরটি হলো আর্থিক প্রণোদনা এবং সহায়তা প্রদান। অনেক সময়, প্রযুক্তি ব্যবহার করতে না পারার অন্যতম কারণ হলো অর্থনৈতিক সামর্থ্যের অভাব। নিম্ন আয়ের মানুষজনের পক্ষে কম্পিউটার, স্মার্টফোন, কিংবা উচ্চগতির ইন্টারনেট কিনে ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। এই সমস্যার সমাধানে আমার মডেলটি একটি আর্থিক সহায়তা এবং ভর্তুকি ব্যবস্থার প্রস্তাব করে।

এই ব্যবস্থার মাধ্যমে, সরকার ডিজিটাল পণ্য ও সেবার ওপর ভর্তুকি প্রদান করবে, যাতে সাধারণ মানুষ সহজেই সেগুলি ক্রয় এবং ব্যবহার করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কম খরচে স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার জন্য বিশেষ প্রোগ্রাম চালু করা হবে। যারা আর্থিকভাবে অসচ্ছল, তাদের জন্য ডিজিটাল শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ ফ্রি বা স্বল্পমূল্যে দেওয়া হবে, যাতে তারা প্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণ করতে পারে।

মডেলের কার্যকারিতা

এই অর্থনৈতিক মডেলটি ডিজিটাল বৈষম্য কমাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে কারণ এটি একযোগে প্রযুক্তির প্রাপ্যতা, শিক্ষার প্রসার, এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। যখন প্রযুক্তি সবার কাছে সহজলভ্য হবে, এবং মানুষ তার যথাযথ ব্যবহার করতে শিখবে, তখন ডিজিটাল বৈষম্য অনেকটাই কমে আসবে। এই মডেলের মাধ্যমে, প্রযুক্তির সুবিধা কেবল ধনী এবং শহুরে জনগোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং সমাজের সকল স্তরের মানুষের কাছে পৌঁছাবে।

পরিকল্পিত ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ এবং অর্থনৈতিক সহায়তার ফলে সমাজের পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীও ডিজিটাল অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে। এতে সমগ্র সমাজে একধরনের প্রযুক্তিগত সমতা তৈরি হবে এবং ডিজিটাল বৈষম্য উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে।

প্রশ্ন: কোন নির্দিষ্ট দেশ বা অঞ্চলের ডিজিটাল বৈষম্য কমানোর জন্য আপনার মডেল কীভাবে কার্যকর হতে পারে?

উত্তর:

আমার প্রস্তাবিত মডেলটি বিভিন্ন দেশ এবং অঞ্চলের নির্দিষ্ট চাহিদা এবং বাস্তবতার ভিত্তিতে অভিযোজিত করা যেতে পারে। যদিও এটি একটি বৈশ্বিক মডেল হিসেবে তৈরি, তবুও আমি বিশ্বাস করি যে এর উপাদানগুলো নির্দিষ্ট দেশ বা অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক কাঠামোর উপর ভিত্তি করে পরিবর্তন ও সামঞ্জস্য করা সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, আমি যদি উন্নয়নশীল দেশগুলোর কথা বলি—যেখানে ডিজিটাল বৈষম্য একটি বড় সমস্যা—তাহলে এই মডেলটি বেশ কার্যকর হতে পারে।

১. বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ডিজিটাল বৈষম্য কমানোর জন্য মডেলটির কার্যকারিতা

বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে, যেখানে শহর ও গ্রামাঞ্চলের মধ্যে প্রযুক্তিগত ব্যবধান অনেক বেশি, আমার মডেলটি অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে। বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধি পেলেও এখনও অনেক জায়গায় উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ নেই এবং গ্রামাঞ্চলের মানুষ সহজে ডিজিটাল প্রযুক্তির সুবিধা নিতে পারছে না। এখানকার মানুষের মধ্যে ডিজিটাল দক্ষতার অভাবও একটি বড় সমস্যা। এমন প্রেক্ষাপটে এই মডেলটি কাজ করবে তিনটি স্তরে:

# ক) প্রযুক্তির সহজলভ্যতা এবং অবকাঠামো উন্নয়ন
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চল এবং দূরবর্তী অঞ্চলে প্রযুক্তির অবকাঠামো উন্নয়ন করা জরুরি। আমার মডেলের প্রথম স্তর হিসেবে, সরকার এবং বেসরকারি সংস্থাগুলো যৌথভাবে ডিজিটাল অবকাঠামো, যেমন ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক এবং সাশ্রয়ী ইন্টারনেট পরিষেবার প্রসারে কাজ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ উদ্যোগের মাধ্যমে সরকার ইতোমধ্যে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, কিন্তু এই মডেলের সাহায্যে আরও নিবিড়ভাবে প্রযুক্তি সহজলভ্য করার প্রচেষ্টা জোরদার করা হবে।

# খ) ডিজিটাল শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ
বাংলাদেশের ডিজিটাল বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মানুষের ডিজিটাল দক্ষতা উন্নয়ন করা। শহরাঞ্চলে অনেকেই ডিজিটাল প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হলেও, গ্রামাঞ্চলের মানুষজন এখনো পিছিয়ে আছে। আমার মডেলটি এই সমস্যা সমাধানে ব্যাপক ডিজিটাল প্রশিক্ষণ কর্মসূচির প্রস্তাব দেয়। এসব কর্মসূচি স্কুল-কলেজে চালু করা যাবে, যাতে শিক্ষার্থীরা শৈশব থেকেই প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করতে পারে। এছাড়াও, স্থানীয় এনজিও এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সাহায্যে গ্রামাঞ্চলে সাধারণ মানুষের জন্য ফ্রি বা কম খরচে প্রশিক্ষণ চালু করা যেতে পারে।

# গ) আর্থিক সহায়তা ও প্রণোদনা
বাংলাদেশের অনেক মানুষ অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল, যার ফলে তারা প্রযুক্তিগত ডিভাইস এবং ইন্টারনেট পরিষেবার খরচ বহন করতে পারে না। আমার মডেলের তৃতীয় স্তরটি এই সমস্যার সমাধান করতে আর্থিক ভর্তুকি ও সহায়তা প্রস্তাব করে। সরকার কম আয়ের মানুষদের জন্য ইন্টারনেট সেবার উপর ভর্তুকি দিতে পারে, এবং সাশ্রয়ী দামে স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট সরবরাহ করার ব্যবস্থা করতে পারে। এতে নিম্ন আয়ের মানুষও প্রযুক্তির সুবিধা নিতে পারবে এবং ডিজিটাল বৈষম্য কমে আসবে।

২. ভারতের মতো বৃহৎ দেশের জন্য মডেলটির কার্যকারিতা

ভারত একটি বৃহৎ দেশ, যেখানে বিভিন্ন অঞ্চলে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের বৈষম্য খুবই স্পষ্ট। শহরাঞ্চলে উচ্চগতির ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তির সহজলভ্যতা থাকলেও, গ্রামীণ ও দরিদ্র অঞ্চলে এই সুবিধা অনেকের কাছে পৌঁছেনি। আমার মডেলটি ভারতের মতো দেশের জন্যও বিশেষভাবে কার্যকর হতে পারে। ভারতের সরকার ইতোমধ্যেই ডিজিটাল ইন্ডিয়া প্রোগ্রাম চালু করেছে, তবে এর কার্যকারিতা আরও উন্নত করতে আমার মডেলের তিনটি স্তরের কার্যক্রম গৃহীত হতে পারে।

# ক) গ্রামীণ এলাকায় প্রযুক্তি প্রসার
ভারতে প্রযুক্তির অবকাঠামো শহরাঞ্চলে শক্তিশালী হলেও গ্রামাঞ্চলে এখনও দুর্বল। আমার মডেলের আওতায় ভারতের মতো দেশে সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্বে গ্রামীণ এলাকার প্রযুক্তি অবকাঠামো উন্নত করা যাবে। উদাহরণস্বরূপ, অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক এবং সাশ্রয়ী ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করা গেলে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীও সহজে প্রযুক্তির সুবিধা পেতে পারে।

# খ) ডিজিটাল শিক্ষার প্রসার
ভারতে অনেক জায়গায় শিক্ষার মান নিম্নস্তরের, এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাবে অনেক মানুষ পিছিয়ে রয়েছে। ডিজিটাল প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করা গেলে গ্রামের মানুষও প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজেদের উন্নতি করতে পারবে। ভারতের বিশাল জনসংখ্যার মধ্যে ডিজিটাল দক্ষতা বাড়াতে স্থানীয় ভাষায় প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে, যা মানুষের জন্য সহজবোধ্য হবে।

৩. আফ্রিকার উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য মডেলটির কার্যকারিতা

আফ্রিকার অনেক দেশেই ডিজিটাল বৈষম্য একটি বড় সমস্যা। উন্নত দেশগুলোর তুলনায় আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশেই প্রযুক্তির প্রাপ্যতা খুবই কম। ইন্টারনেট সংযোগ এবং স্মার্ট ডিভাইস কেনার সক্ষমতা নেই বলে অনেক মানুষ ডিজিটাল দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন। এই পরিস্থিতিতে, আমার প্রস্তাবিত মডেলটি আফ্রিকার উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বিশেষভাবে কার্যকর হবে।

# ক) প্রযুক্তির প্রাপ্যতা এবং অবকাঠামো উন্নয়ন
আফ্রিকান দেশগুলোতে প্রযুক্তির অবকাঠামো অনেকটাই দুর্বল, এবং সেখানকার মানুষজনের হাতে প্রযুক্তিগত ডিভাইস নেই। আমার মডেলটি এই সমস্যা সমাধানে প্রযুক্তিগত অবকাঠামো গড়ে তোলার প্রস্তাব করে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ইন্টারন্যাশনাল ডোনার এজেন্সি ও এনজিওগুলোকে যুক্ত করে ইন্টারনেট সংযোগ ও প্রযুক্তি সহজলভ্য করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

# খ) ডিজিটাল শিক্ষা
আফ্রিকার মানুষকে ডিজিটাল প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতন করতে ব্যাপক ডিজিটাল প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করা যেতে পারে। স্থানীয় ভাষায় প্রযুক্তিগত শিক্ষা দিয়ে জনগণকে ডিজিটাল সাক্ষরতা অর্জনে সহায়তা করা হবে।

# গ) আর্থিক সহায়তা
আমার মডেলের তৃতীয় স্তরের অধীনে, আফ্রিকান সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো মিলে ডিজিটাল পণ্য ও সেবার খরচ কমানোর জন্য আর্থিক সহায়তা দেবে। এতে প্রযুক্তির সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে মানুষের আর্থিক সীমাবদ্ধতা অনেকটাই কমে আসবে।

চলবে...

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.